সেপ্টেম্বর ২২, ২০২০ ২০:৩০ Asia/Dhaka

যা কিছু মহাসত্য ও মহাসুন্দর তার প্রশংসা সবাইই করে বা করতে বাধ্য হয় ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়। কথায় বলে ধর্মের ঢোল আপনিই বাজে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মাদ (সা)’র প্রশংসাও এমনই একটি বিষয়।

মহানবীর কঠোরতম শত্রু আবু সুফিয়ানও তাঁর প্রশংসা করতে বাধ্য হয়েছিল রোমান সম্রাট হেরাক্লিয়াসের দরবারে। কারণ, হেরাক্লিয়াস আবু সুফিয়ানের আরব সঙ্গীদের বলেছিল এই ব্যক্তি যদি মুহাম্মাদ সম্পর্কে মিথ্যা কিছু বলে তাহলে তোমরা প্রতিবাদ করবে। যুগে যুগে এভাবেই সত্যের দরজা খুলে গেছে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়। কেউ তো ফরাসি দার্শনিক ও কবি ভলতেয়ারকে বাধ্য করেনি মহানবী (সা) সম্পর্কে শোনা-কথার ভিত্তিতে অশোভন মন্তব্যের জন্য অনুশোচনা করতে ও প্রশংসার মাধ্যমে অতীতের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতে! জার্মান মহাকবি গ্যাটেকেও তো কেউ বাধ্য করেননি যুব বয়স থেকেই মহানবীর অনুরাগী ও প্রশংসাকারী হতে। গিবন, টয়েনবি ও কার্লাইলের মত অমুসলিম ইংরেজ মনীষীকেও তো কেউ বাধ্য করেনি মহানবীর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করতে।

মনীষী ড্রেপার, রুশ কবি পুশকিন ও ইভান বুনিন, চিন্তাবিদ কার্ল মার্কস, এম এন রায়, স্বামী বিবেকানন্দ, মহাত্মা গান্ধী ও  কবি রবীন্দ্রনাথকেও কেউ বাধ্য করেননি মহানবীর (সা) প্রশংসা করতে! ওয়াশিংটন আরভিং, বার্নার্ড শ, বাসওয়ার্থ স্মিথ, সরোজিনী নাইডু ও অ্যানি বিসান্ত এবং অ্যান মেরী শিমেলকেও কেউ বাধ্য করেননি একই কাজে!  মাইকেল এইচ হার্টকেও কেউ বাধ্য করেননি মহানবীকে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করতে! মহানবী (সা) যে তাদের স্বীকৃতি বা প্রশংসার মুখাপেক্ষী তাও কিন্তু নন। বরং মনীষীরা মহাসত্য ও মহাসুন্দরের স্বীকৃতি দিয়ে নিজেরাই হয়েছেন ধন্য। পাশ্চাত্যের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটায় সেখানকার মনীষীরা ইসলাম ও মহানবী (সা) সম্পর্কে সত্য মন্তব্য এবং প্রশংসা করার সাহস পেয়েছিলেন। রুশ সাহিত্যিক লিও টলস্টয়ও এর ব্যতিক্রম নন। 

বিশ্ববিশ্রুত রুশ লেখক ও সাহিত্যিক লিও টলস্টয় জন্ম গ্রহণ করেছিলেন ১৮২৮ সনে এবং মারা যান ১৯১০ সালে। খৃস্ট ধর্মের নামে প্রচলিত নানা দিকের সমালোচনা করায় ১৯০১ সালে রাশিয়ার অর্থোডক্স গীর্যা টলস্টয়কে সমাজচ্যুত বলে ঘোষণা করেছিল। কেউ কেউ মনে করেন তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।

রুশ সাহিত্যের শীর্ষস্থানীয় দিকপাল টলস্টয়  মহানবীর (সা) জীবন সম্পর্কে পড়াশুনা ও গবেষণা করেছিলেন নিরপেক্ষ ও ন্যায়নিষ্ঠ মন নিয়ে। ফলে তিনি মহানবীর ব্যক্তিত্ব ও মহত্ত্বের বিশালতায় এবং পূর্ণতায় বিমুগ্ধ হয়েছিলেন। তার মতে ইসলাম ধর্ম মানুষকে সম্মান ও মর্যাদার শীর্ষে নিতে সক্ষম ও এ ধর্মই মানুষকে সঠিক পথ দেখায়। মুহাম্মাদ (সা) নামের একটি গ্রন্থে তিনি লিখেছেন:

'ইসলামের নবী মুহাম্মাদ (সা) যে  বিশ্বের এক মহান সংস্কারক ছিলেন তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। তিনি এমন এক সংস্কারক যিনি মানবজাতির যথাযোগ্য সেবা করেছেন। এই অতুলনীয় গৌরব ও মহাগর্বই তার জন্য যথেষ্ট যে তিনি রক্তপায়ী ও বর্বর এক জাতিকে নোংরা ও কদর্য স্বভাবের দেবতা বা দানবদের নাগপাশ থেকে মুক্তি দিয়ে তাদের জন্য উন্নতির পথ খুলে দিয়েছিলেন। কোনো সাধারণ মানুষের পক্ষে এমন অসাধারণ উদ্যোগ নেয়া ও সফল হওয়াও সম্ভব নয়। তাই ইসলামের মহানবী (সা) হলেন সব ধরনের সম্মান ও শ্রদ্ধা পাওয়ার উপযুক্ত। ইসলামের বিধি-বিধান বিবেক ও প্রজ্ঞার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বলে তা আগামী দিনে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে।

ওয়ার এন্ড ‘পিস বা যুদ্ধ ও শান্তি’ নামক বিখ্যাত বইয়ের লেখক  টলস্টয় মহানবীর একটি হাদিস খুব গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেছেন। ওই হাদিসে এসেছে: ঈমানের সর্বোচ্চ পর্যায় কি? মহানবী এ প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন: মানুষের সঙ্গে ঠিক সেই আচরণই কর যে আচরণ তোমার সঙ্গে করা হোক বলে তুমি আশা কর এবং নিজের জন্য যা পছন্দ কর না অন্যদের জন্যও তা পছন্দ করো না। 

টলস্টয় সব সময়ই বন্ধু ও ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের সঙ্গে ইসলাম ধর্ম ও মহানবীর অতুলনীয় ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব নিয়ে কথা বলতেন। তার মতে শ্রেষ্ঠ ধর্ম হিসেবে ইসলামকে বরণ করে মুসলমান হওয়ার প্রথম পদক্ষেপ হল মহানবী (সা) ও তাঁর আদর্শকে জানা।

মহানবী (সা) সম্পর্কে টলস্টয় লিখেছেন, একজন নবী হিসেবে ও অন্য সব ক্ষেত্রেই মুহাম্মাদ (সা)  হযরত ঈসা বা খ্রিস্টের চেয়ে উচ্চ অবস্থানে রয়েছেন। তিনি মানুষকে হতাশ বা নিষ্ক্রিয় করেননি ও তাদেরকে আল্লাহর কাতারে বা পর্যায়ে পৌঁছাননি। তিনি নিজেকেও আল্লাহর সমকক্ষের কাছাকাছি করেননি ও খোদার স্থান দখল করেননি। আল্লাহ ছাড়া মুসলমানদের অন্য কোনো খোদা নেই, মুহাম্মাদ তাদের নবী তথা খোদায়ি প্রেরিত-পুরুষ। এ বিষয়ে কোনো গোপনীয়তা নেই।  টলস্টয় আরও লিখেছেন: "ইসলাম ধর্ম ও নবী মুহাম্মদের শিক্ষা খৃস্ট ধর্মের তুলনায় অনেক উন্নত ও মূল্যবান এবং এ ধর্মের গুণও বেশি- যারা এ মতে বিশ্বাসী আমি সর্বান্তকরণে তাদের সাথে একমত। এ ধর্মের সেবাকারীদের অভিনন্দন জানাই।"

লিও টলস্টয় আরও লিখেছেন, ‘আমি বহু বছর ধরে খৃস্ট ধর্মের শিক্ষার সাথে পরিচিত, কিন্তু আমি এটা স্বীকার করছি যে, ইসলাম ধর্ম ও নবী মুহাম্মদের শিক্ষার সবগুলো বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য খৃস্ট ধর্মের চেয়ে অনেক অনেক বেশি পূর্ণাঙ্গ ও মূল্যবান। আসলে ইসলাম ধর্মের বাহ্যিক দিকগুলোর সাথে খৃস্ট ধর্মের কোনো তুলনাই হয় না। যদি সব মানুষের জন্য ইসলাম ও খৃস্ট ধর্মের মধ্য থেকে যে কোনো একটিকে বেছে নেয়ার সুযোগ দেয়া হয় এবং ওই ধর্ম অনুযায়ী নিজ প্রভুর ইবাদাত বা উপাসনার সুযোগ থাকে, তাহলে প্রথমেই মানুষকে এটা দেখতে হবে যে, কয়েক খোদার উপাসনা একই সময়ে সম্ভব নয়। কয়েক খোদার উপাসনা একত্ববাদী ধর্মের পরিপন্থী। আর ইসলাম কেবল এক প্রভুর এবাদত করতে বলে, আর কারো নয়। এ কারণেই ইসলাম ধর্ম খৃস্ট ধর্মের চেয়ে উন্নত এবং সুস্থ বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন যে কোনো মানুষ অন্য কোনো ধর্মের দিকে না গিয়ে অবশ্যই ইসলামকেই বেছে নেবে।

লিও টলস্টয় আরো লিখেছেন, " মানব সভ্যতা তার বিকাশের জন্য ধর্মের কাছে ঋণী। মুহাম্মদ রয়েছেন ইসলাম ধর্মের শীর্ষে। তার প্রচারিত শিক্ষাগুলোর মধ্যে সব ধর্মের মূল শিক্ষাগুলো রয়েছে এবং খৃস্ট ধর্মের অনেক বাস্তবতার সমান্তরালে ও কাছে রয়েছে সেসব শিক্ষা। স্রষ্টাই ধর্মগুলোর মূল ভিত্তি। ধর্মগুলো মানুষকে খোদায় বিশ্বাসী হতে বলে। যে ধর্ম এই দায়িত্ব পালনে ও এই বাণী প্রচার ভালোভাবে সম্পন্ন করে সেই ধর্ম বেশি শ্রদ্ধাভাজন হবে, আর সেই ধর্মই হল ইসলাম।"#

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/ ২২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ