মার্চ ৩০, ২০২৪ ২০:৪২ Asia/Dhaka

যে কোনো সভ্য সমাজের দায়িত্ব হল নারীর মানবীয় সম্মান রক্ষা করা ও নারী সমাজের মধ্যে আত্ম-বিশ্বাস জাগিয়ে তোলা। অন্যদিকে প্রকৃত মানুষ ও সুন্দর বা আদর্শ সমাজ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নারীর রয়েছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

বর্তমান যুগে অর্থাৎ কথিত এই আধুনিক যুগে পাশ্চাত্য-প্রেম মানুষের জন্য এক বড় সংকটে পরিণত হয়েছে। ইরানের ইসলামী রাষ্ট্র ইসলামী শিক্ষা প্রচারের ওপর জোর দেয়ার পাশাপাশি এই পশ্চিমা মতবাদ বা ফ্যাশনের বিষাক্ত প্রভাবের ব্যাপারেও নারী সমাজকে সতর্ক করার চেষ্টা চালাচ্ছে। ইরানের ইসলামী নেতৃবৃন্দ নারী সমাজকে প্রকৃত স্বাধীনতা ও নৈতিক মূল্যবোধগুলো রক্ষার দিকে আহ্বান জানান।

বিশ্বের মুসলিম রাষ্ট্রগুলো বহু বছর ধরে দুটি বড় সংকটে ভুগছে: প্রথমত আধুনিকতার হুজুগ তথা আধুনিকতার ফ্যাশনের অনুরাগ এবং দ্বিতীয়ত জাহেলি জামানার কুপমণ্ডকতা তথা পশ্চাদমুখি প্রবণতা। এ দুই প্রবণতাই অত্যন্ত ধ্বংসাত্মক। পাশ্চাত্যের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ আমাদেরকে সঠিক মূল্যবোধগুলোর ব্যাপারে উদাসীন করে তোলে। অন্যদিকে ইসলামী মূল্যবোধ বা বিধি-বিধান যথাযথভাবে অনুসরণের নামে একদল চরমপন্থি মুসলমান মানুষকে চরম কঠোরতা ও কুপমণ্ডুকতার শিকার করছে। এ দুই প্রবণতাই সমাজের সব ধরনের অগ্রগতি, সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের পথে বড় ধরনের বাধা হয়ে আছে। নারী সমাজের অধিকারও বিভিন্ন সমাজে  এ দুই আগ্রাসনের শিকার হয়ে আসছে। তাই দেখা যায় এক শ্রেণীর নারী হিজাব পরিহারের চেষ্টা করছে এবং অন্য এক শ্রেণীর ধর্মান্ধ গোষ্ঠী বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুলে মেয়েদের পড়াশুনাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।  ইরানের ইসলামি বিপ্লব এ দুই প্রবণতার বিরুদ্ধেই সংগ্রামের অংশ হিসেবে খাঁটি ইসলামী জীবন-ধারার দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার করে আসছে।

ইসলাম সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণকে নিষিদ্ধ করেনি। বরং ব্যক্তিগত কাজ, স্বামী-সেবা ও সন্তানের প্রতিপালন আর প্রশিক্ষণের দায়িত্ব তথা পারিবারিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এইসব ক্ষেত্রেও নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণকে উৎসাহ দিয়ে এসেছে।মুসলিম নারী সমাজ লজ্জাশীলতা ও চারিত্রিক শালীনতা রক্ষার পতাকাবাহী। আর এ বিষয়টি তাদের জন্য বয়ে আনে গৌরব। নারীকে যেখানে লজ্জাশীল হওয়া দরকার সেখানে লজ্জাশীল ও দয়ার্দ্র হতে এবং যেখানে তরবারির মত শানিত হওয়া ও কঠোর ইমানি শক্তি প্রদর্শন করা জরুরি সেখানে ঠিক সেরকম তেজস্বি ও কঠোর হতে বলে ইসলাম। 

একমাত্র মুসলিম বা ঈমানদার নারীই এমন দ্বৈত-শক্তির অধিকারী, অবশ্য প্রকৃতিগতভাবেই নারীর মানস এমন দ্বৈত শক্তির সহায়ক। ইসলাম উপযুক্ত ও সুশিক্ষিত মাতা গড়ে তোলার জন্য জ্ঞান অর্জন ও গবেষণাকে নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই ফরজ বলে ঘোষণা করেছে। ইসলামী ইরানের বিপ্লবী নারী সমাজ পারিবারিক ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সামাজিক, শিক্ষা ও গবেষণা এবং  আধ্যাত্মিক ক্ষেত্র তথা ইবাদাত-বন্দেগীর ক্ষেত্রেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে পুরুষদের মতই।

নারী সমাজ একটি জাতির অর্ধেক অংশ। তাই তাদের উন্নতি ছাড়া জাতির উন্নতিও সম্ভব নয়। ইসলামে নারীর জন্য ইসলামী মূল্যবোধ বিষয়ক যেসব দিক-নির্দেশনা রয়েছে সেসবের আলোকে নারী সমাজ নিজের আত্মপরিচিতি ফিরে পান। পুরুষের মত নারী সমাজের জন্যও ইসলামী শিক্ষা অর্জন বেশ জরুরি। ইসলামের প্রাথমিক যুগেও এই শিক্ষা কার্যক্রম দেখা গেছে। মহানবী (সা) ধর্মীয় শিক্ষা বিষয়ক যেসব বক্তব্য রাখতেন সেসব বক্তব্যে নারী সমাজের প্রতিও দিক-নির্দেশনা থাকত। তাই নারী সমাজের জন্যও কুরআন ও হাদিসের জ্ঞান অর্জনের কোনো বিকল্প নেই। ইসলামি জ্ঞান চর্চায় নারীকে পুরুষের সম-পর্যায়ে ও এমনকি তাদের চেয়েও উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছার চেষ্টা করা উচিত। শক্তিশালী সমাজ ও মানুষ গড়ার কাজে তারা পুরুষের চেয়েও অগ্রণী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছেন বলে ইতিহাসে দেখা যায়।

ইরানের সংসদে নির্বাচিত নারী প্রতিনিধি

একটি জাতি বা সমাজকে ধ্বংস করতে চাইলে নারী সমাজকে বিভ্রান্ত করার মাধ্যমে সেই সমাজ বা জাতিকে ধ্বংস করা সবচেয়ে সহজ। অন্য কথায় চরিত্রবান জাতি গড়তে হলে চরিত্রবান নারী ও সুশিক্ষিত মা গড়ে তুলতে হবে সর্বাগ্রে। পাশ্চাত্য তথা ইসলামের শত্রুরা এ বিষয়টি বুঝে বলেই তারা মুসলিম বিশ্বের হিজাবধারী নারীদের সম্মান ও আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরানোর চেষ্টা করছে ও তাদের এটা বোঝাতে চাইছে যে তোমরা স্বাধীনতা ও মর্যাদা চাইলে হিজাব বর্জন কর! তাই মুসলিম নারী সমাজকে এটা বুঝতে হবে যে সমাজে বেপর্দা হয়ে উপস্থিত হওয়ার মধ্যেই রয়েছে নারীর প্রতি অসম্মান ও নিরাপত্তাহীনতা, অন্যদিকে হিজাবের মাধ্যমে নারী অর্জন করেন সর্বোচ্চ আত্মবিশ্বাস, নিরাপত্তা, সম্মান ও স্বাধীনতা। পশ্চিমা ভোগবাদে নারী কেবলই ভোগের সামগ্রী। আর এই দৃষ্টিভঙ্গির আলোকেই তারা নারীদেহের গণ-যৌনতায়ন করছে! খোদাভীরুতা ও ঈমান ছাড়া নারী সমাজ কখনও আত্মিক পরিশুদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হবে না। একমাত্র ঈমান ও খোদাভীতিই নারী ও পুরুষকে সব ধরনের পাপ থেকে দূরে রাখতে পারে।

ইসলামি বিপ্লবের রূপকার ইমাম খোমেনী (র.)'র মতে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজকে এবং এমনকি রাষ্ট্রকেও পশ্চিমা মতবাদের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে হলে দরকার ইমান ও আত্মিক পরিশুদ্ধি যা এনে দেয় দৃঢ়তা, আত্মবিশ্বাস ও অগ্রগতি। পশ্চিমা চিন্তাধারার কাছে নিজেদের বিকিয়ে দেয়ার প্রবণতা মুসলিম বিশ্বের জন্য খুবই ধ্বংসাত্মক। পাশ্চাত্যের মানসিক দাসত্ব পশ্চিমা সাংস্কৃতিক আগ্রাসনকেই শানিত করে। তাই সাংস্কৃতিক ও চিন্তার স্বাধীনতা অর্জন করতে হলে আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে ইসলামী সংস্কৃতির নীতিমালার দিকে।  বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো নারীকে স্বাধীনতা দেয়ার নামে ইসলামি সংস্কৃতি ও মূল্যবোধগুলোকে সমাজ থেকে তাড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে যাতে মুসলিম সমাজের ওপর কর্তৃত্ব করে পশ্চিমা সংস্কৃতি। আর তারা এটা করতে চায় নারী সমাজকে বিভ্রান্ত করার মাধ্যমে। তাই দূরদর্শী মুসলিম নারীকে হতে হবে সচেতন এবং ইমান ও আত্মবিশ্বাস জোরদারের মাধ্যমে পাশ্চাত্যের অন্তঃসারশূন্য ও প্রতারণামূলক জীবনাদর্শের মোকাবেলায় তাদেরকে রুখে দাঁড়াতে হবে। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/৩০

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।  

ট্যাগ