সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৯ ১৮:৩১ Asia/Dhaka

ইনশিক্বাক্ব শব্দের অর্থ হচ্ছে ভেঙ্গে পড়া বা টুকরো টুকরো হয়ে পড়া। এ সুরায় কিয়ামতের প্রাক্কালে বিশ্ব জগতের এলোমেলো বা লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ার বিষয়ে বক্তব্য রয়েছে।

মক্কি এ সুরায় রয়েছে ২৫ আয়াত। ত্রিশতম পারার এ সুরাটি পবিত্র কুরআনের ৮৪তম সুরা। তবে নাজেল হওয়ার আদি ধারাক্রম অনুযায়ী সুরা ইনশিক্বাক্ব পবিত্র কুরআনের ৮৩তম সুরা। ত্রিশতম পারার বেশিরভাগ সুরারই প্রধান আলোচ্য বিষয় পরকাল তথা পুনরুত্থান বা বিচার-দিবস। সুরা ইনশিক্বাক্বের প্রথমেই বর্তমান বিশ্ব-চরাচরের ভয়ানক পরিসমাপ্তি ও কিয়ামত বা পুনরুত্থান শুরুর কথা বলা হয়েছে। এরপর সৎকর্মশীল ও পাপীদের পরিণতি, খোদায়ী শাস্তি নাজিলকারী কিছু পাপ, ইহকাল ও পরকালে মানুষের জীবনের নানা পর্যায় এবং আরও কয়েকটি বিষয় নিয়ে বক্তব্য রয়েছে এ সুরায়।
বিশ্বজগতের সমাপ্তির সময়কার বিশাল ও ভয়ানক ঘটনাগুলো এমনই যে সব সৃষ্টি তা মেনে নিতে বাধ্য হবে। মানুষ, পৃথিবী, গ্রহ-নক্ষত্র ও আকাশমণ্ডলসহ এ দুনিয়ার সব কিছুর ফানা বা ধ্বংস হয়ে যাওয়াটা বিশ্ব-সৃষ্টি ও অস্তিত্ব জগতের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়-পরিবর্তন। এর মধ্য দিয়ে এক নতুন ও উচ্চতর জগতের অধ্যায় শুরু হবে। আর এইসব বিশাল ঘটনা মহান আল্লাহর অশেষ শক্তিমত্তার এবং পুনরুত্থান ও পরকালসহ সব কিছুর ওপর মহান আল্লাহর চরম কর্তৃত্বের নিদর্শন।

সুরা ইনশিক্বাক্বের ৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন, 'হে মানুষ, তোমাকে তোমরা পালনকর্তা পর্যন্ত পৌঁছতে কষ্ট স্বীকার করতে হবে, অতঃপর তাঁর সাক্ষাৎ ঘটবে।'
অর্থাৎ সর্বশক্তিমান আল্লাহকে পাওয়ার জন্য বা তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য মানুষকে কষ্ট করতে হবে। পার্থিব কল্যাণ ও পারলৌকিক কল্যাণ বা চিরন্তন সৌভাগ্য ও মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য প্রত্যেক মানুষকেই কষ্ট ও ভোগান্তি সহ্য করতে হবে। দুনিয়ার জীবন কখনও পুরোপুরি আনন্দময় ও নিষ্কণ্টক কিংবা বাধা-বিপত্তিহীন নয়। যারা এখানে সর্বোচ্চ সুখময় ও বিলাসপূর্ণ জীবনের অধিকারী তারাও কষ্ট আর যন্ত্রণা, পেরেশানি আর ভোগান্তির ক্লেশ থেকে মুক্ত নয়। অস্তিত্বের গাড়িতে সওয়ার মানবজাতির জীবন-সংগ্রামের চির-গতিশীল এ কাফেলা ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় মহান আল্লাহর দিকে ফিরে যেতে বাধ্য। কষ্টকর চেষ্টা ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে মানুষ তার প্রতিপালকের সান্নিধ্য পাবে। মানুষের চেষ্টা ও প্রচেষ্টা আসলে মহান আল্লাহর কর্মসূচিরই এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ।  

এরপর সুরা ইনশিক্বাক্বে ভালো ও খারাপ মানুষের পরিণতির কথা বলা হয়েছে। এ সুরার ১২ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন, মন্দ লোকদের জাহান্নামের আগুনে ঢোকানো হবে ও সেখানে তাদের পোড়ানো হবে। সুরা ইনশিক্বাক্বের পরের দুই আয়াতে এ সম্পর্কে যুক্তি দেখিয়ে বলা হয়েছে, এসব পাপী বা মন্দ লোকেরা পরিবার-পরিজনের মধ্যে পাশবিক আনন্দ-ফূর্তিতে ও প্রবৃত্তি-পূজায় মেতে থাকত এবং পাপ ও খোদাদ্রোহীতায় মেতে থেকে আনন্দ পেত। তারা মনে করতো যে তাদেরকে কখনও আল্লাহর দিকে ফিরতে হবে না এবং হিসাব-নিকাশ বা বিচারের মুখোমুখী হতে হবে না!
সুরা ইনশিক্বাক্বের একাংশে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ শপথ মানুষকে সৃষ্টির সৌন্দর্য নিয়ে ভাবতে বাধ্য করে। শাফাক্বের শপথ এই তিন শপথের অন্যতম। শাফাক্ব অর্থ সন্ধ্যার সুচনালগ্নে আলো ও অন্ধকারের মিশ্রনের অবস্থা। এ অবস্থা বিশ্বে এক গভীর পরিবর্তনের বার্তা দেয়। অর্থাৎ এ বার্তা যে শেষ হচ্ছে দিন ও শুরু হচ্ছে রাত। এ সময়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ খুবই মনোরম এবং এ সময়টি মাগরিবের নামাজের সময়।
এরপর মহান আল্লাহ সুরা ইনশিক্বাক্বে শপথ নিয়েছেন রাত ও  পূর্ণ চাঁদের। রাত অজস্র রহস্যের আধার। মানুষ ও প্রাণীকুল নিজ আলয়ে ফিরে আসে রাতে এবং নেয় বিশ্রাম। তাই রাত হল জীবকুলের জন্য বিশ্রাম ও প্রশান্তির মাধ্যম। রাত ফিরিয়ে আনে সজীবতা।  পূর্ণ চাঁদ অতি উজ্জ্বল। এইসব প্রাকৃতিক বিষয়ের শপথ এ বাস্তবতা তুলে ধরছে যে সমগ্র সৃষ্টিকুল, বিশেষ করে মানুষ ও মানব-সমাজ সব সময়ই বদলে যাচ্ছে। এভাবে মানবজাতি এগিয়ে যাচ্ছে পূর্ণতার দিকে। পরিবর্তনশীলতা সৃষ্টিকুলের সৃষ্ট সত্তা হওয়ার অন্যতম প্রমাণ। সৃষ্টিকুলের পরিবর্তনশীলতা ও পূর্ণতাকামী গতি মানুষকে সৃষ্টি নিয়ে ভাবতে আগ্রহী করে। তারা এসবের মধ্যে মহান আল্লাহর অশেষ মহিমা ও ক্ষমতার নিদর্শন দেখতে পায়। 

সৃষ্টি জগতের পরতে পরতে মহান আল্লাহর এতসব নিদর্শন দেখার পরও অনেক মানুষ কিভাবে খোদাদ্রোহী হয় ও তাতে অবিচল থাকে- তা খুবই বিস্ময়ের ব্যাপার। মহান আল্লাহ এ প্রসঙ্গে সুরা ইনশিক্বাক্বে বলেছেন, অতএব, তাদের কি হল যে, তারা ঈমান আনে না?-
মহান আল্লাহকে চেনার ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার ও আল্লাহর ইবাদতের বিপুল যুক্তি রয়েছে প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে এবং সেগুলো স্পষ্ট ও প্রকাশ্য।  তা সত্ত্বেও বিপুল সংখ্যক মানুষ পবিত্র কুরআন, নবুওত, আখেরাত বা পরকাল ও অন্যান্য বাস্তবতার প্রতি ঈমান আনছে না। পবিত্র কুরআনের বাণী শোনার পরও এইসব মানুষ কুরআনের মালিক এবং আকাশমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের প্রতিপালক তথা মহান আল্লাহ'র প্রতি বিনায়বনত হয় না ও তার কাছে আত্ম-সমর্পণ করতে চায় না কেবলই অহংকার, গোঁড়ামি, বিবেকহীনতা ও যুক্তিহীন অলীক কল্পনা-বিলাসে মদমত্ত হয়ে থাকার কারণে।  #

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/  ২৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।