রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফেরত পাঠাতে না পারলে দেশ অনিরাপদ হয়ে উঠবে: শেখ হাসিনা
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা শান্তি ও জনগণের ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করি। রোহিঙ্গারা অর্থনৈতিক, সামাজিক, নিরাপত্তাসহ সব ধরনের ঝুঁকি তৈরি করেছে। তাদের দ্রুত মিয়ানমারে ফেরত না পাঠাতে পারলে বাংলাদেশ অনিরাপদ হয়ে উঠবে।’
আজ (সোমবার) চার দিনব্যাপী ৪৬তম ইন্দো প্যাসিফিক আর্মিস ম্যানেজমেন্ট সেমিনার (আইপিএএমএস) ২০২২ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। আজ সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এই সেমিনারের উদ্বোধন করেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং ইউএস আর্মি প্যাসিফিকের যৌথ আয়োজনে রাজধানীর রেডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনে অনুষ্ঠিত সেমিনারের বিষয়বস্তু হলো ‘ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরে শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ’।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তিরক্ষা আমাদের সাংবিধানিক অঙ্গীকার। তাই আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। মিয়ানমারকে অনুরোধ করছি তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে।
শেখ হাসিনা বলেন, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়, বাংলাদেশ এই নীতিতে বিশ্বাস করে। বর্তমান বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং ইস্যু। বাংলাদেশ বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেই কাজ করতে চায় বলে জানান তিনি।

এর আগে গতকাল সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেছেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও মিয়ানমারের সীমান্ত বাহিনী বিদ্যমান ব্যবস্থায় ‘সংলাপ ও আলোচনার’ মাধ্যমে সীমান্তে উত্তেজন এড়াতে চায় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ সংলগ্ন মিয়ানমার সীমান্তে গোলাগুলি প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘মূলত, এটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরে দেশটির বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে একটি পদক্ষেপ। হয়তো অনিচ্ছাকৃতভাবে বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। তারা বিষয়টি স্বীকার করেছে।’
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটলেও বিজিবি সতর্ক রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ভেতরে গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। এ কারণে স্থানীয়রা আতঙ্কিত হতে পারে। আমাদের নজরদারি রয়েছে। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সীমান্তে যাতে কোনো উত্তেজনা সৃষ্টি না হয় সেজন্য চেষ্টা চলছে। আমরা অত্যন্ত সতর্ক রয়েছি। বিজিবি বাংলাদেশের ভেতরে কাউকে প্রবেশ করতে দেবে না।’
এর আগে, বাংলাদেশের ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে মর্টার শেল নিক্ষেপ, সীমান্তবর্তী এলাকায় মিয়ানমার থেকে নির্বিচারে বিমান হামলা ও গুলি চালানো এবং আকাশসীমা লঙ্ঘনের বিষয়ে বাংলাদেশ গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৩ সেপ্টেম্বর নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ধুমধুম ইউনিয়নের রেজু আমতলি বিজিবি বিওপি ৪০ ও ৪১ নম্বর পিলারের কাছে মিয়ানমারের দুটি হেলিকপ্টার ও দুটি বিমানকে দেখা যায়। ওই ঘটনায় বাংলাদেশে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিয়াও মোকে মিয়ানমার উইংয়ের মহাপরিচালকের সাথে দেখা করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়।
বৈঠকে রাষ্ট্রদূতকে বলা হয়, এ ধরনের কর্মকাণ্ড শান্তিকামী জনগণের নিরাপত্তা জন্য মারাত্মক হুমকি, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সীমান্ত চুক্তি লঙ্ঘন এবং প্রতিবেশী সুসম্পর্কের পরিপন্থী। রাখাইন থেকে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের বাসিন্দাদের কোনো অনুপ্রবেশ যাতে না ঘটে তা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রদূতকে আহ্বান জানানো হয়।
বাংলাদেশ থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের টেকসই ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের জন্য রাখাইনে তাদের উৎপত্তিস্থলে একটি নিরাপদ ও অনুকূল পরিবেশ অপরিহার্য বলেও বৈঠকে জোর দেয়া হয়।
গত আগস্ট মাসে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে দুটি মর্টারশেল নিক্ষেপের ঘটনায় মিয়ানমারকে দু’বার কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছিল। ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশ দূতাবাসও বিষয়টি গুরুত্বের সাথে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে উত্থাপন করেছে।

রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যা মামলায় আদালতে চার্জ গঠন
এদিকে, রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যা মামলায় ২৯ জন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জ গঠন করা হয়েছে। রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে এই চার্জ গঠন হয়। চার্জ গঠনকালে মামলার ২৯ আসামির মধ্যে আদালতে উপস্থিত ছিলেন ১৫ জন। বাকিরা পলাতক।
এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফরিদুল আলম জানিয়েছেন, পরবর্তী বিচারকার্যের জন্য আদালত শিগগিরিই সময় নির্ধারণ করবে। মামলার প্রক্রিয়া অনুযায়ী সাক্ষীদের সমন জারি করা হবে, যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে সাক্ষীদের সাক্ষ্য সম্পন্ন করে বিচার কার্যক্রম শেষ করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কক্সবাজারের উখিয়ার লাম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরের ডি ব্লকের ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস’ (এআরএসপিএইচ) সংগঠনের কার্যালয়ে বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত হন রোহিঙ্গাদের নেতা মুহিবুল্লাহ। তিনি ওই সংগঠনের চেয়ারম্যান ছিলেন। হামলার ঘটনায় মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘আরাকান স্যালভেশন আর্মির’ (আরসা) কয়েকজন অস্ত্রধারীর নাম প্রচার করা হয়।
পরের দিন ৩০ সেপ্টেম্বর মুহিবুল্লাহর ছোট ভাই হাবিবুল্লাহ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার তদন্ত শেষ করে উখিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গাজী সালাহ উদ্দিন গত ১৩ জুন ২৯ জন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
তদন্ত কর্মকর্তার দাখিল করা অভিযোগপত্রে ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে আরসা নেতা ও রোহিঙ্গা শ্মরনার্থী মোহাম্মদ ছলিমকে। তিনি উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয় শিবিরের নুর বশরের ছেলে। পুলিশ জানিয়েছে, এই মামলায় গ্রেফতার ১৫ আসামি বিভিন্ন সময়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/১২
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।