আগস্ট ০৫, ২০২০ ১৬:৪০ Asia/Dhaka

গত পর্বের আলোচনায় আমরা জেনেছি, ওয়াশিংটন আরভিং ৫২ টি বই অধ্যয়নের পর ‘মুহাম্মাদ ও খলিফাগণ’ শীর্ষক একটি বই লিখেছেন।

এ বইয়ে তিনি ইউরোপ-আমেরিকার জনগণের কাছে খুব কার্যকর ভাষায় ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে অনেক বাস্তবতা তুলে ধরেন এবং ইসলাম ও মহানবী (সা) সম্পর্কে খ্রিস্ট ধর্ম প্রচারকদের অন্ধ-বিদ্বেষের বিপরীতে তিনি মহানবীর ধর্মের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, মহানবীর  (সা) দাওয়াতের উদ্দেশ্য যে কোনো পার্থিব লক্ষ্য তথা খ্যাতি, রাজত্ব অথবা আভিজাত্য বা শান-শওকতা বা প্রভাব-প্রতিপত্তি অর্জন করা ছিল না, বরং তাঁর ছিল এক মহান খোদায়ি লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য তিনি অতীতের খ্যাতি, সম্মান ও নেতৃস্থানীয় পরিবারের সদস্য হওয়ার সুযোগ-সুবিধাগুলো বিসর্জন দেয়াসহ সব ধরনের কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকারেও যে প্রস্তুত হয়েছিলেন তা বিশদভাবে তুলে ধরেছেন ওয়াশিংটন আরভিং। একই প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলে বলেছেন:  
মুহাম্মাদ বছরের পর বছর ধরে মক্কার জনগণের তিরস্কার সহ্য করেছেন তার সমগ্র সত্তা দিয়ে, তিনি দুনিয়ার মর্যাদা ও শানশওকত বা আভিজাত্য অর্জনের বিন্দুমাত্র আশাও মনে ঠাঁই দেননি এবং তিনি তাঁর দাওয়াতি লক্ষ্য অর্জনে ছিলেন অবিচল! কিন্তু কোন্ সব কারণ বা লক্ষ্য এর পেছনে কাজ করেছে? তিনি যখন নবুওত লাভের দাবি করেন তখন তাঁর জীবনের (৪০ বছর) বড় অংশই পার হয়ে গেছে! এর পরও তাঁর জীবনের কোনো গ্যারান্টি বা নিশ্চয়তা ছিল না! অনেক যুদ্ধের যে কোনো যুদ্ধে বিজয়ী হয়েও কখনও কারো সম্পদের দিকে তিনি নজর দেননি! কখনও অহংকার তাঁর মধ্যে স্থান পায়নি। ক্ষমতা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি অর্জনের পরও তাঁর অতীত আচরণ বা সুন্দর স্বভাবের মাত্রা বিন্দুমাত্রও কমে যায়নি, বরং দিনকে দিন অধীনস্থদের সঙ্গে আরও বেশি কোমল ও সুন্দর আচরণ করেছেন। ওইসব প্রভাব-প্রতিপত্তি ও ক্ষমতার শীর্ষে থাকার সময়েও কেউ তাঁকে তোষামোদ করবে ও তাঁর সামনে অন্যরা দাসের মত বিনম্র হয়ে থাকবে- এমন প্রত্যাশা তিনি করতেন না! 

ওয়াশিংটন আরভিং মহানবীর (সা) প্রশংসা করতে গিয়ে আরও লিখেছেন: আরও বড় বিষয় হল দুনিয়ার প্রতি তাঁর আকর্ষণ ছিল না। তিনি এমন কিছু করেছেন যে তাঁর পরিবারও দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট ছিল না। যুদ্ধে যেসব সম্পদ আসত সেসব তিনি হয় ধর্মের উন্নয়নের কাজে অথবা দরিদ্র ও নিঃস্বদের সহায়তায় ব্যয় করতেন। এমনভাবে তিনি দান করে গেছেন যে মৃত্যুর সময় তাঁর হাতে একটি পয়সা বা মুদ্রাও ছিল না। যিনি ধর্মের বিষয়ে এমনই নিখুঁত ছিলেন তাঁর সম্পর্কে অভিযোগ তোলা শোভা পায় না ও তাঁকে 'নতুন ধর্ম আবিষ্কারক' বলা যায় না! তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন এমন অভিযোগও খুবই অসম্ভব অযৌক্তিক বিষয়। কুরআনের সব বাক্য বা আয়াতই পরিপক্ব, অর্থপূর্ণ ও প্রজ্ঞাপূর্ণভাবে লেখা হয়েছে।
ওয়াশিংটন আরভিং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছোটগল্পের জনক হিসেবে খ্যাত। আইন শাস্ত্র  পড়তে গিয়েও তিনি বেশি দূর অগ্রসর হননি, বরং সাহিত্যের আকর্ষণ আরভিংকে সাহিত্য চর্চায় আকৃষ্ট করে । সাহিত্যের রোমান্টিসিজম বা রোমান্টিক ধারার অন্যতম অগ্রপথিক ছিলেন তিনি। ভিক্টর হুগো ও অ্যালেক্সান্ডার দ্যুমা ছিলেন তার অনুসারী। মহানবীর (সা) প্রশংসা করে আরভিং লিখেছেন,
 'মুহাম্মাদ (সা) কোনোভাবেই কখনও পার্থিব স্বার্থকামী ছিলেন না। তাঁর বিরোধীরা তাঁকে এত বেশি উপহাস ও অপমান করেছিল যে তিনি মাতৃভূমি ছেড়ে যেতে বাধ্য হন। এতসব কষ্ট ও নির্যাতন তিনি সহ্য করেছিলেন কেবল নিজ ধর্মকে সুদৃঢ় ও শক্তিশালী করার জন্যই। মা আমেনা যখন মুহাম্মাদ (সা)-কে জন্ম দেন তখন আকাশ হতে একটি আলোক-রশ্মি মক্কার আশপাশকে করেছিল আলোকিত। সে সময় শিশু মুহাম্মাদ আকাশের দিকে তাকিয়ে স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন: আল্লাহু আকবার তথা মহান আল্লাহ সব কিছুর চেয়ে বড় এবং লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ তথা আল্লাহ ছাড়া কোনো খোদা নেই ও আমি আল্লাহর নবী!  
'মুহাম্মাদ ও তাঁর খলিফারা' শীর্ষক বই যা ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে লন্ডন থেকে প্রকাশ করা হয়েছিল- সে বইয়ে আরভিং লিখেছেন, মুহাম্মাদ (সা) ব্যক্তিগত আচরণে ছিলেন ন্যায়পরায়ণ। বন্ধু, অপরিচিত, ধনী, দরিদ্র, নিঃস্ব, শক্তিমান ও দুর্বল সবার সঙ্গে তাঁর আচরণ ছিল একই ধরনের। সবাইই তাঁর কাছ থেকে ভালবাসা ও দয়া দেখতে পেত এবং তিনি মানুষের অভিযোগগুলো শুনতেন। ফলে সবাই তাঁকে ভালবাসত। সর্বশেষ নবী (সা) ছিলেন যথাযোগ্য চরিত্র ও মন-মেজাজের অধিকারী। তিনি সহজ-সরল জীবন যাপন করতেন এবং তাঁর মতামত ছিল উচ্চ প্রকৃতির ও চিন্তাভাবনা ছিল গভীর। তাঁর ছোটো ছোটো বাণী ছিল খুবই সুন্দর, অর্থপূর্ণ ও গভীর। তাই সত্যিই তিনি ছিলেন পবিত্র ও সম্মানিত ব্যক্তিত্ব।#

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/ ০৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ