ডি-৮ দেশগুলোর শক্তিশালী অর্থনৈতিক ব্লক গড়ে তুলতে শেখ হাসিনার গুরুত্বারোপ
https://parstoday.ir/bn/news/bangladesh-i111098-ডি_৮_দেশগুলোর_শক্তিশালী_অর্থনৈতিক_ব্লক_গড়ে_তুলতে_শেখ_হাসিনার_গুরুত্বারোপ
আটটি উন্নয়নশীল মুসলিম রাষ্ট্রের সংগঠন ডি-৮-এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ২০তম অধিবেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সদস্য দেশগুলোর সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক ব্লকে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
(last modified 2025-10-12T12:48:31+00:00 )
জুলাই ২৭, ২০২২ ১৬:৩৬ Asia/Dhaka

আটটি উন্নয়নশীল মুসলিম রাষ্ট্রের সংগঠন ডি-৮-এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ২০তম অধিবেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সদস্য দেশগুলোর সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক ব্লকে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

সংগঠনটির সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আজ (বুধবার) সকালে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি সংঘাত, খাদ্য ও জ্বালানি সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিশ্ব কঠিন সময় অতিক্রম করছে। আমরা সবাই কোভিড-১৯ মহামারিতে যে সময় বিপর্যস্ত ছিলাম, সে সময় রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত বিশ্বকে নতুন করে বিপদে ঠেলে দিয়েছে। সংঘাত এবং পরবর্তী নিষেধাজ্ঞা এবং পাল্টা নিষেধাজ্ঞা খাদ্য, সার, শক্তি ও বিদ্যুৎ এবং অন্যান্য পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যাহত করেছে। বাংলাদেশের মতো দেশগুলো যুদ্ধের প্রভাব সবচেয়ে বেশি বহন করছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম অধিকাংশ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। আমাদের সকলের উচিত সাহসের সাথে এই মানবিক সংকট মোকাবেলায় এগিয়ে আসা।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ আমাদের উদার, বন্ধুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ নীতি এবং বিদেশী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে বিনিয়োগ আকর্ষণ করছে। বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ২০১০ সালে ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে গত অর্থবছরে ৫২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের ৪১তম বৃহত্তম অর্থনীতি, ২০৩৫ সালের মধ্যে ২৫তম অর্থনৈতিক দেশে পরিণত হবে।

শক্তিশালী বহুপাক্ষিক সহযোগিতার এবং বৈশ্বিক সংহতি এই লক্ষে আগের চেয়ে আরও বেশি মনোযোগের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী একটি পাঁচ দফা প্রস্তাবও রেখেছেন যাতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) প্রয়োগ করা অন্তর্ভুক্ত ছিল। এর মাধ্যমে ব্যবসায়িক সম্ভাবনার সর্বোচ্চ ব্যবহার এবং পরবর্তী দশকে ১২৯ বিলিয়ন ডলার থেকে আন্তঃ ডি-৮ বাণিজ্য দ্বিগুণ করার সুযোগ রয়েছে।

সরকার প্রধান বলেন, ডি-৮ অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া এবং তুরস্কের মত দেশগুলো অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করছে শুনে তিনি আনন্দিত।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের অধিবেশনের ফাঁকে দ্বিতীয় ডি-৮ সিসিআই সাধারণ অধিবেশনে এবং বিজনেস এক্সপোতে বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্রের চেম্বারের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তারা অংশগ্রহণ করায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ  হাসিনা ।

১৯৯৭ সালের ১৫ জুন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের ইস্তাম্বুল ঘোষণার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ডেভেলপিং-৮ বা ডি-৮ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা করা হয়েছিল।

এর সদস্য দেশগুলো হলো- বাংলাদেশ, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান এবং তুরস্ক। সদস্য দেশগুলোর অর্থনীতির মোট আকার ৫ ট্রিলিয়ন ডলার।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এবারের সম্মেলনে নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ানোর উদ্দেশে শুল্ক এবং অশুল্ক বাধা অপসারণের জন্য এবারই অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) সই হতে পারে।

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আমাদের শিক্ষা দিচ্ছে পারস্পরিক শক্তি বাড়ানোর। সেটা একই সঙ্গে ব্যবসা এবং সম্পর্ক উন্নয়নের। আগামী ১০ বছরে আরও ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি আন্তঃবাণিজ্য বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে ডি-৮ সদস্য দেশগুলোর।

উল্লেখ্য, ডি-এইট সম্মেলনে সাতটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের আমন্ত্রণ জানালেও সদস্য দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা নিজেরা না এসে প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন।

সম্মেলনে যোগ দিতে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির-আবদুল্লাহিয়ান এবং পাকিস্তানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিনা রব্বানী খার মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) ঢাকায় আসার কথা ছিল। কিন্তু শেষ সময়ে তারা সফর বাতিল করেন। তবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সফর বাতিল করলেও একটি ভিডিও বার্তা পাঠিয়েছেন বলে সম্মেলন সূত্রে জানানো হয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ডি-এইট পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে অংশ নিতে ইসলামাবাদ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিনা রব্বানি খারকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তার সফর বাতিল করেছে তারা। শুধু তাই নয়, প্রতিনিধি হিসেবে দেশটির পররাষ্ট্রসচিবকেও ঢাকায় পাঠায়নি ইসলামাবাদ।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, কয়েকদিন আগে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার সঙ্গে পাকিস্তানের পতাকাজুড়ে দিয়ে ঢাকার পাকিস্তান হাইকমিশন ফেসবুকে যে ছবি প্রকাশ করেছিল, সে বিষয়ে ঢাকায় যে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে; তাতে ‘বিব্রতকর পরিস্থিতি’ এড়াতে হয়তো হিনার ঢাকা সফর বাতিল করেছে ইসলামাবাদ।#

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/২৭