জুন ০৯, ২০২১ ১৮:৩৩ Asia/Dhaka

ইরানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার সংস্থা এই মহাবীরের স্মৃতির প্রতি সম্মান দেখিয়ে তাঁর বাসভবনটিকে জাতীয় নৃতত্ত্ব যাদুঘরে পরিণত করে।

প্রায় তিন হাজার সাত শ পঞ্চাশ বর্গমিটার আয়তনের এই ভবনটিতে রয়েছে তেইশটি কক্ষ। গ্রিলযুক্ত জানালার গ্লাস এবং পুরো ভবনে অসংখ্য জানালার অস্তিত্ব যাদুঘরটিকে আরও বেশি দর্শনীয় করে তুলেছে। এই যে ভবনের মাঝখানে খোলা আঙিনার কথা বললাম সেখানে বেশ কিছু গাছগাছালিও রয়েছে যা পুরো প্রাকৃতিক পরিবেশকে উপভোগ্য করে তুলেছে।

গাছ গাছালি ঘেরা আঙিনার কথা বলেছিলাম। ওই আঙিনাতেই একেবারে যাদুঘরের মুখোমুখি নির্মাণ করা হয়েছে রাইসআলি দেলোয়ারির ভাষ্কর্য। যাদুঘরে প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়েছে এই মহাবীরের জীবন ঘনিষ্ঠ বিচিত্র জিনিসপত্র এবং তার পরিবারের ব্যবহৃত বিভিন্ন আসবাব। বিশেষ করে দেলোয়ারি ও তার সহযোদ্ধারা যেসব অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করেছিলেন সেগুলো প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। একটি কক্ষে তাঁর এবং তাঁর সঙ্গী যোদ্ধাদের ভাষ্কর্যও রাখা হয়েছে। এরকমই আরেকটি কক্ষে রয়েছে বিভিন্ন দলিল দস্তাবেজ। বিশেষ করে অসিয়্যতনামা, প্রাচীন স্ট্যাম্প, শপথনামা ইত্যাদি এ জাতীয় আরও বহু নিদর্শন রয়েছে। রয়েছে দখলদার ব্রিটিশদের সময় যেসব ঐতিহাসিক ঘটনা দুর্ঘটনা ঘটেছিল সেসবের লিখিত বিবরণও।

যাদুঘরে ঘুরে ঘুরে এই বীরের ছবি, তার এবং তার সহযোদ্ধাদের ব্যবহৃত যুদ্ধের অস্ত্র ও পোশাক, দখলদার ব্রিটিশদের সময়কার বিভিন্ন রকমের স্ট্যাম্প, মানচিত্র, বিচিত্র সনদ এবং ইংরেজদের হামলা সংক্রান্ত বিভিন্ন চিঠিপত্র, ঔপনিবেশিকদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের বিভিন্ন তথ্যপঞ্জি ও ব্যবহৃত সরঞ্জাম ইত্যাদি প্রদর্শনীতে লক্ষ্য করা যায়। বু-শেহরে বেড়াতে গেলে এই যাদুঘর দেখে আসতে ভুলবেন না আশা করি। যাই হোক এই রাইসআলি দেলোয়ারি যাদুঘর দেখার পর আমরা যাবো এবার  ঐতিহাসিক কালাত দূর্গ দেখতে। এই দূর্গটি দেখতে হলে যেতে হবে আহরাম শহরে। আহরাম হলো তাঙ্গেস্তানের কেন্দ্রিয় শহর। বু-শেহর প্রদেশের কেন্দ্রিয় শহর বু-শেহর থেকে এই আহরামের দূরত্ব হলো চুয়ান্ন কিলোমিটারের মতো।

আহরাম শহরের কালাত দূর্গ দেখবো আমরা। এই দূর্গটি যায়ের খাজার খান আহরামির নামেই পরিচিত। এখানে আরও রয়েছে আহরাম গরম জলের ঝর্না, মির আহমাদ গরম জলের ঝরনা, বিনোদন কেন্দ্র, খঈয সংরক্ষিত এলাকা, ইমামযাদা ইব্রাহিমের মাজার, ইমামযাদা জাফরের মাজার, আহরামের বিকল্প বাঁধ, কুচারাক গরম জলের ঝরনা, তাঙ্গেস্তান খেজুর বাগান ইত্যাদি আহরামের আকর্ষণীয় ও দর্শনীয় নিদর্শন। আহরাম কালাত কেল্লা এ অঞ্চলের ঐতিহাসিক কেল্লাগুলোর একটি। কাজার শাসনামলের শেষের দিককার কেল্লা এটি। আহরাম শহর থেকে উত্তর দিকে অবস্থিত কেল্লাটির আয়তন তিন হাজার চার শ বর্গমিটার।

চারটি টাওয়ার বিশিষ্ট বিশেষ এই দূর্গের বাসিন্দাদের জন্যও তৈরি করা হয়েছে বিশেষ রকমের স্থাপনা। রোদে পোড়া ইট আর কাদা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে দূর্গটি। উল্লেখিত দূর্গটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ঔপনিবেশিকদের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত মুজাহিদদের এবং ব্রিটিশ আগ্রাসী বাহিনীর সঙ্গে দক্ষিণের যোদ্ধাদের সংঘর্ষস্থল বা ঘাঁটি হিসেবে প্রসিদ্ধ। দূর্গের পশ্চিম টাওয়ারে কামানের গোলার আঘাতের চিহ্ন এখনও লক্ষ্য করা যাবে। একইসঙ্গে এই কেল্লায় ব্রিটিশ বন্দি সেনাদের রক্ষণাবেক্ষণ করা হতো। ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে এই আহরাম কেল্লা ইরানের জাতীয় ঐতিহ্যের তালিকার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

কেল্লা নিয়ে আর কথা না বাড়িয়ে এখানকার গরম জলের ঝরনা নিয়ে কথা বলা যাক। আগেই আমরা গরম জলের কয়েকটি ঝরনার কথা বলেছি। আহরাম শহরের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ হিসেবে পরিচিত এই ঝরনাগুলো। ইরানের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মোটামুটি সারা বছর জুড়েই এই আহরামে লোকজন বেড়াতে আসে এসব ঝরনা উপভোগ করার জন্য। দুই হাজার সাত খ্রিষ্টাব্দে তাঙ্গেস্তানের এই আহরাম ঝরনাকে ইরানের জল-চিকিৎসা অর্থাৎ হাইড্রোথেরাপি গ্রামের মডেল হিসাবে নির্বাচন করা হয়েছিল। এই ঝরনায় দুটি আলাদা আলাদা সুইমিং পুল আছে। একটি পুরুষদের জন্য অপরটি নারীদের জন্য। একটি ক্যানেলের মাধ্যমে ঝরনার গরম জল তার উৎসমুখ থেকে সুইমিং পুল বা পুকুরে এসে পড়ে।

বিচিত্র খনিজ উপাদান চুঁইয়ে বেরিয়ে আসা এই ঝরনার গরম জল তাই শরীরের জন্য বেশ কিছু ক্ষেত্রে উপকারী বলে চিকিৎসকদের অনেকেই মত দিয়েছেন। চিকিৎসা গুণ নিয়ে আমরা বেশি কিছু বলতে চাই না।  আমরা বরং ভ্রমণের মধ্যে থাকার চেষ্টা করি। আহরাম শহরের গুরুত্বপূর্ণ ও নিজস্ব উপহারের মধ্যে রয়েছে বহু রকমের খোরমা। এখানকার খোরমা একেবারেই অনন্য সাধারণ। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ০৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ