বজ্রপাতের ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে, কালবৈশাখের আতংকে হাওর এলাকার মানুষ
(last modified Wed, 26 Apr 2023 13:06:42 GMT )
এপ্রিল ২৬, ২০২৩ ১৯:০৬ Asia/Dhaka

স্মরণকালের ভয়াবহ দাবদাহের শেষ দিকে এসে গেল। তিন’দিন আগে বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের বেশ ক’টি জেলায় বজ্রপাতে মর্মান্তিক মৃত্যু হয় ৮ টি তাজাপ্রাণের। যারা হাওরে ধান কাটতে গিয়ে কিংবা মাঠে গরু চড়ানোর সময়ে এ দুর্ঘটনার শিকার হন।এ ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে সাধারণের মাঝে। কারন কালবৈশাখী ঝড়ের অপেক্ষায় শংকায় আছেন হাওর অঞ্চলের বাসিন্দারা।

যতই দিন যাচ্ছে জনসংখ্যার আধিক্য যেমন বাড়ছে তেমনি বিভিন্ন প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট দুর্ঘটনাজনিত কারণে অকালে প্রাণ হারানোর চিত্রও বাড়ছে। বিরূপ প্রকৃতি, জলবায়ু পরিবর্তন, উষ্ণতা বৃদ্ধি, বৃক্ষ নিধন, কথিত সীমানা পিলার চুরি হয়ে যাওয়াসহ নানা কারণে প্রতি বছর বাংলাদেশে বাড়ছে বজ্রপাতর সংখ্যা। আবার বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে বজ্রপাত। এক প্রতিবেদন থেকে দেখা যায় দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে বজ্রপাতের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি, বাংলাদেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে অন্তত ৪০টি বজ্রপাত হয়। ডিজাস্টার ফোরাম –এর এক প্রতিবেদনে দেখা যায় ২০১১ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১২ বছরে বজ্রাঘাতে বাংলাদেশে মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ১৬২ জনের। অথচ বাংলাদেশে বজ্রপাতের ওপর তেমন বড় কোনো গবেষণা নেই। 

তবে ইউরোপ, জাপান ও আমেরিকায় এ বিষয়টি নিয়ে বড় বড় গবেষণা চলছে। মার্চ-এপ্রিল ও মে মাসে বজ্রপাত বেশি হয় হাওরাঞ্চলে-কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট ও নেত্রকোনা জেলায়। দেশের হাওর এলাকায় বেশির ভাগ ফসলি জমিতে বড় কোনো গাছ না থাকায় মৃত্যু ঠেকানো যায় না। বজ্রপাতের ধর্ম হচ্ছে তা মাটিতে আঘাত হানার আগে সবচেয়ে উঁচু যে জায়গাটি পায় সেখানে গিয়ে পড়ে। হাওর এলাকায় কৃষকের শরীরই পায়, তার ওপর পড়ে। তাই বজ্রপাতের ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রাথমিক পর্যায়ে সারা দেশে তালগাছের ৫০ লাখ চারা রোপণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বজ্রপাতের আগাম বার্তা পেতে ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮ জেলায় বজ্রপাতের গতি-প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ যন্ত্র স্থাপন করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। যন্ত্রটি সাইরেন বাজিয়ে লাল হলুদ ও নীল রঙের মাধ্যমে বজ্রপাতের সতর্ক সংকেত দেয়। এর মাধ্যমে বজ্রপাত ও বজ্রঝড় কোন অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হবে, তা এক ঘণ্টা আগেই জানিয়ে দিতে পারে আবহাওয়া অফিস। কিন্তু তারপরও কমছেনা মৃত্যুহার।এর কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে সাধারণ মানুষের অসচেতনতা। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিভাগের অধ্যাপক ড. তাওহিদা রশীদ বলেন, বজ্রপাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে অবকাঠামোগত প্রস্তুতির পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে। তাই গ্রামের মানুষদের সচেতন করতে পারলে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গা, খোলা মাঠ অথবা উঁচু স্থানে থাকা যাবেনা, ধানক্ষেত বা খোলা মাঠে থাকলে তাড়াতাড়ি পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে এবং কানে আঙুল দিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকতে হবে। যেহেতু বজ্রপাত সবসময় উঁচু জিনিসে আঘাত হানে তাই বৃষ্টির সময় উঁচু গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তার বা ধাতব খুঁটি, মোবাইল টাওয়ার থেকে দূরে থাকতে হবে। 
দেশি-বিদেশি গবেষণা বলছে, দেশে গত কয়েক বছরে কালবৈশাখীর পাশাপাশি বজ্রপাত বেড়েছে। বজ্রপাতে মৃত্যু নিয়ে একক কোনো কারণ চিহ্নিত করতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরা। অনেকটাই ধারণানির্ভর তথ্যে তারা মনে করছেন, তাপমাত্রা ও বাতাসে সিসার পরিমাণ বৃদ্ধি, জনজীবনে ধাতব পদার্থের ব্যবহারের আধিক্য, মোবাইল ফোন ব্যবহার ও এর টাওয়ারের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া, বনভূমি বা গ্রামাঞ্চলে উঁচু গাছের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস, জলাভূমি ভরাট ও নদী শুকিয়ে যাওয়া ইত্যাদি বজ্রপাত বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। আর এসবের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন ও উষ্ণায়নের সম্পর্ক আছে। তাই গাছপালা না কেটে বেশি করে গাছ লাগানোরও পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। #

পার্সটুডে/বাদশা রহমান/রেজওয়ান হোসেন/২৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।