'রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে আন্তর্জাতিক চক্রের দুরভিসন্ধি রয়েছে'
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি ছিল একটি নাটক। রেডিও তেহরানকে দেয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে একথা বলেছেন বাংলা ম্যাগাজিন সাপ্তাহিকের সম্পাদক, কলামিস্ট, রাজনৈতিক ভাষ্যকার ও টকশোর বিশিষ্ট আলোচক গোলাম মোর্তোজা।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো যথাযথ ভূমিকা পালন করে নি। তাছাড়া আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এবং জার্মানিসহ ইউরোপের কোনো কোনো দেশের এজেন্ডা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের কিভাবে বাংলাদেশের মেইনস্ট্রিমের সঙ্গে মিলিয়ে দেয়া যায়। আগামীতে এ বিষয়টি বাংলাদেশকে ফেস করতে হবে। তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানসূত্র চীনের হাতে।
সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ ও উপস্থাপনা করেছেন গাজী আবদুর রশীদ
রেডিও তেহরান: জনাব, গোলাম মোর্তোজা ২২ আগস্ট রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের কথা ছিল কিন্তু তা ব্যর্থ হয়েছে। এর আগেও একবার ব্যর্থ হয়েছে। রোহিঙ্গারা দেশে ফিরতে রাজি হয় নি। তো কেন তাদের এই অনীহা? রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ব্যর্থ হওয়ার কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?

গোলাম মোর্তোজা: দেখুন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের সময় তারিখ সবকিছু মিযানমারের পক্ষ থেকে ঠিক করা, তারা ফেরত যাবে- মিয়ানমার ফেরত নেবে, জাতিসংঘের উদ্যোগ এ পুরো ব্যাপারটাই হাস্যকর একটি উদ্যোগ। এই উদ্যোগের পেছনে কোনো ভিত্তি ছিল না, যুক্তি ছিল না যে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফেরত যাবে! রোহিঙ্গারা যে ২২ আগস্ট যাবে না, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে না একথা আগে থেকেই সুনির্দিষ্টভাবে সবাই জানত। বাংলাদেশ ও জাতিসংঘ জানত রোহিঙ্গারা যাবে না। মিয়ানমার জানত তারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে না। এমনকি রোহিঙ্গারাও জানত তারা ফিরে যাবে না। চীন জানত যে পুরো বিষয়টাই একটা নাটক। তাদের তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার একটি নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। আসলে এই নাটকের কোনো ভিত্তি ছিল না। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার একটি প্রক্রিয়া আসলে বিশ্বকে দেখাতে চেয়েছিল। আর সেটি চীনের মাধ্যমে দেখাতে সক্ষম হয়েছে। চীন এটি প্রমাণ করেছে যে, সে বাংলাদেশের পক্ষে থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর জন্য মিয়ানমারকে রাজি করিয়েছে। জাতিসংঘসহ বিশ্বকে এ বিষয় দেখাতে এবং বুঝাতে পেরেছে চীন।
প্রকারান্তরে চীন মূলত মিয়ানমারের স্বার্থ সংরক্ষণ করেছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ১৩/১৪ লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলমান যাতে আর মিয়ানমারে ফিরে না যায় তার একটি স্থায়ী ভিত্তি দিল চীন। আর বাংলাদেশ সেটি বুঝতে পেরেও চীনের চাপে মূলত এমন একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে গেল। তাছাড়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে যে প্রক্রিয়াতে বাংলাদেশ রাজি হয়েছিল সেই প্রক্রিয়ায় এ দেশের স্বার্থের অনুকূলে কোনোকিছু ছিল না। বাংলাদেশ আসলে বিষয়টি যথার্থভাবে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। আর সে কারণে চীন, জাতিসংঘ, বাংলাদেশের উপস্থিতিতে প্রমাণ হলো মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে চায় কিন্তু রোহিঙ্গারা যেতে চায় না।
রেডিও তেহরান: চীনের ভূমিকাকে আপনি নাটক বললেন-তাহলে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক সমাজের বিশেষ করে চীনের যে ভূমিকা সেই ভূমিকা কি তাহলে একেবারেই কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় ছিল না; একথা তো তাহলে স্পষ্ট করে বলা যায়.

গোলাম মোর্তোজা: জ্বি একেবারে প্রথম দিন থেকেই রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনের অবস্থান খুবই পরিষ্কার। রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের অবস্থান আর চীনের অবস্থান একই। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা ইস্যুতে দুইবার প্রস্তাব আনার চেষ্টা করা হয়েছিল। সেই দুইবারই চীন ভেটো দিয়ে তা বাতিল করেছে। আরও একবার আলোচনা করা হয়েছিল অথচ চীনের কারণে প্রস্তাব আনা যায় নি। অথচ বাংলাদেশ বলে থাকে চীন আমাদের সঙ্গে এবং পাশে আছে। মূলত চীনের অবস্থান মিয়ানমারের পক্ষে। তারা মিয়ানমারের পক্ষ নিয়ে বাংলাদেশকে চাপ দিয়ে এরআগে সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করিয়েছে। সেই সম্মতিপত্র স্বাক্ষরে রোহিঙ্গাদের স্বার্থ তো রক্ষিত হয় নি বাংলাদেশেরও স্বার্থ রক্ষিত হয় নি। অথচ বাংলাদেশ সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করেছে। এসব ঘটনার পেছনে মূলত রোহিঙ্গা বিষয়ে চীনের পাতা ফাঁদ ছিল। আর বাংলাদেশ চীনের পাতা সেই ফাঁদে আটকা পড়েছে। চীনের ফাঁদে আটকা পড়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে যৌক্তিক কোনো অবস্থান পৃথিবীর সামনে তুলে ধরতে পারে নি বাংলাদেশ। এরফলে লাভবান হলো মিয়ানমার। আর চীন লাভবান হলো উভয় দিক থেকে। মিয়ানমারের স্বার্থরক্ষা করল চীন। কারণ চীনে মিয়ানমারের স্বার্থ রয়েছে। মিয়ানমারের বিনিয়োগ আছে চীনে, সেখানকার সরকারকে টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে ভূমিকা আছে অন্যদিকে মিয়ানমারের খনিজ সম্পদের ওপর চীনের একচ্ছত্র আধিপত্য রয়েছে। মিয়ানমার সরকারের কাছে চীনের গুরুত্ব আরও বেড়ে গেল। এদিকে পৃথিবীকে দেখালো যে চীন আন্তরিকভাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছিল। এদিক দিয়ে চীনের লাভ হলো। আর বাংলাদেশ সরকার চীনের সঙ্গে সমযোগ্যতায় কথা বলতে এবং সমযোগ্যতায় যুক্তি তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে।
রেডিও তেহরান: জনাব গোলাম মোর্তোজা, শুধু চীন নয়; রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশ যে ভূমিকা পালন করেছে সমান্তরালে আন্তর্জাতিক সমাজের ভূমিকাও প্রয়োজন ছিল। আপনার দৃষ্টিতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সমাজ কি সেই ভূমিকা পালন করেছে বা করছে?

গোলাম মোর্তোজা: না, আন্তর্জাতিক সমাজ সেই ভূমিকা পালন করে নি। তাছাড়া আন্তর্জাতিক সমাজের কাছে আপনাদের যেরকম প্রত্যাশা আমার প্রত্যাশা অতটা নয়। এর কারণ হচ্ছে রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘ, আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলো কথা বলেছে। কিন্তু তারা কথার বাইরে যে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে সেরকম কোনো টুলস তাদের হাতে নেই। তবে মিয়ানমারকে চাপ দেয়ার অস্ত্র রয়েছে চীনের হাতে। মিয়ানমার সংকট নিয়ে জাতিসংঘ এবং নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে চীন ভেটো দিয়ে বাতিল না করত তাহলে মিয়ানমারের আজকের যে শক্তিশালী অবস্থান –সেটি থাকত না। আর সে কারণে বলব রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সমাজের যতটা শক্তি নিয়ে সামনে আসার কথা ছিল সেভাবে তারা আসে নি-একথা যেমন সত্যি একইভাবে যদি আন্তর্জাতিক সমাজ পুরো শক্তি নিয়ে আসত এবং চীন ও রাশিয়া যদি ভোটো দিত তাহলেও কোনো কাজে আসত না।
আমি এখানে চীনের কথা সবচেয়ে জোর দিয়ে বলছি এ কারণে যে, মিয়ানমারের ওপর চীনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি।
রেডিও তেহরান: আপনি চীনের কথা এবং আন্তর্জাতিক সমাজের কথা বললেন। তো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ভারতের অবস্থানকে আপনি কিভাবে দেখছেন? সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে তো আশ্বাস দিয়েছেন তারা এ ব্যাপারে সহায়তা করবে। আপনার মূল্যায়ন কী?
গোলাম মোর্তোজা: দেখুন, মিয়ানমারে একচ্ছত্র আধিপত্য রয়েছে চীনের। অন্যদিকে মিয়ানমারে খনিজ সম্পদ ও সামরিক ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান শক্ত করার জন্য কোনো অবস্থাতেই দেশটির সরকারের নীতির বিরুদ্ধে যাবে না দিল্লি। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশের মানুষের পাশে ভারত থাকল না এ দেশের মানুষের সাথে আমারও এ বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে। তবে আমার অভিযোগের জায়গাটি ভারতের চেয়ে চীনের বিরুদ্ধে বেশি।
কারণ চীনের সাথেও ভারতের মতেই ভালো সম্পর্ক বাংলাদেশের। তবে চীনের প্রতি প্রত্যাশার জায়গাটা বেশি হওয়ার কারণ হচ্ছে- আন্তর্জাতিক বিশ্ব অনেক বেশি এগিয়ে এলেও চীন ভেটো দিয়ে বাতিল করে দিত। অন্যদিকে চীন যদি মিয়ানমারের পক্ষে থাকে এবং ভারত যদি বাংলাদেশের পক্ষে অনেক সোচ্চারও হয় তাতে এ ক্ষেত্রে সুফল মিলবে না। কারণ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য নয় ভারত। অর্থাৎ আমি বলতে চেয়েছি- নিরাপত্তা পরিষদের ভেটো দেয়ার ক্ষমতা ভারতের নেই। ফলে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের ক্ষেত্রে ভূমিকা নেয়া এবং কার্যকর করার ক্ষেত্রে ভারতের চেয়ে চীনের গুরুত্ব অনেক বেশি। আর সে কারণে ভারতের বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ থাকতে পারে কিন্তু কার্যকর সমাধান সূত্র আছে চীনের হাতে- ভারতের হাতে নয়।
আর চীন বাংলাদেশকে সমর্থন না করে মিয়ানমারকে সমর্থন জানাচ্ছে। এর বাইরেও মিয়ানমারের ওপর জাপানেরও প্রভাব রয়েছে। জাপানও রোহিঙ্গা ইস্যুতে পুরোপুরিভাবে মিয়ানমারের পক্ষে। এ প্রসঙ্গে আমি বলতে চাই, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নিকট অতীতে যখন জাপান সফর করছিলেন তখন আমরা জানছিলাম যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে দেশটি আমাদের সহায়তা করবে। তবে বাস্তবে ঠিক সেই সময় মিয়ানমারে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত মিয়ানমারের গণমাধ্যমে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিল। তাতে জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেছিল-রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের নীতিকে সমর্থন করে জাপান। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বিশ্বে প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলো যারা মিয়ানমারের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে তারা পুরোপুরিভাবে মিয়ানমারের পক্ষে।
মিয়ানমারের পক্ষে জাপানের থাকার কারণ হচ্ছে, দেশটি বাংলাদেশে যতটুকু বিনিয়োগ করেছে তারচেয়ে কয়েক গুণ বেশি বিনিয়োগ করেছে মিয়ানমারে। জাপান কমপক্ষে ৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে সেখানে। মিয়ানমারে ঘোষিত চীনের বিনিয়োগের পরিমাণ ১৮ বিলিয়ন ডলার। তবে এই পরিমাণটা আরও অনেক বেশি। এইসব জায়গায় বাংলাদেশ বন্ধুত্বের নিদর্শন স্বরূপ কোনো দেশের সাথে সমানতালে আলোচনা, কূটনৈতিক ততপরতা বা নিজেদের স্বার্থের অনুকূলে কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
ফলে গত কিছুদিন ধরে আমরা লক্ষ্য করেছি, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এবং জার্মানিসহ ইউরোপের কোনো কোনো দেশের একটি এজেন্ডা রয়েছে। সেটি হচ্ছে রোহিঙ্গাদের কিভাবে বাংলাদেশের মেইনস্ট্রিমের সঙ্গে মিলিয়ে দেয়া যায়। আগামীতে বাংলাদেশকে এ বিষয়টি ফেস করতে হবে। তাদের বক্তব্য যেহেতু মিয়ানমারে নিরাপত্তা নেই এবং রোহিঙ্গাদের সেখানে ফেরত পাঠানো গেল না সুতরাং তাদেরকে বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে থাকার ব্যবস্থা করুন। আর বাংলাদেশও সেদিকে কিছুটা এগিয়ে আছে। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য যে স্থায়ী ক্যাম্পের ব্যবস্থা করা হয়েছে সেটি রোহিঙ্গাদের ফেরত না পাঠানোর ক্ষেত্রে একধরনের যৌক্তিক অবস্থান তৈরি করবে।

রেডিও তেহরান: জনাব গোলাম মোর্তোজা, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হওয়ার পর বাংলাদেশের পররষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে থাকার জন্য যারা প্ররোচনা দিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তো এখানে কারা কিভাবে প্ররোচনা দিচ্ছেন-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্য নিয়ে আপনি কি বলবেন?
গোলাম মোর্তোজা: দেখুন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর যে বক্তব্যটি আপনি তুলে ধরলেন তার আলাদা কোনো তাৎপর্য নেই।
প্রথমত- রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে থেকে যাওয়ার প্ররোচনা দিচ্ছেন বলে যে কথা বলা হচ্ছে তার কোনো ভিত্তি নেই। প্রশ্নটি হচ্ছে কারা প্ররোচনা দিচ্ছেন? এ বিষয়ে সরকারের নীতিরই ঠিক নেই। ফলে অন্যদের ওপর দায় চাপানোর কোনো অর্থ নেই।
দ্বিতীয়ত- রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে থেকে যাওয়ার প্ররোচনা যদি কেউ দিয়েও থাকে-সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের সরকারের ভূমিকা কী? প্ররোচনা দেওয়ার পর কেন সরকার কথা বলছে প্ররোচনা দেয়ার আগেই তো সরকারের হস্তক্ষেপ করা উচিত ছিল। সরকার তো সে কাজটি করে নি। রোহিঙ্গারা যেতে চাইবে না এটা সবার জানা ছিল। এটা তো পররাষ্ট্রমন্ত্রীরও জানার কথা যে রোহিঙ্গারা যেতে চাইবে না।
রোহিঙ্গারা যেতে চাইবে না, কেউ প্ররোচনা দিচ্ছে আবার কেউবা গুজব ছড়াচ্ছে এসব অহেতুক কথা বলার কোনো অর্থ হয় না। আবার বলছি যদি প্ররোচনা দেয়ার বিষয়টি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে যারা প্ররোচনা দিচ্ছে তাদের সাথে আগেই সরকারের কথা বলা উচিত ছিল, আলোচনা করা দরকার ছিল। যারা গুজব ছড়াচ্ছে তাদের সাথে সরকারের বসা উচিত ছিল। তখন না বসে নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার পর যদি বলা হয় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে-কীসের ব্যবস্থা নেয়া হবে, কার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে ! এসব কথা আসলে দেশীয় মেঠো রাজনৈতিক বক্তব্য। এসমস্ত বক্তব্যের জাতীয, আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কোনো ভিত্তি নেই।
রেডিও তেহরান: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আপনি একটি আশঙ্কার কথা বললেন তো সবশেষে জানতে চাইব নিকট ভবিষ্যতে কি রোহিঙ্গা প্রত্যাবসান সম্ভব বলে আপনি মনে করেন?
গোলাম মোর্তোজা: দেখুন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য কার্যকর যে উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার ছিল বাংলাদেশের নীতিতেই সেটা নেই। আমাদের এখানে আন্তর্জাতিক যেসব সংস্থা কাজ করছে তাদের নীতিতেও নেই। সুতরাং অদূর ভবিষ্যতে যদি রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো যায় বা তারা ফিরে যায় তার উপযুক্ত সময় এখনই। সময় যত গড়াবে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা তত কমে যাবে। এ প্রেক্ষাপটে আমি বলব রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। একমাত্র সম্ভাবনা তৈরি হবে যদি চীন চাপ দিয়ে মিয়ানমারকে রাজি করায় যে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদেরকে তোমাকে ফেরত নিতে হবে। তখনই একমাত্র সম্ভাবনা থাকে। তবে তারও কোনো সম্ভাবনা আছে বলে আমি মনে করি না।#
পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/২৮