রমজান: খোদাপ্রেমের বসন্ত (পর্ব-২৪)
ইমানকে জোরদার করা তথা ধর্ম-বিশ্বাসকে বদ্ধমূল করা রোজাসহ যে কোনো ইবাদতের অন্যতম লক্ষ্য।
বিশ্বনবী (সা.) বলেছেন, বদ্ধমূল ধর্ম-বিশ্বাস বা ইয়াকীনের অধিকারীর চিহ্ন ছয়টি : ১. আল্লাহর অস্তিত্বের বিষয়ে নিশ্চিত বিশ্বাস অর্জন এবং এর ভিত্তিতেই তাঁর প্রতি ঈমান আনা ২. ইয়াকীন রাখা যে, মৃত্যু নিশ্চিত এবং এ বিষয়ে সতর্ক থাকা। ৩. ইয়াকীন রাখা যে, কিয়ামত সত্য এবং সেদিনের লাঞ্ছনাকে ভয় করা, ৪. ইয়াকীন রাখা যে, বেহেশত সত্য ও এতে আসক্ত থাকা, ৫. ইয়াকীন রাখা যে, জাহান্নাম সত্য এবং তা থেকে বাঁচার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা, এবং ৬. ইয়াকীন রাখা যে, হিসাব-নিকাশ সত্য, কাজেই নিজেই নিজের হিসাব-নিকাশ করা।
নামাজ-রোজা ও ইবাদতের লক্ষ্য হল নিষ্ঠাবান হওয়া। মহানবী বলেছেন, নিষ্ঠাবানের নিদর্শন চারটি : ১. তার অন্তর বিশুদ্ধ, ২. তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পাপাচার থেকে বিরত থাকে, ৩. তার মঙ্গল বা সেবা অন্যরা লাভ করে, ৪. অন্যরা তার অনিষ্ট থেকে মুক্ত থাকে।
দুনিয়ার লোভ-লালসা থেকে মুক্ত থাকা সংযম বা রোজাসহ নানা ইবাদতের অন্যতম লক্ষ্য। বিশ্বনবী (সা.) বলেছেন, দুনিয়াত্যাগীর চিহ্ন দশটি : ১. হারামগুলোর প্রতি নিষ্পৃহ থাকা ২. নিজ প্রবৃত্তিকে সংযত রাখা, ৩. তার প্রতিপালকের তথা আল্লাহর নির্ধারিত ফরজগুলো পালন করা, ৪. যদি ক্রীতদাস হয়, তা হলে সে মালিকের অনুগত থাকে, আর যদি মালিক হয় তা হলে সে হয় ভালো একজন মনিব, ৫. গোঁড়া ও বর্ণবাদী নয়, ৬. বিদ্বেষী নয়, ৭. খারাপ আচরণকারীর সঙ্গে ভালো বা সুন্দর আচরণ করে, ৮. যে তার ক্ষতি করে, তার সে কল্যাণ করে, ৯. তার ওপর যে অত্যাচার করে, তাকে ক্ষমা করে, এবং ১০. আল্লাহর অধিকার পালনে বিনত থাকে।
আমরা সবাই পুণ্যবান হতে চাই। কারণ আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন। রোজাসহ সব ইবাদতের অন্যতম লক্ষ্য পুণ্যবান হওয়া। বিশ্বনবী (সা) বলেছেন, পুণ্যবানের চিহ্ন দশটি : ১. আল্লাহর জন্য ভালোবাসে, ২. আল্লাহর জন্য শত্রুতা করে, ৩. আল্লাহর জন্য কারো সহযোগী হয়, ৪. আল্লাহর জন্য কারো থেকে বিচ্ছিন্ন হয়, ৫. আল্লাহর জন্য রাগান্বিত হয়, ৬. আল্লাহর জন্য খুশী হয়, ৭. আল্লাহর জন্য কাজ করে, ৮. আল্লাহর সন্ধান করে, ৯. আল্লাহর প্রতি বিনয়ী থাকে ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায়, পবিত্র, নিষ্ঠাবান, লজ্জিত ও সতর্ক এবং ১০. আল্লাহর জন্য সদাচার করে।
আমরা সবাই খোদাভীরু বা পরহিজগার হতে চাই। রোজাসহ সব ইবাদতের অন্যতম বড় উদ্দেশ্য হল এটা। বিশ্বনবী (সা.) বলেছেন, পরহিজগারের চিহ্ন ছয়টি : ১. আল্লাহকে ভয় করে, ২. তাঁর ক্রোধ সম্পর্কে সতর্ক থাকে, ৩ ও ৪. সকাল-সন্ধ্যা এমনভাবে অতিবাহিত করে যেন আল্লাহকে স্বচক্ষে দেখছে, ৫. দুনিয়াকে গুরুত্ব দেয় না, ৬. দুনিয়ার কোনো কিছুই তার কাছে বড় নয়, যদিও ওইসব বিষয় বা বস্তুর বৈশিষ্ট্য অথবা আচরণ মোহনীয় বা চাকচিক্যময় হয়ে থাকে।
পবিত্র রমজানের ফজিলত সম্পর্কে বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ জনাব মুনির হুসাইন খান বলেছেন,
রোজার গুরুত্ব: গরম আবহাওয়ায় অর্থাৎ গ্রীষ্মকালে রোযা রাখা জিহাদ সমতুল্য।
আত্মার রোজা:
হযরত আমীরুল মুমিনীন আলী ( আঃ ) বলেছেন: পার্থিব আমোদ-প্রমোদ ও ভোগ – বিলাস থেকে আত্মার রোযা অর্থাৎ বিরত থাকা হচ্ছে সবচেয়ে উপকারী রোযা।
মহান আল্লাহ পবিত্র মেরাজে বিশ্বনবীকে (সা) বলেছেন, তুমি কি জানো ক্ষুধা, নীরবতা ও একাকীত্ব বা নির্জনতার আনন্দ ও সুফলগুলো কি কি? মহানবী বললেন, হে আমার প্রভু! ক্ষুধার সুফলগুলো কি? মহান আল্লাহ বললেন: প্রজ্ঞা, আত্মা বা হৃদয়ের সুরক্ষা, আমার নৈকট্য, (আমার জন্য) স্থায়ী অনুতাপ, জনগণের মধ্যে সচেতন ও বুদ্ধিমান থাকা, সত্য-ভাষী হওয়া, কষ্টের প্রতি পরোয়াহীন ও স্বাচ্ছন্দ্য জীবন।
উত্তম চরিত্র গঠন রোজার অন্যতম উদ্দেশ্য। বিশ্বনবী (সা.)' এক উপদেশমূলক ভাষণ বলেছেন: প্রত্যেক জিনিসেরই মর্যাদা থাকে। আর সভার মর্যাদা হল কিবলামুখী হওয়া। যে ব্যক্তি সবার চেয়ে প্রিয় হতে চায়, তার উচিত আল্লাহকে ভয় করা। যে ব্যক্তি চায় সবচেয়ে শক্তিশালী হতে, তার উচিত আল্লাহর ওপর ভরসা করা। আর যে ব্যক্তি চায় সবচেয়ে ক্ষমতাবান হতে, তার উচিত নিজের কাছে যা আছে তার চেয়ে আল্লাহর কাছে যা আছে তার ওপর বেশি নির্ভর করা। এরপর মহানবী (সা.) বলেন : তোমাদেরকে কি মানুষের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোকের কথা বলব? সবাই বলল : অবশ্যই হে রাসূলুল্লাহ্! তিনি বললেন :
যে ব্যক্তি একা বসবাস করে, আর আগন্তুককে বাধা দেয় ও নিজ ক্রীতদাসকে চাবুক মারে। তোমাদেরকে কি তার চেয়েও নিকৃষ্ট লোকের কথা বলব? সবাই বলল : অবশ্যই হে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)! তিনি বললেন : যে বিচ্যুতিকে ক্ষমা করে না এবং অজুহাতকে মেনে নেয় না। তিনি আবারো বললেন : তার চেয়েও নিকৃষ্ট লোকের কথা কি বলব না? সবাই বলল : অবশ্যই হে রাসূলুল্লাহ্ ! তিনি বললেন : যার কাছ থেকে ভালোর আশা নেই, আর যার অনিষ্ট থেকেও নিস্তার নেই। এরপর বিশ্বনবী (সা.) বললেন : তার চেয়েও নিকৃষ্ট লোকের কথা কি তোমাদেরকে বলব না? সবাই বলল : অবশ্যই হে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)! তিনি বললেন : যে মানুষের সাথে শত্রুতা করে আর মানুষও তার সাথে শত্রুতা করে।
এবারে অর্থসহ ২৪তম রোজার দোয়া:
الیوم الرّابع والعشرون : اَللّـهُمَّ اِنّی اَسْأَلُکَ فیهِ ما یُرْضیکَ، وَاَعُوذُبِکَ مِمّا یُؤْذیکَ، وَاَسْأَلُکَ التَّوْفیقَ فیهِ لاَِنْ اُطیعَکَ وَلا اَعْصیْکَ، یا جَوادَ السّائِلینَ .
হে আল্লাহ ! আজ তোমার কাছে ঐসব আবেদন করছি যার মধ্যে তোমার সন্তুষ্টি রয়েছে। যা কিছু তোমার কাছে অপছন্দনীয় তা থেকে তোমার আশ্রয় চাই। তোমারই আনুগত্য করার এবং তোমার নাফরমানী থেকে বিরত থাকার তৌফিক দাও। হে প্রার্থীদের প্রতি দানশীল।#
পার্সটুডে/এমএএইচ/মো.আবুসাঈদ/২৪