জুলাই ০৫, ২০২০ ২০:৫২ Asia/Dhaka

রুশ মনীষী ও কবি-সাহিত্যিকদের ওপর ইসলাম এবং মহানবীর (সা) প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে আমরা গত পর্বের আলোচনায় প্রখ্যাত রুশ মহাকবি অ্যালেক্সান্ডার পুশকিনের ওপর ইসলাম ও মহানবীর (সা) প্রভাব সম্পর্কে কিছু কথা বলেছি।

ইসলাম ও মহানবীর প্রশংসা করে অনেক রুশ মনীষীই বক্তব্য রেখেছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে পুশকিনের মন্তব্য ও প্রশংসাগুলো অনেক বেশি প্রোজ্জ্বল। পুশকিন তার কবিতায় মহানবীর (সা) ওপর ওহি বা আসমানি প্রত্যাদেশ নাজিল হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, বিশ্ব জগতের নানা রহস্য ও প্রকৃতির ঊর্ধ্বের নানা বিষয় যা সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে না সেসব মহানবীর কাছে স্পষ্ট হত। 
মহানবীর ওপর ওহি নাজিলের বিষয় ও তাঁর বক্ষ প্রশস্ত করার বিষয়ে পুশকিন তার কবিতায় লিখেছেন: 

(মহানবী বলছেন), 
সে আমার বক্ষকে তার ছুরি দিয়ে বিদীর্ণ করল! 
আমার কম্পমান হৃদপিণ্ডকে তার স্থান থেকে উপড়ে ফেলল
এবং আমার বিদীর্ণ বুকে আগুনের শিখা হল প্রজ্বলিত 
আমি প্রান্তরের জমিনে পড়ে রইলাম  প্রাণহীন দেহের মত!
একই কবিতার শেষ অধ্যায়ে পুশকিন মহানবীর বক্তব্যকে এভাবে তুলে ধরেছেন: 
...ওই সময়ে ওহির সুর আমার কানে ভেসে আসল: 
ওঠ হে নবী! এবং দেখ আমার ইচ্ছা 
সাগরগুলো ও ভূমিগুলো পার হয়ে যাও, মানুষের হৃদয়গুলোকে তোমার আহ্বানে 
অগ্নিশিখার মত কর প্রজ্বলিত!  .... 

রুশ মহাকবি পুশকিনের মতে মহানবী (সা) এমন একজন রাসুল যিনি ভয়ানক মরু-প্রান্তরে আটকে পড়া তৃষ্ণার্ত মানুষের আত্মাকে করেন পরিতৃপ্ত। মহানবীর (সা) কাছে জিবরাইলের আবির্ভাব হওয়ার ঘটনাটি বর্ণনার সময় পুশকিন তাকে কয়েকটি পাখা-বিশিষ্ট ফেরেশতা হিসেবে কল্পনা করেছেন। গবেষকরা মনে করেন তিনি পবিত্র কুরআনের সুরা ফাত্বির-এর ১০১ নম্বর আয়াত থেকে এ ধারণা নিয়েছেন। 

মহানবী (সা) সম্পর্কে কাব্য লিখতে গিয়ে পুশকিন কোনো কোনো কবিতায় সুরা আলাক্ব ও সুরা ইনশিরাহ'র প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। ধর্ম ও প্রাচ্যের প্রতি পুশকিনের আগ্রহ ও দৃষ্টি কেবল কাব্য ও কবিতাতেই শেষ হয়নি। তিনি মহানবী নামে আরও একটি কাব্য লিখেছিলেন। এ ছাড়াও তিনি হাফেজ নামে আরও একটি কাব্য লিখেছিলেন। আর এসবই হচ্ছে পুশকিনের ওপর প্রাচ্যের ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রভাবের ফল।  উল্লেখ্য রুশ মহাকবি পুশকিনের 'কুরআনের প্রতিষ্ঠা' শীর্ষক কাব্যে রয়েছে নয়টি কবিতা। এসব কবিতা তিনি লিখেছেন পবিত্র কুরআনের ভাবধারা ও বিষয়বস্তু থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে।
এ কাব্যের প্রথম কবিতায় পুশকিন লিখেছেন: 

শপথ সেসব কিছুর যা জোড় ও বেজোড়
শপথ কঠোর যুদ্ধের দিনের তরবারির /শপথ সন্ধ্যার গোধূলি লগ্নের তারকার ও প্রভাতের
শপথ চাঁদের আলোতে মুনাজাতের!/তোমাকে কখনও একাকী ছেড়ে দেইনি 
তোমাকে করেছি মানুষের ত্রাণকর্তা/তোমাকে দূরে রেখেছি মন্দ চোখ হতে 
পরিয়েছি প্রশান্তির জামা তোমাকে /সে রাতে তোমার ঠোঁটগুলো ছিল তৃষ্ণার্ত
সবচেয়ে মরুময় ভূমিগুলোও হল ঝর্ণা /তোমাকে বাণী দান করেছি খুবই পরিপূর্ণ/
 যা অচেতন বা প্রজ্ঞাহীনদের কেটে দেয় ব্লেড বা ক্ষুরের মত 
পুশকিন একই কবিতায় আরও লিখেছেন: 

রুখে দাঁড়াও ও বীরের মত যুদ্ধ কর /এস সত্যের পথকে সুগম কর 
আমার ইয়াতিমদের স্নেহ কর/ আমার কুরআনের দিকে ডাক বিশ্বকে
যাদের বিশ্বাস উইলো গাছের মত নড়বড়ে কম্পমান/ তাদের আহ্বান কর সত্যের পথে। 
-এ কবিতার প্রথম দুই পঙক্তি নেয়া হয়েছে সুরা আদ দ্বোহা, ত্বারেক, আসর্‌ ও সুরা ফাজর্‌ থেকে এবং কুরআনে উল্লেখিত নানা সুরার শপথগুলো থেকে। এই কবিতাগুলো থেকে বোঝা যায় কবি এই কবিতাটি লেখার আগেই পবিত্র কুরআনের সঙ্গে পুরোপুরি পরিচিত ছিলেন এবং তিনি তার উপলব্ধি ক্ষমতা ও সৃষ্টিশীলতা দিয়ে এই সুন্দর কবিতাটি রচনা করেছেন। 

 পুশকিন তার এ কবিতার দ্বিতীয় দুই পঙক্তি নিয়েছেন সুরা তওবার ৪০ নম্বর আয়াত থেকে। এ কবিতার তৃতীয় দুই পঙক্তিতে মহানবীর (সা) কার্যকর ও শক্তিশালী বা প্রভাবদায়ক বক্তব্য সম্পর্কে বলা হয়েছে। পবিত্র কুরআনের নানা সুরায় এ সম্পর্কে অনেক ইঙ্গিত রয়েছে। পুশকিনের এ কবিতার চতুর্থ দুই পঙক্তিতে বীরত্ব, ভালবাসা, দয়া ও  ইয়াতিমের প্রতি স্নেহ আর তাদের কল্যাণে কাজ করার মত বিশেষ  গুণের কথা বলা হয়েছে। এ কবিতার শেষ দুই পঙক্তিতে আল্লাহর বাণী পুরোপুরি প্রচারের কথা বলা হয়েছে যা নেয়া হয়েছে সুরা মায়েদার ৬৭ নম্বর আয়াত থেকে।#

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/ ০৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ