সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৩ ২১:২৮ Asia/Dhaka

রংধনু আসরের কাছের ও দূরের শিশু-কিশোর বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই জানো যে, আরবী রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ মতান্তরে ১৭ তারিখে পৃথিবীতে এসেছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব বিশ্বনবী হযরত মুহম্মদ (সা.)। তাঁর চেয়ে উত্তম কোনো সন্তান আজ পর্যন্ত পৃথিবীর কোনো মা জন্ম দিতে পারেননি, আর পারবেনও না কোনোদিন।

পূর্ণিমার চাঁদের আলোতে কলঙ্ক থাকলেও তাঁর চরিত্রে ছিল না বিন্দুমাত্র কলুষতার চিহ্ন। চাঁদ-সেতারাও তাঁর সৌন্দর্যের কাছে ছিল লজ্জিত। মাটির তৈরি মানুষ হয়ে নূরের তৈরি ফেরেশতাদের হাজার গুণ উপরে চলে গিয়েছিলেন তিনি। আকারে-আকৃতিতে জ্ঞানে-গুণে, স্বভাব-চরিত্রে তিনি অনন্য। তাঁর উত্তম চরিত্রের সার্টিফিকেট দিয়েছেন স্বয়ং মহান রাব্বুল আলামিন।  

সর্বগুণের আধার হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর শুভ জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রংধনুর আজকের আসরে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। এ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশের একঝাঁক ছোট্ট বন্ধু। আমাদের আজকের অনুষ্ঠানটিও তৈরি করেছেন আশরাফুর রহমান।

৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ১২ কিংবা ১৭ রবিউল আউয়াল সুবহ সাদিকের সময় পাখির কিচির-মিচিরে প্রকৃতি জেগে উঠেছে। পাখির মধুর কলরব আর জান্নাতি বাতাসের আনাগোনায় মক্কার পরিবেশ মনোরম হয়ে উঠেছে। মহাকালের সেই সুন্দর সময়ে মা আমিনার কোল আলোকিত করে পৃথিবীতে এলেন শিশু মুহাম্মদ। তাঁর আগমনের প্রেক্ষাপট এবং উদ্দেশ্য বর্ণনা করেছেন বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর এই গানে।

তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে

মধু পূর্ণিমারি সেথা চাঁদ দোলে

যেন ঊষার কোলে রাঙা-রবি দোলে।।

বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই জানো যে, রাসূল (সা.) যেদিন এই দুনিয়ায় আগমন করেন সেদিন মানুষ, পশু-পাখি, পাহাড়, পর্বত, মরুভূমি, গাছগাছালিসহ সবাই খুশীতে আত্মহারা হয়েছিল। কবি নজরুলের ভাষায়-

বয়ে যায় ঢল, ধরে নাকো জল আজি জমজম কুপে

সাহারা আজিকে উথলিয়া ওঠে অতীত সাগর রূপে।

পুরাতন রবি উঠিল না আর সেদিন লজ্জা পেয়ে

নবীন রবির আলোকে সেদিন বিশ্ব উঠিল ছেয়ে।

রাসূলের আগমনের পর প্রকৃতিতে কী ধরনের অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল তার কিঞ্চিৎ বর্ণনা জানলে কাজী নজরুল ইসলামের এ কবিতাটি থেকে। বন্ধুরা, তোমরা স্বীকার করবে যে, মহানবীর  জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত বিশ্ববাসীর জন্য শিক্ষণীয় এবং প্রতিটি ধাপই অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়। দয়া, মমতা, আচারনিষ্ঠা, পরমতসহিষ্ণুতা, মহানুভবতা, খোদাভীরুতা ও চারিত্রিক মাধুর্যতায় রাসূলেখোদার সঙ্গে কারও তুলনা চলে না। তাইতো আইরিশ লেখক জর্জ বার্নাডশ' বলেছেন ‘মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনী হল- এক তলাবিহীন সাগর এবং সীমাবিহীন সীমানার ন্যায়।'

অন্যদিকে ইতিহাসবিদ যোশেফ হল বলেছেন, "মুহাম্মদ (সা.) এমন একজন ব্যক্তি ছিলেন যাকে না পেলে বিশ্ব অসম্পূর্ণ থেকে যেত। তিনি নিজেই নিজের তুলনা। তাঁর কীর্তিময় ইতিহাস মানব জাতির ইতিহাসে এক উজ্জ্বল অধ্যায় রচনা করেছে।"

বন্ধুরা, তোমরা যারা ছোট তাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে- বিশ্বনবীর প্রতি আল্লাহর সৃষ্ট সব জীবের এত শ্রদ্ধা ও সম্মানের কারণ কি? কেনইবা তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানবের মর্যাদা পেলেন? এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে অনেক কথা বলতে হবে। কিন্তু রংধনুর এ ছোট্ট আসরে এ নিয়ে বিস্তারিত কথা বলা যাবে না। তবে এটুকু বলা যায়, পাপাচারে ভরপুর জাহেলি সমাজে বাস করেও তিনি ছিলেন পূত-নিখুঁত। সে সমাজেও তিনি ‘আল-আমীন' এবং ‘আস-সাদিক' উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন।

শুধু তাই নয়, কৈশোরের চপলতার কারণে তিনি সামান্যও পথবিচ্যুত হননি। যৌবনের বাঁধভাঙা জোয়ার, সীমাতিরিক্ত আবেগের কাছে তিনি পরাস্ত হননি। বংশপরম্পরায় চলে আসা গোত্রীয় যুদ্ধ-বিগ্রহে জড়িয়ে পড়েননি তিনি। জীবনে কাউকে কোনোদিন কটু কথা পর্যন্ত বলেননি। তাঁর আচরণে কেউ কোনোদিন বিন্দুমাত্র কষ্ট পায়নি। কোনো বিপদগ্রস্ত মানুষ তাঁর কাছে সাহায্য চাইতে এলে তাকে খালি হাতে ফিরে যেতে হয়নি। নিজের চিরশত্রুকে হাতের কাছে পেয়েও কোনো ধরনের প্রতিশোধ নেননি।

রাসূল (সা.) ছিলেন নিরাশ্রয়ের আশ্রয়দাতা, নিরন্নের অন্নদাতা, অসহায়ের আশার স্থল। সমাজের অধিপতি থেকে শুরু করে পথের ধূলিমাখা সুবোধ বালকও তাঁর বিশাল নিরাপত্তাময় বুকে স্থান পেয়ে ধন্য হতো। আকাশসম উদার হৃদয় দ্বারা তিনি আপন করে নিয়েছিলেন প্রতিটি মানুষকে। আর এজন্যই তিনি ছিলেন সবার আদর্শ। সবাই তাঁকে ভালোবাসে।

বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই জানো যে, বিশ্বনবী ছিলেন উস্ওয়া-এ-হাসানা বা ‘সুন্দরতম আদর্শ'। মহানবী মানুষের মাঝে অসীম ক্ষমতাধর এক আল্লাহর পরিচয় তুলে ধরে তাদেরকে শিরক, মূর্তি পূজা, জাদু-মন্ত্রসহ বিচিত্র কুসংস্কারের জিঞ্জির থেকে মুক্তি দিয়েছেন। তিনি মানব জীবনের অন্ধকার স্তরগুলোর মাঝে আলোকের জানালা খুলে দিয়ে শিখিয়েছেন যে, মানুষ যদি সত্য, জ্ঞান ও বাস্তবতার আলোকের পেছনে ছোটে, তাহলে অজ্ঞতা এবং অন্ধকার থেকে মুক্তি পেতে পারে। মানুষ নবীজির আহ্বানে সাড়া দেয়ার কারণে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। তাইতো তিনি আমাদের ভালোবাসা, তিনিই আমাদের আদর্শ।

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/২৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ