ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২০ ১৯:০৬ Asia/Dhaka

পবিত্র কুরআনের ১০৮ তম সুরা হল সুরা কাওসার। মক্কায় নাজিল হওয়া এ সুরার মোট বাক্য বা আয়াত সংখ্যা তিন।

এই সূরায় কাফিরদের বিদ্রূপের উত্তর, রাসূল (সা.)-কে সান্ত্বনা, ঈদের নামায ও কুরবানির আদেশ, মহানবীর শত্রুদের ধ্বংস হওয়া এবং কাফিরদের নিন্দা ইত্যাদি বর্ণনা রয়েছে। নামাজ আদায়ের পাশাপাশি কুরবানির প্রতি গুরুত্ব দেয়ার মাধ্যমে দরিদ্রদের সাহায্য করার ওপরও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

আল্লামা ইবনে হাজর হাইসামী থেকে রাসূলের (সা.) একটি বাণীর কথা শোনা যায়। ওই বর্ণনা অনুযায়ী মহানবী (সা) হযরত আলীকে বলেছেন, ‘হে আলী! তুমি ও তোমার অনুসারীরা হাউজে কাওসারের পরিতৃপ্ত ও উজ্জ্বল চেহারাধারী হবে, আর তোমার শত্রুরা তৃষ্ণার্ত ও হলুদ চেহারাধারী হবে এবং সেখান থেকে বিতাড়িত হবে।’ (সাওয়ায়েকে মুহরিকা দ্রষ্টব্য)

কাওসারের অর্থ কল্যাণের প্রাচুর্য। মক্কার কাফিররা  রাসুলের(সা.) পুত্রসন্তান না থাকার কারণে বিদ্রূপ করত এবং এতে তিনি মানসিক কষ্ট পেতেন। তাই তাদের বিদ্রূপের জবাব দিতে ও মহানবীকে সান্ত্বনা দিতে আল্লাহ এই সুরা নাজিল করেছেন। যার অর্থ এই যে, আমি তোমার বংশে অসাধারণ প্রাচুর্য বা বরকত দান করেছি। সে কারণে বর্তমানে সম্ভবত এমন কোন স্থান নেই যেখানে তাঁর সন্তান অর্থাৎ সাইয়্যেদ নেই। আর বহু সুন্নি আলেমের বর্ণিত একটি হাদিস হল, মহানবী (সা) বলেছেন, আল্লাহ সকল নবীর বংশ তাঁদেরই ঔরসে রেখেছেন, আর আমার বংশ আলীর ঔরসে রেখেছেন।’ (শারহে মুসলিম, ত্বাহা হোসাইন)

নানা সাক্ষ্য-প্রমাণ ও মত অনুযায়ী নবী-রাসুলদের পর মানবজাতিকে সুপথ দেখানোর ঐশী দায়িত্ব ন্যস্ত হয়েছিল মহানবীর (সা) পবিত্র আহলে বাইতের ওপর যাঁরা ইমাম হিসেবে বিশ্ব-খ্যাত। সর্বশেষ নবী ও রাসুল হিসেবে হযরত মুহাম্মাদ (সা) অনেক যন্ত্রণা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আর এ জন্যই তিনি বলেছেন, কোনো নবীকেই আমার মত কষ্ট দেয়া হয়নি। কিন্তু তিনি কখনও একত্ববাদের প্রচার ও এক খোদার ইবাদতের দিকে আহ্বান বন্ধ করেননি। তিনি মানুষকে উন্নত নৈতিক চরিত্র ও সৌভাগ্যের পথ দেখিয়ে বিশ্বে গভীর পরিবর্তন এনেছেন। অতীতের সব নবী-রাসুল বলেছেন যে, শেষ নবী ও রাসুলের যুগে ধর্ম পরিপূর্ণতা পাবে। আর এই ধর্ম তথা মহানবীর রেসালাত পরিপূর্ণতা পায় তাঁরই স্থলাভিষিক্ত হিসেবে হযরত আলীর ইমামত ঘোষণার মধ্য দিয়ে। মহানবী (সা) নিজেই ঈদে গাদিরের ঘটনায় এই ইমামতের ঘোষণা দিয়েছিলেন।    

মহানবী (সা)’র ঔরসে হযরত খাদিজার গর্ভ থেকে জন্ম নিয়েছিলেন দুই সন্তান কাসেম ও তাহের বা আবদুল্লাহ। এ দুই পুত্র সন্তান মদিনায় হিজরতের আগেই মক্কায় মারা যান। কাফের কুরাইশরা মনে করত বংশধারা কেবল পুত্রের মাধ্যমেই অব্যাহত থাকে। তারা মহান রাসুলকে (সা) পরিহাস করে বলত আবতার বা বংশহীন। তারা এও মনে করত যে পুত্র সন্তান না থাকার কারণে মহানবীর ইসলাম প্রচারের মিশন বন্ধ হয়ে যাবে ও এটা ভেবে তারা আনন্দ অনুভব করত। এরই জবাবে মহান আল্লাহ সুরা কাওসার নাজিল করে ইসলামের শত্রুদের মুখে আঘাত হানেন এবং মহানবীর বরকতময় বংশধারাকে তার কন্যা ফাতিমা জাহরা (সালামুল্লাহ আলাইহার) মাধ্যমে অব্যাহত রাখেন। মহান আল্লাহ এ সুরায় বলেছেন, নিশ্চয়ই আমরা তোমাকে কাওসারের কল্যাণ দান করেছি। তাই তোমার প্রভুর উদ্দেশে নামাজ আদায় কর ও উট কুরবানি দাও। সু-নিশ্চিতভাবেই তোমার শত্রুরা বংশহীন ও লেজহীন।

আস বিন ওয়ায়েল ছিল মক্কার অন্যতম নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি। একদিন মহানবী যখন মসজিদুল হারাম থেকে বের হচ্ছিলেন সে সময় আস তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। আস কিছুক্ষণ মহানবীর সঙ্গে আলাপ করে। একদল কুরাইশ ওই মসজিদে বসে এই দৃশ্য দেখছিল। আস মসজিদে প্রবেশ করলে তারা বলে: কার সঙ্গে কথা বলছিলে? আস বলে: এই আবতার বা বংশহীন লোকটির সঙ্গে (নাউজুবিল্লাহ)! আর এ সময় নাজিল হয় সুরা কাওসার।  এতে মহানবীকে (সা) দেয়া হয় ব্যাপক নেয়ামত ও কল্যাণ দানের সুসংবাদ। এ ছাড়াও বলা হয় মহানবীর শত্রুরাই হবে বংশহীন এবং ইসলাম ও কুরআনের কর্মসূচি মহানবীর ওফাতের পরও বন্ধ থাকবে না। এ সুসংবাদ ছিল একদিকে ইসলামের শত্রুদের জন্য আঘাত ও অন্যদিকে তা ছিল মুশরিকদের পরিহাস ও উপহাসের জবাবে মহানবীর প্রতি সান্ত্বনা। 

‘কাওসার’ অর্থ ব্যাপক কল্যাণ ও বরকত। বেশিরভাগ মুফাসসিরের মতে এখানে কাওসার বলতে হযরত ফাতিমার (সা.আ) অস্তিত্বকে বোঝানো হয়েছে। অতি উন্নত নৈতিক গুণ ও ধার্মিকতার অধিকারী হযরত ফাতিমা ইসলামের বিকাশে কার্যকর ও প্রভাবশালী ভূমিকা রেখেছিলেন। মহানবীর (সা) বক্তব্য অনুযায়ী মহীয়সী নারী ফাতিমা দুই জাহানের নারীকুলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। কারো কারো মতে কাওসার অর্থ নবুওত। আবার কারো কারো মতে কাওসার মানে অনেক সঙ্গী ও সহযোগী। কারো কারো মতে কাওসার বলতে মহানবীর (সা) কন্যা ফাতিমার মাধ্যমে নবী বংশের ব্যাপক বিস্তারকে বোঝানো হয়েছে যারা ইসলামের মূল্যবোধগুলোকে রক্ষা করে খাঁটি ইসলামকে তুলে ধরেছেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে। প্রখ্যাত সুন্নি মুফাস্‌সির ফাখরে রাজির মতে, সুরা কাওসারের তাৎপর্য হল মহানবীর বংশধর দীর্ঘকাল টিকে থাকবে। মহানবীর (সা) বংশধর ছাড়া আর কার বংশে  ইমাম হাসান,  ইমাম হুসাইন,  ইমাম যাইনুল আবেদিন, ইমাম বাকির, ইমাম সাদিক ও ইমাম রেজার মত (তাঁদের সবার ওপর অশেষ দরুদ ও সালাম) এত বেশি সংখ্যক মহামানব সৃষ্টি হয়েছে?

যদিও হযরত ফাতিমার পবিত্র বংশধারার অনেক সদস্যহ তাঁর অনেক বিপ্লবী বংশধর নানা যুগে বিশেষ করে বনি উমাইয়্যা ও বনি আব্বাসের শাসনামলে শহীদ হয়েছেন তবুও আজও তাঁদের বংশধর মুসলিম বিশ্বে ছড়িয়ে আছেন। অথচ বনি উমাইয়্যা বংশের  উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কোনো ব্যক্তি  ও প্রভাবশালী ব্যক্তি দুনিয়াতে টিকে নেই। তাই মহান আল্লাহ চান এই নেয়ামতের কৃতজ্ঞতাস্বরূপ মহানবী (সা) আল্লাহর ইবাদতে বেশি মাত্রায় মশগুল হবেন এবং নামাজ আদায় করবেন ও কুরবানি আর দানের মাধ্যমে জনকল্যাণে জড়িত হবেন।#

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/১০

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ