সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৩ ১৮:০০ Asia/Dhaka

প্রিয় পাঠক ও শ্রোতাবন্ধুরা! সালাম ও শুভেচ্ছা নিন। আশা করি যে যেখানেই আছেন ভালো ও সুস্থ আছেন। আজ আমরা শুনবো ইরানের প্রাচীন একটি গল্প। গল্পটি বেশ শিক্ষণীয়।

মনোযোগ সহকারে শুনলে শিক্ষাগুলো অনুধাবন করতে পারার কথা। আশা করি আপনারা সবসময়ই মনোযোগের সঙ্গেই এ আসরের গল্পগুলো শুনে থাকেন। এভাবে বলার জন্য কেউ মনক্ষুন্ন হবেন না বলেই আমাদের বিশ্বাস। গল্পের সূচনাটি এরকম: আগেকার দিনে সবুজ বন-বনানীর ভেতর পুকুর-দিঘি কিংবা লেকও থাকতো। ওইসব লেকে মাছ থাকতো। মাছ খাবার জন্য সেখানে হাঁস আসতো। ঠিক এরকমই একটি বাগানে বাস করতো একটি হাঁস।

ওই বাগানের ভেতর যে লেক ছিল সে লেকটি বিচিত্র মাছে পরিপূর্ণ ছিল। হাঁসটি শুনেছিল যে মাছ নাকি খেতে খুবই সুস্বাদু। কিন্তু সে আজ পর্যন্ত মাছ দেখে নি, খেয়ে দেখার তো প্রশ্নই আসে না। তাই সে সিদ্ধান্ত নিলো ভরা জোছনার কোনো এক রাতে ওই লেকে গিয়ে একটা মাছ ধরবে। সিদ্ধান্ত মতো সে এক জোছনা রাতে ওই লেকে গেল। লেকের পানিতে পূর্ণিমার চাঁদের প্রতিচ্ছবি দুলছিল। হাঁসটি তো কোনোদিন মাছ দেখে নি। তাই সে ভাবতে পারছিল না ওটাই মাছ নাকি অন্যকিছু। অনেক সময় ধরে সে পানির ওপর ওই চাঁদের প্রতিচ্ছবি দেখে দেখে ভাবলো: এটাই মাছ হবে। এছাড়া তো লেকে আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। 

হাঁসটি পানির ওপর চাঁদের প্রতিচ্ছবির দিকে তাকিয়েই ছিল। হঠাৎ করে সে ঝাঁপিয়ে পড়লো তার ওপর। সে ভেবেছিল ওটাই মাছ। তাই ব্যাপক চেষ্টা করলো ধরার। সে দেখলো সমগ্র লেক জুড়ে চাঁদ দোল খাচ্ছে। সেই চাঁদ আবার ভেঙে টুকরো টুকরোও হয়ে গেছে। কিন্তু কিছুতেই তাকে ধরতে না পেরে হতাশ হয়ে গেল। মাছ ধরতে না পেরে অবশেষে বিফল মনোরথে সে অন্য দিকে সাঁতরাতে লাগলো। কিন্তু মন থেকে তার চাঁদের টুকরো হয়ে যাবার দৃশ্যও গেল না, মাছও গেল না। আবারও তাই মাছ ধরার চেষ্টা করলো এবং আবারও ব্যর্থ হলো। এভাবে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করে ক্লান্ত হয়ে পড়লো। সুতরাং নিজের আবাসস্থলের দিকে চলে গেল।

হাঁস মনে মনে ভাবলো মাছ ধরা সহজ কোনো কাজ নয়। এটা খুবই দু:সাধ্য একটা কাজ। তারপরও তার মন থেকে মাছ খাওয়ার বাসনা মিটে গেল না। পরদিন রাতে আবারও সে গেল ওই লেকে। কৌতূহল মেটানোর ব্যাপারে সে অনেকটা অঙ্গিকারাবদ্ধ হয়ে পড়লো। লেকের পানিতে আবারও সেই চাঁদের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেল। আবারও সে আগের মতোই পানিতে দাপাদাপি করে চাঁদ মানে তার ভাবনায় মাছ ধরার চেষ্টা করলো এবং সেই আগের মতোই কিছু ধরতে ব্যর্থ হলো। সুতরাং আবারও সে হতাশ হয়ে বাসায় ফিরে গেল। এবার আরও বেশি নিশ্চিত হলো যে মাছ ধরা অসম্ভব ব্যাপার। সকাল হলো। কিন্তু মাছ ধরার চিন্তা তার মাথা থেকে গেল না।

সকালে হাঁসটি বৃদ্ধ একটি হাঁসের কাছে গিয়ে বিষয়টা জানিয়ে বললো: শুনেছি মাছ নাকি খুবই সুস্বাদু। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতায় মনে হয়েছে মাছ ধরা প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার। বৃদ্ধ হাঁস জানতে চাইলো: অসম্ভব কেন? তুমি কীভাবে মাছ ধরতে চেয়ে ধরতে পারো নি? তরুণ হাঁসটি বললো: আমি পানিতে জ্বলজ্বলে বিদ্যুতের মতো কিছু একটা দেখে তাকে ধরতে চেয়েছি। কিন্তু সে ভেঙেচুরে সাঁতরাতে লাগলো এবং দূরে সরে গেলো। পানি থেকে যখন উঠে এলাম তাকে আবার তার আগের জায়গায় দেখতে পেলাম। বৃদ্ধ হাঁস হাসতে হাসতে বললো: তুমি পানিতে যা দেখেছো তা মাছ ছিল না বরং চাঁদের প্রতিচ্ছবি দেখেছো। তুমি তাকেই ধরতে চেয়েছো।

বৃদ্ধ হাঁস পরামর্শ দিলো: এই গল্প তুমি আর কারও কাছে করো না। কেননা তোমার অজ্ঞতার গল্প শুনে সবাই হাসাহাসি করবে। নিজের দুর্বলতার কথা অন্যদের জানিয়ে কী লাভ। তারচেয়ে বরং তুমি মনে রেখো ভবিষ্যতে মাছের পরিবর্তে আর চাঁদের প্রতিচ্ছবির পেছনে দৌড়ে কাজ নেই। কেউ যদি কোনো একটা ভুল কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করার পর আবারও তা করে তাহলে তাকে অনুশোচনা করতে হবে। তরুণ হাঁস বৃদ্ধ হাঁসের কথা শুনে বললো: হ্যাঁ, তুমি ঠিকই বলেছো! আমার ভুল হয়েছে। কিন্তু তারপরও ভীতু এবং লাজুক তরুণ হাঁস বৃদ্ধ হাঁসের কাছে জানতে চাইলো না মাছ দেখতে কী রকম? কোনো কিছু না জানলে জানতে চাওয়ায় যে দোষের কিছু নেই সে তা জানতো না।

বলছিলাম যে তরুণ হাঁস লজ্জায় বৃদ্ধ হাঁসের কাছে জানতে চায় নি মাছ দেখতে কেমন? সে যদি অন্য কারও কাছে জানতে চাইতো তারা নিশ্চয়ই মাছ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারনা তাকে দিতো। এই ঘটনার পরও কিন্তু সে কারও কাছে মাছ সম্পর্কে জানতে চায় নি। ওই চিন্তাই তার মাথায় কাজ করে নি। এ কারণে সমস্যা যেটা হলো, তা হলো সে যখন ওই পানিতে প্রকৃত মাছ দেখতে পেলো তখনও সে ভেবেছে ওটা চাঁদেরই প্রতিচ্ছবি। 

মনে মনে তাই সে বললো: কেউ যদি তার শেখা অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি করে তবে সেটি তার জন্য খুবই দুঃখজনক। অতএব সে হতাশাই লালন করলো। কখনোই সে তার ইচ্ছা মানে সুস্বাদু মাছ খাওয়ার বাসনা পূর্ণ করতে পারলো না।#

পার্সটুডে/এনএম/২৮/১০৪

মূল ফার্সি গল্পের রূপান্তর: নাসির মাহমুদ

ট্যাগ