জুন ২৭, ২০২৩ ২১:৩৪ Asia/Dhaka

যৌবন বা তারুণ্য হল আবেগ ও বুদ্ধিমত্তার এক সাগর যা তরুণ হৃদয়ের গতিশীলতা ও উদ্দীপনার তরঙ্গকে করে আলোড়িত। যৌবন বা তারুণ্য হল সজীবতা এবং প্রাণশক্তির প্রতীক।

হে দুরন্ত পথিকের দল!

আলোর মিছিল নিয়ে এগিয়ে চল!

দু পায়ে দলে দিয়ে সব সন্ত্রাস আর শোষণের যাঁতাকল

চাপিয়ে-দেয়া দারিদ্র আর অন্যায় অবিচারের সব শেকল

এসো গড়ি হেরার মসৃণ রাজপথ!

গড়ি স্বপ্নের মদিনা অবিকল!

হে সোনালী সময়ের যুব যুবার দল!

এসো যোগাই জীর্ণ-প্রাণে মহাবল!

হায়দারি হাঁক হেঁকে অসত্যের হিমালয়গুলোর ঘটাই পতন।

 আকাশে বাতাসে উড়বে আবারও মহাসত্যের বিজয় কেতন

হবে নতুন খাইবার শাইলকদের তেল-আবিব আর পেন্টাগন!

জীবনের সবচেয়ে বাসন্তিময় মুহূর্তগুলো নিয়ে গড়ে-ওঠা যৌবনের দিনগুলো খুব দ্রুত চলে যায় এবং প্রাণবন্ত বছরগুলো আর বার্ধক্যের সীমানাও ডিঙ্গিয়ে এক সময় শেষ হয়ে যায় জীবনের আয়ু। তাই একজন তরুণের উচিত কোনো অবসন্নতা ও  উদাসিনতা ছাড়াই আগামীর দিকে এগিয়ে যাওয়া। আর তাহলেই জীবন ও যৌবন হয়ে উঠবে সবচেয়ে সুন্দর। আশা, উদ্দীপনা ও আত্মবিশ্বাস ছাড়া জীবনে এগিয়ে যাওয়া যায় না। তাই সফল জীবন গড়ে তোলার জন্য জরুরি তারুণ্যের উদ্দীপনা ও গতিশীলতা এবং দৃঢ় সংকল্প নিয়ে আশাবাদী হওয়া।

প্রাণবন্ততা, প্রফুল্লতা, সক্রিয়তা ও গতিশীলতা তারুণ্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। একজন যুবকের শরীর এবং মনে যে পরিবর্তনগুলি ঘটে তার ফলে সে নিজেকে এক নতুন জগতে দেখতে পায়। তাই একজন যুবকের আচরণ শৈশবের আচরণ থেকে পুরোপুরি ভিন্ন ধরনের হয়। ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে, সঠিক বিশ্বাস ও সঠিক আচরণই যুবসমাজের প্রাণশক্তির চাবিকাঠি। ইসলামের বাইরের দৃষ্টিকোণগুলোয় যে কোন হাসি এবং কৌতুককে প্রফুল্লতার লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তবে ইসলাম বিশ্বাস করে যে বাহ্যিক প্রফুল্লতা এমন জোরালো হওয়া উচিত যাতে কঠিন সংকটের মধ্যেও আশা ও উদ্দীপনা বজায় থাকে। ইসলাম মানসিক, আত্মিক ও বাহ্যিক প্রফুল্লতা বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দেয়।

প্রত্যেক মানুষই দুঃখ ও বেদনাকে এড়িয়ে যেতে চায়। তাই সমাজকে প্রফুল্ল করতে হলে ব্যক্তি-জীবনে ও পারিবারিক জীবনেও প্রফুল্লতার বন্যা বইয়ে দেয়া অপরিহার্য। মানুষ তার সব কিছু ব্যবহার করতে চায় সুখ আর প্রফুল্লতা অর্জন করতে। আর ইসলামও বৈধ পন্থায় প্রফুল্লতা অর্জন করতে বলে, আর হতাশ ও ম্রিয়মাণ হতে নিষেধ করে। বিশেষ করে যুব সমাজের জন্য প্রফুল্লতা ও আনন্দ-উদ্দীপনা খুবই জরুরি। কোনো কোনো দেশে মানসিক রোগের চিকিৎসায় হাসি-থেরাপি ব্যবহার করা হচ্ছে। এই চিকিৎসা অনেক ক্ষেত্রে শারীরিক রোগের উপশম ঘটাচ্ছে। হযরত আলীও মনে করতেন হাসি-খুশির প্রবণতা মানুষের হৃদয়কে করে প্রশস্ত ও এনে দেয় অনাবিল প্রশান্তি আর প্রফুল্লতা।

আনন্দ বাড়িয়ে দেয় আত্মবিশ্বাস ও আশাবাদ। যে কোনো দেশের আগামী দিনের ভবিষ্যৎকে তথা যুব সমাজকে গতিশীল ও উদ্দাম রাখতে আনন্দ ও বিশুদ্ধ বিনোদনের ব্যবস্থা জরুরি। নানা ধরনের মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে  ইসলামী ইরানের আদর্শবাদী যুব সমাজকে হতাশ করে দেয়ার জন্য পশ্চিমা শত্রুরা শত শত মিডিয়া ও হাজার হাজার ইন্টারনেট-ভিত্তিক ওয়েব সাইট এবং সোশাল মিডিয়া ব্যবহার করছে যাতে বিপ্লবী এই জাতি তাদের অবৈধ দাবিগুলো মেনে নেয়। মানুষ যখন হতাশ হয় তখন আত্মবিশ্বাস, গতিশীলতা ও আনন্দ হারিয়ে ফেলে। ইরানের শত্রুরা এই কৌশল প্রয়োগ করে ইসলামী এই দেশটির অগ্রগতি থামিয়ে দিতে চায় বলে সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ি প্রায়ই সতর্ক করে দিচ্ছেন প্রিয় ইরানি জাতিকে।

কোনো কোনো দেশে মানসিক রোগের চিকিৎসায় হাসি-থেরাপি ব্যবহার করা হচ্ছে

আনন্দ, বিনোদন ও রসিকতার সংস্কৃতি সমাজে কমিয়ে দেয় অপরাধ-প্রবণতা। আনন্দিত ও প্রফুল্ল যুব সমাজের মনে অপরাধের চিন্তাও আসার সুযোগ পায় না। আনন্দ ও প্রফুল্লতা পারিবারিক বন্ধনকেও করে সুদৃঢ়। ফলে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস, প্রশান্তি ও উদ্দীপনাও বেড়ে যায়। আনন্দ ও উদ্দীপনা লাভের এক বড় পন্থা হল জ্ঞান চর্চা যা এনে দেয় সচেতনতা।    আমিরুল মুমিনিন হযরত আলীর মতে, যে কোনো কাজ বা আন্দোলনের জন্য জরুরি হল জ্ঞান অর্জন। নিজেকে নিজে তিরস্কার করবেন না, কারণ তা আপনার মনে নেতিবাচক বার্তা পৌঁছে দেয়। বরং মাঝে মাঝে নিজেই নিজের প্রশংসা করুন। নিজেকে পুরস্কার দিন। এতে আপনার মন ভরে উঠবে প্রফুল্লতায়। নিজের ইতিবাচক গুণ বা যোগ্যতাগুলোর কথা ভেবে নেতিবাচক চিন্তাগুলোকে মন থেকে ঝেড়ে বিদায় করুন যাতে মনের মধ্যে দুঃখ ও বেদনা বাসা বাঁধতে না পারে ।

নিজের সীমাবদ্ধতাগুলোর কথা মেনে নিন, তবে সমস্যার পাহাড়গুলোকে দেখে ভয় পাবেন না বরং সাফল্যের আশা রাখুন। আর এভাবেই এগিয়ে যান সাহস নিয়ে এবং জীবনে প্রতিষ্ঠা করুন আনন্দের কর্তৃত্ব। কর্ম-উদ্যমী ও অধ্যবসায়ী হোন, অলস বা আরাম-প্রিয় হবেন না। মহানবী (সা) কর্মপ্রচেষ্টার মাধ্যমে আয়-উপার্জন করে অর্থ সংকট দূর করার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি এক্ষেত্রে হতাশ হয়ে বসে না থাকার কিংবা দুঃখিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। নিয়মিত শরীর চর্চা করুন। আধুনিক প্রযুক্তির সুবাদে মানুষের শরীর চর্চা কমে যাচ্ছে ফলে প্রফুল্লতম মানুষেরাও হারিয়ে ফেলছে আনন্দ। শরীর চর্চা শরীরের বাহ্যিক সৌন্দর্য টিকিয়ে রাখে এবং ইতিবাচক চিন্তাশীলতা ও  বুদ্ধিমত্তাও বাড়িয়ে দেয়। আপনি কল্যাণকর আদর্শ প্রচার করতে চাইলে প্রথমেই বেছে নিন যুব সমাজকে। কারণ বৃদ্ধ বা বেশি বয়স্ক ব্যক্তিদের তুলনায় যুব সমাজই কল্যাণের দিকে দ্রুত ছুটে আসে। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/২৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন

 

 

ট্যাগ