মার্চ ১৭, ২০১৯ ১৮:১৪ Asia/Dhaka

গত আসরে আমরা মাদকে আসক্ত হবার ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের ভূমিকা সম্পর্কে বলেছিলাম, পরিবারের ছেলে-মেয়েরা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ার ঘটনাকে বাবা-মা মনে করে তাদের কোনো ভুল কিংবা অশোভন আচরণই এজন্য দায়ী।

তাই অভিভাবকরা নিজেদেরকে পাপের অংশীদার বলে অনুতাপ বোধ করে। আর এই সুযোগের অপব্যবহার করে আসক্ত ছেলে-মেয়েরা।                 

যাই হোক আজকের আসরে আমরা যাবো একটি পরিবারের শারীরিক সুস্থতার পেছনে ক্রীড়া ও ব্যায়াম বা শরীরচর্চা কীভাবে ভূমিকা রাখে সে বিষয়ের দিকে। পারিবারিক সুস্থতা এখন বিশ্বজনীন একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। আর এই সুস্থতার বিষয়টি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে যে বিষয়টির প্রতি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় তা হলো শরীরচর্চা। বিশেষজ্ঞগণ গবেষণা করে দেখেছেন যে অসুস্থতা এবং মৃত্যুর অন্যতম কারণ হলো শরীরচর্চা বা অনুশীলন না করা। তার বিপরীতে শরীরচর্চা এবং খেলাধুলা মানুষের মনোদৈহিক সুস্থতার ক্ষত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।

শরীরচর্চার কথা বলছিলাম আমরা। ব্যায়াম বা শারীরিক অনুশীলন যে কেবল মানুষের মনোদৈহিক সুস্থতার ক্ষত্রেই গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে তা নয় বরং রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে এমনকি বহু রকমের রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও ব্যাপক প্রভাব ফেলে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে সপ্তায় ৫ দিন মাত্র ৩০ মিনিট করে যদি এয়ারবিক অনুশীলন করা হয় কিংবা সরঞ্জামসহ হার্ড ব্যায়াম যদি সপ্তায় মাত্র ৩ দিন ২০ মিনিট করে করা হয় বহুরকমের রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। যেমন হৃদরোগের মতো কঠিন রোগ কিংবা কার্ডিওভাসকুলার রোগ হবার আশংকা অন্তত আট শতাংশ কমে যায়।

অনুরূপভাবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বক্তব্য অনুসারে শারীরিক এই কসরত মানে নিয়মিত শরীর চর্চার ফলে করোনারি হার্ট ডিজিজ, উচ্চ রক্তচাপ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, ক্যান্সার বিশেষ করে বক্ষ ও কোলন ক্যান্সার হবার আশংকাও কমে যায়। শরীর চর্চা না করা বা কম করার কারণে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হবার আশংকা অনেক বেড়ে যায় বলে চিকিৎসকগণ মনে করেন। অবশ্য এই রোগের আরও অনেক কারণও থাকতে পারে বলে চিকিৎসকগণ বলে থাকেন। যেমন বয়োবৃদ্ধি, শারীরিক স্থূলতা, পরিবারের অন্যদের ডায়াবেটিস থাকা, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, শরীর চর্চা না করা ইত্যাদি। আর এই সকল সমস্যাই শরীর চর্চার মধ্য দিয়ে কাটিয়ে ওঠা অনেকটাই সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞগণ চিকিৎসকগণ মনে করেন।

শরীর চর্চার ইতিবাচক দিকগুলো নিয়ে কথা বলছিলাম আমরা। বিশেষজ্ঞদের মতে সাধারণ ব্যায়াম করার পাশাপাশি যদি ডায়েট কন্ট্রোল করা হয় এবং যথাযথ বিশ্রাম নেয়া হয় তাহলে এক বছরের মধ্যেই  রক্তের সর্বোচ্চ চাপ মানে সিস্টোলিকের মাত্রা কমিয়ে ১৭ ডিগ্রি থেকে ১৪ ডিগ্রিতে নামিয়ে আনা সম্ভব। এ কারণেই যারা নিয়মিত ব্যায়াম করে তারা সাধারণত রক্তচাপ সমস্যায় ভোগে না। ব্যায়াম এমনকি ৬০ থেকে ৮০ বছরের মানুষের মধ্যেও রক্তচাপের এই ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে। হাঁটার সাহায্যে কিংবা পর্বতারোহণের সাহায্যেও উচ্চ রক্তচাপকে ভারসাম্যপূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।

হালকা ব্যায়ামের সুফল নিয়ে বিশ্ব পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা গেছে ব্যায়াম কেবলমাত্র সব ধরনের স্থায়ী এবং অস্থায়ী কার্ডিয়াক আর্থ্রাইটিসকেই হ্রাস করে না এবং এটি হৃৎপিণ্ডের ধমনীর জমাট রক্তকে দ্রবীভূত করার মাধ্যমে স্ট্রোক প্রতিরোধ করতেও সহায়তা করে। ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্য এমনকি যারা ইনসুলিন ব্যবহার করেন তাদের জন্যও ব্যায়াম সুফল বয়ে আনতে পারে। বিশেষ করে ডায়াবেটিসের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আরও যেসব শারীরিক সমস্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে সেগুলো থেকে রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ব্যায়াম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। বিশেষ করে যারা ক্যান্সারে আক্রান্ত তাদের ক্ষেত্রে ব্যায়াম খুবই কার্যকর। কোরিয়ান বিশেষজ্ঞরা বলেছেন হালকা ব্যায়ামের মাধ্যমে স্টোমাক ক্যান্সারে আক্রান্তরাও উপকৃত হতে পারেন।

পেটে টিউমার হয়েছে এবং অপারেশন করে টিউমার বের করা হয়েছে, এরকম ২৫ জন রোগীর ওপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে যেসব রোগী অপারেশনের ২ দিন পর ব্যায়াম করেছে তারা অনেক বেশি শক্তিশালী অন্যদের মানে যারা ব্যায়াম করে নি তাদের তুলনায়। অপারেশনের ২ সপ্তা পর শরীর চর্চাকারীদের দেহে ক্যান্সার প্রতিরোধী কোষের পরিমাণ ব্যায়াম না করা রোগীদের তুলনায় চোখে পড়ার মতো বেশি লক্ষ্য করা গেছে। ক্যান্সার প্রতিরোধী দেহকোষগুলো ক্যান্সারের কোষগুলোকে দমন করতে সহযোগিতা করে। বিশেষজ্ঞরা রোগীদের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে এই সত্যে উপনীত হয়েছেন যে ব্যায়াম করার মাধ্যমে ক্যান্সার প্রতিরোধী দেহকোষ শক্তিশালী হয়।

বিশেষজ্ঞগণ আরও বলেছেন শরীরের রোগ প্রতিরোধ সিস্টেমের দুর্বলতার ফলে দেহে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী সেল বা কোষ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ সিস্টেমকে শক্তিশালী করার অন্যতম উপায় হলো শারীরিক ব্যায়াম, খেলাধুলা, হাঁটা অর্থাৎ শরীর চর্চা করা। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/  ১৭

খবরসহ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সব লেখা ফেসবুকে পেতে এখানে ক্লিক করুন এবং নোটিফিকেশনের জন্য লাইক দিন 

ট্যাগ