বাংলাদেশের বাজারে হঠাৎ করে চালের দাম বৃদ্ধি: খাদ্য সচিব যা বললেন
(last modified Wed, 16 Feb 2022 14:13:47 GMT )
ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২২ ২০:১৩ Asia/Dhaka

বাংলাদেশের বাজারে হঠাৎ করে সব ধরনের চালের মূল্য কেজিপ্রতি চার থেকে পাঁচ টাকা করে বেড়েছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজারে চালের দাম বস্তাপ্রতি ২০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আর পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত থেকে চাল আমদানি বন্ধ থাকায় দেশীয় মিলাররা দাম বাড়িয়েছেন।

এখন ঢাকার বাজারে মোটা চালের দাম ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি। মাঝারি চালের দাম প্রতি কেজি ৫৫-৬০ টাকা। চিকন চালের দাম ৭০-৮০ টাকা। সুগন্ধি সরু চালের দাম ১০০ টাকার ওপরে।

এদিকে, পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে বেড়েছে ভোজ্য তেলের দাম। ভরা মৌসুমে শীতকালীন শাক-সব্জির মূল্য আকাশচুম্বি। গত দু’ সপ্তাহে ডাল, তেল ও চিনির দাম বেড়েছে ব্যাপকভাবে। বেড়েছে সাবান, টুথপেস্ট, প্রসাধনসহ সংসারে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের দাম। ডিজেলের দাম বাড়ানোর পর পরিবহন ভাড়া এক লাফে বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। সব মিলিয়ে সাধারণত নিম্ন আয়ের ভোক্তারা পড়েছেন চরম ফাঁপরে।

এ অবস্থায় প্রধান বিরোধী দল বিএনপি চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার দাবি জানিয়েছে। গত রাতে দলের স্থায়ী কমিটির সভায় এ মর্মে গৃহীত এক প্রস্তাব আজ সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

তবে, রমজানে চালের দাম বাড়বে না বলে নিশ্চয়তা দিয়েছেন খাদ্য সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম। আজ (বুধবার) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সচিব এমন আশ্বাস দেন।

এখন যেভাবে চালের দাম বাড়ছে তাতে আগামী রমজানকে সামনে রেখে দাম আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে- এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে সচিব বলেন, ‘রমজান উপলক্ষে আমি আপনাদের নিশ্চয়তা দিতে পারি, চালের দাম বাড়বে না। কারণ খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি মার্চ মাস থেকে শুরু হয়ে যাবে। মার্চ মাস থেকে ৫০ লাখ পরিবার ৩০ কেজি করে চাল পাবে। চালের দাম বাড়বে না ওই সময়।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যদি ওরকম অবস্থা দেখি তাহলে ওএমএস আরও বাড়াবো। খাদ্যের ব্যাপারে তো সরকারের কার্পণ্য নেই। খোলা বাজারে বিক্রিটা আরও বাড়াবো। যদি প্রয়োজন হয় ভোক্তার স্বার্থে সরকার চাল আমদানি করবে।’

খাদ্য সচিব জানান, ‘তবে আমরা এখনই আমদানিতে যাচ্ছি না এই কারণে যে, কে বা কারা যেন প্রমাণ করতে চাচ্ছে এত খাদ্য উদ্বৃত্ত বলা হচ্ছে, স্বয়ংসম্পূর্ণ বলা হচ্ছে, তারপরও তো আমদানি চলে। আমরা চাচ্ছি আমদানি না করে যদি স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারি, তাহলে আমরা এটা এস্টাবলিস্ট করতে পারবো, আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ।’

নাজমানারা খানুম আশ্বস্ত করে বলেন, দেশে ২০ লাখ টনের বেশি খাদ্যশস্য মজুত আছে। কোনো দৈব-দুর্বিপাক না হলে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় বোরো চাল বাজারে চলে আসবে। ফলে সঙ্কট হওয়ার আশঙ্কা নেই।’

বাংলাদেশের প্রধান খাদ্য চালের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি উপজেলা পর্যায়ে ওএমএস চালু হয়েছে। ১ হাজার ৭৬০ জন ডিলারের মাধ্যমে খোলা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে চাল ও আটা। এর আগে থেকেই ঢাকা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে সরকারি চাল ও আটা। ওএমএসের মাধ্যমে বিক্রি করা চালের দাম ৩০ টাকা কেজি এবং আটার কেজি ১৮ টাকা। ওএমএস যাতে সঠিকভাবে পরিচালিত হয়, সেজন্য খাদ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও অনুরূপ মনিটরিং টিম গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সরকার দাবি করছে, এখন চালের মজুত সর্বকালের সর্ববৃহৎ। সরকারি গুদামে সংরক্ষিত চালের পরিমাণ প্রায় ১৬ লাখ মেট্রিক টন। সেই সঙ্গে গম আছে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিক টন। ধান আছে ৩৮ হাজার মেট্রিক টন। সব মিলে প্রায় ২০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্যের মজুত রয়েছে। তাছাড়াও আমন ধান কাটা কেবলই শেষ হয়েছে। বাজারে আমন ধানের চাল আসতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে চাল আমদানি করা হয়েছে প্রায় পৌনে ৯ লাখ টন। গমও আমদানি করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ২০ লাখ টন। তার পরও বাজারে চাল ও আটার দাম বাড়ছে। এর উপযুক্ত ব্যাখ্যা অনুসন্ধান করা প্রয়োজন।

সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ পরিবেশিত তথ্য অনুসারে ২০২০-২১ সালে মোট চাল উৎপাদিত হয়েছে ৩৮৬ লাখ টন। এর আগের বছর উৎপাদিত হয়েছিল ৩৬৬ লাখ টন। এবার আমন ধানের উৎপাদন ভালো হয়েছে। ন্যূনতম পক্ষে ১ কোটি ৫০ লাখ টন চাল যুক্ত হয়েছে আমন ধান থেকে। তাতে বাজারে চালের সরবরাহ কম আছে বলে ধরে নেওয়ার কোনো কারণ নেই। তার পরও বাড়ছে চালের দাম।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বিভাগের হিসাব অনুসারে মাথাপিছু ১৫২ কেজি চালের প্রয়োজনীয়তা ধরে নিয়ে আমাদের বার্ষিক চালের চাহিদা নিরূপণ করা যায়। বর্তমানে দেশে ১৭ কোটি মানুষ আছে। মাথাপিছু দৈনিক আধা কেজি বা বার্ষিক জনপ্রতি ১৮২.৫০ কেজি হিসেবে চালের চাহিদা দাঁড়ায় ৩ কোটি ১০ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন। বীজ, অপচয় ও পশুখাদ্য হিসেবে আরো ১৫ শতাংশ যোগ করা হলে মোট চাহিদা দাঁড়ায় ৩ কোটি ৫৬ লাখ ৭৮ হাজার মেট্রিক টন। এ পরিমাণ চাল আমরা প্রতি বছরই উৎপাদন করছি। এর পরও বাজারে আসছে আমদানিকৃত চাল ও গম। তার পরও মূল্য বৃদ্ধির রহস্য খুঁজে বের করা দরকার।#

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/১৬

 

ট্যাগ