জানুয়ারি ২৩, ২০২৪ ১৯:২২ Asia/Dhaka

পশ্চিমা জড়বাদী সভ্যতায় বস্তু, মুনাফা ও অর্থ তথা বস্তুগত মূল্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের সব কিছুকে এ সভ্যতায় পণ্যের দৃষ্টিতে দেখা হয়। সবকিছুর পণ্যকরণের আওতায় নারী ও পুরুষের যৌন বিষয়গুলোকেও পণ্যের রূপ দিয়েছে কথিত এই সভ্যতা।

ফলে পাশ্চাত্যে গড়ে উঠেছে বৈধ ও অবৈধ সেক্স ইন্ডাস্ট্রি এবং তাদের এই নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে প্রায় গোটা বিশ্বজুড়ে। হাজার হাজার কোটি ডলার আয়ের জন্য নিরপরাধ নারী ও পুরুষের পাশাপাশি শিশুদেরকেও যৌন পণ্য হিসেবে ব্যবহার করছে পশ্চিমা ভোগবাদী এই শিল্প। মূলত দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলো ও দক্ষিণ আমেরিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার হাজার হাজার বালিকা এবং নারীকে প্রতি বছর যৌন দাসী হিসেবে পাঠানো হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে মানব পাচারের আওতায়। তাদেরকে বিজ্ঞাপনের মডেল বা সেবিকার নামে ঘরবাড়ী, ক্লাব ও বিশেষ কিছু স্থানে এনে বিক্রি করে দেয়া হয়। এই নিরীহ নারী ও মেয়েরা সফরের খরচ জোগাতে বাধ্য হয় নতুন মালিকদের জন্য কাজ করতে।

 সরকারি নানা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী প্রতি বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক লাখেরও বেশি কন্যাকে যৌন দাসীর ব্যবসায় পণ্য হিসেবে ব্যবহার করতে আনা হয় এবং এদের বয়স ১৮'র চেয়েও কম। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনেও প্রায় ১৩ বছর বয়সের কাছাকাছি বালিকাদের কেনা-বেচা করা হয় যৌন দাসী হিসেবে! মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেসব নারী কারাভোগ করেন তাদেরকেও যৌন ব্যবসায় কাজে লাগানো হয়। ব্রিটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী যৌন-ব্যবসায়ী চক্রগুলো সরকারি নানা ওয়েবসাইট থেকে মহিলা বন্দিদের ব্যক্তিগত তথ্য পেয়ে যায়! এদের অবস্থান কোন্ কারাগারের কত নম্বর কক্ষ বা সেলে রয়েছে এবং আদালতের আইনি প্রক্রিয়ায় কখন তাদের  কার কার মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তা জানার পর যৌন-চক্রের লোকেরা বা খদ্দেররা আবেগপূর্ণ চিঠি পাঠিয়ে তাদেরকে প্রলুব্ধ করে। তারা ওই বন্দি নারীদের মুক্তির আবেদন জানিয়ে আদালতে জামিনের অর্থ বা দলিল পত্র পাঠায়। এরপর ওই নারীরা যখন মুক্তি পেয়ে বাইরে আসেন তখন তাদের বলা হয় যে পতিতালয়ের জন্য কাজ করতে হবে, অন্যথায় আবারও কারাগারে ফেরত পাঠানো হবে! ফলে জামিনের অর্থ পরিশোধ করতে এই উপায়হীন নারীরা কেউ কেউ ঘরবাড়ীতে যৌন দাসীর পেশা বেছে নিতে বাধ্য হন।

এক ভুক্তভোগী নারী জানিয়েছেন তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পতিতালয় থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তার জামিনদার তাকে খুঁজে বের করে এবং ব্যাপক মারধোর করে তাকে আবারও জেলে পাঠায়। মার্কিন আদালতের রিপোর্ট অনুযায়ী নারী পাচারকারীরা প্রতি বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে ৯৫০ কোটি ডলার আয় করে।

ফ্লোরিডায় মার্কিন বিচার বিভাগের একজন শীর্ষস্থানীয় সাবেক কর্মকর্তা ডিয়ানি শিশিও জানিয়েছেন, জামিনের ব্যবস্থাটা এমনই যে তা প্রায়ই মানব-পাচারকারীরা অপব্যবহার করছে। আদালতের ৮০ শতাংশ মামলায় অভিযুক্ত নারীদের তথ্য অবৈধভাবে পাচারকারীদের কাছে চলে যায়। তিনি আরও জানিয়েছেন, কোনো কোনো বন্দি নারী মুক্তি পাওয়ার পরও জানেন না যে কে তাদেরকে মুক্ত করেছে বা কেনো মুক্ত করেছে কিংবা কেউ তাদের জন্য অপেক্ষা করছে কিনা! এদেরকে পরে এভাবে বলা হয় যে আমি তোমাকে মুক্ত করেছি তাই তুমি এখন আমার কাছে ঋণী! এভাবে তাকে যৌন দাসী হিসেবে বিক্রি করে দেয়া হয়! অন্য কথায় মার্কিন কারাগারগুলো এখন যৌন দাসী ও মানব পাচারের নির্দয়তম কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

নারী পাচারকারীরা প্রতি বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে ৯৫০ কোটি ডলার আয় করে

মার্কিন যৌন ব্যবসায়ীদের খপ্পর থেকে মুক্ত হওয়া অনেক ভুক্তভোগী নারী জানিয়েছেনমানব পাচারকারীরা কারাগারের নারীদেরকে যৌন দাসীর কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করা ছাড়াও মাদক দ্রব্য কেনা ও সেসব নানা স্থানে মাদক পাচারের কাজেও বাধ্য করছে।  'সারভাইভরস' নামক প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে ২০১৮ সালে মার্কিন কারাগারের ৯১ শতাংশ নারী বন্দিকে যৌন দাসত্ব ছাড়াও মাদক পাচারের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে।পাশ্চাত্যে মানব পাচার হল অস্ত্র ও মাদক পাচারের পরই সবচেয়ে বড় ব্যবসা। এদের মধ্যে ৯৪ শতাংশ নারী ও কন্যাকে যৌন দাসী এবং ৩৫ শতাংশকে শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।  ২০১৬ সনের হিসেবে দেখা গেছে ২০১১ সালের তুলনায় মানব পাচারের মাত্রা বেড়েছে ৪০ শতাংশ! ২০১৮ সালে পাচার হওয়া মানুষদের মধ্যে ১৮ বছরের কম বয়সী নারীদের সংখ্যা ২০০৪ সালের তুলনায় ১৩০ শতাংশ বেড়েছে। পাচার হওয়া পুরুষদের সংখ্যাও বেড়েছে প্রায় অনুরূপ হারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুরুষদেরকে কাজ করার জন্য ও নারীদেরকে যৌন দাসী হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

পশ্চিমা সমাজ-ব্যবস্থায় নারীর অবস্থান সম্পর্কে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ি বলেছেন, পাশ্চাত্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, কল-কারখানা এবং সড়কে ও অলিতে গলিতে সাধারণ জীবনযাত্রায় এমন পরিকল্পিত অবস্থা সৃষ্টি করা হয়েছে যে ইন্দ্রিয়-বিলাসী ও ভোগবাদী পুরুষেরা চোখ বা অন্য কোনো মাধ্যমে লালসা মেটাতে পারে! এভাবে তারা নারীর সম্ভ্রম ও সম্মানকে সত্যিই গুড়িয়ে দিয়েছে! সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হল এটা যে খোদ নারীরা- কিশোরী ও যুবতী নারী এর মধ্যেই নিজের স্বার্থ দেখছে যে সমাজে এমন বেশভূষা নিয়ে চলাফেরা করতে হবে যে নারীর যৌন পার্থক্যের বিষয়টি যেন পুরুষদের দৃষ্টিকে আকৃষ্ট করে! তাও আবার কোন্ শ্রেণীর পুরুষ? যে পুরুষ চলাফেরা করছেন সড়কে এবং অলিতে গলিতে! নারীকে এই পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পাশ্চাত্যে তাদের প্রতি সবচেয়ে বড় আঘাত!

পাশ্চাত্যে নারী ও পুরুষের মানবাধিকারে এমন শোচনীয়  অবস্থা তথা দাসত্বের অবস্থা সত্ত্বেও পশ্চিমা রাষ্ট্রপ্রধান, গণমাধ্যম ও নেতারা বিভিন্ন দেশে নারী ও শিশুদের মানবাধিকারের লঙ্ঘন নিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে বা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে নিন্দাবাদ জানান! তারা নানা ইশতেহার বা প্রস্তাব ঘোষণার মাধ্যমে এইসব দেশের ওপর অবরোধ ও যুদ্ধ চাপিয়ে দিচ্ছেন। পশ্চিমা লিবারেলিজম বা কথিত উদারনীতি ও পুঁজিবাদের কারণে পশ্চিমা সমাজের জনগণ অসুস্থ হয়ে পড়ছে ও বিকৃত যৌনাচারে আসক্ত হচ্ছে! পশ্চিমা সরকারগুলো এইসব রোগের চিকিৎসা না করে নানা দেশে, বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোতে যুদ্ধের উপকরণ ও অস্ত্রশস্ত্র পাঠাচ্ছেন! এভাবে পশ্চিমা সংস্কৃতি পরিবার-ব্যবস্থাকে ধ্বংস ও মানবীয় সম্পর্ককে ব্যাপক মাত্রায় কমিয়ে দিয়ে গোটা পশ্চিমা সভ্যতাকে দিনকে দিন রুগ্ন ও চিকন করে ফেলছে।#

পার্সটুডে/ এমএএইচ/২৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ