সর্দি-কাশি-জ্বর হলেই তা করোনা নয়: ডা.আবু কামরান রাহুল
শ্রোতা/পাঠকবন্ধুরা! স্বাগত জানাচ্ছি রেডিও তেহরানের সাপ্তাহিক স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক অনুষ্ঠান স্বাস্থ্যকথার আসরে আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা সবাই ভালো ও সুস্থ আছেন। আজকের আসরে আমরা বর্ষাকালীন রোগ-ব্যধী মানে মৌসুমী রোগ নিয়ে কথা বলব। আর এ বিষয়ে কথা বলার জন্য আমাদের সাথে অতিথি হিসেবে আছেন- ডা.আবু কামরান রাহুল। তিনি মেডিসিন ও ডায়াবেটিসের ডাক্তার। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন। তো ডা. আবু কামরান রাহুল রেডিও তেহরানে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।
রেডিও তেহরান: ডা, আবু কামরান রাহুল- আপনার কাছে প্রথমে জানতে চাইব-মৌসুমী রোগের বিষয়ে। আপনি জানেন এখন বাংলাদেশে বর্ষাকাল চলছে। বর্ষাকালে নানান ধরনের মৌসুমী রোগ দেখা দেয়। আর মহামারি করোনা তো আছেই। তো বর্ষাকালে সাধারণত কি ধরণের রোগের প্রকোপ দেখা দেয়?
ডা.রাহুল: ধন্যবাদ আপনাকে। এখন বর্ষার মৌসুম। আর প্রত্যেকটা রোগের নির্দিষ্ট একটা ধরণ আছে। কিছু রোগ গরমের সময়, আবার কিছু রোগ শীতকালে আবার কিছুরোগ বর্ষাকালে বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে বর্তমানে বর্ষা মৌসুমে আমাদের কমিউনিটিতে সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করি কোল্ড ফ্লু। সাধারণ জ্বর, সর্দি কাশি এটি কমন রোগ বর্ষাকালে। এখন করোনা মহামারি চলছে। ফলে জ্বর সর্দি কাশি হলেই আমরা সাধারণত মনে করে থাকি করোনা হয়েছে। কিন্তু করোনাভাইরাস ছাড়াও অনেক ভাইরাসের কারণে আমাদের কোল্ড ফ্লু হতে পারে। তাই সর্দি কাশি জ্বর হলেই মনে করা যাবে না যে এটি করোনাভাইরাস।
দ্বিতীয়ত বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে- মে থেকে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত মশার কামড়জনিত যেসব রোগ বিশেষ করে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। মশার কামড়ে ডেঙ্গু ছাড়াও ম্যালেরিয়া কিংবা ফাইলেরিয়া হতে পারে। হতে পারে কলেরা ও টাইফয়েড। এর পাশাপাশি হেপাটাইটিসি এ' এর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না থাকলে এবং বিশুদ্ধ খাবার না খেলে সাধারণ হেপাটাইটিস এ হতে পারে। যেসব রোগের কথা বললাম এর বাইরেও অনেক রোগ হয়ে থাকে। তবে বর্ষা মৌসুমে এসব রোগের প্রাদুর্ভাব আমরা বেশি লক্ষ্য করি।
রেডিও তেহরান: ডা. রাহুল আপনি বেশ কিছু মৌসুমী রোগের নাম বললেন, যেমন-কোল্ড ফ্লু-সর্দি,কাশি, সাধারণ জ্বর ইত্যাদি। পানিবাহিত ও খাবারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কিছু রোগ যেমন-কলেরা এবং টাইফয়েড পাশাপাশি হেপাটাইটিস এ রোগের কথা বললেন। এইসব রোগের যে প্রকোপ বর্ষাকালে বৃদ্ধি পায়-মানুষ আক্রান্ত হয় তো এসব রোগ থেকে প্রতিরোধ এবং প্রতিকারের উপায় কি যদি বলেন?
ডা. রাহুল: দেখুন, প্রতিরোধের চেয়ে প্রতিকারটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কোনো একটি রোগ ছড়িয়ে পড়ার আগে যদি আমরা প্রতিকারমূলক কিছু সচেতনা অবলম্বন করি তাহলে কিন্তু আমরা ঐসব রোগের হাত থেকে বাঁচতে পারি। আমি এ ব্যাপারে রেডিও তেহরানের শ্রোতাদের কিছু পরামর্শ দিতে চাইছি।
প্রথমত-আমাদের খাবার পানিটা যেন অবশ্যই বিশুদ্ধ হয়। খাবারটা অবশ্যই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হতে হবে। তাছাড়া রান্না করা খাবারের ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে। দেখা গেল সকালে রান্না করা খাবার দুপুরে কিংবা রাতে গরম করা ছাড়াই খেয়ে থাকি। এক্ষেত্রে খাবারটি পচা-বাসি হয়ে যাওয়ার ফলে এ থেকে বিভিন্ন রোগ হতে পারে। বিশেষ করে কলেরা, টাইফয়েড, ডায়ারিয়া এধরণের রোগ হতে পারে।
রেডিও তেহরান: ডা. রাহুল-আপনি মশার কামড়জনিত কিছু রোগ বিশেষ করে ডেঙ্গুর কথা বলেছিলেন যা এই বর্ষকালে মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়। তো ডেঙ্গু জ্বর এবং করণীয় সম্পর্কে বলুন।
ডা. রাহুল: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ডেঙ্গু জ্বর বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। বর্ষাকালে এডিস মশা অনেকগুণ বেড়ে যায়।তাদের প্রজনন ক্ষমতায় অনেকগুণ বেড়ে যায়। সাধারণ আমাদের বাসার আশপাশে খোলা যেসব পাত্র, ডাবের খোসা, ফুলের টব, পেপসি কোকের কিংবা অন্যকোনো বোতল বা পাত্র পড়ে থাকে। তাতে পানি জমে থাকলে সেখানে এডিস মশার প্রজনন বেশি হয়ে থাকে। ফলে এ বিষয়ে খুবই সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। এর পাশাপাশি এই মৌসুমে আমরা বাসায় মশারি ব্যবহার করব। যেখানে মশারি ব্যবহার করা যাবে না সেখানে আমরা মশার রিপ্যালেন্ট ব্যবহার করব।
রেডিও তেহরান: ডা. রাহুল-বর্ষাকাল। মানুষ বৃষ্টিতে ভেজে-ঠাণ্ডা লাগে, সেখানে জার্ম আসতে পারে। এসবে কি করা উচিত?
ডা. রাহুল: দেখুন, বর্ষাকালে বাইরে গেলে আমাদের পায়ে বৃষ্টির পানি লাগে। পোশাক ভিজে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বাইরে থেকে ঘরে ফিরে প্রথমেই আমরা হাত ধুয়ে ফেলব একইসাথে পা ধুয়ে ফেলব ভালো করে। আমরা সাধারণত দেখা হাত ধোয় নিয়ে ব্যস্ত থাকি কিন্তু আমাদের পায়ে অনেক জার্ম লেগে থাকতে পারে। ফলে পা এবং ভিজা কাপড় পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
রেডিও তেহরান: কুরবানি ঈদসহ লকডাউনে জনাসমাগম বেড়েছে-করোনাও উদ্বেগজনকহারে বাড়ছে- জনসমাগম নিয়ে আপনি কিছু বলবেন কি?
ডা. রাহুল: দেখুন, জনসমাগম পরিহার করা একান্ত প্রয়োজন। শুধুমাত্র করোনাভাইরাস নয়; অন্যান্য ভাইরাসজনিত রোগ কিন্তু জনসমাগমের ফলে হয়ে থাকে। একসাথে বহু লোক থাকলে একজনের কাছ থেকে অন্যের দেহে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফলে অবশ্যই আমাদেরকে জনসমাগম পরিহার করতে হবে। আমি আগেও বলেছি এখনও বলছি সবাইকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। বাইরে থকে ঘরে ফিরেই প্রথমে আমাদেরকে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে কিংবা স্যানিটাইজ করতে হবে। পাশপাশি টয়লেট ব্যবহারের আগে ও পরে অবশ্যই ভালো করে হাত ধুয়ে নেব। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার ফলে আমরা অনেক ইনফেকশাস রোগের হাত থেকে বাঁচতে পারব।
রেডিও তেহরান: ডা. রাহুল- আপনি আর কোনো পরামর্শ দেবেন কি?
ডা: রাহুল: যেসব কথা বললাম তার পাশাপশি আমাদেরকে ভালো ফলমূল, পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। একইসাথে ব্যয়াম করতে হবে। কারণ ব্যয়াম আমারেদ শ্বেত রক্তকণিকার পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। একইসাথে দেহ-মনের সুস্থতার জন্য বিনোদনের প্রয়োজনীয়তা কিন্তু কম নয়।
তো, ডা. আবু কামরান রাহুল বর্ষকালীন নানান রোগ এবং তার প্রতিকার প্রতিরোধ নিয়ে রেডিও তেহরানকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ডা: রাহুল: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
শ্রোতা/পাঠক! এতক্ষণ আপনারা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের ডা. আবু কামরান রাহুলের বর্ষকালীন রোগ এবং তার চিকিৎসা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা শুনলেন।
করোনার এই মহামারিকালে আপনারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখুন, মাস্ক পরুন এবং পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকুন। সেই সাথে নিয়মিত ব্যায়াম করুন ,পুষ্টিকর খাবার ও ফলমূল খাবেন। আপনাদের সবার রোগমুক্ত সুন্দর জীবন আমাদের কাম্য। তো এরই সাথে বিদায় নিচিছ স্বাস্থ্যকথার আজকের আসর থেকে। #
পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/২৭