বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে ২৮ মার্চ অর্ধদিবস হরতাল
(last modified Fri, 11 Mar 2022 09:55:09 GMT )
মার্চ ১১, ২০২২ ১৫:৫৫ Asia/Dhaka
  • বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে ২৮ মার্চ অর্ধদিবস হরতাল

বাংলাদেশে ভোজ্য তেল, পিয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে এবং গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির মূল্য বৃদ্ধির অপতৎপরতা বন্ধের দাবিতে আগামী ২৮ মার্চ সারাদেশে অর্ধদিবস হরতালের ঘোষণা দিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। ওইদিন সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত হরতাল কর্মসূচি পালিত হবে।

আজ (শুক্রবার) সকালে পুরানা পল্টনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কার্যালয় মুক্তিভবনের এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন  জোটের সমন্বয়ক সাইফুল হক। এ সময় জোটের সাবেক সমন্বয়ক বজলুর রশিদ, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক বাজারে মুল্য বৃদ্ধির অজুহাতে এবং ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে গত ৭ ফেব্রুয়ারি দেশের বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৭ টাকা বাড়িয়ে ১৪৩ টাকা এবং বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৮ টাকা বাড়িয়ে ১৬৮ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। 

সর্বশেষ গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আবারও আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার দোহাই দিয়ে সয়াবিনের দাম আরও বাড়াতে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনে চিঠি দেন ব্যবসায়ীরা। চিঠিতে বলা হয়, ১ মার্চ থেকে নতুন দামে তেল বিক্রি করতে চান তারা। এ প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানান, রমজানের আগে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হবে না। এরপর থেকেই অস্থির হতে শুরু করে বাজার। সরকারি সংস্থা ট্রেড করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব অনুযায়ী, মাসের ব্যবধানে এক লিটার বোতলের দাম প্রায় ৫ শতাংশ ও পাঁচ লিটারের বোতলের দাম সাড়ে ৬ শতাংশ বেড়েছে। বছরের ব্যবধানে যা যথাক্রমে প্রায় ২৯ শতাংশ এবং প্রায় ৩৪ শতাংশ।

এদিকে, বাজার পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক প্রত্যাহার করার কথা ঘোষণা করেছে।   মূলত রমজান মাসে যেসব পণ্য বেশি প্রয়োজন, সেসব পণ্যের শুল্ক প্রত্যাহার হয়েছে।

শুল্ক প্রত্যাহার সংক্রান্ত সরকারি এ সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেছেন, ভোজ্যতেলের বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু এতে ব্যবসায়ীরা সুবিধা পেলেও ভোক্তারা খুব একটা সুবিধা পাবেন না। কারণ ভোজ্যতেল বিক্রি হবে সর্বশেষ নির্ধারিত দাম অনুযায়ী। ভ্যাট প্রত্যাহারের পর নতুন করে দাম হয়তো বাড়বে না, কিন্তু যে দাম রয়েছে, সেটাও তো ভোক্তার নাগালের বাইরে। আন্তর্জাতিক বাজারে যে দাম রয়েছে, তাতে বর্তমান নির্ধারিত দামে সয়াবিন তেল বিক্রি করলে ব্যবসায়ীদের লোকসান হওয়ার কথা না। সুতরাং ভ্যাট প্রত্যাহারে ব্যবসায়ীদের সুবিধা হবে, ভোক্তারা খুব একটা সুফল পাবে না হয়তো।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান শুল্ক প্রত্যাহার সংক্রান্ত সরকারি সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক উল্লেখ করে বলেছেন, ভোক্তারা যাতে ভ্যাট প্রত্যাহারের সুবিধাটা পান, তা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ সাধারণত আমরা দেখতে পাই, শুল্ক প্রত্যাহার হলে ব্যবসায়ীরাই তার সুবিধা ভোগ করেন, ভোক্তারা সুফল পান না। তাই সরবরাহ ও বিপণনে নজরদারি থাকতে হবে। মূল্য সমন্বয়টাও যৌক্তিক কিনা সেটা খতিয়ে দেখতে হবে। তদারকি না থাকলে ভোক্তারা বঞ্চিত হবেন।

ক্যাবের মহাসচিব হুমায়ুন কবির ভুইয়া বলেছেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর যে অভিযান পরিচালনা করছে, তা অব্যাহত রাখতে হবে। অভিযান আরও বেগবান করতে হবে। এতে ভোক্তারা কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন। কেবল অভিযান চালালেই হবে না, দোষীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। কারণ স্বল্প আয়ের মানুষকে রক্ষাই এখন সরকারের দায়িত্ব।#

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/১১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।