আগস্ট ১৭, ২০২১ ১৮:০২ Asia/Dhaka

শোকাবহ মহররম উপলক্ষে কারবালার শাশ্বত বিপ্লব শীর্ষক ধারাবাহিক আলোচনার অষ্টম পর্ব থেকে সবাইকে জানাচ্ছি সংগ্রামী সালাম ও গভীর শোক আর সমবেদনা।

গত কয়েক পর্বে আমরা কারবালার শাশ্বত বিপ্লব সম্পর্কে কোনো কোনো মহলের নানা বিভ্রান্তি ও এসবের কারণ নিয়ে কথা বলেছি। গত পর্বে আমরা কুফার মুসলমানদের ব্যাপারে  কোনো কোনো মহলের বিভ্রান্তি নিয়ে কথা বলছিলাম।  কুফাবাসীদের মধ্যে আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলীর সমর্থকরা অন্য অঞ্চলের চেয়ে বেশি সংখ্যায় থাকায় তিনি তাঁর খেলাফতের রাজধানী করেছিলেন এই শহরকে।  মক্কা ও মদিনাকে যে কোনো যুদ্ধ ও সংঘাত থেকে দূরে রাখাও ছিল এর অন্যতম উদ্দেশ্য। কুফাবাসীদের মধ্যে হযরত আলীর সমর্থক ও মহানবীর আহলে বাইতপন্থীদের সংখ্যা অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে বেশি মাত্রায় থাকলেও তারা এই শহরে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল না। হযরত আলীর ও মহানবীর আহলে বাইতের এই সমর্থকদেরকে অনেকেই শিয়া মুসলমান বলে অভিহিত করে থাকেন। ইমাম হুসাইন (আ) খোদাদ্রোহী ইয়াজিদের দুঃশাসনের বিরোধিতা করায় এরই প্রেক্ষাপটে অথবা  উমাইয়াদের দুঃশাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় কুফার জনগণের এক উল্লেখযোগ্য অংশ ইমাম হুসাইনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিল যাতে তিনি ইয়াজিদি দুঃশাসন বিরোধী সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে প্রকৃত ইসলামী খেলাফত কায়েম করেন। 

 

এই যে যারা চিঠি পাঠিয়েছিলেন তারা সবাইই যে খুব খাঁটি শিয়া ছিলেন তা নয়। তাদের বেশিরভাগই ছিলেন হযরত আলীর ও মহানবীর আহলে বাইতের নামমাত্র সমর্থক বা রাজনৈতিক সমর্থক মাত্র প্রকৃত বা খাঁটি শিয়া নয়।  ইমাম হুসাইনের বিপ্লব সফল হয়ে তিনি যদি খেলাফত কায়েম করেন তাহলে রাজধানীতে ভালো চাকরি বা কোনো ভাল পদে আসীন হওয়া যাবে এটাই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। তাই শিয়ারাই ইমাম হুসাইনকে দাওয়াত দিয়ে কুফায় এনে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে -এমন বক্তব্য সবার ব্যাপারে ঢালাওভাবে বলা যায় না। দুই-একজন যদি এমন বিশ্বাসঘাতকতা করেও থাকেন তারা তো আর শিয়া থাকেননি। যেমন, বর্তমান যুগে সালমান রুশদি মুসলমান হয়েও ইসলাম বিরোধী অবস্থান নিয়ে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবার পরও আমরা তো তাকে আর মুসলমান বলতে পারি না। যারা শেষ পর্যন্ত ইমাম হুসাইনের সঙ্গে থেকে ইয়াজিদ বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন তাদের মধ্যে যারা নবী-পরিবারের বাইরের ব্যক্তি ছিলেন তারা বেশিরভাগই ছিলেন কুফাবাসী। কুফাবাসীদের মধ্যে যারা খাটি শিয়া ছিলেন তাদের কেউ কেউ কারবালায় ইমাম হুসাইনের সহযোগী হয়ে শহীদ হয়েছেন। আর কেউ কেউ  ইমামের প্রতিনিধি মুসলিম ইবনে আকিলকে সহযোগিতা করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন। আর কেউ কেউ কারবালায় ইমামের শিবিরে যোগ দিতে চেয়েও নানা বাধার কারণে সেখানে আসতে পারেননি ও কেউ কেউ একই ধরনের কারণে সময়মত পৌঁছাতে পারেননি ও কেউ কেউ কারফিউ আর গণগ্রেপ্তার এড়িয়ে অচেনা ও অপ্রচলিত পথে কারবালায় আসতে চেয়েও পথ হারিয়ে অন্যখানে চলে গেছেন। 
উল্লেখ্য মুখতারের মত বেশ কড়া আহলেবাইতপন্থী কেউ কেউ কারাগারে থাকার কারণে ইমামের সহযোগী হতে পারেননি। আবার দুর্বলমনা আহলেবাইতপন্থী অনেকেই প্রাণভয় ও নানা ধরনের নির্যাতনের আশঙ্কায় ইমামের শিবিরে যোগ না দিয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছেন। ইমাম হুসাইনের শাহাদাতের পর তাদের অনেকেই অনুতপ্ত হন এবং তারা কুফায় ইয়াজিদি প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে শহীদ হন। তাদের আন্দোলন ইতিহাসে তাওয়াবিন বা অনুতপ্তদের আন্দোলন হিসেবে খ্যাত। এই আন্দোলনে অংশ গ্রহণকারীদের সংখ্যা ছিল  প্রায় ছয় হাজার মাত্র। তাই এটা স্পষ্ট কুফার প্রায় দেড় লাখ জনগণের বেশিরভাগই শিয়া বা আহলে বাইতপন্থী ছিলেন না ও শিয়াদেরও অনেকেই খুব খাঁটি শিয়াও ছিলেন না বলে তাদের একটা অংশের দুর্বল ভূমিকার কারণে পরবর্তী যুগের সব শিয়াকে জড়িয়ে কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার জন্য কেবল তাদেরকে দায়ী করাটা খুবই অযৌক্তিক। এ সময় মক্কা ও মদিনার বা অন্যান্য অঞ্চলের মুসলমানরাও ইমাম হুসাইনকে সহযোগিতা করেননি। তাহলে কি বলা যায় না যে মূলত অশিয়া বা নন-শিয়া মুসলমানরাই মহানবীর নাতীর এমন মর্মান্তিক অবস্থার জন্য দায়ী? তারাও যদি কুফার অল্প সংখ্যক খাঁটি শিয়ার মত ইমামের সহযোগী হতেন তাহলে তো পরিস্থিতি পাল্টে যেত। 

উল্লেখ্য কারবালায় ইমাম হুসাইনের অন্যতম প্রধান সহযোগী মহানবীর ৭৫ বছর বয়স্ক বৃদ্ধ সাহাবি হাবিব মাজাহেরের প্রচেষ্টায় ৬ মহররম তাঁর গোত্র বনি আসাদের প্রায় ৯০ ব্যক্তি ইমাম হুসাইনের শিবিরে যোগ দেয়ার চেষ্টা চালাতে গিয়ে ইয়াজিদি বাহিনীর হামলার শিকার হয় এবং সংঘর্ষে তাদের কয়েকজন শহীদ হন ও অন্যরা পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।  বলা হয় বসরা থেকেও ইমাম শিবিরে যোগ দিতে আরও বেশি সংখ্যক অনুরাগী কারবালার দিকে রওনা হয়েছিলেন। কিন্তু তারা আশুরার পর কারবালায় পৌঁছেন। তাই এটা স্পষ্ট ইমাম হুসাইনকে সহযোগতিা করতে না পারার জন্য কেবল কোনো বিশেষ সম্প্রদায় দায়ী নয় বরং মুসলমানদের সব সম্প্রদায় ও গ্রুপই দায়ি। বরং সংখ্যায় অল্প সংখ্যক হলেও কুফার শিয়া জনগণই ইমাম হুসাইনকে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছে। 
এটা ঠিক যে হযরত ইমাম জাইনুল আবেদিন ও হযরত জাইনাবসহ নবী-পরিবারের অনেক সদস্য কুফাবাসীদের দুর্বল ভূমিকা ও কারও কারও বিশ্বাসঘাতকতামূলক আচরণের তীব্র নিন্দা জানিয়েছিলেন। এর কারণ হল কুফাবাসীদের মধ্যে আহলেবাইতপন্থীরা অন্যদের তুলনায় নবী-পরিবারের জন্য বেশি অগ্রণী হবেন এটাই ছিল নবী-পরিবারের স্বাভাবিক প্রত্যাশা। কিন্তু তারা ইমামকে বিপ্লবের দাওয়াত দিয়েও প্রত্যাশা অনুযায়ী এগিয়ে আসেননি বলেই তাদের ব্যাপারে বেশি অভিমান প্রকাশ করাই স্বাভাবিক। অন্যদিকে মুসলিম বিশ্বের অন্যত্র মুসলমানরা যেন পুরোপুরি ঘুমিয়েই ছিল। ইয়াজিদের স্বৈরশাসন ও খোদা-বিুমখ শাসনের মোকাবেলায় ইমাম হুসাইন -আ যখন প্রতিবাদে সোচ্চার হন তখনই তাদের উচিত ছিল ইমামের সহযোগী হওয়া। কিন্তু মক্কা ও মদিনার মত অঞ্চলের মুসলমানরাও যে সে যুগে অনেক অসচেতন হয়ে পড়েছিলেন তা কারবালার ঘটনায় তাদের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা থেকেই স্পষ্ট। কারবালার আশুরার ঘটনার পরই যেন তারা কিছুটা সতেচন হয়ে উঠতে থাকে। মক্কা ও মদিনার জনগণ যখন স্থানীয় নেতৃবৃন্দের কোনো কোনো নেতার নেতৃত্বে ইয়াজিদি শাসন মেনে নিতে অস্বীকার করে তখন সেখানে ইয়াজিদ বাহিনীর পক্ষ থেকে চালানো হয় গণহত্যা। মদিনায় নারীদের সম্ভ্রমহানিও করা হয়। ফলে এক হাজার নারী সেখানে গর্ভবতী হয় এবং এভাবে জন্ম-নেয়া সন্তানদের বলা হত হাররা যুদ্ধের সন্তান!
ঐতিহাসিক বর্ণনায় জানা যায় কারবালার মহা-ট্র্যাজেডির দুই বছরেরও কম সময় পর ৬৩ হিজরির ২৮ জ্বিলহজ্ব খোদাদ্রোহী ইয়াজিদের বাহিনী মদীনায় মসজিদে নববী ও রাসূল (সা.)’র রওজার অবমাননাসহ গণহত্যা এবং গণ-ধর্ষণের মত নানা মহাঅপরাধযজ্ঞে লিপ্ত হয়। ইয়াজিদের নর-পশু সেনারা পরে মক্কায়ও হামলা চালিয়ে পবিত্র কাবা ঘর ধ্বংস করেছিল।   
: নরপশু ইয়াজিদের নির্দেশে কুফায় নিযুক্ত তার গভর্নরের অনুগত সেনাদের হাতে বিশ্বনবী (সা.)’র প্রিয় দৌহিত্র হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) ও তাঁর পরিবার-পরিজনসহ প্রায় ১০০ জন সঙ্গীর বেশিরভাগেরই কারবালায় শাহাদত বরণ করার হৃদয়বিদারক এবং মহাবিয়োগান্তক ঘটনার খবর শুনে মদীনাবাসী ইয়াজিদের চরিত্র ও প্রকৃতি সম্পর্কে তদন্ত চালায়। তারা এ লক্ষ্যে দামেস্কে একটি তদন্ত-টিম পাঠায়। তদন্ত-টিম তাকে ইসলামী মূল্যবোধ-শূন্য ও একজন নৈতিক চরিত্রহীন ব্যক্তিত্ব হিসেবে দেখতে পায়। ইমাম হুসাইন (আ.) এবং তাঁর মহান বিপ্লব ও তাঁর সঙ্গী-সাথীদের সহযোগিতা করতে না পারার জন্য মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে গণ-অনুশোচনা ক্রমেই জোরদার হতে থাকে।
ইয়াজিদের খোদাবিমুখ ও অতি অসৎ প্রকৃতি সম্পর্কে জানার পর মদীনাবাসী তাদের শহর থেকে ইয়াজিদের নিযুক্ত গভর্নরকে বের করে দেয় এবং ইয়াজিদের অনৈসলামী শাসনকে বৈধ শাসন হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকার করে। ফলে মহাপাপিষ্ঠ ইয়াজিদ সিরিয়া থেকে কুখ্যাত মুসলিম বিন উকবার নেতৃত্বে ১০ হাজার সেনা পাঠায়। হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফও ছিল এই সেনাবাহিনীর এক সাধারণ সেনা। হাজ্জাজ পরবর্তীকালে উমাইয়া শাসক হয়েছিল এবং হাজার হাজার সাহাবীকে হত্যা করেছিল। উকবা মদীনার উত্তর-পূর্ব দিকে হাররা অঞ্চলে মদীনার প্রতিরোধকামীদের ওপর হামলা চালায়। অস্ত্রে সুসজ্জিত উমাইয়ারা বিপুল সংখ্যক মুজাহিদকে হত্যার পর শহরের ভেতরেও প্রতিরোধকামীদের ওপর নৃশংস হামলা চালিয়ে তাদের শহীদ করে। এমনকি যারা বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ(সা.)’র পবিত্র মসজিদে ও তাঁর পবিত্র মাজার বা রওজায় আশ্রয় নিয়েছিল তাদেরকেও নির্মমভাবে শহীদ করেছিল ইয়াজিদের পাষণ্ড সেনারা। বিশ্বনবী (সা.)’র বহু সাহাবীসহ ৭০০ জন গণ্যমান্য ব্যক্তিত্ব শহীদ হয় তাদের হামলায়। ইয়াজিদের সেনারা মদীনায় অন্তত ১০ হাজার মানুষকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করে। এরপর উকবার নির্দেশে তার নেতৃত্বাধীন ইয়াজিদের সেনারা তিন দিন ধরে মদীনা লুট-তরাজ করে এবং নারীদের সম্ভ্রমহানি করে। তারা মদিনার মসজিদে নববীকে ঘোড়ার আস্তাবল বানায় এবং ঘোড়ার মলমূত্রে অবমাননা করা হয় মুসলিম বিশ্বের পবিত্রতম এই স্থানের। এরপর এই অভিশপ্ত সেনাদল মক্কার দিকে যায় এবং এমনকি পবিত্র কাবা ঘরেও হামলা চালিয়ে তা ধ্বংস করেছিল।

অনেকের মনেই এ প্রশ্ন জাগে যে ৬৩ হিজরির মধ্যেই মুসলমানদের এত দুর্দশা কেন ঘটেছিল? 
কারবালায় ইমাম হুসাইন (আ.) ও তার মহান সঙ্গীরা যখন শাহাদত বরণ করেন তখন ইয়াজিদ খুশি হয়ে একটি কবিতা আবৃত্তি করেছিল যেখানে সে স্পষ্টভাবে এটা উল্লেখ করে যে " হুসাইনকে হত্যার মাধ্যমে আমরা উমাইয়ারা মুহাম্মাদকেই হত্যা করেছি এবং বদর, উহদ ও খন্দকের প্রতিশোধ নিয়েছি।" আসলে বনি উমাইয়াদের অনেকেই কেবল মুখে মুখে ইসলাম গ্রহণ করেছিল। বিভিন্ন জিহাদে, বিশেষ করে বদর, উহুদ ও খন্দকে আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ.)'র হাতে তৎকালীন কাফিরদের বড় বড় ব্যক্তিত্বরা নিহত হওয়ায় এবং তাদের অনেকেই বনি উমাইয়া গোত্রের লোক ছিল বলে সেই বংশীয় বা গোত্রীয় ক্ষোভ তাদের মধ্যে সুপ্ত ছিল। উমাইয়াদের অনেকেই বা বেশিরভাগই মক্কা বিজয়ের পর শক্তিহীন হয়ে পড়ায় প্রভাব-প্রতিপত্তি নিয়ে টিকে থাকার আশায় অনিচ্ছা সত্ত্বেও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল। তাদের জন্য এ ছাড়া অন্য কোনো উপায়ও ছিল না। আবু সুফিয়ানসহ অনেক উমাইয়া ব্যক্তিত্ব ইসলামের সঙ্গে শত্রুতায় সবচেয়ে অগ্রণী ছিল। তাই তারা ভেতর থেকেই ইসলামের ওপর আঘাত হানার দীর্ঘ মেয়াদী ষড়যন্ত্র করে যাতে এক সময় মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব তাদের হাতেই চলে আসে।
ইসলামী বর্ণনায় এসেছে, কোনো এক সময় মহানবী (সা.) স্বপ্নে দেখেন যে, বনী উমাইয়্যা তাঁর মিম্বরে বানরের মত নাচানাচি করছে। এ স্বপ্ন দেখে তিনি এমনই শোকাহত হলেন যে, এরপর যতদিন বেঁচে ছিলেন তিনি আর হাসেননি। রাসূল (সা.) স্বপ্নে তাঁর মিম্বরে বানরদের নাচানাচির যে ঘটনাটি দেখেছিলেন তার অর্থ ছিল উমাইয়াদের মাধ্যমে খেলাফত দখল করা হবে।
যাই হোক্, মুসলমানরা যদি ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইনের আন্দোলনের বার্তাগুলো সম্পর্কে সচেতন হত তাহলে কারবালার বিপ্লবের ও নবী-পরিবারের মহাকুরবানি হওয়ার দরকার হত না এবং মক্কা ও মদিনায়ও ইয়াজিদ বাহিনী হত্যাযজ্ঞ ও বর্বরতা দেখানোর সাহস পেত না। আর সিরিয়া অঞ্চল দীর্ঘকাল মুয়াবিয়ার শাসনাধীনে থাকায় ও সেখানে মুয়াবিয়ার দলবলদের পক্ষ থেকে নবী-পরিবার ও আহলে বাইত সম্পর্কে ব্যাপক নেতিবাচক প্রচারণার চলতে থাকায় সেখানকার বেশিরভাগ জনগণ হযরত আলী ও নবী পরিবারের প্রকৃত মর্যাদা তো জানতোই না বরং তাঁদেরকে বিচ্যুত মুসলমান বলে মনে করত। এর দৃষ্টান্ত হিসেবে বলা যায় যখন হযরত আলী কুফার মসজিদে ঘাতকের আঘাত পেয়ে দু-দিন পরে শহীদ হন তখন সিরিয়াবাসী এই ঘটনা শুনে মন্তব্য করেছিল: আলী মসজিদে কেনো গিয়েছিল? আলী কি নামাজও পড়ত নাকি? !!

৯ মহররম মহান তাসুয়া বা আশুরার পূর্ব দিন।

৬১ হিজরির নয়ই মহররম কুফায় ইয়াজিদের নিযুক্ত কুখ্যাত গভর্নর ইবনে জিয়াদ  ইমাম হুসাইন (আ.)’র ছোট্ট শিবিরের ওপর অবরোধ জোরদারের ও হামলার নির্দেশ দেয়। 
এর আগেই আরোপ করা হয়েছিল অমানবিক পানি-অবরোধ। পশু-পাখী ও অন্য সবার জন্য ফোরাতের পানি ব্যবহার বৈধ হলেও এ অবরোধের কারণে কেবল নবী-পরিবারের জন্য নিষিদ্ধ করা হয় এই নদীর পানি। ইয়াজিদ বাহিনীর সেনা সংখ্যাও ক্রমেই বাড়তে থাকে এবং দশই মহররমের দিনে তা প্রায় বিশ বা ত্রিশ হাজারে উন্নীত হয়।
ইমাম হুসাইন (আ.) নয়ই মহররমের বিকালের দিকে এক দিনের জন্য যুদ্ধ পিছিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দেন যাতে দশই মহররমের রাতটি শেষবারের মত ইবাদত বন্দেগিতে কাটানো যায়। ইয়াজিদ বাহিনীর প্রধান প্রথমে রাজি না হলেও পরে এ প্রস্তাবে রাজি হয়। বিকালেই হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) নিজ সঙ্গীদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দেন। সঙ্গীরা আবারও তাঁর প্রতি আনুগত্যের অঙ্গীকার করেন।
নয়ই মহররম ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার প্রস্তুতি অর্জনের সর্বশেষ দিন। এই পরীক্ষায় সফল হয়েছিলেন  ইমাম হুসাইন (আ.) ও তাঁর প্রায় ১০০ জন সহযোগী। আর এ জন্যই তাঁরা  ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করেছেন।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/আবুসাঈদ/১৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ