সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২১ ১৭:১৩ Asia/Dhaka

সভ্যতার লালনভূমি ইরানের বিচিত্র প্রকৃতি আর সমৃদ্ধ সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার এ আসরে আজ আমরা যাবো দক্ষিণ-পূর্ব ইরানের দিকে। এখানকার বড়ো একটি প্রদেশ হলো সিস্তান ও বেলুচিস্তান।

এই প্রদেশটির দৈর্ঘ্য এক লাখ একাশি হাজার পাঁচ শ' আটাত্তর বর্গকিলোমিটার। নাম থেকেই বোঝা যায় যে, প্রদেশটি দুটি ভাগে বিভক্ত। একটি সিস্তান এবং অপরটি বেলুচিস্তান। এই প্রদেশের আবহাওয়া বেশিরভাগই শুষ্ক এবং গরম। তো যেহেতু দুটি ভাগে বিভক্ত প্রদেশটি। সেহেতু প্রথমে আমরা সিস্তানে যাবো, তারপর বেলুচিস্তানে।

সিস্তানের আয়তন ৮১১৭ বর্গকিলোমিটারের মতো। এর পূর্ব প্রান্ত ইরানের পূর্ব সীমান্ত। এখানকার অভিন্ন পুরিয়ান নদী ইরান এবং আফগানিস্তানের সীমান্ত বেঁধে দিয়েছে। সিস্তানের উত্তর এবং পূর্বে আফগানিস্তান, দক্ষিণে প্রাদেশিক রাজধানী শহর যাহেদান, পশ্চিম এবং উত্তর-পশ্চিম দিকে লুত মরুভূমি এবং খোরাসান প্রদেশের বিরজান্দ শহর। সিস্তানের কেন্দ্রীয় শহর হলো যাবুল। তেহরান থেকে এর দূরত্ব ১৮২৩ কিলোমিটার।

আমরা সিস্তান ও বেলুচিস্তানে প্রদেশে এসেছি! ইরানের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রদেশ এটি।  ইরানের সবচেয়ে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের এই প্রদেশটির কেন্দ্রীয় শহর হলো জাহেদান। এই প্রদেশটির রয়েছে প্রাচীন ও সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্য। সিস্তান ও বেলুচিস্তানে এমন একটি ঐতিহাসিক ভূমি, যার  রয়েছে হাজার হাজার বছরের ইতিহাস। ইরানের ঐতিহাসিক ও পৌরাণিক গ্রন্থগুলোতে এই এলাকার অধিবাসীদের প্রসঙ্গ লক্ষ্য করা যায়।

সিস্তানের প্রাচীন ইতিহাস এবং রূপকথার বিচিত্র সম্ভারের দিক থেকে এটি ইরানের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। যুগে যুগে এই প্রদেশটি বিচিত্র ঘটনা-দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে। সিস্তানের ঘটনাবহুল ইতিহাস, মানব বসতি ,প্রাচীন গোত্র আর রূপকথা নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন কল্প আর গল্পকথা। এগুলোর কোনো কোনোটা বেশ সুখকর, কোনোটা আবার তিক্ত। সিস্তানের এইসব ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি দিলে সহজেই অনুমিত হবে যে, সিস্তানের অধিবাসীরা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবেলা যেমন করেছে, তেমনি বিদেশী শক্তির আক্রমণের মুখেও পড়েছে বারবার। তারপরও সিস্তানের অস্তিত্ব মুছে যায় নি ইতিহাসের পাতা থেকে। সিস্তানের অধিবাসীরা তাদের মেধা দিয়ে, শ্রম দিয়ে পুনরায় ফিরিয়ে এনেছে তাদের হারানো ঐতিহ্য ও গৌরব।

সিস্তানের অধিবাসীরা তাদের মেধা ও শ্রম দিয়ে তাদের হারানো ঐতিহ্য ও গৌরব পুনরায় ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কথা বলছিলাম। জেনে রাখা দরকার যে, সিস্তানের অধিবাসীদের মাঝে বিভিন্ন গোত্রের সমন্বয় ঘটেছে। এখানকার অধিবাসীদের খুব কম সংখ্যকই স্থানীয়, বেশিরভাগই অভিবাসী। বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন কারণে এরা সিস্তানে এসে আবাস গড়ে তুলেছে। সিস্তানে উর্বর কৃষিজমি রয়েছে প্রচুর। একসময় এই অঞ্চলকে বলা হতো এশিয়া ও ইরানের খাদ্যগুদাম। হাখামানেশী যুগে এ এলাকায় এতোবেশী শস্য উৎপাদিত হতো যে , বাদশাদের রাজস্বের বিরাট একটি উৎস ছিল সিস্তান।

কিন্তু দুঃখজনকভাবে ইরানী বাদশাদের অমনোযোগের কারণে এই উর্বর কৃষিজমিগুলো নষ্ট হয়ে যায়। অবশ্য ইসলামী বিপ্লব বিজয়ের পর কৃষিজমিগুলোর উন্নয়নে পুনরায় ব্যাপক প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। সিস্তানের কৃষিপণ্যের মধ্যে রয়েছে: গম, যব, দানাদার শস্যাদি, বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি ইত্যাদি। অবশ্য সিস্তানে পশুপালনেরও ব্যাপক প্রচলন ছিল। হা'মুন হ্রদের আশেপাশে পশুপালনের প্রচলন লক্ষণীয় ছিল , বিশেষ করে গরু চরাতে দেখা যেত এখানে। পশুপালনের ফলে সিস্তানে দুগ্ধজাত দ্রব্যাদিও প্রস্তুত হতো প্রচুর।

সিস্তান বিচিত্র হস্তশিল্প সামগ্রীর জন্যও বিখ্যাত। এখানে গালিচা বোনা হয়, মাদুর তৈরি হয়, গেলিম তৈরি হয়। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের সূচিশিল্পও এখানে তৈরি হয়। তবে সিস্তানের বেশিরভাগ গ্রামে হস্তশিল্প বলতে মাদুর তৈরিকেই বোঝানো হয়। মাদুর বিক্রি করার জন্যে যাবুল শহরের বাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। সিস্তানের হস্তশিল্প সামগ্রীর মধ্যে গালিচা বোনা অন্যতম। তুর্কেমেনী এবং বালুচি নক্সার অনুসরণে তৈরি এখানকার গালিচাগুলো বেশ জনপ্রিয়। নক্সা, ডিজাইন, রং এবং বুনন কৌশলের দিক থেকে সিস্তানের কার্পেট ও গালিচা সমগ্র ইরানের মধ্যে বেশ নামকরা।

এ তো গেল সিস্তানের হস্তশিল্প আর তার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। এবার এখানকার লোকজনের আচার-ব্যবহার আর কৃষ্টি-কালচারের সাথে খানিকটা পরিচিত হওয়া যাক। সিস্তানের লোকজন স্বভাবত ধর্মপরায়ণ, বেশ সদয় এবং সত্যনিষ্ঠ, মহৎ এবং সাহসী। এরা খুব সহজ-সরল এবং অনাড়ম্বর। বিশেষ করে অতিথি পরায়নতার জন্যে এদের খ্যাতি রয়েছে। ঘরে অতিথির প্রবেশকে এরা রহমত ও মঙ্গলের আধার বলে মনে করে। মুরব্বিদের প্রতি এদের সম্মান প্রদর্শন অতুলনীয়। বিশেষ করে বাবা-মাকে সিস্তানীরা অসম্ভব শ্রদ্ধা সম্মান করে। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ০৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ