সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২১ ১৭:৪৮ Asia/Dhaka

শিশুদের যা শেখানো হয় তা পাথরে খোদাই করা নক্সার মত চিরস্থায়ী ও দৃঢ় হয়। - এ সংক্রান্ত অনেক বর্ণনা আমরা জীবনে বার বার শুনেছি।

অন্য কথায় শিশুদের যা শেখানো হয় তা তার ব্যক্তিত্ব গঠনে দৃঢ় ভিত্তিমূলের মতই কাজ করে। সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়- এ কথাও এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য। শৈশবে যা শেখানো ও করানো সহজ বয়স হয়ে যাওয়ার পর তা বোঝানো ও মুখস্ত করানো অনেক সময়ই বেশ কঠিন বা অসম্ভব হয়ে পড়ে। আর এ কারণেই অনেকে বলে থাকেন: যার সাধারণ হুশ-জ্ঞান নয় বছরে হয় না তার নব্বুই বছর বয়সেও তা হয় না। আগাছা জাতীয় গাছ বা অপ্রয়োজনীয় গাছকে ফসলের ক্ষেত থেকে প্রথমেই উপড়ে ফেলতে হয়। আর তা না করা হলে ওই অপ্রয়োজনীয় গাছ এক সময় এমনই মজবুতভাবে মাটিতে গেঁথে বসে যে তা উপড়ে ফেলতে পরে বেশ কষ্ট হয়। শিশুদেরকেও যদি ছোটোবেলা থেকে সুশিক্ষা ও ভালো কিছু শেখানো না হয় তাহলে বড় হওয়ার পর তাদেরকে দিয়ে সেসব রপ্ত করানো বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। অন্য কথায় শৈশবেই যদি শিশুদের মধ্যে মন্দ প্রকৃতির নানা স্বভাব গড়ে ওঠে বেশি বয়সে সেসব স্বভাব দুর করাও পরে কঠিন হয়ে পড়ে। 
শিশুদেরকে শৈশবেই নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এ বিষয়ে অভিভাবকদের বিশেষ সতর্ক-দৃষ্টি ও পরিকল্পনা থাকা কেবল জরুরিই নয় অপরিহার্যও বটে। মুসলমান নবজাতক শিশুর কানে প্রথমেই শোনাতে হয় আযান ও নামাজের এক্বামাত। কোমলমতি শিশুদেরকে শৈশবেই দোয়া ও আযানের সঙ্গে অভ্যস্ত করা হলে ধর্মীয় শিক্ষা লাভের পথ তার জন্য সহজতর হয়। শিশু যখন ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে তখন তাকে খোদা, ধর্ম ও ধর্মীয় মূল্যবোধ সম্পর্কে কিছু কিছু ধারণা দিতে হবে।  আর এ জন্য প্রথমেই শিশুকে নামাজের মূল্যবোধে অভ্যস্ত করা উচিত। পবিত্র কুরআন নামাজ শেখানোর ওপর বেশ গুরুত্ব দিয়েছে। 
পবিত্র কুরআনের ২০তম সুরা তথা সুরা ত্বাহার ১৩২ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন: 

আপনি আপনার পরিবারের লোকদেরকে নামাযের আদেশ দিন এবং নিজেও এর ওপর অবিচল থাকুন। আমি আপনার কাছে কোন রিযিক চাই না। আমি আপনাকে রিযিক দেই এবং আল্লাহ ভীরুতার পরিণাম শুভ। 
পবিত্র কুরআনের ১৪ তম সুরা তথা সুরা ইব্রাহিমের ৪০ নম্বর আয়াতেও দেখা যায় মহান আল্লাহ'র কাছে প্রার্থনায় হযরত ইব্রাহিম (আ) বলছেন:  হে আমার পালনকর্তা, আমাকে নামায কায়েমকারী করুন এবং আমার সন্তানদের মধ্যে থেকেও। হে আমাদের পালনকর্তা, এবং কবুল করুন আমাদের দোয়া।
আসলে নামাজ হল সমস্ত কল্যাণের ফল্গুধারা। তাই নামাজ মানুষকে ভালো কাজের দিকে নিয়ে যায় এবং সেসব দিকে আকৃষ্ট করে মানুষকে। তাই বাবা-মা ও অভিভাবকদের উচিত সন্তানদেরকে নামাজের প্রতি আকৃষ্ট করতে সম্ভাব্য সব কিছুই করা। 
শিশুরা যখন থেকেই নামাজকে কিছুটা বোঝার মত অবস্থায় উপনীত হয় তখন থেকেই তাদেরকে নামাজ শেখাতে হবে। নামাজের মূল দিকগুলো অন্তত তখন থেকেই তাদেরকে শেখাতে হবে। শিশুদের এই পর্যায় শুরু হয় ৫ বছর বয়সে ও শেষ হয় সাত বছর বয়সে। তবে এই বয়সে শিশুদের জোর করে নামাজ পড়ানোর চেষ্টা করা উচিত নয়। তাদেরকে কেবল নামাজের সঙ্গে প্রাথমিক পরিচয় করিয়ে দেয়াটাই যথেষ্ট। ইমাম জাফর আস সাদিক্ব -আ বলেছেন: শিশুর বয়স যখন তিন বছর হবে তখন তাকে বলবে: সাত বার বল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ তথা আল্লাহ ছাড়া কোনো মা'বুদ বা উপাস্য নেই।  শিশুর বয়স যখন তিন বছর সাত মাস ও বিশ দিন হবে তখন তাকে বলবে: মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ তথা মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল বা প্রেরিতপুরুষ। শিশুর বয়স যখন চার বছর হবে তখন তাকে শেখাবে: সাত বার বল সাল্লাল্লাহু আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলি মুহাম্মাদ। এরপর তার বয়স যখন পুরোপুরি পাঁচ বছর হবে তখন তাকে প্রশ্ন করবেন: তোমার ডান হাত কোনটি ও বাম হাত কোন্‌টি? সে যদি সঠিক উত্তর দেয় তাহলে তাকে কিবলামুখি করে বলতে হবে: সিজদা দাও। এরপর তাকে ছেড়ে দিবেন যাতে সে ছয় বছর বয়সে উপনীত হয়।  যখন তার বয়স পরিপূর্ণভাবে ছয় হবে তখন তাকে রুকু ও সিজদা শেখাবেন এবং এভাবে সাত বছরের মধ্যে তাকে পরিপূর্ণ নামাজি করতে হবে। যখন সে পুরোপুরি সাত বছর বয়স্ক হবে তখন তাকে বলতে হবে: তোমার দুই হাত ও মুখ ধোও। এরপর তাকে বলতে হবে: নামাজ পড় এবং নয় বছর পর্যন্ত এভাবে বলে যেতে হবে। 

শিশুদের নামাজ শেখানোর আগে আমাদের এটা মনে রাখতে হবে যে নামাজ হচ্ছে ধর্মীয় ফরজ দায়িত্বগুলো পালনের মধ্যে  শীর্ষ পর্যায়ে। তাই নামাজকে অন্য সব কাজের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। যেসব বাবা মা নামাজ আদায়ে তেমন একটা সফল হন না ও নামাজকে প্রধান কাজগুলোর অন্যতম বলে বিবেচনা করেন না তারা সন্তানদের জন্যও নামাজকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দানকারী আদর্শ ব্যক্তি হতে ব্যর্থ হবেন। তাই সন্তানদেরকে সব কাজের বেলায় নামাজকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দানকারী বানাতে হলে বা এক্ষেত্রে উৎসাহী করতে হলে আগে এ বিষয়ে বাবা মাকেই বাস্তব দৃষ্টান্ত হতে হবে। 
শিশুদের কাছে তাদের বয়স ও পরিস্থিতির আলোকে তাদের বোধগম্য ভাষায় নামাজের গুরুত্ব তুলে ধরতে হবে। নামাজের অন্যতম উদ্দেশ্য যে মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এটা তাদেরকে বোঝাতে হবে। মহান আল্লাহ যে আমাদেরকে অনেক নেয়ামত দিয়েছেন এটাও তাদেরকে বলতে হবে কিছু কিছু দৃষ্টান্তসহ। মহান আল্লাহ যে দয়াময় স্রস্টা এটাও তাদের বোঝানোর চেষ্টা করতে হবে। মহান আল্লাহ যে সবচেয়ে জ্ঞানী ও সব কিছু জানেন, তিনি যে সর্বশক্তিমান ও পরম করুণাময় ও প্রতিপালক তাও বলতে হবে শিশুদের কাছে। 
নামাজ শেখানো সম্পর্কিত অনেক বই ও কম্পিউটারের প্রোগ্রাম এবং এমনকি কম্পিউটার গেমও ব্যবহার করা যেতে পারে। শিশুদের কখনও জোর করে নামাজি করার চেষ্টা করবেন না। বরং এমন কাজ করতে হবে যাতে সে নিজেই নামাজে আগ্রহী হয়। জোর করে কোনো কিছু করতে বাধ্য করা মানে সুযোগ পেলেই সে তা ত্যাগ করবে ও জোর করে কিছু করানোতে ব্যক্তিত্বেরও হানি হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে শিশুদের জোর করে কিছু শেখানো যেমন অকার্যকর তথা  
ধর্মীয় শিক্ষার ব্যাপারে মাত্রারিক্ত কড়াকড়ি যেমন ফলদায়ক নয় তেমনি তাদেরকে এ ব্যাপারে খুব ঢিলে অবস্থায় বা গুরুত্বহীন অবস্থায় থাকতে দেয়াও ফলদায়ক নয়।  #

পার্সটুডে/এমএএইচ/আবুসাঈদ/ ০৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ