ধেয়ে আসছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মোখা
‘মোখা’র ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় সতর্ক বাংলাদেশ সরকার; প্রস্তুতি পর্যাপ্ত
বঙ্গোপসাগরে আরও শক্তিশালী হয়ে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা। এটি ক্রমশ উত্তরপূর্ব উপকুলীয় এলাকার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এরই মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে অগ্রভাগের প্রভাবে কক্সবাজারে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ভোলা, কুয়াকাটাসহ উপকূলীয় এলাকায় সতর্কতা তৎপরতা জোরদার করেছে স্থানীয় প্রশাসন। মানুষজনকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে আশ্রয় কেন্দ্রে।
শক্তিশালী প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে কক্সবাজারে। সাগর প্রচণ্ড উত্তাল থাকায় ৪ হাজার ট্রলার উপকূলে ফিরে এসেছে। এরইমধ্যে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উপকুলে বসবাসরত মানুষজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। জেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৫৭৬টি আশ্রয় কেন্দ্র। এ পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে। তাদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
অতি প্রবল এই ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র কারনে মহেশখালীর এলএনজি টার্মিনালের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।
এদিকে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে আশ্রিত ১৪ লাখ রোহিঙ্গাদেরও ক্যাম্পের পাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারী ভবনগুলোতে আনতে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সফিয়ান।
ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে মোকাবেলায় পটুয়াখালীতে দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা কমিটির প্রস্তুতিমুলক সভায় জেলা প্রশাসক মো: শরিফুল ইসলাম জানান, উপকুলের মানুষকে নিরাপত্তা দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। জেলায় ৭০৩টি আশ্রয়ন কেন্দ্র, ৪০টি মুজিব কিল্লা, প্রতি উপজেলায় একটি করে কন্ট্রোল রুম, প্রায় ৯ হাজার স্বেচ্ছাসেবী প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র প্রভাবে কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর বেশ উত্তাল রয়েছে। নদ-নদীর পানির উচ্চতা দেড় থেকে দুই ফুট বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি উপকূলীয় এলাকার অনেক স্থানে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে।
দ্বীপ জেলা ভোলার মেঘনা নদী উত্তাল থাকায়, মালবাহী জাহাজ নোঙ্গর করে মেঘনা নদীতে অবস্থান করছে।
বিআইডব্লিউটিএর ভোলা নদী বন্দরের উপ-পরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম জানান, ভোলায় ৮নম্বর মহাবিপদ সংকেত থাকায় শুক্রবার রাত থেকে ভোলা-লক্ষ্মীপুর ও ভোলা-বরিশাল রুটে ফেরিসহ সকল ধরণের নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ঝালকাঠিতে ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে সকাল থেকে আকাশ ছেয়ে আছে কালো মেঘে। মাইকিং করে উপকূলের মানুষকে নিরাপদে থাকতে সতর্ক করা হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিয়েছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে সমুদ্র বন্দরে জারি করা হয়েছে এলার্ট ‘২’। এছাড়া সকল জাহাজে পণ্য ওঠা নামা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
এদিকে উপকূলয়ি জেলাসহ সারাদেশে ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সব ধরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় কক্সবাজারের ১ হাজার ৬০০ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেখানে এখন পর্যন্ত ১৪ টন শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে।
আজ (শনিবার) সকালে সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন প্রস্তুতির বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় প্রয়োজনে সব বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে সেনাবাহিনী কাজ করবে। এসময় ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে সরিয়ে কোনো আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা আপাতত নেই বলে জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী।#
পার্সটুডে/বাদশাহ রহমান/আশরাফুর রহমান/১৩
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।