নভেম্বর ২৮, ২০২৩ ১২:০৫ Asia/Dhaka

সুপ্রিয় পাঠক/শ্রোতাবন্ধুরা! আজ ২৮ নভেম্বর মঙ্গলবারের কথাবার্তার আসরে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা ভালো আছেন। আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি। এরপর গুরুত্বপূর্ণ দুটি খবরের বিশ্লেষণে যাবো। বিশ্লেষণ করবেন সহকর্মী সিরাজুল ইসলাম।

বাংলাদেশের শিরোনাম:

  • ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ কমে ১৬ বিলিয়ন ডলারের নিচে -প্রথম আলো
  • যে কারণে ডামি কৌশল -মানবজমিন
  • জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এর ন্যাশনাল রিপোর্ট-দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ -ইত্তেফাক
  • নৌকা পেয়েও টেনশনে-যুগান্তর
  • ২ বছরে স্থায়ীভাবে দেশে ফিরেছেন ৪ লাখ ৬৬ হাজার অভিবাসী -ডেইলি স্টার বাংলা

কোলকাতার শিরোনাম:

  • আর মাত্র পাঁচ মিটার! সুড়ঙ্গ থেকে উদ্ধারের কাজ দ্রুত এগোচ্ছে -আনন্দবাজার পত্রিকা
  • সুড়ঙ্গে আটকে হুগলির ২, পরিবারের জন্য সাহায্য চেয়ে মোদিকে চিঠি BJP বিধায়কের -সংবাদ প্রতিদিন
  • নির্বাচনের আগে সিএএ‘র জিগির তোলার চেষ্টা বিজেপির –গণশক্তি
  • বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার কিস্তির টাকা সংগ্রহে গিয়ে খুন ফিল্ড অফিসার -আজকাল

শ্রোতাবন্ধুরা! শিরোনামের পর এবার দু'টি খবরের বিশ্লেষণে যাচ্ছি- 

কথাবার্তার বিশ্লেষণের বিষয়:

১. এরশাদের আমলেও এমন পরিস্থিতি ছিল না- বলেছেন বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিক। এ শিরোনাম করেছে দৈনিক মানবজমিন। কী বলবেন আপনি?

২. ‘মধ্যপ্রাচ্যে সম্ভাব্য যেকোনো পরিস্থিতির দায় ইসরাইলকে বহন করতে হবে’- এ কথা বলেছে ইরান। এ বক্তব্যের যুক্তিটা কী?

বিশ্লেষণের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবর

ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ কমে ১৬ বিলিয়ন ডলারের নিচে-প্রথম আলো

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর দেশে ডলারের যে সংকট শুরু হয়েছিল, তা এখনো কাটেনি। বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভের যে হিসাব গত সপ্তাহে প্রকাশ করছে, ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ তার চেয়ে অনেক কম। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্রে জানা গেছে, ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের পরিমাণ এখন ১৬ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের কম।

গত ২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ছিল ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার (৪৮ বিলিয়ন)। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে তা কমে হয়েছে ২ হাজার ৫১৬ কোটি ডলার (২৫ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার)। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী, রিজার্ভের পরিমাণ ১ হাজার ৯৫২ কোটি ডলার (১৯ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার)। গত বুধবার ওয়েবসাইটে এই তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এই অর্থের পুরোটা ব্যবহারযোগ্য নয়। আইএমএফও সঠিকভাবে রিজার্ভের হিসাবায়ন করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে পরামর্শ দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, দেশের ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ এখন ১৬ বিলিয়ন ডলারের কম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী প্রথম আলোকে বলেন, রিজার্ভ এখন যে পর্যায়ে নেমেছে, তা সংকটজনক না হলেও উদ্বেগজনক। ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ দিয়ে সর্বোচ্চ তিন মাসের আমদানি দায় মেটানো যাবে। এটাও ধরে রাখা হয়েছে জোর করে আমদানি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে। তা না হলে আরও কমে যেত। এখন আর কৃত্রিমভাবে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনা করার প্রয়োজন নেই। এই বাজারকে স্বাভাবিক গতিতে চলতে দিতে হবে। তাহলে দাম কিছুটা বেড়ে পরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে। তখন রিজার্ভ আবার বাড়বে।

মুস্তফা কে মুজেরী আরও বলেন, এখন খোলাবাজারে ডলারের দাম ১২৫ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। ফলে কেউ না কেউ এই দামে ডলার কিনছে, এই দামে হুন্ডি করছে। বৈধ পথে পুরো প্রবাসী আয় দেশে আসছে না। যার মাধ্যমে আবার অর্থ পাচার হচ্ছে। আবার অন্য মাধ্যমেও অর্থ পাচার হচ্ছে। পাচারের অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগে সরকার সফল হয়নি, পাচারও ঠেকাতে পারেনি। ফলে অর্থনীতিতে সংকট এখন বহুমুখী। বর্তমান পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, এই সংকট সহসা কাটার সম্ভাবনা নেই।

রিজার্ভ বাড়ে–কমে কীভাবে

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদ। অবশ্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে বিভিন্ন সময় রিজার্ভের অর্থ বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। রিজার্ভ থেকে বেসরকারি খাতকে ঋণ দেওয়ারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, পরে যা আর কার্যকর হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের মূল উৎস প্রবাসী ও রপ্তানি আয়ের উদ্বৃত্ত ডলার ব্যাংকগুলো থেকে কিনে নেওয়া। এ ছাড়া বিদেশি ঋণ, বিনিয়োগ, অনুদান থেকে পাওয়া অর্থ সরাসরি যুক্ত হয় রিজার্ভে। পাশাপাশি জাতিসংঘে শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরত বাংলাদেশের বিভিন্ন বাহিনীর আয়ও সরাসরি রিজার্ভে যুক্ত হয়।

অন্যদিকে, চাহিদা বেড়ে গেলে ডলার বিক্রি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত প্রায় দুই বছরে এ কারণেই রিজার্ভ সবচেয়ে বেশি কমেছে। এখনো সরকারি খাতের খাদ্য, জ্বালানি, রাসায়নিক সার আমদানির দায় মেটাতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি বিদেশি ঋণ ও চাঁদার অর্থও পরিশোধ হয় রিজার্ভের অর্থে। এ ছাড়া প্রতি দুই মাস অন্তর আকুর সদস্যদেশগুলোর আমদানি দায় পরিশোধ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ব্যাংকগুলো নিয়মিত ভিত্তিতে এই দায়ের অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা করে, যা সংস্থাটি একবারে শোধ করে দেয়।

সংকট কতটা কাটল

দেড় বছর ধরে চলা ডলার–সংকট এখনো কাটেনি। আমদানি নিয়ন্ত্রণের কারণে গত সেপ্টেম্বরে আমদানি খরচ কমে হয়েছে ৫২৭ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২৭ শতাংশ কম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাঁরা এখনো ঋণপত্র খুলতে চাহিদামতো ডলার পাচ্ছেন না। আবার অনেক উদ্যোক্তাকে ঘোষিত দামের চেয়ে ১২-১৩ টাকা বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে। এদিকে গত অক্টোবরে রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় সাড়ে ১৩ শতাংশ কমে হয়েছে ৩৭৬ কোটি ডলার। তবে গত মাসে প্রবাসী আয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, এসেছে ১৯৭ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত বছরে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণের দায় ছিল ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার, এখন যা কমে হয়েছে ৬৯০ কোটি ডলার। পাশাপাশি চলতি হিসাবে ১০০ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত রয়েছে। এখন ঋণপত্র খোলা হচ্ছে তাৎক্ষণিক ডলার পরিশোধের মাধ্যমে। ফলে ভবিষ্যৎ দায় তৈরি হচ্ছে না। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোতে ডলারের চাহিদার চেয়ে জোগান এখন বেশি। ভবিষ্যতে আরও বিদেশি ঋণ আসবে, যাতে রিজার্ভ বাড়বে।

রাজনীতির খবরে ভিন্ন ভিন্ন শিরোনাম করেছে জাতীয় দৈনিকগুলো।

প্রথম আলোর কয়েকটি শিরোনাম তুলে ধরছি। নির্বাচনের তফসিল বাতিল চায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। জোট নিয়ে বিভ্রান্তিতে আওয়ামী লীগের শরিক-মিত্ররা। নৌকার বিপক্ষে লড়বেন নৌকাবঞ্চিতরা।

এদিকে গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে উপেক্ষা করতে পারি না। ‘যুক্তরাষ্ট্র একটি পরাশক্তি। তাই আমরা তাদের উপেক্ষা করতে পারি না এবং করিও না। আমরা তো এ জন্য তাদের পরামর্শকে অত্যন্ত গুরত্বসহকারে গ্রহণ করি,’ বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। আজ সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

‘নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমাদের উদ্বেগ–উৎকণ্ঠা ছিল। তারা এখন কিছু বলছে না। আপনারা কি তাদের চুপ করে যেতে বাধ্য করলেন নাকি?’ এ প্রশ্ন করা হয়েছিল পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে। জবাবে তিনি বলেন, ‘কী বলেন, বাধ্য করব কীভাবে? পাগল নাকি! কোনো সুযোগ নেই। আমাদের সে ক্ষমতা নাই।’

বাংলাদেশের যারা বন্ধু রাষ্ট্র, তারা বিভিন্ন সময় নানা বিষয়ে উপদেশ দেয় উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘অন্যের যদি ভালো উপদেশ থাকে স্বচ্ছ, সুন্দর নির্বাচনের জন্য, আমরা সেটা গ্রহণ করি। আমরা তা স্বাগত জানাই। আমরা তো পণ্ডিত না। যারা মাতব্বরি করবে, আমরা তাদের সহ্য করব না।’

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পরামর্শ দিলে তা গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয় বলে উল্লেখ করেন আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখি; যথেষ্ট সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে।’

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায় উল্লেখ করে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমরাও তা চাই। তারা আমাদের সাহায্য করছে। আমরা নিজেরা একটা সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন চাই। আমরা যদি এটা করি, আমেরিকা আমাদের সঙ্গে থাকবে। তারা আমাদের বন্ধু দেশ। শুধু নির্বাচন নয়, তাদের সঙ্গে আমাদের বিভিন্ন রকম সম্পর্ক আছে। আমেরিকা সব সময় বাস্তববাদী।’

যে কারণে ডামি কৌশল-মানবজমিন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় বিকল্প প্রার্থীদের নির্বাচন করার সুযোগ দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। আগের নির্বাচনগুলোতে এমন সুযোগ না থাকলেও এবার ঘোষণা দিয়ে দলের ডামি প্রার্থী রাখা হচ্ছে। এর আগে যেসব নির্বাচনে দলীয় প্রতীক চ্যালেঞ্জ করে নির্বাচন করা নেতাদের বহিষ্কারসহ নানা শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দলীয় অবস্থান পরিবর্তন করে দলের নেতাদের দলীয় প্রতীকের বাইরে নির্বাচন করার সুযোগ দেয়ার পেছনে কারণ কী? এই প্রশ্ন এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে। দলের মূল প্রার্থীদের অনেকে সম্ভাব্য ডামি প্রার্থী নিয়ে শঙ্কিত। ওদিকে দলীয় সূত্র বলছে নির্বাচনে দলীয় কৌশলের অংশ হিসেবে এবার বিকল্প প্রার্থীদের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। 

নির্বাচন ঘিরে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি, নির্বাচনে অধিক ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করা, নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করা ও নির্বাচনে অনেক প্রার্থীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতেই এই কৌশল নেয়া হয়েছে বলে নেতারা জানিয়েছেন। এসব কৌশলকে ‘সাংগঠনিকভাবে ছাড়’- হিসেবে দেখছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। এখন পর্যন্ত বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে অনড়। এমন অবস্থায় নির্বাচন করলে তা দেশে বিদেশে গ্রহণযোগ্য করার এক বড় চ্যালেঞ্জ আওয়ামী লীগের সামনে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নানা কৌশলে এগোচ্ছে ক্ষমতাসীন দল। 

এছাড়া দলের নেতারা বলে আসছেন, সব দলের অংশগ্রহণ নয়, মানুষ ভোট দিতে পারলেই সেটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। এমন একটা পরিবেশ তৈরির জন্য ক্ষমতাসীন দল ডামি কৌশল নিয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। 

রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মনোনয়নপ্রত্যাশীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

নির্বাচন ঘিরে বিশেষ বার্তা দেয়ার জন্যই ওই বৈঠক ডাকা হয়। সেখানে দলীয় প্রধান মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেউ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রত্যেক প্রার্থীকেই একজন করে দলীয় ডামি প্রার্থী রাখতে হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে উৎসব ও প্রতিযোগিতামূলক করতে নৌকার প্রার্থীর পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা অন্যান্য দলের কেউ প্রার্থী হলে তাকেও সহযোগী ও উৎসাহ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রধান।

সিইসি’র বিলম্বিত উপলব্ধি- প্রথম আলো

বাইশ মাস আগে দায়িত্ব গ্রহণের সময় দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছিলেন একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল জানিয়েছিলেন, সব দলকে নির্বাচনে আনাই তার সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। পরে নানা সময়ে সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়ে নিজেদের আশ্বাস-প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। এসব আশ্বাস আর প্রতিশ্রুতির ঠিক উল্টো অবস্থান নিয়ে বিরোধী দলগুলোর আপত্তি অগ্রাহ্য করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার পর নানা কারণে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রে নির্বাচন কমিশন। এই আলোচনার মধ্যে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন কাজী হাবিবুল আউয়াল। অনেকের আপত্তির মধ্যে ঘোষিত তফসিল এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হলে সামনেও আরও বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে এমন ইঙ্গিত দিয়ে সোমবার বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। নির্বাচনে দায়িত্বপালন করবেন এমন বিচারিক হাকিমদের উদ্দেশ্যে সিইসি এমন বক্তব্য দিলেও অনেকে মনে করছেন তার এই বক্তব্য সরকারি দল ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের জন্য নতুন এক বার্তা। যুক্তরাষ্ট্রের নাম উল্লেখ করেই তিনি বলতে চেয়েছেন, আসন্ন নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হলে দেশের অর্থনীতি, পোশাক শিল্প ও ভবিষ্যতের ওপর এর একটা বড় প্রভাব পড়বে। সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে ইসি’র ওপর  যে চাপ আসছে এই বিষয়টিও অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন সিইসি। নির্বাচন নিয়ে দেশ সংকটে আছে, বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে আছে- এমনটাও বলেছেন তিনি।

কাজী হাবিবুল আউয়াল সর্বশেষ যে বক্তব্য দিয়েছেন তাকে বিলম্বিত উপলব্ধি বলে মনে করছেন অনেকে। 

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার সিইসি’র বক্তব্যের বিষয়ে বলেন, উনার সর্বশেষ বক্তব্যটিও পক্ষপাতদুষ্ট। কারণ তিনি শুধু একটি দেশের কথা বলেছেন। অন্য যেসব দেশ দীর্ঘদিন থেকে বাংলাদেশের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করে আসছে সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি। তিনি বলেন, বর্তমান ইসি ক্ষমতাসীন দলকে আবারো ক্ষমতায় আসার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে। এ কারণে বাইরের দেশগুলো কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে। এর দায়ও নির্বাচন কমিশনকে নিতে হবে। 

প্রধান নির্বাচন কমিশনার এর আগেও বিভিন্ন বক্তব্যে নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে নিজেদের অতৃপ্তির বিষয়টি প্রকাশ করেছেন। সর্বশেষ ১৫ই নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দিন জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া বক্তব্যেও নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে সংলাপে বসতে দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। রোববার নির্বাচন কমিশনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসলে তফসিল সূচি পরিবর্তনের সুযোগ আছে।

২ বছরে স্থায়ীভাবে দেশে ফিরেছেন ৪ লাখ ৬৬ হাজার অভিবাসী-ডেইলি স্টার বাংলা

গত দুই বছরে ৪ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬৬ জন বাংলাদেশি অভিবাসী স্থায়ীভাবে দেশে ফিরেছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। 'জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২: জাতীয় প্রতিবেদন (প্রথম খণ্ড)' অনুযায়ী, ফেরত আসা অভিবাসীদের মধ্যে ১ লাখ ৫৪ হাজার বা ৩৩ দশমিক ০৩ শতাংশ চট্টগ্রাম বিভাগের  এবং ১ লাখ ৩২ হাজার বা ২৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ ঢাকা বিভাগের।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, দীর্ঘদিন বিদেশে কাজ করা অনেক বাংলাদেশির স্থায়ীভাবে দেশে ফিরে আসা একটি 'স্বাভাবিক প্রক্রিয়া'।

এছাড়াও চাকরি হারানোর মতো কারণে অনেকেই বাড়ি ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

তবে কোভিড মহামারি ও মহামারী পরবর্তী পরিস্থিতি প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রত্যাবর্তনে প্রভাব ফেলেছে কি না, তা বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন, যোগ করেন তিনি।

'আরও কোনো কারণ আছে কি না তা খতিয়ে দেখা দরকার,' উল্লেখ করে অধ্যাপক রায়হান বলেন, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, মহামারির মধ্যে বিদেশে চাকরি হারিয়ে বাংলাদেশিরা দেশে ফিরেছেন।

অধ্যাপক রায়হান আরও বলেন, জনশুমারিতে বাংলাদেশে বসবাসরত বিদেশিদের সংখ্যাকে 'অবমূল্যায়ন' করা হয়েছে।

বিবিএসের প্রতিবেদনে যে পরিসংখ্যান দেখানো হয়েছে তার চেয়ে বাংলাদেশে বসবাসরত বিদেশিদের সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি বলে মনে করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক বিদেশি অনানুষ্ঠানিকভাবে এবং বৈধ ওয়ার্ক পারমিট ছাড়াও বাংলাদেশে কাজ করেন।

অভিবাসী অ্যাডভোকেসি গ্রুপ রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (আরএমএমআরইউ) সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে দেখিয়েছে, আটক ও পরবর্তীতে নির্বাসন, বিদেশে চাকরি পেতে ব্যর্থতা এবং নিয়োগকর্তার প্রতিশ্রুত চাকরি ও মজুরি প্রদানের লঙ্ঘন ২১৮ জন বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকের অসময়ে প্রত্যাবর্তনের মূল কারণ।

জরিপে দেখা গেছে, বৈধ ওয়ার্ক পারমিট ছাড়া ১৬ জন এবং বৈধ ভিসা ছাড়া ১১ জনসহ ৩৪ জন প্রবাসীকে আটকের পর ফেরত পাঠানো হয়েছে।

অন্যদিকে ৩৩ জন অভিবাসী কাজ না পেয়ে ফিরে এসেছেন এবং ৪৪ জন অভিবাসী শ্রমিক নিয়োগকারীদের প্রতিশ্রুতি মতো চাকরি ও মজুরি না পেয়ে ফিরে এসেছেন।

অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে নিয়োগকর্তার অসদাচরণ, কম মজুরি এবং শারীরিক অসুস্থতা।

রাজধানীর একটি হোটেলে জরিপের ফলাফল প্রকাশের সময় উপস্থাপিত গবেষণাপত্রে আরএমএমআরইউ'র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাসনিম সিদ্দিকী উল্লেখ করেন, অসময়ে প্রত্যাবর্তন একটি 'সাধারণ ঘটনা' হয়ে দাঁড়িয়েছে।

'বড় বিনিয়োগ' করার পর, অভিবাসীদের একটি অংশ তাদের নির্ধারিত সময়ের কাজ শেষ করার আগেই ফিরে আসছে, গবেষণাপত্রে উল্লেখ করেন তিনি।

বিবিএসের জনশুমারির ফলাফল অনুযায়ী, ৫০ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫৮ জন বাংলাদেশি নাগরিক আদমশুমারির আগে কমপক্ষে ছয় মাস বিদেশে অবস্থান করছিলেন অথবা কমপক্ষে ছয় মাস বিদেশে থাকার অভিপ্রায় নিয়ে গিয়েছিলেন।

এবারে কোলকাতার কয়েকটি খবরের বিস্তারিত:

নির্বাচনের আগে সিএএ‘র জিগির তোলার চেষ্টা বিজেপির-গণশক্তির পত্রিকার এ শিরোনামের খবরে লেখা হয়েছে, লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে নাগরিক পঞ্জিকরণ আইনের চূড়ান্ত খসড়া তৈরি হবে। রবিবার উত্তর ২৪ পরগণার ঠাকুরনগরের সভা থেকে এমন দাবি করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্র। সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া, ভোটের জন্য বাড়াবাড়ি করছে বিজেপি।  রবিবার ঠাকুরনগরের সভায় বিজেপি নেতা অজয় মিশ্র বলেছেন, ‘‘মতুয়াদের থেকে কেউ নাগরিকত্ব কেড়ে নিতে পারবে না।’’ এই প্রসঙ্গে সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সিএএ ইস্যুকে সামনে রেখে ২০১৯ সালের নির্বাচন লড়েছিল বিজেপি। ৫ বছর তারপর চুপ ছিল। মানুষ ধরে ফেলেছেন। তাই এখন আবার এই নিয়ে বলতে শুরু করেছে। কিন্তু এটা তো জাতীয় ইস্যু। অসমে উদ্বাস্তু বাঙালীকে ডিটেনশন সেন্টারে পাঠিয়েছে বিজেপি। তাঁরাই পশ্চিমবঙ্গে এসে, ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে উল্টো কথা বলছে ভোটের জন্য।’’

সুড়ঙ্গে আটকে হুগলির ২, পরিবারের জন্য সাহায্য চেয়ে মোদিকে চিঠি BJP বিধায়কের-সংবাদ প্রতিদিনের এ খবরে লেখা হয়েছে, উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে আটকে হুগলির পুরশুড়ার দুই শ্রমিক। তাঁদের পরিবারের দুর্দশার কথা জানিয়ে এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখলেন বিজেপি বিধায়ক বিমান ঘোষ। তাঁর আর্জি, আটকে পড়া দুই শ্রমিকের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করুন প্রধানমন্ত্রী। তিনি অবশ্য সব শ্রমিকের উদ্ধারের আহ্বান জানিয়েছেন। সরাসরি কিংবা প্রশাসনের মাধ্যমে অর্থ পাঠান তিনি। স্বাভাবিকভাবেই বিজেপি বিধায়কের এই ভূমিকা নিয়ে রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে উঠেছে। দুসপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে ((Uttarkashi Tunnel Collapse) আটকে ৪১ নির্মাণ শ্রমিক। তাঁদের মধ্যে তিনজন বাংলার বাসিন্দা। বিমান ঘোষের এই ভূমিকা নিয়ে জলঘোলা শুরু হয়েছে। তিনি দলকে না জানিয়ে কেন সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে বিরোধীরা। যদিও বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, “এটা জাতীয়স্তরের সংকট। এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে ঠিকই করেছেন বিধায়ক।”

এদিকে আনন্দবাজার পত্রিকার এ সম্পর্কিত খবরে বলা হয়েছে, উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধার করতে ইঁদুরের কায়দায় খোঁড়া হচ্ছে গর্ত। আর তাতেই তরতরিয়ে এগোচ্ছে কাজ। উদ্ধারকারীরা শ্রমিকদের সঙ্গে দূরত্বের ব্যবধান অনেকটাই কমিয়ে এনেছেন। আর মাত্র পাঁচ মিটার দূরেই রয়েছে সাফল্যের হাতছানি।

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/ ২৮

ট্যাগ