আগস্ট ২৪, ২০২৩ ১৯:৪৩ Asia/Dhaka

ইসলাম পরিবার ব্যবস্থাকে দিয়েছে সর্বোচ্চ গুরুত্ব। পরিবার মহান আল্লাহর প্রিয়তম প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠান শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, মানবীয় মহতী গুণগুলো বিকাশের ও ব্যক্তিত্ব বিকাশের কেন্দ্র।

  মায়ের ও স্ত্রীর ভূমিকায় থাকা নারী পরিবারে যোগায় স্নেহ, মায়া-মমতা ও আন্তরিকতার অপূর্ব পরিবেশ। আসলে স্ত্রী ও মা হচ্ছেন পরিবারে প্রশান্তির মূল কেন্দ্র। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ির মতে পরিবার হচ্ছে স্নেহ ও প্রীতির বন্ধন বিকাশের কেন্দ্র। পরিবারের শিশুরা বড়দের কাছ থেকে স্নেহ ও মমতার পরশ পেয়ে থাকে। তাঁর মতে পরিবারের পুরুষ তথা স্বামী/ স্ত্রীর তুলনায় কিছুটা বেশি কাঁচা ও বিশেষ ক্ষেত্রে ভঙ্গুর প্রকৃতির হয়ে থাকেন, কিন্তু স্ত্রীর যত্ন ও সেবা তার এ ধরনের ঘাটতি বা ক্ষতের ক্ষেত্রে কোমল মলমের কাজ করে, এমনকি মায়ের যত্নও এর পরিপূরক হয় না, শিশুর জন্য তার মা যে কাজ করেন স্ত্রী এখানে স্বামীর জন্য ঠিক সে ভূমিকাই রাখেন। আর সুক্ষ্মদর্শী ও সচেতন নারীরা এ বিষয়টি বোঝেন।

 ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আরও মনে করেন পরিবার গঠন খুবই জরুরি, সুস্থ পরিবার সুস্থ মানুষ গড়ে তোলে ঠিক যে ধরনের আদর্শ মানুষ গড়তে চায় ইসলাম। ইসলামের কাঙ্ক্ষিত আদর্শ সমাজ গঠনে সুস্থ পরিবারের প্রভাব বেশ গুরুত্বপূর্ণ।পরিবারের সাফল্যে নারীর রয়েছে খুব গুরুত্বপূর্ণ বা কেন্দ্রীয় ভূমিকা। এই ভূমিকা শুরু হয় স্ত্রী ও মা হিসেবে। যুগে যুগে এ পর্যায়েই নারী সমাজ সবচেয়ে বেশি মাত্রায় নির্যাতিত হয়েছে। আর তাই ইসলাম এ পর্যায়ে নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে বিশেষভাবে জোর দিয়েছে। পবিত্র কুরআনে সুরা বাকারার ১৮৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: স্ত্রীরা হল পুরুষদের পোশাক আর তোমরা তথা পুরুষরা হলে স্ত্রীদের পোশাক। একই সুরার ২২৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: তোমাদের ওপর স্ত্রীদের যে অধিকার আছে তা যথাযথভাবে পালন কর। -এসব আয়াত থেকে নারী ও পুরুষের তথা স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক অধিকারের প্রতি ইসলামের গুরুত্ব ফুটে উঠেছে।–

সমাজে মা ও স্ত্রীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা তুলে ধরে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের রূপকার ইমাম খোমেনি (র) বলেছেন, পুরুষরা নারীর মাধ্যমেই বড় হয়। নারীরাই পুরুষদের সুশিক্ষিত করেন। তাই নারীদের উচিত নিজেদের গুরুত্ব উপলব্ধি করা। ইসলাম এই গুরুত্বকে অনুধাবন করে। -আদর্শ স্বামী ও স্ত্রী পরস্পরের কল্যাণে ও সহযোগিতায় এবং পারস্পরিক ভালোবাসায় হন নিবেদিত-প্রাণ! স্ত্রীর উচিত স্বামীর দুঃসময়ে ও সুখের সময়ে তার সহযোগী হওয়া এবং বিপদের সময় তাকে সান্ত্বনা ও ভরসা দেয়া তথা স্বামীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা। একজন ভালো স্ত্রী স্বামীর জন্য ত্যাগ স্বীকার করেন এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে থেকে স্বামীর প্রতি সব দায়িত্ব পালন করে ভালোবাসা ও সমঝোতার প্রমাণ দেন।

স্ত্রীরা হল পুরুষদের পোশাক আর পুরুষরা হলে স্ত্রীদের পোশাক: আল-কুরআন

একজন  ভালো মুসলিম স্ত্রীর উচিত স্বামীর প্রতি সব সময়ই মমতাময়ী হওয়া, ফলে সংকটের সময় তিনি উদ্বিগ্ন স্বামীকে যোগাবেন সাহস ও প্রশান্তি। তিনি স্বামীর ভুল-ত্রুটিগুলো উপেক্ষা করবেন এবং স্বামীর অপ্রিয় আচরণগুলোর মোকাবেলায় হবেন ধৈর্যশীল। আর এইসব বৈশিষ্ট্যই স্বামীর মধ্যেও থাকা জরুরি। একজন দক্ষ স্ত্রী তার ভালোবাসা ও ধৈর্যের মাধ্যম নিজের প্রতি এবং সন্তানের প্রতি স্বামীর ভালোবাসা আকৃষ্ট করতে সক্ষম হন। একজন ভালো বা দক্ষ স্ত্রী স্বামীর সম্পদ রক্ষায় হন একনিষ্ঠ এবং স্বামীর দুর্বলতাগুলো তুলে ধরেন না অন্যদের কাছে। স্বামীর সঙ্গে যথাযোগ্য আচরণ করে স্ত্রী তার কন্যাকেও প্রয়োজনীয় অনেক কিছু শেখাতে সক্ষম হন। পরিবারে নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধগুলো মেনে চলা হলে পরিবার হয়ে ওঠে শান্তি ও সৌভাগ্যের নীড়।  

 ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ির মতে মাতৃত্ব বা গিন্নিপনা হচ্ছে এমন এক অপূর্ব শিল্প যা কেবল নারীই রপ্ত করতে পারেন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন, একমাত্র নারীই উপহার দিতে পারেন নতুন মানব প্রজন্ম তথা সন্তান এবং সন্তানকে সুশিক্ষাও সবচেয়ে ভালোভাবে দিতে পারেন নারী তথা মা। সন্তানকে জন্ম দেয়ার জন্য যে অসাধারণ ধৈর্য ও কষ্ট সহ্য করতে হয় তা কেবল নারীরাই সহ্য করতে পারেন। আর এখানেই হচ্ছে নারীর শ্রেষ্ঠত্ব। এ জন্যই মহান আল্লাহ সন্তানের প্রতিপালন ও সুশিক্ষার দায়িত্ব পুরুষের ওপর অর্পণ না করে এই দায়িত্ব অর্পণ করেছেন নারীর ওপর। মহান আল্লাহ নারীর শারীরিক অবস্থাকেও এইসব দায়িত্ব পালনের উপযোগী করে গড়ে তুলেছেন। কম সন্তান নেয়ার সংস্কৃতিও একটি মারাত্মক ভুল সংস্কৃতি। খুব দেরিতে বিয়ে করা বা বিয়ে না করাও এক মারাত্মক ভুল সংস্কৃতি। একটি সমাজে নবজাতকের সংখ্যা কমে গেলে সেখানে বৃদ্ধদের সংখ্যা বেড়ে যাবে এবং এর ফলে সমাজের অগ্রগতির ধারা স্থবির হয়ে পড়বে।  

মানব সম্পদ হচ্ছে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। আর নারীর গিন্নিপনা বা গৃহিণীর ভূমিকায় থাকা মানে মানুষ জন্ম দেয়া এবং মানুষকে প্রকৃত মানুষের মতই সুশিক্ষিত করা। মায়েদের এই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছাড়া সুস্থ পরিবার ও সুস্থ বা প্রাণবন্ত ইসলামী সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব নয় বলে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা মনে করেন।

পরিবারে মা-বাবা যদি যথাযথভাবে সন্তানের দেখাশুনা ও প্রতিপালনের এবং প্রশিক্ষণের দায়িত্ব পালন না করেন তাহলে দায়িত্বশীল ও ধার্মিক সন্তান গড়ে উঠবে না।  তাই পরিবারের সদস্যদের সব ধরনের বিচ্যুতি থেকে রক্ষার জন্য অভিভাবক হিসেবে মা ও বাবাকে খুবই সতর্ক এবং সদা-সচেতন থাকতে হবে। পরিবারের ওপর যেসব দিক থেকে বিপদ-আপদ ও ক্ষতিকর চ্যালেঞ্জ আসতে পারে সেসব বিষয়ে জ্ঞান অর্জন ও সচেতনতা থাকা সব মা বাবার জন্যই অত্যন্ত জরুরি।  #

পার্সটুডে/এমএএইচ/২৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

 

ট্যাগ