নভেম্বর ১৯, ২০২৩ ২৩:২৬ Asia/Dhaka

পশ্চিমা সমাজবিদদেরও অনেকেই আজ বুঝতে পেরেছেন যে মানুষের জীবনে আনন্দ ও তৃপ্তিকে স্থায়ী করতে হলে আধ্যাত্মিকতার চর্চা জরুরি। তা না হলে মানুষের আত্মা হয়ে পড়বে শুষ্ক ও শীতল।

একমাত্র আধ্যাত্মিক মূল্যবোধের অভাবের কারণেই পাশ্চাত্যে বেড়ে যাচ্ছে যৌন অনাচারসহ নানা ধরনের অপরাধ। ভেঙ্গে পড়ছে পরিবার এবং যুব সমাজ দ্বারস্থ হচ্ছে মদ ও মাদকাসক্তির মত নানা কলুষিত আনন্দে। আল্লাহর স্মরণ, প্রার্থনা বা ইবাদাত থেকে দূরে থাকা বিশেষ করে নামাজ থেকে দূরে থাকা মুসলিম যুব সমাজও অনেকটা একই ধরনের সংকটের শিকার হতে বাধ্য। 

নামাজ মানুষকে ডাকে সব ধরনের কল্যাণ ও মহতী গুণগুলোর দিকে। নামাজ মানুষকে পরিচিত করে তৌহিদের প্রেরণার সঙ্গে। নামাজবিহীন জীবন যেন সূর্যহীন শুকনো মরুভূমি বা প্রান্তর কিংবা আলোহীন ঘর অথবা জীবনের স্পন্দনহীন বসতি। আর যে দ্বারস্থ হয়েছে নামাজের সে পেয়েছে জীবনের চিরস্থায়ী সম্পদ ও সৌভাগ্য। নামাজ বিশ্বাসীর জন্য আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাত বা মে'রাজের সমতুল্য।

 মহান আল্লাহর নবী-রাসুলগণ নামাজের মাধ্যমে তৌহিদের সৌরভ ও আল্লাহর স্মরণকে ছড়িয়ে দিয়েছেন সারা বিশ্বে। নামাজের মাধ্যমে তারা আল্লাহর নৈকট্য পেতেন এবং পেতেন আত্মিক প্রশান্তি। 

মনোবিজ্ঞানীদের মতে, বয়ঃসন্ধি ও যৌবনকালে ধর্মীয় অনুভূতি এবং ধর্মীয় ও নৈতিক প্রবণতার বিকাশ ঘটে। "মরিস ডেবস", যিনি মনস্তত্ত্ব বিজ্ঞানে ব্যাপক গবেষণা করেছেন, তিনি বলেছেন: "বয়ঃসন্ধিকাল এবং যৌবনের সময়, এক ধরনের ধর্মীয় জাগরণ দেখা যায়। এমনকি যারা আগে ধর্মীয় বিষয়গুলি মেনে চলেন না তাদের মধ্যেও এ জাগরণ দেখা যায়। তাঁর মতে বিষয়টি যুব বয়সী ও তরুণদের ব্যক্তিত্ব বিকাশের অংশ। ১৫ থেকে ১৭ বছর বয়স্ক তরুণ-তরুণীদের মধ্যে পবিত্রতার আহ্বানের বা সাহসিকতার একটা প্রভাব পড়ে। তারা এ সময় পৃথিবীকে নতুনভাবে গড়তে চায়, সব মন্দ ও অবিচার নির্মূল করে তারা নিরঙ্কুশ ন্যায়বিচারের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

চিন্তার জগত নিয়ে যুব সমাজের মধ্যে টেনশন বা অস্থিরতা কাজ করে। তাদেরকে প্রশান্ত ও সুস্থির করার অন্যতম মহৌষধ হল নামাজ। নামাজ খোদায়ি রহমতের চাবি। নামাজ অসংখ্য আধ্যাত্মিক কল্যাণের আধার। বাহ্যিক ও আত্মিক শর্তগুলো মেনে নামাজ আদায় করা হলে মানুষের মনের অস্থিরতাগুলো দূর হয় এবং তার আত্মা হয় প্রশান্ত ও জ্যোতির্ময়। নামাজ আল্লাহর প্রতি স্মরণ বা মনোযোগ বারবার কেন্দ্রীভূত করারও অন্যতম মাধ্যম। আল্লাহর সঙ্গে আত্মার বন্ধন গড়ে দেয় নামাজ। মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার এই অভ্যাস জীবনের অন্য অনেক কিছুতেও কাজে লাগে। 
তরুণ ও যুব সমাজকে নামাজের প্রতি আগ্রহী করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে পরিবার, স্কুল ও গণমাধ্যম। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল তারা যাতে নামাজের মাধ্যমে সত্যিকার অর্থেই আত্মিক আনন্দ বা তৃপ্তি পায় সেই পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। নামাজকে উপস্থাপন করতে হবে একান্ত ঘনিষ্ঠ বিষয় হিসেবে। 

নামাজ খোদায়ি রহমতের চাবি

 

দোয়া ও নামাজ বুদ্ধিবৃত্তিক আনন্দের জগতকে খুলে দেয়। মহানবী (সা) বলেছেন, আল্লাহর কাছে সেই আমলই সবচেয়ে প্রিয় যা অল্প হলেও নিয়মিত চর্চা করা হয় বা অব্যাহত রাখা হয়। নামাজ উদাসীনতার জগত, লোভ-লালসা ও আমিত্বকে জাহির করার পরিবেশ থেকে নামাজির হৃদয়কে আবারও আল্লাহর সঙ্গে সংযুক্ত করে তাতে সজীবতা এনে দেয়। মহানবীর (সা) যুগে কোনো এক যুবক মসজিদে অনুষ্ঠিত নামাজের জামায়াতের নিয়মিত সদস্য হওয়া সত্ত্বেও নানা পাপ ও অনাচারে জড়িয়ে পড়ে। ফলে একদিন সাহাবিরা তার ওপর বেশ চটে যান। এই যুবক যাতে আর মসজিদে আসতে না পারে তারা সেই ব্যবস্থা নিতে মহানবীর (সা) প্রতি আহ্বান জানান। মহানবী (সা) এই আহ্বান শুনে বেশ কষ্ট পেলেন। তিনি সাহাবিদের বললেন: একদিন এই নামাজই তাকে মুক্তি দেবে। 

পার্থিব তৃপ্তির বিষয়গুলো এমন যে তা পাবার পর সেই বিষয়ের প্রতি আর তেমন একটা আগ্রহ থাকে না। কিন্তু আধ্যাত্মিক আনন্দ হল এমন অপরিসীম যে মানুষ কখনও তাতে পরিপূর্ণ তৃপ্তির আনন্দ পায় না। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ির মতে মনোযোগপূর্ণ নামাজ যুব বয়সীদের দেয় অপার আত্মিক আনন্দ, এতে তাদের হৃদয় হয় আলোকিত। আর এমন অবস্থা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যুব বয়সেই দেখা যায়। মনোযোগপূর্ণ নামাজে মানুষ এমন অনন্য তৃপ্তি পায় যে বস্তুগত কোনো কিছুতেই তা পাওয়া যায় না। এ ধরনের নামাজের তৃপ্তি বা আনন্দে মন কখনও পরিপূর্ণ তুষ্ট হয় না, বরং আধ্যাত্মিক এই আনন্দের তৃষ্ণা সব সময় অতৃপ্তই থেকে যায়। 

সাবেক ক্যাথলিক খ্রিস্টান অস্ট্রেলিয় নওমুসলিম জ্যান জ্যাকসন ক্যাথলিক ধর্মতত্ত্ব কলেজে পড়াশুনা করা সত্ত্বেও জীবনে এক ধরনের শূন্যতা ও অর্থহীনতা উপলব্ধি করতেন। ফলে জীবন-পদ্ধতি পরিবর্তনের আশা নিয়ে তিনি ইসলাম ধর্মসহ নানা ধর্ম নিয়ে পড়াশুনা শুরু করেন। তার গবেষণায় তিনি ইসলামকে পরিপূর্ণ ধর্ম হিসেবে দেখতে পেলেন। ফলে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মুসলমান হন। আর নামাজই হয়ে পড়ে তার জীবনের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অভিজ্ঞতা।  তিনি বলেছেন, জীবনে প্রথমবার নামাজ পড়তে গিয়ে যখন রুকুতে গেলাম তখন স্রস্টা তথা আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কের এক মনোরম অনুভূতি অনুভব করলাম এবং আমার চোখে পানি চলে এলো। মুসলমান হওয়ার পর থেকে দিনকে দিন নামাজের গুরুত্ব বা মূল্য আমার কাছে ক্রমেই বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বুঝতে পারলাম যে নামাজ আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক ও অঙ্গীকারগুলোকে জোরদার করে। জ্যাকসন আরও বলেছেন, 

নামাজ আল্লাহর সঙ্গে নিয়মিত কথপোকথনের পথ খুলে দেয় এবং নামাজী ক্রমেই আল্লাহর পরিচয় সংক্রান্ত জ্ঞান অর্জন করতে থাকেন বেশি মাত্রায়। আর এসব জ্ঞানে নামাজি দক্ষ হয়ে ওঠেন।  নামাজ দিনরাত তাকে আল্লাহকে স্মরণ করতে ও আল্লাহর প্রতি মনোযোগী হতে বাধ্য করে। নামাজ বিশ্ব-জগতে মানুষের অবস্থানকে তার কাছে তুলে ধরে এবং তাকে এটা স্মরণ করিয়ে দেয় যে সে আল্লাহর সৃষ্টিকুলের সদস্য। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/১৯ 

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ