বাংলাদেশে পাহাড়ে শুরু হলো বৈসাবি উৎসব
(last modified Tue, 12 Apr 2022 14:55:32 GMT )
এপ্রিল ১২, ২০২২ ২০:৫৫ Asia/Dhaka
  • বাংলাদেশে পাহাড়ে শুরু হলো বৈসাবি উৎসব

বাংলাদেশে পার্বত্য চট্রগ্রামের বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর সবচেয়ে বড় সামাজিক অনুষ্ঠান বৈসাবি উদযাপন উপলক্ষে আজ সকালে রাঙামাটিতে কাপ্তাই হ্রদের জলে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে উৎসবে মেতেছে পাহাড়ী তরুণ তরুণীরা ।

চৈত্রসংক্রান্তি ও নববর্ষ বরণের এই উৎসবকে চাকমা জনগোষ্ঠী বিজু, মারমা জনগোষ্ঠী সাংগ্রাই, ত্রিপুরারা বৈসু, তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু ও ম্রো জনগোষ্ঠী চাংক্রান নামে উদ্‌যাপন করে থাকে।

করোনার কারণে গত দু’বছর উৎসব আযোজন সীমিত ছিল। আজ মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ফুলবিজু উপলক্ষে রাঙ্গামাটি  শহরের রাজবাড়ীঘাট, পলওয়েল পার্ক, কেরানী পাহাড়সহ বিভিন্ন স্থানে প্রশাসন, সাংগঠনিক ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে পানিতে ফুল ভাসানো হয়।

প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী উৎসবের প্রথম দিনে চাকমা, ত্রিপুরা ও মারমারা বন থেকে ফুল আর নিমপাতা সংগ্রহ করে এবং পবিত্র এই ফুল ভাসিয়ে দেয় পানিতে, তাই একে বলা হয় ফুল বিজু। পানিতে ফুল ভাসিয়ে বিশ্ব মহামারি থেকে মুক্তির জন্য গঙ্গাদেবীর কাছে প্রার্থনা করেন। পাশাপাশি ফুল ভাসিয়ে পুরোনো বছরের দুঃখ-বেদনাই যেন ভাসিয়ে দিয়ে নতুন দিনের সম্ভাবনার আলো জ্বালায় পাহাড়ের মানুষ।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাড়িতে যেতে না পারা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে ঢাকা বিস্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের পুকুরে ফুল ভাসিয়ে বিজু-সংগ্রাই-বৈসু-বিষু-চাংক্রান উৎসব পালন করে। উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান।

এরপর জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষের নেতৃত্বে হল থেকে বিজু-সংগ্রাই-বৈসু-বিষু-চাংক্রান ২০২২ উপলক্ষে শোভাযাত্রা বের করা হয়। এ সময় মাইকে বাজছিল বিজুর গান ‘তুরু তুরু তুরু তুরু’। শোভাযাত্রাটি টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে দিবসটি উপলক্ষে সমাবেশ হয়। সমাবেশে মূল বক্তব্য পাঠ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের ছাত্রী হেমা চাকমা।

এতে ছয় দফা দাবি জানানো হয়। এগুলো হলো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি নিশ্চিত করা; সংবিধান অনুযায়ী বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া; পয়লা বৈশাখের মতো বিজু-সাংগ্রাই-বৈসু-বিষ্ণু-চাংক্রান উৎসবের সময়ও সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অন্তত তিন দিন সরকারিভাবে ছুটি ঘোষণা করা; সব ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে পাহাড়ের আদিবাসীদের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংসদ এর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া; এবং আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে আদিবাসীদের ভাষা নিয়ে গবেষণা ও ভাষাশিক্ষা কোর্স চালু করা।

এদিকে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম ইসলাম আলমগীর আজ মঙ্গলবার পার্বত্য চট্রগ্রামের বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসাবি উপলক্ষে এক বাণীতে এদেশের সকল নৃ-গোষ্ঠীর সমান অগ্রগতি ও বিকাশ কামনা করেছেন।

বাংলাদেশের পাহাড়ি নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব বিজু, সাংগাই, বৈসুক, বিষু ও বিহু উপলক্ষে সব সম্প্রদায়ের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়ে ফখরুল বলেন, এটি তাদের প্রধান সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোর একটি। আমাদের জাতীয় সত্ত্বার অবিচ্ছেদ্য অংশ পার্বত্য বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা, সংস্কৃতি ও ইতিহাস। পার্বত্য বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠী জনগণের ঐতিহ্য আমাদের দৈশিক চেতনার অন্যতম স্তর। আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির সমন্বিত রুপের অংশ পাহাড়ি নৃ-গোষ্ঠীর ঐশ্বর্যমণ্ডিত সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য।#

পার্সটুডে/আব্দুর রহমান খান/ বাবুল আখতার/১২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।