অক্টোবর ০২, ২০২৩ ১৮:৪৭ Asia/Dhaka

প্রিয় পাঠক ও শ্রোতাবন্ধুরা! সালাম ও শুভেচ্ছা নিন। আশা করি যে যেখানেই আছেন ভালো ও সুস্থ আছেন। আজ আমরা শুনবো ইরানের প্রাচীন একটি প্রবাদের গল্প। প্রবাদটি হলো: তুলা চোর তার দাড়িতে হাত বুলায়। গল্পটি এরকম:

বেশ প্রাচীনকালের কথা। এক ব্যবসায়ী ছিল। তার কাজ ছিল তুলা চাষীদের কাছ থেকে তুলা কেনা-বেচা করা। সে চাষীদের কাছ থেকে তুলা কিনে গুদামে জমা করে রাখতো। এরপর সেগুলোকে বস্তায় ঢুকিয়ে বিভিন্ন শহরের বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করতো।

এভাবে ব্যবসা করে লোকটি ভালো টাকা-পয়সার মালিক হয়ে গেল। এতোই ধনী হয়ে গেল যে অপরাপর ব্যবসায়ীরা তাকে হিংসা করতে শুরু করে দিলো। একজন অন্য এক ব্যবসায়ী একটা ষড়যন্ত্র করলো। সে রাতের বেলা তুলা ব্যবসায়ীর গুদামে ঢুকলো চুরি করার জন্য। কেউ যাতে জানতে না পারে সেজন্য সে একা একাই ঢুকলো এবং সকাল পর্যন্ত বেচারা ব্যবসায়ীর তুলা চুরি করতে করতে গুদাম প্রায় খালি করে ফেললো। তুলা নিয়ে রাখলো নিজের বাসার বেইজমেন্টে। সকাল হতে না হতেই তুলা ব্যবসায়ীকে খবর দিলো: কোথায় ছিলে তুমি! চোর তো তোমার সব সম্পদ চুরি করে নিয়ে গেল। টের পাও নি? 

ব্যবসায়ী তার মালামাল চুরি হবার কথা শুনে তাড়াতাড়ি গেল গুদামঘরের দিকে। গিয়েই তো তার মাথা খারাপ হয়ে যাবার মতো অবস্থা হলো। নিজেকে নিজে বললো: হায়রে নির্লিপ্ত মন! কী করবি এখন! সব কিছু খালি পড়ে আছে, কেউ নেই সাহায্য করার মতো। গুদাম খালি পড়ে আছে। গুদামের সব তুলা চুরি হয়ে গেছে। বেচারা ব্যবসায়ী চীৎকার চেঁচামেচি করে কান্নাকাটি করতে লাগলো। অবশেষে গেল বিচারকের বাড়িতে। বিচারককে ব্যবসায়ী পুরো ঘটনা খুলে বললো। সে অনুনয় বিনয় করে একটা সুষ্ঠু বিচার করার আবেদন জানালো। কাজি তুলা ব্যবসায়ীকে শান্ত হতে বললো। বাহিনীকে বললো বাজারে যেতে এবং চোরকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে।

বিচারকের বিশেষ বাহিনী তাই করলো। ব্যাপক তল্লাশি অভিযান চালিয়ে কয়েক ঘণ্টা পর তারা ফিরে এলো কাজির কাছে। তারা না তুলা চোরকে খুঁজে পেলো না ব্যবসায়ীর চুরি হওয়া তুলা। বিশেষ বাহিনীর রিপোর্ট শুনে বিচারক রেগে গিয়ে বললো: সেই সকালে তোমরা তল্লাশি করতে গেছো। এখন এসেছো খালি হাতে? কোনো খবর না নিয়ে? এমনকি একজনকেও সন্দেহজনক বলে মনে হয় নি তোমাদের? বিচারকের কথা শুনে বিশেষ বাহিনীর একজনের একটা চিন্তা মাথায় এলো এবং সে বললো: আমরা বহু মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। কিন্তু চোরকে খুঁজে বের করতে পারি নি। তবে ক'জনকে পেয়েছি যারা আমাদের প্রশ্নের যথাযথ জবাব দিতে পারে নি। তাদেরকে হয়তো সন্দেহজনক বলে মনে হতে পারে। কিন্তু সন্দেহ করার মতো কোনো তথ্য-প্রমাণ আমাদের হাতে নেই। 

বিচারক এই জবাব শুনে বললো: এরা কারা? বিশেষ বাহিনীর সদস্য বললো: সব ধরনের মানুষই ছিল। বাজারের কুলি থেকে ধনী ব্যবসায়ী পর্যন্ত। বিচারক একটু ভেবেচিন্তে বললো: এ থেকেই সমাধানের পথ সুগম হতে পারে। তোমরা এগিয়ে যাও! সেই লোকগুলোকে নিয়ে আসো! হতে পারে আমরা তাদের কথাবার্তা আচার আচরণ থেকে কোনো একটি সূত্র পেয়ে যেতে পারি এবং চোরকে খুঁজে বের করতে পারি। বিশেষ বাহিনী ফিরে গেল এবং যাদেরকে তারা সন্দেজনক মনে করেছিল তাদের ধরে নিয়ে এলো বিচারকের কাছে। বিচারক তুলা ব্যবসায়ীকে বললো: এদের মধ্য থেকে তুমি কাকে সন্দেহ করো? ব্যবসায়ী তাদের সবার দিকে তাকিয়ে বললো: কাউকে না।

ব্যবসায়ী আরও বললো: 'কুলি বেচারা-যে কিনা বিচারকের সঙ্গে কী করে কথা বলতে হয় তাও জানে না, তারা আর কী জবাব দেবে বিশেষ বাহিনীর জেরার মুখে! অপরদিকে সম্মানীয় ব্যবসায়ীগণ তো এ কাজ করতেই পারে না। দুই তিনজনকে তো আমি চিনিই না'। বিচারক ব্যবসায়ীর কথা শুনে চুপ মেরে গেলো। সবাইকে কয়েকটা প্রশ্ন করলো। সবাইকে খালাস করে দিতে চেয়েছিলো কিন্তু হঠাৎ তার মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। একটু ভেবেচিন্তে সবার দিকে তাকিয়ে বললো: তুলা চোরকে আমি চিনতে পেরেছি। চোর তো একেবারে ভড়কে গেল। এতো বেশি ব্যস্ত ছিল যে একবার একটু আয়নার সামনে দাঁড়াবারও সুযোগ পায় নি। তাহলে তো তার মাথা কিংবা দাড়ি থেকে তুলাগুলো সরাতে পারতো। বিচারক বললো: যার দাড়িতে তুলা লেগে আছে সে-ই চোর। 

হঠাৎ একেবারে অন্যমনস্কভাবে ব্যবসায়ীদের একজন তার দাড়িতে হাত দিলো যদি তুলা লেগেই থাকে ঝেড়ে ফেলার জন্য। মাথায়ও হাত দিলো চুলে তুলা লেগে আছে কিনা নিশ্চিত হবার জন্য। বিচারক হেসে দিলো এবং সেই ব্যবসায়ীর দিকে তাকিয়ে বললো: তুমি কেন তোমার দাড়িতে হাত দিচ্ছো? ব্যবসায়ী তোতলাতে তোতলাতে কাঁদতে কাঁদতে বললো: আমি একজন সৎ এবং সম্মানি ব্যবসায়ী। বিশ্বাস করুন আমি আমার সহকর্মীর তুলা চুরি করি নি। বিচারক বললো: তাহলে এত মানুষের ভেতর কেন শুধু তুমিই তোমার দাড়িতে হাত দিয়েছো? যদিও তোমার মুখে কিংবা দাড়িতে কোনো তুলা ছিল না? 

বিচারক আরও বললো: ভালোয় ভালোয় যদি স্বীকার না করো তাহলে আমি এক্ষুণি তল্লাশি করার জন্য বিশেষ বাহিনী পাঠাবো তোমার বাসায়। ব্যবসায়ী কোনো কথা না বলায় বিচারক তাই করলো। ঘণ্টাখানেক পর বিশেষ বাহিনী তল্লাশি করে এসে বললো: চুরি হওয়া সব তুলা ওই ব্যবসায়ীর বাসার বেইজমেন্টে লুকানো হয়েছে। এই রিপোর্ট পেয়ে চোর ব্যবসায়ীকে কারাগারে পাঠানো হলো আর তুলাগুলোকে তার মালিকের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হলো। এই ঘটনার পর থেকেই আমাদের আজকের প্রবাদটি চালু হয়ে গেল: তুলা চোর তার দাড়িতে হাত বুলায়।#

পার্সটুডে/এনএম/২/১০৭

মূল ফার্সি গল্পের রূপান্তর: নাসির মাহমুদ

ট্যাগ