কথাবার্তা: ইউনাইটেড হাসপাতাল ট্রাজেডি, 'আইসোলেশন নয় ছিল মৃত্যুফাঁদ!'
সুপ্রিয় পাঠক/শ্রোতা: ৩০ মে শেনিবারের কথাবার্তার আসরে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি। এরপর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবরের বিশ্লেষণে যাবো। বিশ্লেষণ করবেন সহকর্মী সিরাজুল ইসলাম।
বাংলাদেশের শিরোনাম:
- করোনায় আরো ২৮ জনের মৃত্যু, নতুন শনাক্ত ১৭৬৪ -দৈনিক মানবজমিন
- যুক্তরাষ্ট্রের পরেই ব্রাজিল, একদিনে সর্বোচ্চ আক্রান্তের রেকর্ড-দৈনিক যুগান্তর
- করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশকে ৭৩ কোটি ডলার দিচ্ছে আইএমএফ-দৈনিক প্রথম আলো
- ট্রেনে অর্ধেক আসন ফাঁকা থাকবে, টিকিট বিক্রি হবে অনলাইনে -দৈনিক সমকাল
- আইসোলেশন নয় ছিল মৃত্যুফাঁদ!-ইউনাইটেড হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডে পাঁচ জনের মৃত্যু -দৈনিক ইত্তেফাক
- ভয়াবহ মন্দার পথে ইতালির অর্থনীতি -বাংলাদেশ প্রতিদিন
- অক্টোবরেই করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে আসবে মার্কিন ওষুধ কোম্পানি ফাইজার -কালের কণ্ঠ
ভারতের শিরোনাম:
- মৃত্যু, আক্রান্তের সংখ্যায় ফের রেকর্ড দেশে--দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন
- দৈনিক আজকাল লিখেছে, আক্রান্ত ১,৭৩,৭৬৩, চিন্তার ভাঁজ সরকারের কপালে -দৈনিক আজকাল
- স্বর্ণযুগের এক বছর’, বর্ষপূর্তিতে মোদীর চিঠি দেশবাসীকেদৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা
পাঠক/শ্রোতা! এবারে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবরের বিশ্লেষণে যাব।
কথাবার্তার বিশ্লেষণের বিষয়:
১. বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই লকডাউন শিথিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে নানা সমালোচনা হচ্ছে। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
২. মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে যাচ্ছে তার দেশ। কতটা যৌক্তিক এই সিদ্ধান্ত?
বিশ্লেষণের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবর:

মহামারি করোনায় বিশ্বে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৩৬৭২২৭ জন। মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৬০৪৮২৩৬ জন। যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল১০৪৫৪২ জনে।
করোনায় আরো ২৮ জনের মৃত্যু, নতুন শনাক্ত ১৭৬৪-দৈনিক মানবজমিন
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ১ হাজার ৭৬৪ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজার ৬০৮ জনে। অন্যদিকে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা ৬১০ জন।আজ শনিবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন স্বাস্থ্য বুলেটিনে এ তথ্য জানান অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশকে ৭৩ কোটি ডলার দিচ্ছে আইএমএফ-দৈনিক প্রথম আলো

করোনার প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়েছে। একদিকে যেমন অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে গেছে, অন্যদিকে রপ্তানিও মার খাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ব্যালান্স অব পেমেন্ট ও রাজস্ব চাহিদা মেটাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল(আইএমএফ) বাংলাদেশকে ৭৩ কোটি ২০ লাখ ডলার জরুরি সহায়তা দিচ্ছে। র্যাপিড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি অ্যান্ড দ্য র্যাপিড ফাইন্যান্সিং ইনস্ট্রুমেন্টের আওতায় এই জরুরি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
আমরা আরও বড় হুমকির মুখে পড়ে যাচ্ছি: মির্জা ফখরুল-দৈনিক যুগান্তর

করোনায় গণপরিবহন চালুর সিদ্ধান্ত ভুল মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কোনোরকম চিন্তা ছাড়া একেবারে দায়িত্বজ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, এটা ভুল সিদ্ধান্ত। আরও চরম বিপদের মধ্যে ঠেলে দেয়া হলো। শনিবার বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে তার কবরে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করতে পারে না। ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে জাতিকে একটা বিপদের মুখে ফেলে দিয়েছে। ছুটি, গণপরিবহন চালুসহ সব বিষয়ে সরকার ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোথাও সমন্বয় নেই। সরকারের সিদ্ধান্ত অদূরদৃষ্টি সম্পন্ন এবং প্রজ্ঞাবিহীন।
বাস ভাড়া ৮০ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ-দৈনিক মানবজমিন
করোনাভাইরাস সংকটের সময়ে বাসের ভাড়া ৮০ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। বাস-মিনিবাস ও আন্তঃজেলা সবক্ষেত্রে এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে সরকারি এই সংস্থাটি। শনিবার বিআরটিএ’র ব্যয় বিশ্লেষণ কমিটির বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়। বৈঠকে বিআরটিএ’র কর্মকর্তা ছাড়াও মালিক ও শ্রমিকদের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। প্রতিটি বাসে আসনের অর্ধেক সংখ্যক যাত্রী বহন করতে পারবে বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। প্রসঙ্গত ১ জুন সোমবার থেকে বাস চলাচল শুরু হবে।
আইসোলেশন নয় ছিল মৃত্যুফাঁদ!-ইউনাইটেড হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডে পাঁচ জনের মৃত্যু দৈনিক ইত্তেফাকের এ প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, রাজধানীর বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটটি বানানো হয়েছিল মৃত্যুফাঁদ! খোদ ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারাই বলছেন, হাসপাতালে কোনো ফায়ার ফাইটার টিম নেই। আর মূল হাসপাতালের বাইরে ঐ আইসোলেশন সেন্টারটি যেভাবে তৈরি করা হয়েছিল তাতে পুরো ইউনিটটিই সর্বোচ্চ মাত্রায় একটি দাহ্য বস্তুতে পরিণত হয়েছিল। আগুন লাগার পর হাসপাতালের কেউ রোগীদের উদ্ধারে এগিয়ে যাননি।
জানা গেছে, হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের পাশে মূল ভবনের বাইরে ২০ ফুট বাই ১০ ফুট অস্থায়ী করোনা আইসোলেশন সেন্টারটি করা হয় এক মাস আগে। শীতের সময় কর্মকর্তারা সেখানে ব্যাডমিন্টন খেলেন। করোনার জন্য অস্থায়ীভাবে শেড দিয়ে পাঁচটি বেডের একটি ইউনিট করা হয় টিন আর বোর্ড দিয়ে।
ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক দেবাশীষ বর্ধন বলেন, ওপরে টিন এবং পাশে জিপসাম দিয়ে তৈরি ছিল এটি। পার্টিশন ও সিলিং করা হয়েছে বোর্ড দিয়ে। এর মধ্যেই এসির লাইন, অক্সিজেন, প্রচুর ইলেকট্রিক লাইন ছিল। ফলে পুরো ইউনিটটিই সর্বোচ্চ মাত্রায় একটি দাহ্য বস্তুতে পরিণত হয়েছিল। দেবাশীষ বর্ধন বলেন, আগুন লাগার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আসলে কিছুই করেনি। তাদের ফায়ার ফাইটিং টিম নেই। ফায়ার হাইড্রেন্ট আছে। ওগুলো ব্যবহারের লোক ছিল না তাদের। আর ফায়ার এক্সটিংগুইশার ব্যবহারের চেষ্টা হলেও তা কাজে আসেনি কারণ মেয়াদ ছিল না। তিনি বলেন, ‘আমাদের তদন্ত চলছে, শেষ হলেই রিপোর্ট দেব।’
এবার ভারতের কয়েকটি খবর তুলে ধরছি
করেনায় ভারতে মৃত্যু, আক্রান্তের সংখ্যায় ফের রেকর্ড –দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার এ খবরে লেখা হয়েছে, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুসারে শুক্রবার আক্রান্ত হয়েছিলেন প্রায় সাড়ে সাত হাজার। সেই সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হলেন প্রায় আট হাজার জন। তবে ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হলেন ১১ হাজারেরও বেশি। কোভিডে গত ২৪ ঘণ্টায় সবথেকে বেশি মারা গিয়ে, দেশে মৃত্যুর সংখ্যাও পাঁচ হাজার ছুঁই ছুঁই। আর আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে -মোট আক্রান্ত হলেন এক লক্ষ ৭৩ হাজার ৭৬৩ জন। দৈনিক আজকালের খবরে বলা হয়েছে, দেশে করোনা–আক্রান্ত ১,৭৩,৭৬৩, চিন্তার ভাঁজ সরকারের কপালে
স্বর্ণযুগের এক বছর’, বর্ষপূর্তিতে মোদীর চিঠি দেশবাসীকে-দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা
দ্বিতীয় মোদী সরকারের এক বছর পূর্ণ হল আজ। এই সময়কে ‘স্বর্ণ যুগের’ সঙ্গে তুলনা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরেছিলেন মোদী। ৩০ মে দ্বিতীয় বারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর শপথ নেন তিনি। দীর্ঘ এক বছর কেটে গিয়েছে তাঁর দ্বিতীয় দফার শাসনকালের। এই সময়ের মধ্যে দেশ কতটা এগিয়েছে, সরকার কী কী পদক্ষেপ করেছে, সঙ্কটময় পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েও কী ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ভারত তারই একটা সবিস্তার বর্ণনা দিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশে চিঠি লিখলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
মোদী চিঠিতে লিখেছেন, গত বছরের এই দিন থেকেই ভারতীয় গণতন্ত্রের একটা সুবর্ণ অধ্যায় শুরু হয়ে গিয়েছে। দীর্ঘ কয়েক দশক পর ভারতকে একটা পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার সরকার উপহার দিয়েছে দেশবাসী। আর এ জন্য দেশের ১৩০ কোটি মানুষ এবং ভারতের গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তির কাছে তিনি কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, “দেশ এই মুহূর্তে এক সঙ্কটময় পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে চলছে। স্বাভাবিক পরিস্থিতি থাকলে তিনি এই বর্ষপূর্তি উদ্যাপন করতেন। মানুষের মাঝে যেতেন। কিন্তু সেটা সম্ভব হচ্ছে না বলেই দেশবাসীর উদ্দেশে এই চিঠি।”
দেশ এক চরম সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। স্বাভাবিক পরিস্থিতি থাকলে তাঁর দ্বিতীয় সরকারের বর্ষপূর্তির এই দিনটি অন্য রকম হত। কিন্তু সঙ্কটের এই সেটা করা সম্ভব হচ্ছে না। আর তাই চিঠিতেই এ কাজ সারতে হল বলে জানিয়েছেন মোদী। কী ভাবে তাঁর সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। কী ভাবে দেশের ভাবমূর্তি উল্লেখযোগ্য ভাবে উজ্জ্বল হয়েছে চিঠিতে সে কথাও তুলে ধরেছেন মোদী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “২০১৪-১৯, এই সময়ের মধ্যে দেশের ভাবমূর্তি উল্লেখযোগ্য ভাবে উজ্জ্বল হয়েছে। গরিবদের মর্যাদা বৃদ্ধি হয়েছে। বিনামূল্যে গ্যাস, বিদ্যুত্ সংযোগ, স্বচ্ছ অভিযান থেকে শুরু করে সকলের জন্য ঘর— সব পেয়েছে দেশ।” শুধু তাই নয়, দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে তাঁর সরকার বেশ কয়েকটি প্রকল্পও চালু করেছে। তার মধ্যে রয়েছে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী সম্মান নিধি, জল জীবন মিশন, কৃষক, কৃষি শ্রমিক, ছোট দোকানদার এবং অসংগঠিত ক্ষেত্রে শ্রমিকদের জন্য মাসিক পেনশন চালু করা হয়েছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেছেন মোদী। মোদী বলেন, দ্বিতীয় মোদী সরকারের আমলে একের পর এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে দেশবাসীর স্বার্থে। তা সবিস্তারে বর্ণনা করতে বলে চিঠি অনেক দীর্ঘায়িত হয়ে যাবে। কিন্তু এটা অবশ্যই বলব, আমরা সরকার দিন-রাত এক করে পুর্ণোদ্যমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং তা প্রয়োগের কাজ করে গিয়েছে।”
তবে দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন এ সম্পর্কে লিখেছে, মোদি সরকারের বছরসংস্কারই মূলমন্ত্র! বর্ষপূর্তিতে ফিরে দেখা দ্বিতীয় মোদি সরকারের ৫ বড় সিদ্ধান্ত। বিস্তারিত খবরে লেখা হয়েছে, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন থেকে শুরু করে তিন তালাক আইন। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর প্রথম এক বছরে একাধিক বিতর্কিত অথচ সংস্কারমূলক পদক্ষেপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। চেষ্টা হয়েছে আর্থিক সংস্কারেরও। বর্ষপূর্তিতে ফিরে দেখা যাক সরকারের ৫ বড় সিদ্ধান্ত।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন: দ্বিতীয় মোদি সরকারের প্রথম এক বছরের সবচেয়ে চর্চিত এবং বিতর্কিত সিদ্ধান্ত। এনআরসি আতঙ্কের মধ্যেই ১১ ডিসেম্বর সংসদে পাশ হয়ে যায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল [Citizenship (Amendment) Act, 2019]। পরে তা রাষ্ট্রপতির সইয়ের পর আইনে পরিণত হয়। এই আইন অনুযায়ী ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার যে সমস্ত শরণার্থীরা ভারতে এসেছেন তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জৈন এবং পারসি। এই ছ’টি ধর্ম এর আওতায় আসবে। মুসলিম ধর্ম এর আওতায় আসবে না। বিল পাশ হতেই, একে অসাংবিধানিক ও ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টিকারী বলে তোপ দাগে বিরোধীরা। দেশজুড়ে শুরু হয় বিক্ষোভ। যার জেরে এখনও উত্তপ্ত গোটা দেশ।
৩৭০ ধারা বাতিল: দ্বিতীয় মোদি সরকারের অন্যতম বড় সংস্কারমূলক সিদ্ধান্ত সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করা। গত বছর ৫ আগস্ট নতুন আইন এনে জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া ৩৭০ ধারা (Article 370 of the Constitution of India) ও সংবিধানের ৩৫-এ অনুচ্ছেদ বাতিল করে কেন্দ্র। পাশ হয় জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন বিল। যা স্বাধীন ভারত ও কাশ্মীরের ইতিহাস এক ঝটকায় বদলে দিয়েছে। এর জেরে, দীর্ঘদিন ধরে কার্যত অবরূদ্ধ থাকে কাশ্মীর। সে রাজ্যের প্রথম সারির রাজনৈতিক নেতামন্ত্রীদেরও গৃহবন্দি রাখা হয়।
তিন তালাক অপরাধ: ৩০ জুলাই রাজ্যসভায় পাশ হয়ে যায় তিন তালাক বিল(The Muslim Women Protection of Rights on Marriage Bill)। এরপর রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর বিলটি আইনে পরিণত হয়। নতুন বিল অনুযায়ী, ১ আগস্ট ২০১৯ অনুযায়ী তাৎক্ষণিক তিন তালাক শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষিত হয়। দ্বিতীয় মোদি সরকারের অন্যতম বড় সিদ্ধান্ত।
করোনা মোকাবিলা ও লকডাউন: বছরের গোড়াতেই বিশ্বজুড়ে ত্রাস হিসেবে উঠে আসে করোনা ভাইরাস। অন্যান্য দেশগুলির মতো ভারতেও নিজের মারণ থাবা বসিয়েছে COVID-19। ক্ষমতায় আসার পর ৬ বছরের মধ্যে এত বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়নি প্রধানমন্ত্রীকে। মোদি সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তির দিন পর্যন্ত দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ ৭৩ হাজারেরও বেশি। তবে সরকারের দাবি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সঠিক সময়ে দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করে বহু মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছেন। উল্লেখ্য, এখনও পর্যন্ত চার দফায় দু’মাসেরও বেশি সময় ধরে লকডাউন চলছে ভারতে। তাতেও করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। যদিও সরকারের দাবি, মারক ভাইরাসের প্রতিরোধে উপযুক্ত পরিকাঠামোর ব্যবস্থা করেছে ভারত। এদিকে এর জেরে অর্থনীতি স্তব্ধ। অকথ্য যন্ত্রণার শিকার হতে হচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিকদের।
আত্মনির্ভর ভারত: করোনার জেরে গোটা বিশ্ব যখন কম্পমান, আর্থিক ধাক্কা সামলাতে তথাকথিত উন্নত দেশগুলিও যখন নাজেহাল, তখনও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি করোনাকে ভারতের কাছে ‘সুযোগ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এই সুযোগে দেশবাসীর উদ্দেশে ‘আত্মনির্ভর’ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই লক্ষ্যে ২০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। যা কিনা ভারতের মোট জিডিপির প্রায় ১০ শতাংশ। যদিও নিন্দুকেরা বলেন, পুরো প্যাকেজটাই ঋণসর্বস্ব। এখানে সরকারকে রাজকোষ থেকে সে অর্থে টাকা দিতেই হয়নি। বেশিরভাগটাই যাচ্ছে ব্যাংকগুলি থেকে।
মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে চীনা পড়ুয়াদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করছে আমেরিকা, সম্পর্ক ছেদ হু–এর সঙ্গেও
কোভিড–১৯–এর মহামারীর জন্য বরাবরই চীনকে দায়ী করে এসেছিল আমেরিকা। এবার কঠিন পদক্ষেপ করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় শুক্রবার আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে চীনের ছাত্রছাত্রীদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করার কথা ঘোষণা করে এশিয়া মহাদেশে কোভিড–১৯ মহামারী ছড়িয়ে পড়ার জন্য চীনকে দায়ী করলেন তিনি। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু–এর সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্কও ছেদ করার কথা এদিনই ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প।
স্থানীয় সময় শুক্রবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘ওরা আমেরিকাকে এমনভাবে টুকরো করে ফেলেছে যা আগে কেউ কখনও করেনি। উহান ভাইরাস নিয়ে চীনের কাজকর্ম সারা বিশ্বে রোগটা ছড়িয়ে দিয়ে বিশ্ব মহামারীর আকার নিয়েছে, যাতে এক লক্ষেরও বেশি মার্কিনী এবং বিশ্ব জুড়ে ১০ লক্ষেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। চীনের অফিসাররা হু–কে রিপোর্ট দেওয়ার নিয়মে অবহেলা করেছেন।’এখন থেকে হু–এর সঙ্গে সবরকম সম্পর্ক ছেদ করা নিয়ে শুক্রবারের সাংবাদিক সম্মেলনে ট্রাম্পের ঘোষণা, ‘যে সংশোধনীর প্রয়োজন ছিল সেসব তারা করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভেঙে দিয়ে ওই টাকাগুলি স্বাস্থ্য পরিষেবায় নিযুক্ত বিশ্বের অন্যান্য সংগঠনে দান করব।’#
পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/৩০