জানুয়ারি ৩১, ২০২১ ২০:৩০ Asia/Dhaka

পাশ্চাত্যে এমন প্রচারণা মাঝে মধ্যেই জোরদার হয়ে ওঠে যে ইসলাম হিংস্রতা বা সন্ত্রাসের ধর্ম এবং মানুষ হত্যা ছাড়া এ ধর্মের অন্য কোনো কাজ নেই ও বলারও কিছু নেই!

প্রাচীন ও মধ্য যুগেও ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে এমন বিষাক্ত প্রচারণা চালানো হত। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনার পরও ইসলাম সম্পর্কে ওই একই প্রচারণা জোরদার হয়ে ওঠে পাশ্চাত্যে।

অথচ মহানবী (সা) সমস্ত মহৎ মানবীয় গুণ এবং  খোদায়ি রহমত, সৌন্দর্য ও পূর্ণতার এক সর্বোচ্চ মানবীয় প্রকাশ। পবিত্র কুরআনের ভাষায় মহানবী (সা) হচ্ছেন সমগ্র সৃষ্টি জগতের জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে পাঠানো রহমত বা মহাঅনুগ্রহ। তিনি হলেন শান্তি, সমৃদ্ধি, ক্ষমা, মানবপ্রেম ও পবিত্রতার সর্বোচ্চ মানবীয় আদর্শ। মহানবীর (সা) একজন খাদেম বলেছেন, আমি দশ বছর রাসুলের (সা) সঙ্গে ছিলাম। অথচ এই দীর্ঘ সময়ে তিনি একবারও আমাকে বলেননি, কেনো ওমুক কাজটা করলে বা কেনো ওমুক কাজটা করলে না!? অনুপম চরিত্র, সর্বোচ্চ বিনম্রতা ও অনন্য কোমল আচরণের অধিকারী এই মহাপুরুষের শান্তিকামিতা তাঁর জনপ্রিয়তার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ।  সুরা তওবার ১২৮ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন:

তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রসূল। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তার পক্ষে দুঃসহ। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, দয়াময়।

ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব ও মহানবীর অনুপম এবং শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব সত্ত্বেও ইসলাম ও মহানবীর প্রতি অপবাদের জবাব দিয়েছেন অনেক মুসলিম চিন্তাবিদ এবং এমনকি অনেক পশ্চিমা অমুসলিম মনীষীও। নর্থ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ম শিক্ষা বিষয়ের অধ্যাপক কার্ল আর্নেস্ট এমন পশ্চিমা ব্যক্তিত্ব বা মনীষীদেরই একজন। ইসলাম ও মহানবীর (সা) পক্ষে কার্ল আর্নেস্ট-এর বক্তব্যগুলো তুলে ধরার আগে তার সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরছি:

কার্ল আর্নেস্টের জন্ম হয়েছিল ১৯৫০ সালে। তিনি ১৯৮১ সালে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

কার্ল অর্নেস্ট বহু মুসলিম দেশ সফর করেছেন এবং ব্যাপক গবেষণা করেছেন ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে। এ পবিত্র ধর্ম সম্পর্কে ঐতিহাসিক বা ইতিহাসগত স্টাডির ক্ষেত্রে তিনি এখন একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব। আর্নেস্ট কিছুকাল ইসলাম বিষয়ক গবেষক অ্যান ম্যারি শিমেল-এর কাছেও পড়াশুনা করেছে এবং  মুহাম্মাদের অনুসরণ শীর্ষক তার বইটি তিনি শিমেলকে উৎসর্গ করেছেন। 

আর্নেস্ট ইসলামী ইরফান সম্পর্কে গভীরভাবে আগ্রহী এবং তিনি শেইখ রুজবাহ’ন সম্পর্কে ব্যাপক গবেষণা করেছেন। তার সম্পর্কে তিনি দু’টি বইও লিখেছেন। ফলে গত বছর তিনি আন্তর্জাতিক ফারাবি পুরস্কার পেয়েছেন।

কার্ল আর্নেস্ট মনে করেন ইসলামের প্রতি পাশ্চাত্যের দৃষ্টিভঙ্গি অবিচারপূর্ণ, বিদ্বেষী ও ইসলাম সম্পর্কে সঠিক উপলব্ধিবিহীন। আর তাই তিনি ‘মহানবীর (সা) অনুসরণ শীর্ষক’ বইয়ে ইসলাম ও মহানবী (সা) সম্পর্কে অমূলক ও মিথ্যা বক্তব্যগুলোর জবাব দিয়েছেন। এ বইয়ের ভূমিকায় তিনি লিখেছেন: আমি মুসলমান নই। কিন্তু মুসলমান নই বলে বাস্তবতা বা সত্যকে এড়িয়ে যাব এবং ইসলাম ও কুরআন সম্পর্কে যেসব নির্দয় বক্তব্য দেয়া হচ্ছে তার জবাব দেব না-এমনটা হতে পারে না। ... আমি মুহাম্মাদের অনুসরণ শীর্ষক এ বই লিখেছি যাতে মন্দ ধারণা ও ভুল উপলব্ধিগুলোর মেঘমালা কেটে যায় এবং ঐতিহাসিক পরিস্থিতিসহ মুসলমান ও অমুসলমানদের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর প্রভাবের বাইরে দাঁড়িয়ে স্বাধীনভাবে বাস্তবতা উপলব্ধি করা যায়।

মহানবীর (সা) অনুসরণ শীর্ষক’ বইটিতে রয়েছে ভূমিকা ছাড়াও ছয়টি অধ্যায়। মহানবী (সা)ই যে ইসলামের মূল প্রাণ ও প্রধান ব্যক্ত্বিত্ব তা এ বইয়ে তুলে ধরা হয়েছে। এ বইয়ের তৃতীয় অধ্যায়ের শিরোনাম হল ইসলামের পবিত্র উৎসগুলো তথা পবিত্র কুরআন ও সুন্নাত। এ অধ্যায় মহানবীর জীবনী বর্ণনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে এবং বিশ্ব জগতের জন্য রহমত হিসেবে ইসলাম পরিচিতিতে মহানবীর কেন্দ্রীয় বা প্রধান ভূমিকা এ অধ্যায়ে গুরুত্ব পেয়েছে।  এখানে নেতৃত্ব সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে গিয়ে আর্নেস্ট যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা শিয়া মুসলিম চিন্তাবিদদের দৃষ্টিভঙ্গির কাছাকাছি। এই একই অধ্যায়ে অধ্যাপক আর্নেস্ট কুরআনের ব্যাপারে বিদ্বেষী নানা অবস্থান এবং বিশেষ করে সালমান রুশদির স্যাটানিক ভার্সেস বইটির বক্তব্যের জবাব দিয়েছেন।

মহানবীর (সা) প্রতি বেশ অনুরাগ দেখা গেছে আর্নেস্টের মধ্যে। তার মতে মহানবীই (সা) হচ্ছেন ইসলামের মূল অক্ষ। তিনি ইসলামের প্রতি আক্রমণাত্মক মনোভাবে শেকড় খুঁজতে গিয়ে মধ্যযুগের নানা ধারা ও ক্রুসেডের যুদ্ধগুলোর বিষয়ে গবেষণা করে একবিংশ শতক পর্যন্ত ইসলাম বিদ্বেষী ধারাগুলোর অবস্থা বিশ্লেষণ করেছেন। তার মতে মধ্যযুগে খ্রিস্টান লেখকরা মহানবীর (সা) সেইসব মহৎ ও অনুপম চরিত্র আর যোগ্যতাগুলোকে ঠিক উল্টোভাবে তথা ত্রুটি-বিচ্যুতি হিসেবে তুলে ধরেছে যেসবকে মুসলমানরা মহানবীর সত্যিকারের রাসুল হওয়ার প্রমাণ বলে মনে করেন। তারা এ কাজ করেছে ঠিক এ কারণে যে হযরত ঈসার (আ) পরেও একজন নবী আসবেন- এ বিষয়টি তারা সহ্য করতে পারেনি!

পাশ্চাত্যে যারা ইসলাম বিদ্বেষী তাদের উদ্দেশে কার্ল আর্নেস্টের বক্তব্য হল: আপনারা ইসলামের নবীর চেহারাকে অজ্ঞতার পর্দার ভেতর দিয়ে দেখছেন! অথচ ইসলামের প্রাথমিক যুগে ইহুদি ও খ্রিস্টানরা কখনও মহানবীর এমন চেহারার কথা বলেননি!#

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/ ১১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ