অক্টোবর ০১, ২০২০ ১৬:৩০ Asia/Dhaka

গত আসরে আমরা বলেছি ইরানের কৃষিপণ্যের দিকে একটু নজর দিলে দেখবো জাফরান এবং পেস্তার মতো পণ্যগুলোরর পর দ্বিতীয় প্রধান কৃষিপণ্যের মধ্যে পড়ে খোরমা এবং জার্দালু। তৃতীয় পর্যায়ে রয়েছে বাদাম, চেরি, শসা এবং তরমুজ। বিশ্বব্যাপী ইরানের এই পণ্যগুলো প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।

ইরানের মেলা আয়োজনের শৃঙ্ক্ষলা এবং উন্নত ব্যবস্থাপনার বিষয়েও ইঙ্গিত দিয়েছিলাম। বর্তমানে বাণিজ্য বিশ্বে সেই দেশই রপ্তানি ক্ষেত্রে সফল যে দেশ আমদানিকারক দেশের বাজারের ব্যবসা-বাণিজ্যের নিয়মনীতি সম্পর্কে সচেতন, আরও যারা সে দেশে পণ্য রপ্তানি করে সেই প্রতিযোগীদের ব্যাপারে খোজ খবর রাখে, মূল্য সম্পর্কেও জানে এবং সেইসঙ্গে পণ্যের প্রচার, প্রসারের ক্ষেত্রেও যারা অগ্রগামী। পণ্যের বাজার আকৃষ্ট করা এবং বাজারে পণ্যের প্রবেশ করানোর সরাসরি একটি পথ হলো বিশেষ বিশেষ বাণিজ্য মেলার আয়োজন ও অংশগ্রহণ করা। ইরান এখন মেলা আয়োজনের দিক থেকে ব্যাপক সুশৃঙ্খল এবং অগ্রগামী। ইরানে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা হয় বছরজুড়ে। মেলার স্থায়ী স্থল ও স্থাপনাও রয়েছে অনেকগুলো।

ডালিম ফল কৃষি খাতের অন্যতম উদ্যানজাত একটি পণ্য। ডালিমের ব্যাপারে বলা হয়ে থাকে যে, এই ফলটি ইরানে অন্তত চার হাজার বছর আগে থেকে চাষ হয়ে আসছে। গবেষকদের বিশেষ করে উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের বেশিরভাগই মনে করেন ডালিম গাছের আদি নিবাস হলো ইরান। তারা বিশ্বাস করেন যে ডালিম ইরান ভূখণ্ড থেকেই ভারত, উত্তর আফ্রিকা,চীন, ইউরোপ এবং আমেরিকায় বিস্তার লাভ করেছে। ইরানের কোনো কোনো এলাকায় যেমন ক্যাস্পিয়ান উপকুল,সমতল বনাঞ্চল, লোরেস্তান,কুর্দিস্তান,চহরমাহলে বখতিয়ারি প্রদেশ, ফার্স,বেলুচিস্তান, আলবোর্জ পর্বতমালার দক্ষিণাঞ্চল, গিলান প্রদেশের মানজিল এবং লুশানের পূর্ব ও পশ্চিম উপত্যকার মতো ইরানের বিস্তৃত অংশে ডালিমের বিস্তার বিতরণ এই দাবির সত্যতা ও যথার্থতা অনুমোদনের জন্য যথেষ্ট। ডালিমকে ফার্সি ভাষায় আনার বলা হয়। অবশ্য বাংলাদেশেও আনার বলার প্রচলন যে একেবারে নেই তা নয়। সর্বশেষ ঐশিগ্রন্থ পবিত্র কুরআনে এই ফলটির কথা তিনবার উল্লেখ করা হয়েছে।

পবিত্র কুরআনের সূরা আনআমের নিরানব্বুই নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:আর তিনিই আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেছেন। তারপর তার সাহায্য সব ধরনের উদ্ভিদ উৎপাদন করেছন। এরপর তা থেকে সবুজ শ্যামল ক্ষেত ও বৃক্ষ সৃষ্টি করেছেন। তারপর তা থেকে ঘন সন্নিবিষ্ট শস্যদানা উৎপাদন করেছেন।আর খেজুর গাছের মাথি থেকে খেজুরের কাঁদির পর কাঁদি সৃষ্টি করেছেন,যা বোঝার ভারে নুয়ে পড়ে।আর সজ্জিত করেছেন আংগুর, যয়তুন ও ডালিমের বাগান। এসবের ফলগুলো পরস্পরের সাথে সাদৃশ্যও রাখে আবার প্রত্যেকে পৃথক বৈশিষ্টেরও অধিকারী।

এই আয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয় যে নিশ্চয়ই এই ফলগুলোতে রয়েছে মানুষের জন্য কল্যাণকর দিক।

কুরআনের আয়াত উল্লেখ করেছিলাম আমরা। আরও একটি আয়াতের উদ্ধৃতি দেওয়া যাক। সূরা আর-রাহমানের আটষট্টি নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: 'সেখানে থাকবে প্রচুর পরিমাণে ফল,খেজুর ও আনার'। এই আয়াতে সরাসরি আল্লাহ রাব্বুল আলামিন খেজুর এবং আনারকে একেবারে অভিজাত ফলের তালিকাভুক্ত করেছেন। সূরা আনআমের এক শ একচল্লিশ নম্বর আয়াতে যাইতুন এবং ডালিম ফল খেতে বলেছেন এবং সেইসঙ্গে এইসব ফল কাটার সময় আল্লাহর হক আদায় করতে বলেছেন। কোনোভাবেই যেন সীমা অতিক্রম করা না হয়। আমরা এখানে কখনো আনার বলছি আবার কখনো বলছি ডালিম। এটা সম্ভবত আপনারা জানেন যে আনারকেই বাংলায় ডালিম বলে।কোনো কোনো এলাকায় অবশ্য ডালিম বা আনারকে বেদানাও বলা হয়।

আনারের বৈজ্ঞানিক নাম হলো পিউনিকা গ্র্যানাটাম। এটি শাখা আর পত্র পল্লবিত গাছের ফলগুলোর একটি।তবে গাছের শাখা বা পাতাগুলো খুব একটা সুশৃঙ্ক্ষল বলা যাবে না এবং একটু আধটু কাঁটাও রয়েছে।তবে প্রচণ্ড গরমেও যেমন এই গাছের কোনো সমস্যা হয় না তেমনি শুষ্ক বাতাস আর মাইনাস ১০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রাও সহ্য করতে পারে সহজেই।আর এ কারণেই পৃথিবীর বেশিরভাগ এলাকাতেই এই ডালিম গাছ বা আনারের চাষ করা সম্ভব। আনার গাছের পাতা পরিপূর্ণ সবুজ এবং চকচকে ঝকঝকে। এই গাছের ফুলের কোনো ঘ্রাণ নেই তবে দেখতে আনারের মতোই টকটকে লাল। এই গাছের গড় উচ্চতা 2 থেকে 5 মিটারের মতো।

ডালিম বা আনার নিয়ে কথা হচ্ছিল। বিশেষ করে ডালিম গাছের ফুল সম্পর্কে বলেছিলাম যে সাধারণত ডালিমের রঙের মতোই দেখতে এই গাছের ফুল। তবে লাল রঙ ছাড়াও আরও দুই রঙের ফুল দেখতে পাওয়া যায়। গোলাপি রঙ এবং কমলা রঙ। গাছে ফুলগুলোকে দুইভাবে দেখতে পাওয়া যায়। কখনো একেবারে পৃথক পৃথকভাবে একটা একটা ফুল আবার কখনো বেশ কয়েকটি ফুল একসাথে। আবার আনারের স্বাদেও রয়েছে ভৈচিত্র্য। হালকা টক, হালকা মিষ্টি মেশানো টক এই দুই স্বাদের আনার রয়েছে। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ০১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ