ট্রাইবুন্যালে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন, ফজলুর রহমান ও জেড আই খান পান্না
-
ট্রাইবুন্যালে ক্ষমা নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন,বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান ও শেখ হাসিনার আইনজীবী জেড আই খান পান্না
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ফজলুর রহমান। এ তথ্য জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।
একটি টেলিভিশনে আলোচনা অনুষ্ঠানে ট্রাইব্যুনাল নিয়ে করা একটি মন্তব্যের জন্য ফজলুর রহমানকে তলব করা হয়েছিল। তাঁকে ৮ ডিসেম্বর একাডেমিক, বার কাউন্সিল সনদসহ আদালতে উপস্থিত হতে বলা হয়েছিল।
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আজ (বুধবার) সাংবাদিকদের বলেন, ফজলুর রহমান আদালতের কাছে ‘আনকন্ডিশনাল অ্যাপোলজি’ (নিঃশর্ত ক্ষমা) প্রার্থনা করেছেন। তিনি একটা পিটিশন জমা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যা কিছু তিনি বলেছেন, সেটা ভুলে বলেছেন এবং তিনি আদালতের ‘মার্সি’ চান।
ক্ষমা চেয়ে করা এই আবেদনের বিষয়ে আদালত কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। ৮ ডিসেম্বর শুনানির নির্ধারিত দিনে সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানান তাজুল। ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে ফজলুর রহমানের কোনো বক্তব্য জানা যায়নি।
একসময়ের আওয়ামী লীগ নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান কৃষক, শ্রমিক, জনতা লীগ হয়ে এখন বিএনপিতে আছেন। আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি।
সম্প্রতি এক টিভি টক শোতে তাঁর করা একটি মন্তব্য ট্রাইব্যুনালের সামনে তুলে ধরে আদালত অবমাননার অভিযোগ করে প্রসিকিউশন। এরপর গত ৩০ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল ফজলুর রহমানকে তাঁর একাডেমিক ও বার কাউন্সিল সনদ নিয়ে সশরীর হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীমের ভাষ্য অনুযায়ী, ‘টক শো’তে ফজলুর রহমান বলেছেন, তিনি এই ট্রাইব্যুনাল মানেন না। কারণ, এই ট্রাইব্যুনাল তৈরি হয়েছে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য। এই ট্রাইব্যুনালে অন্য কোনো বিচার হতে পারে না।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জুলাই আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার এখন চলছে। জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার এই ট্রাইব্যুনাল সচল করে।
ট্রাইব্যুনালের তলবে হাজির হয়ে ক্ষমা চাইলেন জেড আই খান পান্না
এদিকে, বাংলাদেশে গুম-নির্যাতনে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হয়ে আবার অপারগতা প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না।
বুধবার ট্রাইব্যুনাল-১ এ হাজির হয়ে তিনি ফের শেখ হাসিনার পক্ষে আইনি লড়াই না চালানোর বিষয়টি অবহিত করেছেন।
এছাড়া নিজে ইচ্ছা প্রকাশ করে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হওয়ার পরও এখন অপারগতা প্রকাশ করায় ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এর আগে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার অপারগতার কথা প্রকাশ করেন এবং ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদন করে তা জানিয়েছেন।
গেল ২৩ নভেম্বর এ মামলার অভিযোগ গঠন নিয়ে শুনানির জন্য ৩ ডিসেম্বর দিন ধার্য করা হয়। ওই দিন শেখ হাসিনার পক্ষে দাঁড়ানোর আবেদন করেন জেডআই খান পান্না এবং ট্রাইব্যুনাল যথারীতি তাকে রাষ্টনিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগ দেওয়ার আদেশ দেয়।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের দুপুরে ট্রাইব্যুনাল-১ এ র্যাবের টিএফআই সেলে নির্যাতনের মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু হয়।
প্রধান কৌঁসুলি অভিযোগ গঠনের শুনানি করছিলেন। এক পর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান নির্দেশ দেন যেন আইনজীবী জেড আই খান পান্নাকে ‘এখনই’ ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে বলা হয়। এর ১০/১২ মিনিটের মধ্যে পান্না হুইল চেয়ারে করে ট্রাইব্যুনালে হাজির হন।
এ সময় ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান পান্নার কাছে তিনি সুস্থ আছেন কিনা জানতে চেয়ে বলেন, আপনি শেখ হাসিনার পক্ষে নিয়োগ চেয়ে অনুমতি পেয়েছেন। কিন্তু আসেননি। আপনার অনুপস্থিতিতে শুনানি করতে হয়েছে। যেটা হয়ে গেছে এখন আবার তার শুনানি করতে হবে। নিয়ম হচ্ছে উপস্থিতিতে অভিযোগের শুনানি করতে হয়। পান্না বলেন,“আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। এ মামলায় না দাঁড়ানোর জন্য আমি রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি।”
ট্রাইব্যুনাল বলেন,'আপনার ক্লায়েন্ট হাজির হবেন না; আপনিও আসবেন না। আপনি নিজেই আগ্রহ দেখিয়েছেন আইনজীবী হওয়ার জন্য। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা অর্ডার দিয়েছি। আপনি না করতে চাইলে ট্রাইব্যুনালে এসে বলতে হবে। এছাড়া আপনি এক ভিডিও বার্তায় ট্রাইব্যুনাল নিয়ে মন্তব্য করেছেন যে আপনার ক্লায়েন্ট এই আদালত মানেন না। এজন্য আপনিও মানেন না। এটা কি আপনি বলতে পারেন?'
জেডআই খান পান্না বলেন, 'আমি আনকনডিশনাল অ্যাপোলজি চাই।' তখন ট্রাইব্যুনাল ফের জানতে চান তিনি এ মামলায় লড়বেন কিনা। জবাবে না বলেন আইনজীবী পান্না।
এ সময় প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, তিনি একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হয়ে সামাজিক মাধ্যমে ট্রাইব্যুনাল সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন তা অবমাননাসূচক। এরপর ট্রাইব্যুনাল বলেন, 'আমরা আশা করব আপনার কাছ থেকে সহায়তা পাব।'
এ সময় ট্রাইব্যুনাল তার বদলে কাকে নিয়োগ দেওয়া হবে সে বিষয়ে কোনো সুপারিশ আছে কিনা জানতে চান। পান্না এর জবাবে, না বলেন। তখন ট্রাইব্যুনাল উপস্থিত আইনজীবী মো. আমির হোসেনকে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ পেতে আগ্রহী কিনা জানতে চান। আমির হোসেন আগ্রহ প্রকাশ করলে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
আমির হোসেন এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে আইনি লড়াই করেছেন, যেটাতে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। গত ৫ অগাস্ট অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অভ্যুত্থান দমানোর চেষ্টায় হত্যা, গুম-নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার চলছে।
তার সরকারে সময় স্থাপন করা এই ট্রাইব্যুনাল একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে জামায়াত-বিএনপির কয়েকজন নেতাকে ফাঁসির রায় দিয়েছিল, যা কার্যকর করা হয়।#
পার্সটুডে/জিএআর/৩