নভেম্বর ৩০, -০০০১ ০৩:০৪ Asia/Dhaka

আমরা পবিত্র রমজানে আত্মশুদ্ধির উপায় নিয়ে আলোচনা করছিলাম। আত্মশুদ্ধির পথে কয়েকটি বড় বাধা হল পাপের বিষয়ে উদাসীনতা ও অজ্ঞতা। কোন্ কোন্ কাজে পাপ হয় সে সম্পর্কে অনেকেরই স্পষ্ট ধারণা নেই।

আবার আমরা অনেকে বড় বড় পাপ কি কি সে বিষয়ে ধারণা রাখলেও কোনো ধরনের দ্বিধা না রেখেই ছোট ছোট পাপ করে যাচ্ছি! ভাবটা এই যে-আরে! এতো অনেক ছোট পাপ! অনেকে তো অনেক বড় বড় পাপ করে সে তুলনায় এটা খুবই ছোট ও তুচ্ছ! কিন্তু ইসলামী বর্ণনা অনুযায়ী সগিরা বা কথিত ক্ষুদ্র গোনাহকে ছোট গোনাহ মনে করাও হচ্ছে কবিরা গোনাহ! ছোট গোনাহ করার ব্যাপারে অবিচল থাকা বা পীড়াপীড়ি করা এবং তা অব্যাহত রাখা ও অনবরত সেই পাপ করে যাওয়াটাও বড় পাপ তথা কবিরা গোনাহ।  বলা হয় প্রতিটি পাপ মানুষের পবিত্র আত্মায় একটি কালো দাগ তৈরি করে। আর এভাবে কলঙ্কের চিহ্ন পড়তে পড়তে মানুষের বিবেক বা হৃদয়ের পুরো চোখই অন্ধ হয়ে যায় এবং তখন সে বড় বড় বা জঘন্য সব পাপ করতেও বিন্দুমাত্র লজ্জিত হয় না, বরং এসব পাপ না করাটাকেই সে খারাপ মনে করে! পাপের ফলে যে তার দুনিয়ায় সম্মানহানিসহ নানা ধরনের ভয়াবহ ক্ষতি হচ্ছে ও পরকালে মহাশাস্তি অপেক্ষা করছে- সে সম্পর্কে সে পুরোপুরি অচেতন হয়ে পড়ে!

অন্যদিকে প্রকৃত মুমিন ভুলবশত বা ধোঁকায় পড়ে বিন্দুমাত্র পাপ করে ফেললেও সঙ্গে সঙ্গে তীব্র অনুশোচনায় ভোগে এবং বিবেকের দংশনের আগুনে পুড়তে থাকে। এ ধরনের ব্যক্তি সাথে সাথেই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় এবং গোনাহর ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সচেষ্ট থাকে। আর মহান আল্লাহ এ ধরনের সচেতন মানুষকে ক্ষমা করেন। কিন্তু অনেক অসচেতন ব্যক্তি এতো হতভাগ্য যে ইচ্ছাকৃতভাবে বিনা দ্বিধায় পাপ করে যাওয়া সত্ত্বেও কখনও আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া বা ইস্তিগফারের কথা তার মনেও আসে না। পাপ করাতো বড় অপরাধ এবং তা করার পর ক্ষমা না চাওয়া আরও বড় অপরাধ! মহান আল্লাহ আমাদের সবার বিবেককে এমন অসচেতনতার ঘুম থেকে রক্ষা করুন। এটা খুবই ভয়ানক অবস্থা যে পাপ করে যাচ্ছি অথচ বিবেকের অন্ধত্বের কারণে বুঝতেই পারছি না যে পাপ করছি এবং ক্ষমা চাওয়ার সুযোগও হাতছাড়া হচ্ছে! অসচেতন পাপীরা কিয়ামতের দিন তাদের বিশাল পাপের বহর দেখে বলবে: এতো পাপ আমি কবে করেছিলাম! মনেই তো আসছে না যে এসব পাপ করেছিলাম!

 

 

ভেবে দেখুন! আমরা অনেকেই কত সহজেই গিবত বা পর-নিন্দা করছি, প্রকাশ্যে সবার সামনে একজন মুমিন ও ভদ্র ব্যক্তিকে পরিহাস করছি! অন্যদিকে বহু ভালো কাজ বা সাওয়াব করা সত্ত্বেও কিয়ামতের দিন দেখবো যে, আমার সৎকাজ বলতে কিছুই আর অবশিষ্ট নেই! কারণ আমি নিয়মিত যাদের নিন্দা করতাম আমার সব ভালো কাজের সওয়াব চলে গেছে তাদের কাছে! অন্যদিকে পরকালে কেউ কেউ দেখবেন, দুনিয়ায় বহু পাপ করা সত্ত্বেও তার রেকর্ডে অনেক ভালো কাজের সওয়াব লেখা হয়েছে। এর কারণ হল তাদের ছিল বহু নিন্দুক!

অনেক মানুষ ভাবেন, 'ঘুষ খাই তো কি হয়েছে কত দরিদ্র মানুষকে সাহায্য করছি!' কিন্তু চুরির বা অবৈধ অর্থ দিয়ে সৎকর্ম করলে যে তা আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য হয় না তা তাদের জানা উচিত। অনেকে পাপ করেন এই ভেবে যে পরে আল্লাহর কাছে মাফ চাইব ও তওবা করব! অথচ আপাতত আল্লাহর চেয়েও পাপকে গুরুত্ব দেয়াটা যে কুফরি তা তারা ভাবেন না। পরে যে তওবার সুযোগ আসবে বা গোনাহর ক্ষতি-পূরণ করা যাবে- তার তো কোনো গ্যারান্টি নেই। 

 

আত্মশুদ্ধির পথে আরেকটি বড় বাধা হল কিছু ভালো কাজ ও ইবাদত করেই নিজেকে মুক্তিপ্রাপ্ত ভাবার মত অহংকার করা! এ ধরনের ভাব মনে মনে পোষণ করাও বড় ধরনের গোনাহ। তাই দেখা যায় বড় বড় নবী-রাসুলও তাঁদের সৎকর্মকে খুবই নগণ্য মনে করতেন এবং নিজেদেরকে খুব বড় পাপী বা অপরাধী বলে মনে করতেন। নবী-রাসুলরা কখনও কোনো গোনাহ করেননি। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁরা প্রতিটি দায়িত্ব সবচেয়ে ভালো পন্থায় না হয়ে কিছুটা কম ভালো পন্থায় হয়েছে বলে মনে করে সেটাকেই বড় পাপ গণ্য করে কান্নাকাটি করতেন আল্লাহর দরবারে! তারা এটাও জানতেন যে আল্লাহ তওবাকারীদের খুবই ভালবাসেন!

মানুষ যত গোনাহই করুন না কেন- আল্লাহ'র ক্ষমার ব্যাপারে নিরাশ হওয়ায় একটি মস্ত বড় পাপ। বলা হয় মহান আল্লাহ সব গোনাহ ক্ষমা করলেও শির্কের গোনাহ সহজেই ক্ষমা করেন না, কিন্তু তওবা করলেও শির্কের পাপও ক্ষমা করেন।

পবিত্র রমজানের ফজিলত সম্পর্কে বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ জনাব মুহাম্মাদ মুনির হুসাইন খান বলেছেন:

মাহে রমযান মহান আল্লাহর যিয়াফৎ ও মেহমানির মাস অর্থাৎ রমযান মহান আল্লাহর অতিথি আপ্যায়নের মাসঃ

 মহানবী (সা:) বলেছেন: রমযান হচ্ছে এমন মাস যে মাসে তোমরা মহান আল্লাহর যিয়াফতের ( ঐশ্বরিক আপ্যায়ন ) জন্য আমন্ত্রিত হয়েছ এবং তোমাদেরকে মহান আল্লাহ পাকের সম্মানিত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, এ মাসে তোমাদের শ্বাস – প্রশ্বাস তসবিহ এবং তোমাদের নিদ্রা ইবাদত বলে গণ্য হয়। আর এ মাসে তোমাদের নেক আমলসমুহ কবুল  এবং তোমাদের দুআ ও প্রার্থনার জবাব দেয়া হয়।

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/মো.আবুসাঈদ/ ৭