গুলিস্তানে বিস্ফোরণে নিহত ১১
ভবনের মেকানিকাল ত্রুটিতে বাড়ছে বিস্ফোরণ; সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়ার অভিযোগ
আবারও বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় বহুতল ভবনে বিস্ফোরণ। বহু মানুষ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। আজ (মঙ্গলবার) বিকেলে রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা গুলিস্তান বিআরটিসি বাস টার্মিনাল এলাকায় এ ঘটনা ভবনটির দুটি ফ্লোর ধসে পড়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যুর কথা বলা হলেও আহত ও দগ্ধ প্রায় শতাধিক মানুষ। তাদের নেয়া হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শেখ হাসিনা বার্ণ ইউনিটসহ বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে।
এদিকে, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণে ৫১ জনের মৃত্যুর পর বছর না ঘুরতেই গত শনিবার বিকালে সেই সীতাকুণ্ডে অক্সিজেন-গ্যাস উৎপাদন কারখানায় বিস্ফোরণে নিহত হলেন ছয়জন। এর কয়েক ঘণ্টা আগে ওই দিন ভোরে রাজধানীর গুলশানে এসি বিস্ফোরণে দগ্ধ হন দুজন। তাদের মধ্যে গোপাল মল্লিক নামে একজনের মৃত্যু হয়। রবিবার আবার রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় ভবনে বিস্ফোরণে মারা গেলেন তিনজন। দুই দিনেরও কম সময়ে তিনটি বিস্ফোরণে অন্তত ১০ জন মারা গেলেন আর আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক।
এর আগে মিরপুরে একটি ছয়তলা ভবনে গ্যাসের লাইন বিস্ফোরণে সৃষ্টি হয় অগ্নিকাণ্ডের। এতে শিশুসহ সাতজন দগ্ধ হয়। তার আগে মগবাজারের ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণের ঘটনা এখনও দগদগে হয়ে আছে সবার হৃদয়ে। আরও আগে নারায়ণগঞ্জে পরপর দুটি দুর্ঘটনা ঘটে। এমন ঘটনা ঘটেই চলেছে।
কেন বারবার ঘটছে গ্যাস লাইন বিস্ফোরণ? কোন ঘটনা ঘটলেই এ নিয়ে কিছুদিন হৈচৈ হয়, আলোচনা-সমালোচনার ঝড় যায়। তারপর আবারও একটি দুর্ঘটনার সংবাদের অপেক্ষা। গত বছরের ২৭ জুন মগবাজারের একটি ভবনে ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। এই দুর্ঘটনায় হতাহত হয় অনেক মানুষ। দুর্ঘটনার পর বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছিলেন, সঠিক নজরদারি ও যথাযথ ব্যবস্থাপনা না থাকলে মগবাজারের ওই ভবনের মতো আরও অনেক ভয়াবহ ঘটনা ঘটতে পারে। রাজধানীতে আবাসিক খাতে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার শুরু হয় ১৯৬৮ সালে। প্রায় দুই কোটি মানুষের এই মেগাসিটিতে বর্তমানে ২৮ লাখের বেশি গ্যাস সংযোগ রয়েছে। পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে এসব সংযোগে। এই গ্যাস দিয়ে দৈনন্দিন গৃহস্থালির জ্বালানি চাহিদা মেটানো হচ্ছে। এর বাইরেও রয়েছে কয়েক লাখ সিলিন্ডার।
বিভিন্ন সময় সংঘটিত দুর্ঘটনার পর গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী পাঁচ দশকের পুরনো ও ত্রুটিপূর্ণ লাইন, সময়মতো লাইনের তদারকি না করা, গ্রাহকের উদাসীনতা, দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়া, অবৈধ লাইনের অসচেতন ব্যবহার, পাইপলাইনে ময়লা জমা এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই ঘটছে এসব দুর্ঘটনা। পুরোনো ও মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার বিস্ফোরণেও ঘটছে অনেক দুর্ঘটনা। প্রতিটি দুর্ঘটনার পরই গঠিত হয় একাধিক তদন্ত কমিটি। এসব কমিটি দাখিল করে তদন্ত প্রতিবেদন। কোন প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখে, আবার কোনটি চলে যায় হিমাগারে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু নাঈম মোঃ শাহিদউল্লাহ বলেন, দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিরা শাস্তি পায় খুব কম। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে প্রদত্ত সুপারিশ বাস্তবায়ন হয় না। ক্রটিপূর্ণ লাইন পুনঃস্থাপন, যথাযথ তদারকি, গ্যাস লাইনের নিয়মিত পরীক্ষাসহ দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। নইলে এরকম দুর্ঘটনা এবং জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হতেই থাকবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিস্ফোরক আইন ও নীতিমালার তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন দাহ্যপদার্থ রাখা ছাড়াও এসব দুর্ঘটনার বড় একটি অংশ পুরাতন গ্যাসলাইন লিকেজ ও এসি থেকে হচ্ছে। মেকানিকদের অদক্ষতায় অনেক সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। তারা বলছেন, গ্যাসের লিকেজ ও এসি-ফ্রিজের ছোটখাটো ত্রুটি সারাতে অনেকেই মেকানিক ডেকে আনেন। মেকানিকদের সঠিক কারগরি জ্ঞান না থাকার কারণে বেশিরভাগ সময়ই মেরামতের পরও ত্রুটি থেকে যায়, যে কারণে এসব জায়গায় বারবার বিস্ফোরণ ঘটে। তাছাড়া গ্যাস ও বিদ্যুতের লাইন নিয়মিত পরীক্ষা না করার কারণেও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ বিষয়ে সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি জনসচেতনতার ওপর জোর দিতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।#
পার্সটুডে/ বাদশাহ রহমান/আশরাফুর রহমান/৬