ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৪ ২৩:৪১ Asia/Dhaka

যুব সমাজ অসাধারণ মানসিক ও শারীরিক শক্তিসহ নানা বিশেষ সুবিধার অধিকারী। যেমন, সৃষ্টিশীলতা,পরিস্থিতি বা সংকট বিশ্লেষণ-ক্ষমতা, সমস্যা সমাধানের সক্ষমতা ও কার্যকর নানা কৌশল প্রণয়ন এবং সেসব প্রয়োগের ক্ষমতা অত্যন্ত উচ্চ পর্যায়ে বা মাত্রায় দেখা যায় এই বিশেষ শ্রেণীর মধ্যে।

ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায় যুব বয়সে অনেক অসাধ্য সাধন করেছেন বিশ্বের বহু ব্যক্তিত্ব। নবী-রাসুল ও ইমামগণ অত্যন্ত কম বয়সে নবুওয়তি ও নেতৃত্বের দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন।  দিগবিজয়ী অ্যালেক্সান্ডার যখন প্রায় অর্ধেক বিশ্ব জয় করেন তখন তার বয়স ছিল মাত্র ২৫ বা ত্রিশেরও কম। বলা হয় মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল মাত্র ৩৪। কবি নজরুল যুব বয়সেই বাংলার সাহিত্য অঙ্গনে শীর্ষ পর্যায়ের জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিলেন কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ। যুব বয়সী  কবি নজরুলের ধূমকেতু পত্রিকা প্রকাশ উপলক্ষে তাঁকে স্বাগত জানিয়ে রবীন্দ্রনাথ তাই লিখেছেন   "কাজী নজরুল ইসলাম কল্যাণীয়েষু, আয় চলে আয়রে ধূমকেতু।/আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু,/ দুর্দিনের এই দুর্গশিরে উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন।"

যুব বয়সীদের মধ্যে রক্ষণশীলতা থাকে না। তাই তো তারুণ্যের জয়গান গেয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ওরে  নবীন, ওরে আমার কাঁচা,/ ওরে সবুজ, ওরে অবুঝ, / আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা।.... /তোরে হেথায় করবে সবাই মানা।/     হঠাৎ আলো দেখবে যখন/     ভাববে এ কী বিষম কাণ্ডখানা।/সংঘাতে তোর উঠবে ওরা রেগে,/শয়ন ছেড়ে আসবে ছুটে বেগে,/সেই সুযোগে ঘুমের থেকে জেগে/     লাগবে লড়াই মিথ্যা এবং সাঁচায়।/     আয় প্রচণ্ড, আয় রে আমার কাঁচা।যুব সমাজের মধ্যে থাকে প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস ও সব কিছুকে জয় করার দুরন্ত নেশা। কিন্তু এসব শক্তির প্রকাশ তখনই সম্ভব হয় যখন তরুণ ও যুব সমাজ বেকার থাকবে না। তাদের সামনে থাকতে হবে সঠিক পরিকল্পনা, দূরদর্শিতা ও প্রতিভার যথাযোগ্য বিকাশের স্থান ও সুযোগ। আর এইসব নিয়ামক বা চালিকাশক্তির অভাব বয়ে আনে যুব শক্তি ও তারুণ্যের শক্তিগুলোর অপচয় তথা জাতির জন্য বড় ধরনের বিপর্যয়।

বলা হয় অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। তরুণ ও যুব সমাজের জন্যও –এ প্রবাদ বাক্যটি চিরসত্য। যুব সমাজ সাধারণত প্রলোভন ও দুর্নীতির দিকে খুব কমই আকৃষ্ট হয় এবং তারা অল্প সময়ে অনেক বেশি সেবা দিতে সক্ষম। আর এ জন্যই দেখা যায় বহু দেশে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচনে যুব নেতৃত্বের কাছে হেরে যাচ্ছেন অনেক অভিজ্ঞ ও বয়স্ক নেতা! ইসলামী ইরানের বিখ্যাত অনেক নেতৃবৃন্দ যুব বয়সেই সমাজের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব সৃষ্টি করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের কিংবদন্তীতুল্য  অমর শহীদ কুদস্ ব্রিগেডের সাবেক প্রধান জেনারেল কাসেম সুলায়মানি যুব বয়সেই সশস্ত্র বাহিনীতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন।

যুব সমাজ সাধারণত প্রলোভন ও দুর্নীতির দিকে খুব কমই আকৃষ্ট হয়

যুব বয়সী মানুষসহ সব বয়সের মানুষের জন্য কাজকর্ম হচ্ছে মানুষের চিরন্তন পুঁজি। বলা হয়: 'নবীর শিক্ষা করো না ভিক্ষা মেহনত কর সবে'। মহানবী (সা) কাজ করার গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছেন, সবারই উচিত কাজ করা ও সক্রিয় থাকা বা সচেষ্ট থাকা, তবে সবাই সব কাজের উপযুক্ত নয়, যে ব্যক্তি যে কাজের জন্য বেশি উপযুক্ত তার জন্য সে কাজ বেশি সহজ। -কোনো জাতির মধ্যে বেকারত্বের দানব কর্তৃত্বশীল হয়ে পড়লে সেই জাতির মধ্যে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও নৈতিক সংকট ছড়িয়ে পড়ে। তাই বলা যায় বেকারত্ব বেড়ে যেতে পারে এমন কোনো কাজ করা ইসলামী সমাজের জন্য হারাম বা অবৈধ। হালাল উপার্জন এনে দেয় এমন যে কোনো পেশাই সম্মানিত। মহানবী (সা) এক সময় পশু-চারণ করেছেন ও ব্যবসা করেছেন। মানুষের সম্পদের প্রতি লোভ করা বা তাদের কাছ থেকে সাহায্য পাওয়ার আশায় বসে থাকা কোনো মুমিন ব্যক্তির জন্য শোভনীয় নয়। বরং অল্পে তুষ্ট ব্যক্তি মানুষের কাছে ও আল্লাহর কাছে সম্মানিত হন। পরিশ্রম ছাড়াই সম্পদ অর্জনের চেষ্টা মানুষকে দুর্নীতির দিকে ঠেলে দেয়। বাজনা

সৎ উদ্দেশ্যেই সম্পদ বা আয়-উপার্জনে সচেষ্ট থাকাটা জরুরি।  পরিবার ও সন্তানের ভরণপোষণের জন্য হালাল পন্থায় আয়-উপার্জন করাটাও ইবাদাত। কিন্তু কাজ করার উদ্দেশ্য যদি হয় বিলাসিতা বা দরিদ্রদের কাছে অহংকার প্রকাশ করা তাহলে তা হবে শয়তানের উপাসনার সমতুল্য। অন্যদিকে ইসলামী সমাজের উচিত সবার জন্য চাকুরি, পেশা-ভিত্তিক কর্মসংস্থান বা কাজের সমান সুযোগ সৃষ্টি করা।  মানুষ যখন বিভিন্ন পেশায় কাজ বা চাকরিতে মশগুল থাকে তখন তা তাদের জন্য বস্তুগত সমৃদ্ধি ছাড়াও এনে দেয় আত্মিক ও মানসিক প্রশান্তি। যুব সমাজও এর ব্যতিক্রম নয়। কর্মসংস্থান তাদেরকে একের পর এক সাফল্যের সিঁড়িগুলো পার হতে সহায়তা করে। বিভিন্ন ধরনের কর্মসংস্থান ও ব্যবসা যুব সমাজের নানা ধরনের প্রতিভা বিকাশের পথ খুলে দেয় বলে তারা সামাজিক নানা কাজেও সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে সক্ষম হয়।  কর্মসংস্থান পরিবারগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটানোর পাশাপাশি জাতীয় উৎপাদন বাড়াতেও কার্যকর ভূমিকা রাখে। ফলে সমাজে কমে আসে দারিদ্র ও বৈষম্য। মোটকথা তরুণ ও যুব সমাজের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে তথা তাদেরকে প্রফুল্ল রাখতে সমাজ থেকে দূর করতে হবে বঞ্চনা, দারিদ্র ও বেকারত্বের অভিশাপ।#

পার্সটুডে

 

ট্যাগ