ডিসেম্বর ০৩, ২০২০ ১৭:৩০ Asia/Dhaka

গত আসরে আমরা ইরানের পোল্ট্রি ফার্ম এবং টার্কি মুরগির মাংসের পুষ্টিগুণ নিয়ে কথা বলেছিলাম। সেইসঙ্গে বলেছিলাম টার্কি মুরগির মাংসের শতকরা পঁয়ষট্টি ভাগই সাদা আর বাকি মাত্র পঁয়ত্রিশ ভাগ লাল।

লাল মাংসের একটা সমৃদ্ধ উপাদান হচ্ছে গরু এবং দুম্বা বা ছাগল কিংবা ভেড়া জাতীয় পশুর মাংস। এইসব গৃহপালিত পশুর চাষও ব্যাপকভাবে হচ্ছে ইরানে। প্রোটিন চাহিদার বিরাট একটি অংশ পূরণ করে এইসব পশুর মাংস।

একটি দুম্বা কেবল মাংসই দেয় না আমাদের। মাংসের পাশাপাশি পশম দেয়, চামড়া দেয় এমনকি দুধও দেয়। দুম্বার দুধ গরুর দুধের তুলনায় বেশি প্রোটিন এবং চর্বি সমৃদ্ধ। দুম্বার দুধ উৎপাদনের পরিমাণ যদি কম হলেও তার গুণগত মান কিন্তু অনেক বেশি। দুম্বার পশমও কিন্তু বিভিন্ন কাজে ব্যবহারযোগ্য। কার্পেট তৈরিতে যেমন দুম্বার পশম কাজে লাগে তেমনি তাঁত শিল্পেও দুম্বার পশম ব্যবহৃত হয়। দুম্বার আরেকটি মূল্যবান অর্থনৈতিক জিনিস হ'ল এর অন্ত্র বা ইন্টেস্টাইন। ইরানের রফতানি পণ্যসামগ্রীর মধ্যে দুম্বার অন্ত্র অন্যতম। সমগ্র বিশ্বে অন্ত্রের পঞ্চম বৃহত্তম রফতানিকারক দেশ ইরান। ইরান থেকে জার্মানি, ইতালি, রাশিয়া, ভারত, তুরস্ক এবং পাকিস্তানে বছরে প্রায় ১০ কোটি ডলারের প্রাণীজ অন্ত্র রফতানি হয়।

দুম্বার অন্ত্র নিয়ে কথা হচ্ছিল। যেসব দেশে এই অন্ত্র রপ্তানি করা হয় সেসব দেশ কী কাজে ব্যবহার করে এগুলো? এরকম একটা প্রশ্ন মনের ভেতর আঁকুপাঁকু করাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এগুলো আসলে সসেস এবং হ্যাম তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়াও অন্ত্রর ভেতর বিশেষ ধরনের প্রোটিন থাকে। ওই প্রোটিন দিয়ে প্রসাধনী সামগ্রী তৈরির প্রয়োজনীয় ক্রিম বানানো হয়। কেবল তাই নয় প্রোটিনযুক্ত এই অন্ত্র থেকে মানব দেহে অপারেশনের পর সেলাইয়ের কাজে ব্যবহার্য সূতোও তৈরি করা হয়। ইরানের তেল বহির্ভুত রপ্তানি পণ্য সামগ্রীর গুরুত্বপূর্ণ একটি পণ্য হলো এই জীবিত পশু। বিশ্বের যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দেশ দুম্বা এবং ছাগল রপ্তানি করে তার মধ্যে ইরানের স্থান অষ্টম পর্যায়ে রয়েছে। ইরানে অন্তত সত্তর মিলয়ন মানে সাত কোটি বিভিন্ন প্রজাতির দুম্বা এবং ছাগল আছে। এর মধে কয়েকটি প্রজাতি হলো দুধের দুম্বা ও মাংসের দুম্বা। এই দুই জাতের দুম্বা ইরানের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিপালন করা হয়।

দুম্বাকে ফার্সি ভাষায় বলে গোসফান্দ। এই গোসফান্দ সাধারণত দু প্রকারের। প্রকার ব্যাখ্যা করার আগে বলে রাখা ভালো যে ফার্সি ভাষায় দোম্বে মানে হলো লেজ। কিছু কিছু গোসফান্দ আছে যেগুলোর লেজ নেই। লেজের জায়গায় বল বা বড় টিউমারের মতো চর্বির চাক থাকে। ওই চর্বির বলটিকেই দোম্বে বলে। সে থেকেই এর নাম দুম্বা। তবে দুই প্রজাতির দুম্বাই আছে ইরানে। চর্বির বলযুক্ত দুম্বা এবং চর্বির বলহীন ছাগলের লেজের মতো ছোট্ট লেজময় দুম্বা। এ জাতীয় দুম্বার মাংসের গুণগত মান অনেক বেশি। আরও কয়েক প্রকারের ইরানি দুম্বা যেগুলোর ব্যবহার বেশি সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: বালুচি, বাহমানি, তালেশি, কাশকায়ি, যান্দি, শাল, শাহরুদি, বাখতিয়রি, গেযেল, নয়িনি, মাকুয়ি এবং মাগনি প্রজাতির দুম্বা।

দুম্বা নিয়ে কথা হচ্ছিল। এবারে আসা যাক ছাগল প্রসঙ্গে। ইরানের পশুপালন শিল্পে ছাগলের অবস্থান উল্লেখ করার মতো। ইরানে এক প্রকারের ছাগল আছে যেগুলো বিশাল বিশাল শিং রয়েছে। এই জাতীয় ছাগল ইতিহাস বিখ্যাত। কারণ ইরানের প্রাচীন ইতিহাস এবং প্রস্তর লিখন শিল্পে এ জাতীয় ছাগলের  অঙ্কিত ছবি প্রায়ই লক্ষ্য করা যায়। রাজা বাদশাদের প্রাচীন স্থাপনা কিংবা ঐতিহাসিক দূর্গগুলোর দেয়ালে এ জাতীয় ছাগলের দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে শিংওয়ালা ছাগলের অস্তিত্ব বহু প্রাচীনকালেও ছিল। এ জাতীয় অন্তত দুই কোটি ছাগল খামারগুলোতে আছে বর্তমানে। এর মধ্যে এক কোটির মতো হলো প্রজননকারী ও উৎপাদনশীল ছাগল।

ছাগলের মাংস দুম্বার মাংসের মতোই। তবে ছাগলের মাংসে কোনো গন্ধ নেই বা এতে চর্বিও একেবারেই কম। রান্নায় একটু বেশি সময় লাগে। তবে হজম হয় দ্রুত। ছাগলের দুধও বেশ পুষ্টিকর। সারা বিশ্বেই মোটামুটি ছাগলের দুধ বেশ সমাদৃত। অনেকের গরুর দুধে অ্যালার্জি রয়েছে। এরকম যারা আছেন তাদের জন্য ছাগলের দুধ উপযুক্ত বিকল্প হতে পারে। শিশুদের জন্য গরুর দুধের পরিবর্তে ছাগলের দুধ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় আজকাল। ইরানে বছরে ছয় লাখ টনের মতো দুধ উৎপাদন হয়। এর অর্ধেকই হলো ছাগলের দুধ। আরেক ধরনের ছাগল আছে ইরানে এগুলোকে কোর্ক বলা হয়। কোর্ক ছাগলের পশমগুলো লম্বা লম্বা এবং শিং দুটো মাথা থেকে পেছনের দিকে বাঁকানো বেশ মোটা।

অর্থনৈতিক দিক থেকে এ জাতীয় ছাগলের গুরুত্ব অনেক বেশি। এর কারণ এই ছাগলের পশমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ কিংবা ভারতে এ জাতীয় ছাগল কাশ্মিরী ছাগল হিসেবে পরিচিত। এই কাশ্মিরী জাতের ছাগল থেকে যে উল সংগ্রহ করা হয় ওই উলের পোশাকের দাম অনেক বেশি। এ জাতের ছাগলের বিভিন্ন প্রজাতি রয়েছে। ইরানের কেরমান, দক্ষিণ ভোরাসান, ইয়াযদসহ আরও বহু এলাকায় এ জাতীয় ছাগল প্রতিপালন করা হয়। সাধারণত শুকনো মানে আর্দ্রতামুক্ত পার্বত্য এলাকাই এ জাতীয় ছাগল চাষের জন্য উপযুক্ত এলাকা।

কোর্ক রাইনি নামে আরেক জাতের ছাগলও রয়েছে ইরানে। এ জাতীয় ছাগলের শিং বেশ লম্বা। এদের পশমও লম্বা লম্বা। এ জাতীয় ছাগলের পশম দিয়ে শীতকালেতুষারিত অঞ্চলে ব্যবহারের জন্য হ্যাট তৈরি করা হয়। ইরানের এই সব ধরনেরই ছাগল প্রতিপালন করা হয়।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ০৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।