ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২০ ১৭:১৫ Asia/Dhaka
  • কুরআন পড়ার পর অন্তরে গভীর প্রশান্তি অনুভব করলাম:  রোমানিয়ার নওমুসলিম

'নওমুসলিমদের আত্মকথা' অনুষ্ঠানের এ পর্বে রোমানিয়ার নও-মুসলিম 'লুসিয়ান কোজোকারু'র মুসলমান হওয়ার কাহিনী এবং ইসলাম সম্পর্কে তাঁর কিছু বক্তব্য ও চিন্তাধারা তুলে ধরা হলো:

রোমানিয়ার নও-মুসলিম 'লুসিয়ান কোজোকারু' তার মুসলমান হওয়ার কাহিনী প্রসঙ্গে বলেছেন, 'আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য ও বিশেষ করে যখন নানা সমস্যা ও কষ্টের শিকার হতাম তখন আমি আর আমার মা সাধারণত অর্থোডক্স গির্জায় যেতাম। কিন্তু গির্জার পরিবেশ ভালো লাগতো না। কিন্তু ধর্মের চাহিদা অনুভব করতাম বলে গির্জা ছেড়ে দিতে পারছিলাম না। কিছুকাল পর অন্য ধর্মগুলো সম্পর্কে পড়াশোনার সিদ্ধান্ত নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় অন্যান্য ধর্ম ও ইসলাম সম্পর্কে কিছু ধারণা ছিল। কিন্তু সেইসব ধারণার কারণে ধর্ম ত্যাগ করার মত কোনো যুক্তি দেখছিলাম না। ফলে আরো গভীরভাবে পড়াশোনা শুরু করলাম। অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে ইসলাম সম্পর্কে ইংরেজি ও রোমানিয় ভাষার কয়েকটি ওয়েবসাইটের মুখোমুখি হই। ইসলাম ধর্মের বিশ্বাস, বিধি-বিধান ও প্রথাগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরে অভিভুত হই। যখন মুসলমানদের ঐশী গ্রন্থ কুরআন পড়লাম তখন এ ধর্ম গ্রহণের জন্য আমার আগ্রহ বেড়ে যায়। আমার অনুরোধের প্রেক্ষাপটে ইরানের সম্প্রচার সংস্থার বিশ্ব কার্যাক্রমের ইংরেজি অনুষ্ঠান আমার কাছে পাঠানো পবিত্র কুরআনের ইংরেজি অনুবাদ ও কিছু প্রবন্ধ পাঠায়। ইসলামকে ভালোভাবে বোঝার ক্ষেত্রে এসব আমার জন্য খুবই সহায়ক হয়েছিল। রোমানিয়ার নও-মুসলিম 'লুসিয়ান কোজোকারু   আরো বলেছেন,

' আমি মুসলমান হওয়ার আগেই পুরো কুরআন পড়তে চেয়েছিলাম। কুরআন ও ইসলামের নবীর (সা.) প্রতি যেসব হামলা হচ্ছিল সেসবের কারণ তথা এতসব শত্রুতা আর বিদ্বেষের কারণ জানার জন্য আগ্রহী হয়েছিলাম। বুঝতে চাচ্ছিলাম কেন ইসলামের শত্রুরা এতোটা উদ্বিগ্ন বা আতঙ্কিত। এ মহাগ্রন্থ যথাযথভাবে পড়লে তা মানুষের আত্মার ওপর বিস্ময়কর প্রভাব ফেলে। কুরআন পড়ার পর মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলদের সম্পর্কে জানার পর অন্তরে গভীর প্রশান্তি অনুভব করলাম। এ সময়ই বুঝতে পারি যে কুরআনের বর্ণনা সহজ ও তা বোধগম্য। এই মহাগ্রন্থের বাণী নাজিল হওয়ার পর থেকে এক বিন্দুও বিকৃত হয়নি, অথচ বাইবেল বিকৃত হয়ে গেছে ব্যাপকভাবে।'

পবিত্র কুরআন মানুষের জীবনের জন্য জরুরি মূল্যবোধগুলোকে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করায়, বিশেষ করে ইহকালীন ও পরকালীন জীবন এবং জীবন-যাপন পদ্ধতির ওপর গুরুত্ব দেয়ায় তা রোমানিয় নও-মুসলিম লুসিয়ানের খুবই ভালো লেগেছে। মুগ্ধ ও অভিভুত লুসিয়ান আরো বলছেন:

'কুরআন সমাজকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য একটি পরিপূর্ণ গাইড বই। কুরআন সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিধানের ওপরও গুরুত্ব দিয়েছে। এ মহাগ্রন্থ আধুনিক বিজ্ঞান ও সুস্থ জীবনের মধ্যে পরিপূর্ণ সমন্বয় সাধন করেছে। কুরআন ১৪০০ বছর আগে নানা বিষয়ে যা বলেছে আধুনিক বিজ্ঞান সবে মাত্র সেগুলোর সত্যতা আবিস্কার করছে। চিকিৎসা, ভুগোল, জ্যোতির্বিদ্যাসহ নানা ক্ষেত্রে কুরআন এক জীবন্ত মুজিজা বা অলৌলিকতার সাক্ষ্য। আর এ থেকেই বোঝা যায় কুরআন মহান আল্লাহর বাণী। কুরআন হযরত মুসা ও ঈসা নবী (আ.)সহ কয়েক হাজার বছর আগের নবীদের ঘটনা তুলে ধরে তাঁদের জীবন-যাপন পদ্ধতির ব্যাখ্যা দিয়েছে।'

ইসলামের মহান নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) মানব-ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ব্যক্তিত্ব। সবচেয়ে সুন্দর ও সর্বোত্তম আচার-আচরণ এবং জীবন-পদ্ধতিকে নিজ জীবনে প্রয়োগ করেছেন সর্বকালের সেরা এই মহামানব। রোমানিয়ার নও-মুসলিম 'লুসিয়ান কোজোকারু'  আরো বলেছেন,

'ইসলাম ও মহানবী (সা.)'র জীবনের ঘটনা সম্পর্কে কয়েকটি বই পড়েছি। এইসব বই পড়ে বুঝতে পেরেছি যে, বিশ্বনবী (সা.) পুরো মানবজাতির জন্য অসাধারণ বা অনন্য আদর্শ। তাঁর আধ্যাত্মিক জীবন পবিত্রতা, দয়া, সাহসিকতা ও আল্লাহর প্রতি অবিচল ঈমানে ভরপুর। তাঁর আচার-আচরণ ও মানসিকতা ছিল খুবই আকর্ষণীয়। পোশাক-পরিচ্ছদ ও আচার-ব্যবহারের পদ্ধতির দিকে তিনি সব সময়ই বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। মৃত্যুর মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি ছিলেন মহান আল্লাহর সৎ ও পবিত্র বান্দা বা দাস।'

ইসলামের নির্দেশিত পারিবারিক জীবনও এ ধর্মের প্রতি লুসিয়ানকে আকৃষ্ট করেছে গভীরভাবে। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন, 'ইসলাম বিয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে এবং বাবা-মাকে সম্মান করতে বলে। মহৎ সব গুণের অধিকারী হতে বলে এ ধর্ম। ইসলামে রয়েছে জরুরি সব শিক্ষা। আর এইসব শিক্ষা মানুষকে আদর্শ জীবন গঠনে সহায়তা করে। ইসলাম মানুষের আত্মিক ও শারীরিক সুস্থতাকেও গুরুত্ব দেয়। এ ধর্ম মূল্যবান নানা দিক তুলে ধরে, আর মন্দ দিক বা খারাপ অভ্যাসগুলোকে জনগণ আর সমাজ থেকে দূর করতে বলে।'

এভাবে ইসলামসহ নানা ধর্ম সম্পর্কে পড়াশোনা আর গবেষণার পর  রোমানিয়ার নাগরিক  'লুসিয়ান কোজোকারু' ইসলামের সত্যতা উপলব্ধি করতে সক্ষম হন এবং তিনি তার মাকে নিয়ে মুসলমান হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এ প্রসঙ্গে লুসিয়ান বলেছেন: ইন্টারনেটে পড়াশোনা বাড়িয়ে দিয়ে ও পবিত্র কুরআন পড়ে ইসলামের দিকে ক্রমেই বেশি বেশি আকৃষ্ট হতে থাকি। ইন্টারনেটের মাধ্যমে স্টকহোমের একটি মসজিদও খুঁজে বের করি। ২০১১ সালের চৌঠা মার্চ জুমা নামাজের পর আমি আর আমার মা জুমা নামাজের ইমামের দফতরে যাই ও মুসলমান হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করি। তিনি ইসলাম সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান পরীক্ষা করে দেখার জন্য কয়েকটি প্রশ্ন করেন। এরপর নামাজিদের উপস্থিতিতে আমরা কলিমা শাহাদাতাইন পাঠ করি। আমি খুবই আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েছিলাম। আমার মা আমাকে স্বাগত জানান ও আমার সঙ্গে দয়াদ্র আচরণ করেন।# 

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আশরাফুর রহমান/৭                      

 

 

ট্যাগ