চোখের সাধারণ যত্ন (পর্ব ১) : অধ্যাপক ডা. হজরত আলী
মানব দেহের গুরুত্বপূর্ণ ইন্দ্রিয়গুলোর অন্যতম চোখ। দেহের যত্নের পাশাপাশি চোখের যত্নের একান্ত প্রয়োজন থাকলেও সে কথা আমরা অনেকেই সব সময় মনে রাখি না। আমাদেরকে এ বিষয়ে সচেতন করে তোলার জন্য চোখের যত্ন দিয়ে আলোচনা করেছেন বাংলাদেশের রাজধানীর বারডেমের চক্ষু বিভাগের সাবেক প্রধান ও ঢাকার হারুন আই ফাউন্ডেশন হসপিটালের অধ্যাপক হজরত আলী।
রেডিও তেহরান: অধ্যাপক হজরত আলী চোখের যত্নের কথা আমরা কম বেশি সবাই শুনে থাকি। এখন সাধারণভাবে চোখের যত্ন নেয়ার সত্যিকার প্রয়োজন আছে কি?
অধ্যাপক হজরত আলী: আপনারা সবাই জানেন যে চোখ মানব দেহের খুবই প্রয়োজনীয় একটা অঙ্গ। একই সাথে এটি খুবই সেনসেটিভ বা সংবেদনশীল । আরো বলবো এটি খুব নরম পানি ভর্তি একটা বলের মতো এবং এর সামনে একটা পাতলা আবরণ থাকে। সামান্য এই জিনিসটা দিয়ে সমস্ত পৃথিবীটাকে আমরা দেখতে পাই। সুতরাং চোখ যেমন অতি সহজে আমাদেরকে পৃথিবীর সবকিছু দেখাতে পারে এবং সমস্ত কাজে সহায়তা করে তেমনি এটি অতি সহজে ক্ষতিগ্রস্তও হতে পারে। সুতরাং যাতে চোখ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য সাধারণ কিছু যত্ন নেয়া একান্ত প্রয়োজন।
রেডিও তেহরান: চোখ অতি স্পর্শকাতর এবং অতিপ্রয়োজনীয় অঙ্গ হওয়ায় এর যত্ন নেয়া আমাদের একান্ত প্রয়োজন। এখন আমাদের প্রশ্ন হলো এই যত্ন কিভাবে নেয়া উচিত।
অধ্যাপক হজরত আলী: চোখের যত্ন নেয়ার বিষয়টি আমরা দু’ভাবে দেখতে পারি। জন্ম থেকে জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত কিভাবে যত্ন নেব আর বিভিন্ন রোগ বালাই হলে সেক্ষেত্রে আমরা কিভাবে যত্ন নেব।
প্রথমেই বলবো- মায়ের গর্ভ থেকে যখন শিশু জন্ম নেয় তখন তার চোখটা পরিস্কার কোনো কাপড় বা তুলা দিয়ে চোখের ময়লাগুলো পরিস্কার করে দেয়া উচিত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ সময়ে আমরা অ্যান্টিবায়োটিক একটা ড্রপ ব্যবহার করে থাকি।
এ ছাড়া, লো কনসেনট্রেশন ভিটামিন ড্রপ পাওয়া যায় এটি একফোটা করে বাচ্চার চোখে দেয়া যায়। সিজারিয়ান বেবি হলে এটার প্রয়োজন নেই। তবে সিজারিয়ান না হয়ে নরমাল ডেলিভারি হলে বাচ্চার চোখের যত্নের জন্য এই পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।
চোখে কিছু অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে। যাতে শিশুর চোখে কোনো ইনফেকশন না হয়। এ ছাড়া, আমরা সবাই ঘুম থেকে উঠে চোখটা ধুই। একইভাবে বাচ্চাদের চোখও পরিস্কার করতে হবে। ঘুম থেকে ওঠার পর বাচ্চাদের চোখ ও ধুইয়ে দিতে হবে। কারণ বাচ্চারা তো আর এগুলো খেয়াল করবে না। ফলে বাবা মায়েদের এ বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে এবং দিনে অন্তত দু'তিনবার পরিস্কার করিয়ে দিতে হবে। আমরা মুসলমানরা দিনে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি এসময় মুখ ধই হয় ফলে চোখও পরিস্কার হয়ে যায়। তাছাড়া সকালে ঘুম থেকে ওঠে একবার চোখ-মুখ ধুই। ফলে দিনে ৬ বার চোখ পরিস্কার করা হয়ে যায়।
এর বাইরে যখনই বাইরে থেকে ঘরে ফিরবো তখনই একবার মুখ ধুয়ে নেব। দুপুরে ঘুমুলে বা বিকালে ঘুমালে- ঘুম থেকে উঠে মুখটা একবার ধুয়ে নেব। তাতে চোখটা পরিস্কার হয়ে যাবে। তাছাড়া যদি খুব বেশি পরিমাণ ধুলাবালি পূর্ণ স্থানে যাই সেক্ষেত্রে ওই জায়গা থেকে বেরিয়ে এসেই চোখ ধুয়ে ফেলব।
রেডিও তেহরান: ড. হজরত আলী শিশু থেকে শুরু করে আমাদের সবার চোখ নিয়মিত ধুতে হবে। বিশেষ করে ধুলাবালি পূর্ণ এলাকায় ঘোরাফেরা করলে বা বাইরে থেকে ঘরে ফিরে আসলে চোখ ধুতে হবে। ঘুম থেকে ওঠার পর চোখ ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে। এর বাইরে চোখের যত্নের জন্য আর কি কিছু করার আছে?
অধ্যাপক হজরত আলী: একটা শিশু যখন আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে অর্থাত বড় হতে থাকে তখন সে দেখতে পারে কিনা সেটা দেখতে হবে। যে কোনো একটা খেলনা বা অন্য কোনো জিনিষ সে নিজে দেখে তুলতে পারে কিনা সেটা দেখতে হবে। যদি এটা না পারে তাহলে অতি দ্রুত বাচ্চাকে চোখের ডাক্তার দেখাতে হবে।
আবার বাচ্চারা যখন স্কুলে যায় তখন তার দৃষ্টি ঠিক আছে কিনা সেটাও দেখতে হবে। প্রতিটি বাবা মাকে ক্লাশে খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে তার বাচ্চা ক্লাশে ঠিকমতো দেখতে পারছে কিনা। না দেখলে পারলে শিশুটির চোখ পরীক্ষা করিয়ে চশমা দিতে হবে।
রেডিও তেহরান: শিশুর চোখের যত্নের সঙ্গে বাবা মায়ের সতর্ক হওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। বাবা মা সতর্ক না হলে এ ধরনের যত্ন নেয়া সম্ভব নাও হতে পারে। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের চোখের যত্নের ক্ষেত্রে বিষয়টি কি দাঁড়াবে?
অধ্যাপক হজরত আলী: কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায় কারো বয়স চল্লিশ এবং সে অনেক কিছুই চোখে দেখছে না, ঠিকমতো পড়তে পারছে না। সুঁইয়ে সুতা পরাতে পারছে না। এরকম অবস্থা তৈরী হলে তাদের তখন চোখে চশমা নেয়া প্রয়োজন। এগুলোও চোখের যত্ন। আমরা সাধারণ যখন ঘর থেকে বের হই তখন চোখে সানগ্লাস ব্যবহার করতে পারি। রাতের বেলার জন্য ফটোক্রমেটিক চশমা পাওয়া যায় রাতে অর্থাত অন্ধকারে গেলে ওটা সাদা হয়ে যাবে এবং পরিস্কার দেখা যাবে। আবার দিনের বেলা সূর্যের আলোতে কালো হয়ে যাবে। এই জন্য আমরা চশমা ব্যবহার করতে পারি। যাদের ডায়াবেটিস, ব্লাডপ্রেসার বা আরো অন্যান্য রোগ আছে যেগুলো চোখে এফেক্ট করতে পারে তাদের ক্ষেত্রে চোখের বিশেষ যত্ন নিতে হবে। আবার কিছু কিছু ওষুধ আছে যেমন ক্লোরোকুইন এসব ওষুধ যারা খান তাদের ক্ষেত্রে চোখের বিশেষ যত্ন নেয়া প্রয়োজন।
চোখের যত্নের আজকের আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ চোখ স্পর্শকাতরও বটে। একারণে চোখের সাধারণ যত্নের বিষয়ে আমদের সতর্ক হতে হবে। নিয়মিত চোখ ধোয়া হলে চোখের উপকার হয়। ঘুম থেকে ওঠার পর এবং বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর প্রত্যেকের উচিত চোখ ধোয়া। একই সঙ্গে শিশু ও বয়সী মানুষের চোখের বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত। বিশেষ করে আদরের শিশুটি চোখে দেখতে পায় কিনা তা মা-বাবার খেয়াল করা উচিত।
স্কুলগামী শিশুটির দৃষ্টিশক্তি ঠিক আছে কিনা তাও মা-বাবার নজরে রাখতে হবে। সবচেয়ে ভালো হলো স্কুলে পাঠানোর আগে শিশুকে একদফা চোখ পরীক্ষা করিয়ে নেয়া।#
পার্সটুডে/সৈয়দ মূসা রেজা/আশরাফুর রহমান/২৩