মে ০১, ২০২১ ১৫:২৭ Asia/Dhaka

বিশিষ্ট চিকিৎসক অধ্যাপক ইমাঈল পাটোয়ারি রমজানে সেহরি ও ইফতারে কী খাবেন কেন খাবেন সে বিষয়টি রেডিও তেহরানের স্বাস্থ্যকথার আসরে চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন।

সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন সৈয়দ মূসা রেজা এবং অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা ও তৈরি করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।

শ্রোতাবন্ধুরা! স্বাস্থ্যকথার আজকের আসরের  শুরুতেই পবিত্র রমজানের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি সবাইকে আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশাকরি মহামারি করোনার মধ্যেও সবাই ভালো ও সুস্থ আছেন।

পবিত্র রমজান মাসে  ইফতার ও সেহরি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একজন রোজাদারের ইফতার ও সেহরি কি হওয়া উচিত এবং সামান্য অসুস্থ থাকলেও কিভাবে রোজা রাখা যাবে, এ সময় রোজা রাখা উচিত হবে কি না এসব বিষয়ে আজ আলোচনা হবে। আর আলোচনা করবেন বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজের ইন্টারন্যাল মেডিসিন বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ইসমাঈল পাটোয়ারি। (মুজিক)

প্রশ্ন: অধ্যাপক ইসমাঈল পাটোয়ারি, প্রথমে আপনার কাছে জানতে চাইছি, রোজায় সেহরি এবং ইফতারিতে কি কি ধরনের খবার গ্রহণ করা উচিত। আপনি প্রথমেই সেহরি সম্পর্কে আমাদের শ্রোতাদের কিছু বলুন?

ইফতারে জুস খাওয়া ভালো

অধ্যাপক ইসমাঈল পাটোয়ারি: ধন্যবাদ আপনাকে। রোজার সময় আমাদের কিছু কিছু জিনিষ জেনে নেওয়াটা খুবই দরকার। খাবারের ধরনটা কি হওয়া উচিত। প্রথমে আসি সেহেরি তারপর ইফতারের বিষয়টি। সেহেরি দুটো জিনিষ আমাদের মনে রাখতে হবে যেহেতু আমাদেরকে দীর্ঘ সময় রোজাতে উপবাস পালন করতে হবে সেই হিসাবে এমন খাদ্য আমাদের খাওয়া উচিত যেগুলো সহজে হজম হয়। হজমের যাতে কোনো রকম ব্যঘাত না ঘটে সেদিকে খেয়াল করতে হবে। এছাড়া যেহেতু আমাদের দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকবে হবে সেহিসেবে পানি খাবার পরিমাণটা যেন খুব বেশি হয়। সেদিকটাও খুব বেশি করে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ পানি কম খেলে পানি শূন্যতা দেখা দিতে পারে।

রেডিও তেহরান: আচ্ছা অধ্যাপক পাটোয়ারি,  রোজার দিনগুলোতে সহজে হজমের উপযুক্ত খাবার কেন খেতে বলা হয়?

ইফতারে ফল খাওয়া ভারো

অধ্যাপক ইসমাঈল পাটোয়ারি: সহজে হজমযোগ্য খাবারগুলো কেন খেতে বলি? এর কারণ হচ্ছে-গুরু পাকের খাবার, অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার সাধারণ হজম বিক্রিয়াতে ব্যঘাত ঘটায়। ফলে পেটেরও নানারকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর সেকারণেই বলা হয়- যেসব খাবার সহজে ডাইজেস্ট হয় সেজাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। শক্ত খাবার এড়িয়ে যেতে পারলে ভালো এবং যেসব খাবার নরম সেসব খাবার  গ্রহণ করা ভালো।

রেডিও তেহরান: ডা.পাটোয়ারি, রোজার সময় সেহরি এবং ইফতারের খাবার নির্বাচনের সময় আর কোন্‌ দিকে আমাদের দৃষ্টি দেয়া উচিত?

অধ্যাপক ইসমাঈল পাটোয়ারি: আমরা সবাই জানি একটা ব্যালেন্স ফুড-কার্বোহাইড্রেড,ফ্যাট এবং প্রোটিন সেইসাথে প্রচুর পরিমাণে শবজী ভেজিটেবল এবং ফল এসব জিনিষগুলো আমাদের বেশি খাওয়া উচিত।

আমাদের একটি হাদিসে আছে-আপনারা জানেন যে, খাবারকে যদি আমরা তিনভাগে ভাগ করি অর্থাৎ পেটকে তিনভাগে ভাগ করি তাহলে তিনভাগের একভাগ হবে সলিড, একভাগ হবে লিকুইড আর একভাগ খালি অর্থাৎ বায়বীয়। এতে করে পেটের হজমের কোনো অসুবিধা হবে না।

রেডিও তেহরান: অধ্যাপক পাটোয়ারি, আপনি সেহরি নিয়ে বললেন এবার ইফতারি প্রসঙ্গে কিছু বলুন?

অধ্যাপক ইসমাঈল পাটোয়ারি: ইফতার হচ্ছে অনেকক্ষণ প্রায় ১২ ঘন্টা১৪ ঘন্টা কোনো কোনো সময় আরও বেশি সময় বা রোজা রেখে রোজা ভাঙার সময় অর্থাৎ ইফতারের সময় আমাদের খেয়াল করতে হবে- এমন খাবার আমরা সাথে সাথে নিতে পারি যা সহজে হজম হতে পারে। সে সময়টা এমন হতে পারে আমাদের ব্লাডের গ্লুকোস লেভেলটা কিছু কমে যেতে পারে। ফলে সহজে হজম হয় এমন খাবার খেলে শরীরের গ্লুকোস লেভেলটা স্বাভাবিক হয়ে যেতে পারে। আর দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকার ফলে শরীরের পানি শূন্যতার একটা বিষয় থাকে পানি খাওয়ার ফলে সেটা যাতে কেটে যায় সেদিকটা আমাদের খেয়াল করতে হবে।

এসময় অতিরিক্ত ভাজি-পোড়া, তৈলাক্ত জাতীয় খাবার,চর্বি এবং শক্ত জাতীয় খাবার ইফতারের সময় এড়িয়ে চলা উচিত। আমাদের একটা ট্রেডিশন হয়ে দাঁড়ায় অনেক সময় আমরা প্রচুর পরিমাণে ছোলা, বুট, পেয়াজু, বেগুনিসহ অন্যান্য গুরুপাক জাতীয় খাবার খেয়ে থাকি। এসব খাবার যত কম এবং পরিমিত খাওয়া যায় সেদিকে খেয়াল করা উচিত।

এ ব্যাপারে উদাহরণ হতে পারে, একটা বা দুটো খেজুর খেয়ে একটু পানি কিংবা সরবত খেয়ে তারপর খিঁচুড়ি জাতীয় খাবার যদি আমরা গ্রহণ করি সাথে যদি ভেজিটেবল এবং ফল থাকে তাহলে আমার মনে হয় এনাফ হয়ে যায়।

তাছাড়া রোজ হচ্ছে আমাদের সংযমের মাস সেজন্য খাবারের উপরেও আমাদের সংযম থাকা উচিত। আমরা অনেক সময় দেখি ইফতারের সময় ভুরিভোজ করে থাকি। সেহেরির সময়ও আমাদের কোনো রকম ব্যালেন্স থাকে না। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার আমরা গ্রহণ করি না। আর সেজন্য আমাদের পেটে বিভিন্ন রকমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ফলে আমরা যদি এসব বিষয় খেয়াল করি তাহলে রোজা পালনের ক্ষেত্রে খুবই উপযোগী হবে।

তাহলে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, যেসব খাবার সহজে হজম হয়, রক্তে সহজে গ্লুকোস লেভেল টা মেইনটেইন করবে,ডিহাইড্রেশন হবে না, প্রচুর ফল যদি আমরা খাই কোষ্ঠকাটিন্য হবে না। পরিমিত খাবারের যদি অভ্যাস করা হয় তাহলে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে কোনো অসুবিধা হবে না। এছাড়া অনেকের কোলস্টেরলের সমস্যা থাকে, হাইপারটেনশনের সমস্যা থাকে-তারাঁ যদি এসব মেনে চলেন তাহলে এর সবকিছু নিয়ন্ত্রণে থাকবে। রোজার সময় এভাবেই আমাদের খাবারের অভ্যাসটা করা উচিত বলে আমি মনে করি।

তো শ্রোতা/পাঠক বন্ধুরা! এতক্ষণ সেহরি ও ইফতারে কি ধরনের খাবার গ্রহণ করলে রোজা রাখা সহজ এবং স্বাস্থ্যের দিক থেকে কার্যকর হবে সে প্রসঙ্গে –অধ্যাপক ইসমাইল পাটোয়ারির আলোচনা শুনলেন।

মারাত্মক অসুখ বিসুখ না থাকলে সবার পক্ষেই রোজা সহজেই রাখা সম্ভব। অন্তত চিকিৎসকের দৃষ্টিতে রোজা রাখার জন্য কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা নেই বলে আজকের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা থেকে আমারা জানতে পারলাম। আগামী আসরেও এ প্রসঙ্গেই কথা বলবেন বাংলাদেশের এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। 

তো শ্রোতাবন্ধুরা! এবার বিদায় নেব স্বাস্থ্যকথার আজকের আসর থেকে। তার আগে বলে নেই, রোজার সংযমের শিক্ষা আত্মিক ক্ষমতাই কেবল বাড়ায়  না বরং সুস্থ থাকতেও সহায়তা করে। রোযার শিক্ষাকে গ্রহণ করে সবাই সংযমী হবো। গত রোযায় আমাদের যেসব ভুল-ভ্রান্তি হয়েছে এবারের রোযায়  তা থেকে সবাই দূরে থাকার চেষ্টা একান্তভাবে সবাই করব- এ আহ্বান জানাচ্ছি। সবাই ভালো ও সুস্থ থাকুন-স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/১

  • বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।