ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৪ ২৩:৩৬ Asia/Dhaka

ইসলামের দৃষ্টিতে পরিবারের সরকার প্রধান হলেন স্বামী। আর গৃহ-ব্যবস্থাপনা বা ঘরের রাণী হলেন স্ত্রী।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ি মনে করেন স্ত্রী যেন ঘরের মধ্যে বিশুদ্ধ বাতাসে নিঃশ্বাস নেয়ার তথা প্রশান্তি অর্জনের মাধ্যম। স্ত্রী ঘরের কর্ম-বিধায়ক বা কর্মীদের তত্ত্বাবধায়ক নন, বরং সুগন্ধ বা সুবাসিত সমীরণ। তাই স্ত্রীকে দাসী বা গৃহকর্মী ভাবা ঠিক হবে না। স্ত্রী নিজ থেকে যদি কোনো কাজ করে তাহলে তা করতেই পারেন। তাকে ঘরের কাজকর্ম করার জন্য বাধ্য করার অধিকার স্বামী বা ঘরের কোনো পুরুষের নেই। মহান আল্লাহ সুরা নিসার প্রথম আয়াতে বলেছেন, হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। আর আল্লাহকে ভয় কর, যার নামে তোমরা একে অপরের কাছে অধিকার দাবি করে থাক এবং আত্মীয় জ্ঞাতিদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন। 

স্ত্রীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন এ জন্যই জরুরি যে সন্তানের জন্মদানে তার ভূমিকা পুরুষের চেয়ে মোটেই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। অথচ জাহিলি যুগে তথা ইসলাম-পূর্ব যুগে নারীকে বা স্ত্রীকে কেবলই সন্তান যুগিয়ে দেয়ার মাধ্যম বলে মনে করা হত, সন্তানের মমতাময়ী মা ও তাদেরকে মানুষ করার জন্য প্রাথমিক তত্ত্বাবধায়ক এবং জীবনসঙ্গী হিসেবে কোনো ধরনের গুরুত্ব দেয়া হত না। পবিত্র কুরআনের দৃষ্টিতে স্বামী ও স্ত্রী-একে অপরের পোশাক। পোশাক মানুষের জন্য সৌন্দর্যের মাধ্যম ও যে কোনো ধরনের বাহ্যিক অসঙ্গতি ঢেকে রাখারও মাধ্যম। আর সৌন্দর্য বলতে কেবল বাহ্যিক সৌন্দর্যকে বোঝানো হয়নি এখানে। আত্মিক ও চারিত্রিক সৌন্দর্যকেও বোঝানো হয়েছে। তাকওয়া বা খোদা-ভীতির পোশাক হচ্ছে সবচেয়ে সুন্দর পোশাক। 

 পবিত্র কুরআনের দৃষ্টিতে স্বামী ও স্ত্রী পরস্পরের কাছে প্রশান্তি পান। তাই তিনি তাদের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ, অনুরাগ ও সম্প্রীতি। ঘরের মধ্যে বা সংসারে অনুরাগের চেয়েও বেশি জরুরি হল প্রশান্তি। এই প্রশান্তি আসলে অন্য গুণগুলোও চলে আসবে। একজন স্বামী যখন স্ত্রীর কাছে প্রশান্তি পায় তখন বাইরের জগত যত অশান্তই হোক না কেন তখন সেই স্বামী নির্বিঘ্নে তার সব ধরনের দায়িত্ব পালনের উৎসাহ ও উদ্দীপনা পায়। এমনও দেখা যায় স্ত্রীর প্রশান্ত অবস্থা দেখে স্বামীরা জিহাদে যাওয়ার সাহস পান। অনেক সময় স্ত্রীরাই স্বামীকে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে যেতে উদ্দীপনা দান করেন। ইসলামী ইরানের আট বছরের পবিত্র প্রতিরক্ষা যুদ্ধে ও সিরিয়ায় হযরত যাইনাব (সালামুল্লাহ আলাইহার) পবিত্র মাজার রক্ষার যুদ্ধেও এমন অনেক দৃষ্টান্ত দেখা গেছে। কখনও মা ছেলেকে জিহাদে পাঠাচ্ছেন এবং কখনও স্ত্রী স্বামীকে জিহাদে যাবার ব্যাপারে উৎসাহ দিচ্ছেন। ঘর ও সংসার যদি প্রশান্তির নীড় না হত তাহলে স্বামী বা সন্তানরা এসব ক্ষেত্রে জিহাদের যাওয়ার অনুপ্রেরণা পেতেন না।

 পরিবারে স্বামী ও স্ত্রী তথা বাবা ও মা সন্তানদের জন্য আদর্শ হিসেবে বিবেচিত হন। তাদের ভালো ও মন্দ উভয় কাজের প্রভাবই পড়ে সন্তানদের ওপর। তাই তারা যদি আচার-আচরণে এবং কথা-বার্তায় ভালো স্বামী ও ভালো স্ত্রী না হন –এর প্রভাব সন্তানদের আচরণের ওপরও ভবিষ্যতে ছাপ রাখতে পারে। সন্তানদের ব্যক্তিত্ব গঠনে মা-বাবার তথা স্বামী ও স্ত্রীর আচরণ বেশ গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে।  

পবিত্র কুরআনের দৃষ্টিতে নারী ও পুরুষ সমান মানবীয় মর্যাদার অধিকারী। তাই ভালো কাজ যেই করুক না কেন – পুরুষ বা নারী – মহান আল্লাহর কাছে তাদের সাওয়াব সমান। পুরুষ হওয়ার কারণে বেশি সাওয়াব বা নারী হওয়ার কারণে একই ধরনের ভালো কাজ করেও নারী পাবেন কম সাওয়াব এমন কোনো বাণী বা বক্তব্য পবিত্র কুরআনে নেই।

 যদি যে কোনো পুরুষের মর্যাদা আল্লাহর কাছে নারীর চেয়ে উত্তম হত তাহলে একজন কাফির পুরুষও হযরত খাদিজা, হযরত ফাতিমা, হযরত মারিয়াম ও হযরত আসিয়ার চেয়ে উত্তম  বলে ইসলাম রায় দিত। যে কোনো স্বামী তার স্ত্রীর চেয়ে শ্রেষ্ঠ – এমন ধারণাও ভিত্তিহীন। যদি তা-ই হত তাহলে মহান আল্লাহর কাছে ঈমানদার নারী বিবি আসিয়ার চেয়ে তার কাফের স্বামী ফেরাউন বেশি মর্যাদার অধিকারী হতেন। 

“তাঁর নিদর্শন (আয়াত) সমূহের অন্যতম এই যে, অবশ্যই তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের নিজেদের মধ্য থেকে জুটিদের সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি লাভ করতে পারো এবং তিনি তোমাদের পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়ার্দ্রতা তৈরি করে দিয়েছেন; নিঃসন্দেহে এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্য নিদর্শনাদি রয়েছে।” (সূরাহ্ আর-রূম্ : ২১)-অনেকেই এই আয়াতের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন যে নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে পুরুষের প্রশান্তির জন্য। অথচ স্বামী ও স্ত্রী পরস্পরের জন্যই যে প্রশান্তির মাধ্যম এ আয়াতে সেই মহাসত্যই তুলে ধরা হয়েছে।
 

এটা স্পষ্ট কুরআন মজীদে নারীর ওপর পুরুষের জন্মগত শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণকারী কোনো কথা তো নেইই, পরস্পরের সমানাধিকারের বিরোধী তথা স্ত্রীকে স্বামীর হুকুমের দাসী হিসেবে গণ্যকারী কোনো কথাও নেই। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 


 

ট্যাগ