এপ্রিল ২২, ২০২১ ১৯:৫২ Asia/Dhaka

গত আসরে আমরা ইরানের একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ 'গ্যাস' নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছি। দুই হাজার ষোলো সালে আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইরান বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম গ্যাস উত্পাদনকারী দেশের মর্যাদায় অবস্থান করছে। আর সবচেয়ে বেশি প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ থাকার কারণে ইরান বিশ্বে প্রথম অবস্থানে রয়েছে।

এর মধ্যে ইরানে গ্যাসের মজুদ প্রায় চৌত্রিশ ট্রিলিয়ন ঘনমিটার। তার মানে বিশ্বের মোট প্রাকৃতিক গ্যাস মজুদের আঠারো শতাংশ রয়েছে ইরানে।

এটি সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে মজুদ গ্যাসের একান্ন  শতাংশ এবং ওপেকভুক্ত তেল রফতানিকারক দেশগুলির মোট গ্যাস মজুদের চল্লিশ শতাংশের সমান। ইরানের সঙ্গে প্রতিবেশি দেশগুলোর বেশ কয়েকটি যৌথ তেল ও গ্যাস ক্ষেত্র রয়েছে। জ্বালানীর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল্যবান একটি উৎস হলো তরল গ্যাস। প্রাকৃতিক গ্যাসকে ঘনীভবনের মাধ্যমে বিশেষ পদ্ধতিতে তরল গ্যাসে পরিণত করা হয়। ইরানে তরল গ্যাস উৎপাদনের পরিমাণ দৈনিক সাড়ে ছয় লাখ ব্যারেলের মতো ছিল। বছর খানেকের মধ্যে এই তরল গ্যাস উৎপাদনের পরিমাণ তের লক্ষ ব্যারেলে পৌঁছে যেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। এই তরল গ্যাস নিয়ে আমরা আজকের আসরে আরও কথা বলার চেষ্টা করবো।

তরল গ্যাস প্রাকৃতিক গ্যাসেরই রুপান্তরিত একটি অবস্থা। আপনারা সিএনজি কিংবা এলপিজি'র কথা শুনে থাকবেন হয়তো। সি এন জি' র পূর্ণরূপ হলো কম্প্রেসড নাচ্যারাল গ্যাস যা থেকে বোঝা যায় প্রচণ্ড চাপের মাধ্যমে এই তরল গ্যাসটি তৈরি হয়। চাপের সাাহয্যে এই গ্যাসকে সিলিন্ডারে প্রবেশ করানো হয় বলেই একে কম্প্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস বলা হয়। প্রাকৃতিক গ্যাসের কোনো রং নেই, গন্ধও হীন এবং এই গ্যাস বিষাক্তও না। তবে দাহ্য এবং বাতাসের চেয়েও হালকা। এটি গ্যাসোলিন বা পেট্রোলের চেয়েও নিরাপদ। কেন নিরাপদ, কারণ গ্যাসোলিন এর মত এটি দহন এর সময় সালফার ত্যাগ করে না। সি এন জি'র আরেকটি ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য হলো এতে কোনো লিড বা বেনজিন না থাকায় স্পার্ক প্লাগে কোন ফাউলিং হতে পারে না। একই সাথে পরিবেশের কোনো ক্ষতি করে না।

এছাড়া সি এন জি গ্যাসিও জ্বালানি হওয়ায় বাতাসের সাথে সহজেই এবং সমানভাবে মিশে যেতে পারে। তাই সি এন জি শুধুমাত্র পেট্রোল ইঞ্জিনে ব্যবহার করা যায়। প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে আরও যেসব তরল গ্যাস তৈরি হয় তার মধ্যে রয়েছে লিকুইফাইড ন্যাচরাল গ্যাস বা এলএনজি, লিকুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস বা এলপিজি ইত্যাদি। এলএনজি হচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাস যাকে সংরক্ষণ ও পরিবহনের সুবিধার্থে অস্থায়ীভাবে তরলে রূপান্তর করা হয়েছে। জ্বালানি হিসেবে এলএনজির জনপ্রিয়তা বিশ্বব্যাপী ক্রমাগত বাড়ছে। এলএনজি আলাদা কোন জ্বালানি নয়, এটি প্রাকৃতিক গ্যাসেরই তরল রূপ। প্রাকৃতিক গ্যাস সাধারণ চাপ ও তাপমাত্রায় গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে। রিফ্রেজারেশন বা শীতলকরণ প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রাকৃতিক গ্যাসের তাপমাত্রা কমিয়ে মাইনাস এক শ ষাট ডিগ্রী সেলসিয়াসে নামিয়ে আনলে গ্যাস তরলে পরিণত হয়। এই তরল প্রাকৃতিক গ্যাসকেই এলএনজি বলা হয়।

সিএনজি এবং এলএনজি নিয়ে কথা বলেছি আমরা। এবার এলপিজি নিয়ে কথা বলা যাক। লিকুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাসকে সংক্ষেপে এলপিজি নামে চেনে সবাই। এলপিজি হচ্ছে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস। এই গ্যাস পাওয়া যায় রিফাইনারি থেকে। এটি মূলত প্রোপেন ও বিউটেনের মিশ্রণ।  গ্যাসের খনি থেকে প্রাপ্ত গ্যাসে যথেষ্ট পরিমাণে গ্যাস কনডেনসেট থাকে, বিশেষত যখন খনি থেকে গ্যাস উত্তোলনের পরিমাণ বেশি থাকে। এই হাইড্রোকার্বন পণ্যটি নিষ্কাশিত গ্যাসে পলল এবং পলির আকারে উপস্থিত থাকে। অন্যদিকে এলএনজিকে কম্প্রেস করা হয় না বরং প্রাকৃতিক গ্যাসকে রেফ্রিজারেশনের মাধ্যমে এত বেশি ঠান্ডা করা হয় যে একসময় সাধারণ চাপেই সে তরল হয়ে যায়।

রাসায়নিক সংমিশ্রণের ক্ষেত্রে গ্যাস কনডেনসেট মূলত পেন্টেন এবং ভারী হাইড্রোকার্বন দ্বারা গঠিত। এই পণ্যটিতে সালফার কম থাকে এবং সাধারণত কোনও ধাতব যৌগ থাকে না। নিষ্কাশন করার পর মিথেন এবং ইথেন মানে সবচেয়ে হালকা এবং সবচেয়ে বেসিক প্রাকৃতিক গ্যাস যৌগগুলি থেকে আলাদা করার প্রক্রিয়া চলাকালীন গ্যাস কনডেনসেট পাওয়া যায়। গ্যাস ক্ষেত্র থেকে আহরণ করার পর এবং শোধনাগারে স্থানান্তর করার পর  প্রাকৃতিক গ্যাস ধারাবাহিকভাবে কয়েকটি পাইপলাইন দিয়ে যায়। তাপমাত্রা এবং উপরিভাগের চাপে প্রাকৃতিক গ্যাসের ভারী হাইড্রোকার্বন মেশে পাইপের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং ট্যাংকারে স্থানান্তরিত হয়। এই কারণে গ্যাস কনডেনসেট এলএনজির বিপরীতে তাপমাত্রা হ্রাস করা বা জলাশয়ের চাপ বাড়ানোর জন্য মাটির স্তরে সংরক্ষণের প্রয়োজন পড়ে না।

তরল গ্যাসের ব্যবহার বৈচিত্র্য রয়েছে। পেট্রোকেমিক্যাল এবং তরলিকরণ পরিশোধনাগারগুলোর অন্যতম খোরাক মানে জ্বালানি হিসেবে তরল গ্যাস অত্যন্ত উপযোগী ও সাশ্রয়ী। এর প্রায় অর্ধেকই বলা যায় 'নাফথ'। নেফথা একটি দ্রাবক এবং অন্যান্য হাইড্রোকার্বনের ডিটারজেন্টস ও রিফাইনারিগুলির উত্পাদনের কাজে ব্যবহৃত হয় এই নাফথ। রাসায়নিক এবং পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পগুলির প্রধান একটি উপাদান এই নাফথ। এটি দ্রাবক এবং পাতলা। প্লাস্টিকের গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল, সিন্থেটিক ফাইবারসহ বিভিন্ন পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য উৎপাদনের জন্য ফিডস্টক হিসাবে ব্যবহার হয় নাফথ। বেশিরভাগ ইথিলিন প্লাস্টিকের যৌগও নেফথা দিয়ে তৈরি হয়। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ২২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ