পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন দ্বৈতনীতি:
ট্রাম্পের শান্তি আলোচনার মধ্যেই সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা
-
ডোনাল্ড ট্রাম্প
পার্সটুডে: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন পশ্চিম এশিয়ায় শান্তি–আলোচনার অগ্রগতি ও গাজায় দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতির শিগগিরই শুরু হওয়ার কথা বলছেন, ঠিক তখনই মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট সিরিয়ায় তাদের সামরিক হামলা অব্যাহত রেখেছে। দেশটির দীর্ঘদিনের আঞ্চলিক নীতি ও সৃষ্ট সংকট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেই সমালোচনা নতুন করে জোরালো হয়েছে।
গাজায় শান্তির দাবি, বাস্তবে চলছে গণহত্যা
হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সামনে ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, “মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির জন্য পরিস্থিতি খুবই ভালো দিকে যাচ্ছে।” কিন্তু তিনি কোনো বিস্তারিত তথ্য দেননি।
এই কথার মাঝেই খবর আসছে, আমেরিকার সবচেয়ে কাছের মিত্র ইসরায়েল প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতিকেও মানছে না। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরেও গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৪০০ ফিলিস্তিনি শহীদ এবং এক হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
শান্তির বুলি আর মাটির বাস্তবতার এই বিশাল ফারাকের কারণে আমেরিকার কূটনৈতিক কথাবার্তার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
সিরিয়ায় আমেরিকার হামলা থামছেই না
ট্রাম্পের শান্তির দাবির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সিরিয়ার রাক্কা প্রদেশে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন জোট নতুন করে দুটি বিমান হামলা চালিয়েছে। লক্ষ্যবস্তু ছিল রাক্কার পশ্চিমে আল-মানসুরা এলাকা এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে রুতলা মরুভূমি।
২০১৪ সাল থেকে আমেরিকা বলছে, তারা সিরিয়ায় শুধু দায়েশের বিরুদ্ধে লড়ছে। কিন্তু এই হামলায় বহু সাধারণ মানুষ মারা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। স্বাধীন তদন্তকারীরা বলছেন, এগুলো যুদ্ধাপরাধের শামিল। সিরিয়ায় আমেরিকার সামরিক উপস্থিতির বৈধতাই এখন প্রশ্নের মুখে।
সন্ত্রাসবাদের উত্থানে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা
যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনপূর্ব রাজনীতির উত্তাপে দেশটির নীতিনির্ধারকদের অনেকেই স্বীকার করছেন যে, পশ্চিম এশিয়ায় সন্ত্রাসবাদ বিস্তারে ওয়াশিংটনের দীর্ঘমেয়াদি নীতি বড় ভূমিকা রেখেছে। সমালোচকদের মতে, ১১ সেপ্টেম্বর হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপই এলাকাজুড়ে অস্থিতিশীলতা বাড়িয়েছে।
ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আল-কায়েদা গোষ্ঠী তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রই সহায়তা দিয়েছিল। পরে সেই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধেই আবার লড়াই শুরু হয়। ট্রাম্প নিজেও স্বীকার করেছেন যে, ওবামা সরকারের সময় নীতিগত ভুলের কারণে আইএস-এর উত্থান ঘটে, যা পরবর্তীতে সিরিয়া ও ইরাকে আরও বৃহৎ হস্তক্ষেপের অজুহাত তৈরি করে।
দ্বিমুখী নীতির ফল
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির বড় বৈপরীত্য হলো- একদিকে শান্তির মধ্যস্থতা করার দাবি, অন্যদিকে অব্যাহত সামরিক অভিযান এবং মানবাধিকারবিরোধী কাজে জড়িত মিত্রদের প্রতি অন্ধ সমর্থন। পাশাপাশি অতীতের নীতি–ভুলের কারণে সৃষ্ট সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিষয়ে সাম্প্রতিক স্বীকারোক্তি ওয়াশিংটনের কূটনীতি আরও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। মনে হচ্ছে, যতদিন ওয়াশিংটনের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ অঞ্চলের জনগণের অধিকারের আগে অগ্রাধিকার পাবে, ততদিন ট্রাম্প ও অন্যান্য মার্কিন কর্মকর্তাদের শান্তির দাবি- পশ্চিম এশিয়ায় স্থায়ী স্থিতিশীলতার পথ দেখাতে সক্ষম হবে না।#
পার্সটুডে/এমএআর/৪