সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২০ ২১:৩০ Asia/Dhaka

ভার্চুয়াল জগত আমাদের জীবনকে যেমন আরও ছন্দময় করে তুলতে পারে তেমনি এর প্রভাবে আমাদের স্বাভাবিক জীবনে ছন্দপতনও দেখা দিতে পারে।

এ কারণে জীবনকে সুন্দরভাবে সাজাতে এই জগতে বিচরণের ক্ষেত্রে সতর্ক জরুরি। বর্তমানে গণমাধ্যমে অন্য অনেক খবরের পাশাপাশি ইন্টারনেট সংশ্লিষ্ট নানা অপরাধের খবর শোনা যায়। এ কারণে বিশ্বের সব দেশের নিরাপত্তা বাহিনীই সাইবার ক্রাইম ইউনিট গঠন করেছে। সারা বিশ্বেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য এবং ছবি ও ভিডিও চুরি করে উত্ত্যক্ত এবং ব্ল্যাকমেল করার ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে সামাজিক মর্যাদা খর্ব করার ঘটনাও ঘটছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে অনেকে গুজব ছড়ানোর মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছে। ব্যবহার হচ্ছে অপপ্রচারের ক্ষেত্র হিসেবেও। আমরা এর আগেও বলেছি ইন্টারনেট তথা ভার্চুয়াল জগতেরও অনেক ভালো দিকের পাশাপাশি নানা মন্দ দিকও রয়েছে। ইন্টারনেট যেমন আমাদের জন্য বিশাল তথ্যভান্ডার হিসেবে কাজ করছে এবং সময় ও অর্থ সাশ্রয়ের একটা বড় মাধ্যমে পরিণত হয়েছে ঠিক তেমনি অনেক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন খুব সহজেই মেয়েবন্ধু বা ছেলেবন্ধু পাওয়া যায়। একে অপরকে ভালোভাবে না জেনে না চিনে পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলছে তারা। অস্বচ্ছ ধারণার ভিত্তিতে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার কারণে মানুষের আবেগ একটা জায়গায় আর আবদ্ধ থাকছে না। আবেগ-অনুভূতিতে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন আসছে। অনেকেই মিষ্টি কথায় ফাঁদে পড়ে অন্যকে সহজেই বিশ্বাস করছেন। অনেকে জানেনও না যে,ইন্টারনেটেও বাস্তব জগতের মতো খারাপ মানুষের অভাব নেই। সরল বিশ্বাসকে পুঁজি করে অনেক প্রতারক মেয়েদের টার্গেট করছে। এমনকি গৃহবধুদের ফাঁদে ফেলে দিচ্ছে। কেউ কেউ দীর্ঘদিন ধরে যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যমে অশুভ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলছে, আবার সেই অনৈতিক সম্পর্কের প্রমাণ রেকর্ড করে তা দিয়ে ব্ল্যাকমেল করছে। ব্ল্যাকমেলের কারণে সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে সরলমনা মানুষেরা। অনেকে এ অবস্থার মধ্যে পড়ে মানষিক রোগী হয়ে যাচ্ছেন। ইন্টারনেটের মাধ্যমে সম্পর্ক গড়ার পর নারীদের শ্লীলতাহানি করা হচ্ছে। এর ফলে ব্যক্তি নিজে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্যও অশান্তি বয়ে আনছে।  

ইন্টারনেট আমাদের জীবনযাত্রাকে অনেক ক্ষেত্রেই সহজতর করেছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনেকেই কেনাকাটা ও আর্থিক লেনদেন করে থাকেন। এ কারণে মনে রাখতে হবে কখনো ভুলে জালিয়াতি চক্রের ওয়েবসাইটে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের পাসওয়ার্ড লিখে ফেললে তা চুরি হয়ে যেতে পারে। এমন জালিয়াত চক্র রয়েছে যারা কৌশলে কোনো বিখ্যাত ওয়েবসাইটের মতো করে অবিকল নকল ওয়েবসাইট বানিয়ে সেখানে ভিজিটরদের নিয়ে যায়। সেসব ওয়েবসাইটে লেনদেন করার সময় কার্ডের তথ্য চুরি হয়ে যায়। এছাড়া, জালিয়াত চক্র এটিএম মেশিনের সঙ্গে স্কিমিং ডিভাইস যুক্ত করে দেয়। কার্ড রিডার স্লটে যুক্ত করা স্কিমিং ডিভাইসটি, কোনো গ্রাহক তার কার্ড সোয়াইপ করলে বা চার্জ করলে ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ থেকে তথ্য কপি করে নেয়। আর কার্ডের পিন নম্বর পাওয়ার জন্য মেশিনের কাছে ক্যামেরা সেটআপ করে রাখে। এরপর ওই সব তথ্য ব্যবহার করে যখন-তখন অর্থ হাতিয়ে নেয় জালিয়াত চক্রের সদস্যরা। 
বিশ্বের এখনও অনেকে আছেন শুধু গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে ইন্টারনেট থেকে দূরে রয়েছেন। আমেরিকার অনেক নাগরিকও ইন্টারনেটে মৌলিক কাজ বন্ধ রেখেছেন কেবল গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে। কারণ তারা ইন্টারনেটে এমন সব হয়রানির শিকার হয়েছেন যে, এই প্রযুক্তিই এখন তাদের কাছে ভীতিকর মনে হয়। তবে বাস্তবতা হলো, ইন্টারনেট বা ভার্চুয়াল জগতকে পুরোপুরি এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। সতর্কতা অবলম্বনের মাধ্যমে এর ব্যবহার চালিয়ে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে নিরাপত্তা ঝুঁকি অনেকটাই মোকাবেলা করা সম্ভব। ইন্টানেট ব্যবহারে নিরাপদ থাকতে পাবলিক ওয়াইফাই যথাসম্ভব এড়িয়ে যেতে হবে। কারণ হ্যাকাররা একই নেটওয়ার্কের অধীনে থাকা ডিভাইসগুলোর নিয়ন্ত্রণ সহজেই নিতে পারে। এমন কোনো ছবি কখনোই তোলা বা শেয়ার করা উচিত নয়, যা কোনো তৃতীয় ব্যক্তি দেখলে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। 

মনে রাখা উচিত, ছবি হাজার বার ডিলিট করলেও তা রিকভার করার সম্ভাবনা থেকেই যায়,তাই স্পর্শকাতর ছবি তোলা থেকে বিরত থাকতে হবে। নিজের ব্যবহার করা পুরোনো ফোনও অপরিচিত লোকদের কাছে বিক্রি করা উচিত নয়। কারণ পুরোনো মোবাইলের ডিলিট করা তথ্য রিকভার করে তা অপব্যবহারের আশঙ্কা থেকে যায়। ফেসবুক বা ইমোর মতো সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো ধরনের ব্যক্তিগত ছবি আদান-প্রদান করা ঠিক নয়। কারণ যদি একজনের অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয় তাহলে অপরজনও বিপদে পড়বেন। কোনো অবস্থাতেই নিজের ব্যক্তিগত পাসওয়ার্ড অন্যকে দেওয়া যাবে না। ভেবেচিন্তে যেকোনো লিঙ্কে ক্লিক করা উচিত। কারণ ম্যালওয়্যার লিঙ্কে ক্লিক পড়ে গেলে নিজের অ্যাকাউন্টের এক্সেস হ্যাকারের কাছে চলে যেতে পারে। দোকানে মোবাইল ফোন ঠিক করতে দিলে ঠিক না হওয়া পর্যন্ত পাশে থাকা উচিত। এছাড়া অবৈধভাবে অনলাইনে ডলার বা পাউন্ড বিনিময় করা থেকে বিরত থাকা উচিত। অনলাইনে কোনো পণ্য কিনলে তা আগে ভালো করে যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে। সাইবার ক্রাইম, অনলাইন ব্ল্যাকমেল,অনলাইনে ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি-এ সংক্রান্ত যেকোনো ধরনের সমস্যায় পড়লে দ্রুত থানায় জানাতে হবে। 
অনেকে লজ্জার কারণে অথবা বাড়তি ঝামেলা এড়িয়ে যেতে এ সংক্রান্ত বিষয়ে থানায় অভিযোগ করেন না। এটা ঠিক নয়। অভিযোগ না করলে অপরাধের প্রবণতা আরও বাড়বে। আইনি প্রক্রিয়ায় অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করার অর্থ হলো আরও অপরাধ ঠেকিয়ে দেওয়া। অপরাধীর শাস্তি হতে দেখলে অন্যরাও সেই অপরাধ করতে ভয় পায়। মনে রাখতে হবে, সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো কিছু শেয়ার করা অর্থ হলো বিশ্বের সবার জন্যই তা উন্মুক্ত করা। কারণ আপনার শেয়ার করা তথ্য-উপাত্ত বা ছবি ও ভিডিও অন্যরাও শেয়ার করবে এবং তা সবার কাছেই ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ কারণে কোনো কিছু শেয়ার করার আগে ভালোভাবে যাচাই করা উচিত। আপনি যে তথ্য শেয়ার করছেন তা সঠিক কিনা এবং তা কোনো ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে কিনা তা ভালোভাবে ভেবে দেখতে হবে।
 জীবনকে সুন্দরভাবে সাজাতে নিজেকে ভালো রাখার পাশাপাশি অন্যদেরকেও ভালো রাখার চেষ্টা করতে হবে। নিজে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি অন্যদেরকেও সচেতন করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনি মানুষকে সচেতন করার কাজ করতে পারেন, যাচাই-বাছাই করে সঠিক তথ্য শেয়ার করতে পারেন তাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু সম্ভাব্য প্রভাব বিবেচনায় না নিয়ে কোনো কিছুই শেয়ার করা উচিত হবে না। #

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/মো: আবুসাঈদ/ ১৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ