জুন ১৭, ২০২১ ১৯:২২ Asia/Dhaka

মহান আল্লাহর আসমাউল হুসনার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নাম আযিম বা সর্বশ্রেষ্ঠ। মহান আল্লাহর মোকাবেলায় অন্য সব কিছুই নতজানু, অতি ক্ষুদ্র থেকেও ক্ষুদ্র তথা অতি নগণ্য বা তুচ্ছ এবং মহান আল্লাহ সব কিছুর ওপর কর্তৃত্বশীল বলেই তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ বা আযিম।

হযরত ইমাম রেজা (আ) বলেছেন, মহান আল্লাহ সর্বপ্রথম যে নাম নিজের জন্য বাছাই করেছেন তা হল আলিউল আযিম তথা সর্বোচ্চ পর্যায়ের মহান ও সর্বশ্রেষ্ঠ। মহান আল্লাহ সম্পর্কে জানতে হলে বা ধারণা অর্জন করতে হলে তাঁর নামগুলো ও গুণগুলো সম্পর্কে ধারণা অর্জন করতে হবে। মহান আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ। এ বিশ্ব-চরাচর তথা সমগ্র সৃষ্টিকুল বা অস্তিত্বের জগত মহান আল্লাহরই শ্রেষ্ঠত্বের নিদর্শন। বিশাল মহাকাশের তুলনায় আমাদের এই গ্রহ তথা পৃথিবী যেন অতি ক্ষুদ্র এক বিন্দুর মত। কারণ এক একটি ছায়াপথে রয়েছে অনেক সূর্য ও সৌর-জগত এবং বিপুল সংখ্যক গ্রহ-নক্ষত্র, ধুমকেতু।   ছায়াপথের সংখ্যাও বিপুল। আমাদের এই ছায়াপথ শত সহস্র কোটি ছায়াপথের অন্যতম। সুরা শুরার চতুর্থ আয়াতে মহান আল্লাহ নিজের আলিউল আযিম নাম উল্লেখ করে বলেছেন, নভোমন্ডলে যা কিছু আছে এবং ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, সমস্তই তাঁর। তিনি সমুন্নত, মহান।

সুরা বাক্বারার ২৫৫ নম্বর আয়াত তথা আয়াতুল কুরসি নামে খ্যাত এ আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, আল্লাহ সেই পরম সত্ত্বা যিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই তিনি চিরঞ্জীব স্থিতিদাতা তথা বিশ্ব জগতের রক্ষক; তন্দ্রা ও নিদ্রা তাঁকে আচ্ছন্ন করে না; যা আকাশমণ্ডলীতে আছে ও যা পৃথিবীতে আছে সে সব তাঁরই; কে এমন আছে যে তাঁর অনুমতি ছাড়া  তাঁর কাছে কারও জন্য সুপারিশ করে;যা কিছু তাদের তথা মানুষের সামনে আছে বা যা বিদ্যমান এবং যা তাদের পেছনে আছে বা বিগত হয়েছে তিনি তা অবগত; তারা বা মানুষেরা আল্লাহর জ্ঞানের একটি অংশও আয়ত্ত করতে পারে না, তবে যতটুকু তিনি চান তথা যেটুকু তিনি শেখান সেটুকু ছাড়া; তাঁর আসন  বা কর্তৃত্ব  তথা প্রজ্ঞা বা বিশ্ব-জগত পরিচালনা-ব্যবস্থার কেন্দ্র আকাশগুলো ও পৃথিবীকে পরিবেষ্টন করে আছে; এবং এ দু'টির তত্ত্বাবধান ও সংরক্ষণ তাঁর পক্ষে কঠিন নয়; এবং তিনি সর্বোচ্চ মহান মর্যাদাময়।

এ আয়াত থেকে মহান আল্লাহর অনন্য মর্যাদা, ক্ষমতা, শক্তিমত্তা তথা সব কিছুতে তাঁর শ্রেষ্ঠ অবস্থান, অন্য যে কোনো কিছু হতে তাঁর পুরোপুরি অমুখাপেক্ষীতা, সব সময়ের ও সব কিছুর সম্যক জ্ঞান থাকা এবং অস্তিত্ব জগতের ওপর তাঁর সর্বময় কর্তৃত্ব ও মালিকানায় কারো বিন্দুমাত্র অংশ না থাকার মত শ্রেষ্ঠত্বের নানা বিষয় ফুটে উঠেছে। মানুষ কেবল ততটুকুই জানতে পারেন আল্লাহ যতটুকু জ্ঞান তাদের দান করেন। কারো মুক্তির জন্য সুপারিশ বা শাফায়াতও আল্লাহর অনুমতি ছাড়া সম্ভব নয়। সব কিছুর ওপর প্রভুত্ব ও মালিকানা কেবল মহান আল্লাহরই। তন্দ্রা ও নিদ্রার মত মানবীয় বা সৃষ্টিকুলের দুর্বল তথা অপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলোর কোনো কিছুই মহান আল্লাহকে স্পর্শ করে না। তাই সত্যিই তিনি সর্বোচ্চ মহান মর্যাদাময়।

মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনকেও আযিম বা শ্রেষ্ঠ বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ কুরআনের বাণী হল মহান আল্লাহর। এর বহনকারী হলেন মহান আল্লাহর ঘনিষ্ঠ ফেরেশতা হযরত জিব্রাইল (আ)। এ বাণী গ্রহণ করেছেন সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ রাসুল হযরত মুহাম্মাদ (সা), এর সংরক্ষক ও বিকৃতিরোধক হলেন মহান আল্লাহ নিজেই এবং  কুরআন নাজিল হয়েছে সর্বশ্রেষ্ঠ রাত তথা লাইলাতুল ক্বাদ্‌র্‌ বা শবে ক্বদরে। আর এ মহান গ্রন্থের ব্যাখ্যাকারী হলেন মহানবীর (সা) পবিত্র আহলে বাইত। তাই সব দিক থেকেই এই গ্রন্থ শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ ও নজিরবিহীন।

মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও মহানত্ব এমনই যে তার সঙ্গে তুলনা করার মত কোনো কিছুরই অস্তিত্ব নেই। তবে আপেক্ষিক অর্থে ব্যাপক কিংবা শ্রেষ্ঠ বোঝাতেও আযিম শব্দের ব্যবহার আছে। যেমন, কারুনের সম্পদকে পার্থিব ভোগের বস্তু হিসেবে দুনিয়ার চাকচিক্যে বিভ্রান্ত ব্যক্তিদের কাছে আযিম মনে হয়েছিল। সুরা কাসাস-এর ৭৯ নম্বর আয়াতে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে:

অতঃপর কারুন জাঁকজমক সহকারে তার সম্প্রদায়ের সামনে বের হল। যারা পার্থিব জীবন কামনা করত, তারা বলল, হায়, কারুন যা প্রাপ্ত হয়েছে, আমাদেরকে যদি তা দেয়া হত! নিশ্চয় সে বড় ভাগ্যবান।

মহান আল্লাহর অনুগ্রহকেও আযিম বা ব্যাপক বলা হয়েছে। সুরা আলে ইমরানের ১৭৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: আল্লাহর অনুগ্রহ অত্যন্ত ব্যাপক। আবার মহন আল্লাহ যখন কঠিন শাস্তি দেন বা বড় ধরনের বিপদ দেন সেই বিপদের ভয়াবহতা ও ব্যাপকতা বোঝাতেও আযিম শব্দের ব্যবহার করা হয়েছে পবিত্র কুরআনে।

মহান আল্লাহ সবক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ বা আযিম হওয়ায় তাঁর ওপর নির্ভর করে মানুষও অতি উচ্চ পর্যায়ের সম্মান, প্রশান্তি ও সৌভাগ্য অর্জন করতে পারে। মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের কথা মনে রাখলে মানুষের মনে কখনও অহংকার বা আত্মপ্রীতি জন্মাতে পারে না।

মহান আল্লাহর আযিম নামের সৌরভ পেতে হলে মানুষকে পুরোপুরি মহান আল্লাহর অনুগত দাস হতে হবে। যারা আল্লাহর বিধি-বিধান, নির্দেশ ও ইবাদতকে বড় মনে করে বা গুরুত্ব দেয় তারা খোদাভীরু বলেই তা করে বলে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে। (২২:৩২, সুরা হজ)

মহান আল্লাহর আযিম নামের প্রেমিক প্রকৃত বিশ্বাসী বা মুমিন খোদার পথে চলতে গিয়ে অন্যদেরও সেই পথে নিজের সঙ্গী করে নেয় এবং মহান আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্বকে বেশি মাত্রায় তুলে ধরে। এ ছাড়াও এমন ব্যক্তি অন্যদের সঙ্গে মহত আচরণ করে এবং কাউকেও তুচ্ছ বা হীন বলে ভাবে না।#

 

 

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/ মো: আবু সাঈদ/১৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।