পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) : ঢাকা ও চট্টগ্রামে লাখ লাখ মানুষের শোভাযাত্রা
https://parstoday.ir/bn/news/bangladesh-i114276-পবিত্র_ঈদে_মিলাদুন্নবী_(সা.)_ঢাকা_ও_চট্টগ্রামে_লাখ_লাখ_মানুষের_শোভাযাত্রা
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে আনন্দঘন ও উৎসবমুখর পরিবেশে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপিত হচ্ছে।
(last modified 2025-10-18T14:57:34+00:00 )
অক্টোবর ০৯, ২০২২ ১৬:০৭ Asia/Dhaka
  • চট্রগ্রামে মিলাদুন্নবীর বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় প্রায় ৭০ লাখ ধর্মপ্রাণ মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন বলে আয়োজকদের দাবি।
    চট্রগ্রামে মিলাদুন্নবীর বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় প্রায় ৭০ লাখ ধর্মপ্রাণ মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন বলে আয়োজকদের দাবি।

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে আনন্দঘন ও উৎসবমুখর পরিবেশে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপিত হচ্ছে।

শেষ নবী ও রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম দিন উদযাপন উপলক্ষে আজ (রোববার) সকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে জশনে জুলুস বের করে আঞ্জুমানে রহমানিয়া মইনিয়া মাইজভান্ডারিয়া। মাইজভান্ডার দরবার শরীফের বর্তমান ইমাম শাহ্সূফী সাইয়্যিদ সাইফুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী এ শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হতে জশনে জুলুস শুরু হয়ে রাজধানীর শাহবাগ, মৎস ভবন, দোয়েল চত্বর হয়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনের সড়ক প্রদক্ষিণ করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসে এক মহাসমাবেশে মিলিত হয়।

সমাবেশে সাইয়্যিদ সাইফুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী বলেন, ‘মহানবীর (সা.) দুনিয়ায় শুভাগমন জগৎবাসীর জন্য আল্লাহ পাকের বিশেষ রহমত ও অনুগ্রহ। প্রিয়নবীর শুভাগমন না হলে সৃষ্টি জগৎ অস্তিত্বই লাভ করতো না। রাসুলের দুনিয়ায় শুভাগমনের মূল উদ্দেশ্যই হলো একটি শান্তি ও সহাবস্থানপূর্ণ মানবিক বিশ্ব সমাজ গড়ে তোলা। আজ সিরিয়া, ফিলিস্তিন, মিয়ানমারসহ তাবৎ দুনিয়ায় যুদ্ধ সংঘাত ও রক্তপাতে জর্জরিত। শক্তিধর দেশগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান না করে অস্ত্রের ভাষায় কথা বলছে। নিষেধাজ্ঞা পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে সমগ্র পৃথিবীর মানুষ খাদ্য জ্বালানি সংকটসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। এই দুঃসহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে মহানবীর আদর্শ অনুসরণের বিকল্প নেই।’

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে জশনে জুলুস বের করা হয়

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত এ শান্তি মহাসমাবেশ ও শোভাযাত্রায় বিশেষ অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, যারা ইসলামের কথা বলে ফেতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে, ধর্মের বদনাম ও অমঙ্গল করছে, তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

তিনি বলেন, ‘ইসলামের কথা বলে যারা হত্যাকাণ্ড করে, মানুষের হাত-পায়ের রগ কাটে, তারা ইসলামের বন্ধু নয়, ইসলামের শত্রু। কোনও যুদ্ধ-বিগ্রহের মাধ্যমে এই দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়নি, অথচ অনেকে ওলি-আকরামদের বিরুদ্ধে কথা বলে, তারা
আসলে ফেতনা সৃষ্টিকারী।’

সমাবেশে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলির সদস্য আমির হোসেন আমু প্রধান অতিথি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক উদ্বোধক এবং ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মোহম্মদ ফরিদুল হক খান বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন।

জশনে জুলুসের প্রথম দিকে দৃষ্টিনন্দন বড় বড় হরফে লেখা ছিল ‘ইয়া নবী সালামু আলাইকা’, ‘ইয়া রাসূল সালামু আলাইকা’। আঞ্জুমানে রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভান্ডারীয়ার ব্যবস্থাপনায় জশনে জুলুসে অংশগ্রহণকারীরা কলেমা খচিত পতাকা, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন ছাড়াও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা বহন করে।

জুলুসে অংশগ্রহণকারীরা 'নারায়ে তকবির, নারায়ে রেসালত' স্লোগানে স্লোগানে রাজধানীর রাজপথ মুখরিত করে তোলে। দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে জুলুসে আসা সূফিবাদীরা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরিহিত ছিল। জুলুস শেষে মুসলিম জনতা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আন্তর্জাতিক শান্তি মহাসমাবেশে মিলিত হয়।

এদিকে, চট্টগ্রামে বর্ণাঢ্য আয়োজনে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন হচ্ছে। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদের (সা.) প্রতি নিরঙ্কুশ শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার টানে বন্দরনগরীর রাস্তায় লাখ লাখ মানুষের সম্মিলন ঘটেছে। আয়োজকদের দাবি, মিলাদুন্নবীর বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় প্রায় ৭০ লাখ ধর্মপ্রাণ মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন। শোভাযাত্রা ও ধর্মীয় সম্মেলন থেকে বিশ্বশান্তি, মানবতা ও সম্প্রীতির ডাক দেওয়া হয়েছে।

আজ সকাল পৌনে ৯টায় নগরীর ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলীয়া মাদরাসা সংলগ্ন আলমগীর খানকা থেকে সম্মিলিত শোভাযাত্রা শুরু হয়। এতে নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রামে ‘জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদুন্নবী’র পথিকৃৎ পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের হরিপুরের সিরিকোটের প্রখ্যাত আধ্যাত্মিক সুফীসাধক সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ’র সন্তান সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ।

মিলাদুন্নবীর ঐতিহ্যবাহী শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম নগরজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। পতাকা, ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন, তোরণ দিয়ে বর্ণিল সাজে সাজানো হয় নগরীর বিভিন্ন স্পটে সড়ক বিভাজকগুলোকে। অংশগ্রহণকারীদের হাতে হাতেও ছিল ব্যানার-ফেস্টুন। হামদ, নাত ও দরুদে মুখর ছিল শোভাযাত্রা। অংশগ্রহণকারীদের শরবত, চকলেট, খেজুর, জিলাপি, জুস বিতরণ করা হয় পথে পথে। বিভিন্ন ভবন থেকে বাসিন্দারা হাত নেড়ে, ফুল ছিটিয়ে স্বাগত জানায় শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের।

পবিত্র দিনটি উপলক্ষে মিলাদ ও রাসুল (সা.)-এর জীবনী নিয়ে আলোচনার আয়োজন রয়েছে।

ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররমে ইসলামি বইমেলাসহ পক্ষকালব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান গতকাল শনিবার বাদ মাগরিব বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহানে এর উদ্বোধন করেন। পরে দোয়া ও মোনাজাত করেন বায়তুল মোকাররম মসজিদের খতিব মুফতি মোহাম্মদ রুহুল আমিন।

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশসহ মুসলিম উম্মাহকে শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন।#

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।