আজ আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস
মাসে গড়ে ৪৫ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দেবার পরামর্শ
আজ বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। আত্মহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ে তরুণদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজে নিয়োজিত বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশন এ দিবসটিকে কেন্দ্র করে আত্মহত্যার উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
‘বেড়েই চলেছে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার, আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়া কতটা জরুরি’- শীর্ষক এ প্রতিবেদনটি গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ করা হয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য পর্যালোচনা করে আঁচল ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, এ বছর জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে গড়ে ৪৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এর মধ্যে ৫৩ শতাংশই স্কুলের শিক্ষার্থী। এসব আত্মহননকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৭৯ শতাংশের বয়স ১৩ থেকে ২০ বছর।
প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়েছে, দেশে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৪৫ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করছেন। এরমধ্যে প্রেমঘটিত কারণে আত্মহত্যার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা বেশি আত্মহত্যা করছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার কারণের মধ্যে রয়েছে, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া, পড়াশোনার চাপ, সেশনজট, পরিবার থেকে আবদার পূরণ না হওয়া, পারিবারিক কলহ, ধর্ষণ বা যৌন হয়রানি, চুরি বা মিথ্যা অপবাদ, বিয়েতে প্রত্যাখ্যাত, স্বামী পছন্দ না হওয়া- ইত্যাদি। এ ছাড়া মানসিক ভারসাম্যহীনতা, বিষণ্নতা, প্রিয় বন্ধুর মৃত্যু এবং আর্থিক সমস্যার বিষয়গুলো আত্মহত্যা করার কারণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, করোনাকালে ২০২০ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত ১৩ মাসে গণমাধ্যমে ১৫১ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার খবর প্রকাশ হয়েছিল। এ বছরের আট মাসে তা দ্বিগুণের বেশি। অনেক আত্মহত্যার খবর পরিবারগুলো চেপে যায় বলে অনেক খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হয় না। সংবাদ সম্মেলনে তরুণ প্রজন্মকে যেকোনো পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য মানসিকভাবে তৈরি করা এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে অভিভাবক, শিক্ষকসহ সবাইকে যত্নশীল হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
এ প্রসঙ্গে আঁচল ফাউন্ডেশনের উদ্যোক্তা জয়শ্রী জামান রেডিও তেহরানকে বলেন, এতো বেশী সংখক তরুণ বা শিক্ষার্তী যেখানে আত্মহত্যা করছেন তখন এটাকে শুধু ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে না দেখে দেশের জনগণের স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে গুরুত্ব দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের একটা বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হবে।
কেন এত আত্মহত্যা
আঁচল ফাউন্ডেশনের সংবাদ সম্মেলনে যোগ দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, সমাজে, পরিবারে ও শিক্ষাব্যবস্থায় এমন উপাদান রয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা থেকে বিরত রাখতে পারছে না। শিক্ষাব্যবস্থা পাস–ফেলনির্ভর। যে শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হচ্ছে তার দিকে পরিবার, সমাজ আঙুল তুলে বলছে ‘তুমি শেষ, তুমি ব্যর্থ’। শিক্ষার্থীদের মানসিক সুস্বাস্থ্যের জন্য সুস্থ বিনোদনব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। সেটা নেই। খেলাধুলার জন্য পর্যাপ্ত মাঠ নেই। একধরনের সাংস্কৃতিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে।
কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী আরও বলেন, শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শেখাতে হবে কীভাবে মানসিক দক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে কীভাবে নিজের ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকতে থাকবে। যেকোনো মানসিক অবসাদে লোকলজ্জার ভয় এড়িয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে হবে।
শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য
ওদিকে, শিক্ষারথীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন প্রসঙ্গে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেছেন, ‘আমাদের দেশে দেহের মৃত্যুর ঘটনা নিবন্ধিত করে রাখা হলেও আত্মার মৃত্যুর ক্ষেত্রে হয় না। অথচ একজন মানুষ তথা একটি জাতির সাফল্যে বড় ভূমিকা পালন করে এই ‘মানসিক প্রশান্তি’ (আত্মার প্রশান্তি)।
দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গতকাল (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এবং বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের তত্ত্বাবধানে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে অনুষ্ঠিত ওই মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। সভায় অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের করোনা-পরবর্তী মানসিক স্বাস্থ্যসহ নানা বিষয় উঠে আসে।
মতবিনিময় সভার শুরুতে শিক্ষার্থীরা আলোচনায় অংশ নিতে কিঞ্চিৎ ইতস্ততবোধ করলেও পরে তাঁরা যথেষ্ট সাবলীলভাবেই নিজেদের দৈনন্দিন জীবনের সমস্যাগুলো তুলে ধরেন। সমস্যাগুলোর অধিকাংশ ছিল বিষণ্নতা, অতিরিক্ত চিন্তা বা অতীতের ভুল মনে করে অপরাধবোধে ভোগা, পারিবারিক ও সামাজিক বিষয়ে হতাশা ইত্যাদি।
শিক্ষার্থীদের করোনা-পরবর্তী সময়ে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ও এ বিষয়ে যত্নবান হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তাদের সমস্যার কথা শুনে সেসবের ছোট ছোট সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করেন বিশেষজ্ঞ অতিথিবৃন্দ। শিক্ষার্থীরা যেন তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব দেয় ও মানসিকভাবে ভারমুক্ত থাকে, সে বিষয়ে তাদের উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়। মা-বাবার সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা ও শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করার বিষয়েও পরমর্শ দেওয়।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/১০
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।