মে ২৯, ২০১৭ ১৭:৩৯ Asia/Dhaka
  • ইরানি গল্প ও রূপকথা: আহমাদ ও বাদশাহ-১

এক বুড়ির এক পুত্র সন্তান ছিল। নাম ছিল আহমাদ। সূতা কাটা ছিল বুড়ির পেশা। সূতা কেটে যা টাকা পয়সা পেত তা দিয়েই রুটি রুজির ব্যবস্থা করা হত। একদিন আহমাদ মায়ের সামনে এসে বললো সে কাজ করতে চায় এবং আজ থেকেই সংসারের রুটিরুজির সহযোগী হতে চায়। ছেলের কথা শুনে মা খুব খুশি হয়ে গেল।

ছেলেকে বললো: ঠিক আছে। কাল বাদশার দরবারে যেও। তাকে বলো তোমাকে যেন একটা কাজ দেয়।ছেলে মায়ের কথায় সায় দিলো এবং পরদিন সকালে বাদশার দরবারে গিয়ে হাজির হলো। বাদশাকে বললো তাকে যেন একটা কাজ দেয় যাতে সংসারের ভরণ পোষনের একটা ব্যবস্থা করতে পারে।

বাদশাহ তার মন্ত্রীর দিকে তাকালো। জিজ্ঞেস করলো: এই ছেলেকে কী কাজ দেওয়া যেতে পারে!

মন্ত্রী বললো: এই সেই যুবক যাকে আপনি স্বপ্নে দেখেছিলেন।

বাদশাহ মন্ত্রীর কথা শুনে আহমাদকে বললো: 'বেহেশত বাগানে' যাও!  সেখানে দেখবে একটা সোনা এবং রূপার শিংওয়ালা হরিণ। ওই হরিণটাকে ধরে নিয়ে এসো!

বাদশার আদেশ শুনে আহমাদ ফিরে গেল বাসায় এবং ব্যাপক কান্নাকাটি করলো। মা কান্নাকাটি দেখে ছেলেকে জিজ্ঞেস করলো: কী হয়েছে! এভাবে কান্নাকাটি করছো কেন?

মায়ের প্রশ্নে আহমাদ কান্নাকাটি করার কারণ মানে বাদশার আদেশের কথা খুলে বললো।  

মা বললো: আল্লাহ ভরসা। এই রাতটা যাক। দেখি কাল কী করা যায়। আহমাদ রাতে ঘুমালো। যখন আহমাদ গভীর ঘুমে, খিজির পয়গাম্বরকে সে স্বপ্নে দেখলো। তিনি আহমাদকে বলছেন: কাল সকালে ঘোড়ার রসদপত্র, পথের খাবার দাবার, পানি, এক মশক শরাব নিয়ে যাত্রা করবে। যেতে যেতে এক রাস্তার মাথায় পিঁপড়ার বাসার কাছে গিয়ে পৌঁছবে। রুটি দেবে ওই পিঁপড়াগুলোকে। তারপর আবার যাত্রা করবে পথে। যখন হাতিদের কাছে গিয়ে পৌঁছবে তাদের জন্য শরাবের মশকটা ছুঁড়ে মারবে।

তারপর আবারও ছুটে যাবে সামনের দিকে। যেতে যেতে এবার দেখবে তিন জন লোক। একজন দাঁড়িয়ে আছে বামে আরেকজন ডানে। আর তৃতীয়জন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। ওই লোকদের জিজ্ঞেস করবে 'বেহেশত বাগানের' পথ কোনদিকে! ডানে কিংবা বামে যে দুজন লোক থাকবে তাদের কোনো কথায় কান দেবে না। মুখোমুখি যে দাঁড়াবে কেবল তার কথাই অনুসরণ করবে। তার দেখানো পথেই এগিয়ে যাবে। বেহেশত বাগানে গিয়ে এই চিঠিটা বাগানের মালির হাতে দেবে। মালি তোমাকে সোনা এবং রূপার শিঙওয়ালা হরিণ এনে দেবে।

স্বপ্নের কথা বলছিলাম আমরা। সোনা এবং রূপার শিঙওয়ালা হরিণ এনে দেওয়ার কথা শুনতেই আহমাদের ঘুম ভেঙে গেল। জেগেই দেখলো তার সিথানে পড়ে আছে সেই চিঠি। চিঠিটা সে হাতে নিলো। সেইসঙ্গে রসদ, খাবার, শরাব সবকিছু নিয়ে শহরকে পিঠ দেখিয়ে ছুটে চললো তার পথে। যেতে যেতে গিয়ে পৌঁছলো সেই পিঁপড়ার বাসার কাছে। রুটিগুলো সেখানে রেখে দিয়ে আবার ছুটলো আহমাদ। কিছুক্ষণ যাবার পর এবার পৌঁছে গেল হাতিদের এলাকায়। শরাবের মশক মাটিতে রেখে সে ছুটে গেল সামনের দিকে। জিজ্ঞেস করবে বেহেশত বাগানটা কোনদিকে?

এগিয়ে যেতেই দেখলো সেই তিন লোক। একজন মুখোমুখি আর দুইজন ডানে বামে। আহমাদ জিজ্ঞেস করলো: বেহেশত বাগানটা কোনদিকে? ডান পাশের লোকটা বললো-'এই পথে' যাও আর বাম পাশের লোকটা বললো 'ওই পথে যাও'। আহমাদ আবারও জিজ্ঞেস করলো সরাসরি সামনে দাঁড়ানো লোকটিকে। সে ইশারায় বললো 'তার পেছনের দিকে'। আহমাদ তার কথায় শুনলো এবং এগিয়ে গেল। কয়েক দির কয়েক রাত ধরে যেতে লাগলো আহমাদ। পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা, খাল-বিল পেরিয়ে অবশেষে গিয়ে পৌঁছলো বেহেশত বাগানে। বাগানের মালিকে সে আপাদমস্তক ভালো করে দেখে নিলো। লম্বা লম্বা চুল কোমর পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। সব চুলই প্রায় সাদা হয়ে গেছে। আহমাদ ধীরে ধীরে তার কাছে এগিয়ে গিয়ে চিঠিটা হাতে দিলো।

চিঠি হাতে পাবার সঙ্গে সঙ্গে মালি সোনা-রূপার শিংধারী একটি হরিণ এনে গলার দড়িটা দিয়ে দিলো আহমাদের হাতে। হরিণ পেয়েই আহমাদ ফিরে চললো বাদশার প্রাসাদের দিকে। যেপথে এসেছিল ঠিক সেই পথ ধরেই ফিরলো দ্রুত গতিতে। এক সময় সে গিয়ে পৌঁছে গেল বাদশাহর প্রাসাদে। মনে মনে ভীষণ খুশি সে। ভাবছিল কী জানি পুরস্কার দেয় বাদশা তাকে। বাদশা হরিণটাকে বুঝে নিয়ে আহমাদকে বললো: যাও! চলে যাও!

আহমাদ ভীষণ ভারাক্রান্ত মনে একেবারে শূন্য হাতে ফিরে গেল বাসায় মায়ের কাছে। একদিকে ক্লান্ত অপরদিকে কষ্ট ভরা মন।

মা আহমাদের এই মনমরা অবস্থা দেখে জিজ্ঞেস করলো: কী রে কী হয়েছে! মন খারাপ কেন?

আহমাদ সব কথা মাকে খুলে বললো। মায়ের মনটাও ভেঙে গেল। বললো: আল্লাহ মহান। কিচ্ছু ভাবিস না! এই রাতটা কাটুক। দেখা যাক কাল কী হয়।

মায়ের কথামতো আহমাদ সুন্দর করে ঘুমিয়ে পড়লো। ঘুম গভীর হতেই খিজির পয়গাম্বর আবার এলো তার স্বপ্নের ভেতর।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/২৯/টি-১১১