জুন ০৫, ২০২৩ ১৭:১৫ Asia/Dhaka

বাংলাদেশের জন্য পরিবেশ দিবস খুবই প্রাসঙ্গিক। একদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ভুক্তভোগী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম, অন্যদিকে পরিবেশ দূষণের কোনো কোনো ক্ষেত্রে চ্যাম্পিয়নও বটে বাংলাদেশ। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান নিয়ামক কার্বন নিঃসরণের ক্ষেত্রে আমাদের ভূমিকা নগণ্য হলেও পরিবেশ ধ্বংস ও দূষণের ক্ষেত্রে একেবারে প্রথম কাতারে। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের অমাদের ভূমিকা কম বলে আত্মতৃপ্তির সুযোগ নেই, বরঞ্চ যা আছে তা হলো পরিবেশ সংরক্ষণে যথাযথ ভূমিকা নেওয়ার দায়িত্ব।

কথায় বলে 'প্রকৃতির বিরুদ্ধে গেলে প্রকৃতি তার প্রতিশোধ নেয়'। কথাটি যতটা না দার্শনিক তার চেয়ে বেশি বৈজ্ঞানিক এমনটা মন্তব্য অনেক পরিবেশবাদীদের। গাছ কেটে সাবাড় করলে, ক্ষতিকর প্লাস্টিকে পুরো বিশ্ব ভরিয়ে দিলে, তার জন্য মানুষকেই সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হতে হয়। এর প্রমাণও মিলেছে আমাদের এই দেশে, বৃষ্টিহীনতা, দীর্ঘ খরা, অস্বাভাবিক তুষারপাত থেকে শুরু করে মানুষের সৃষ্ট দুর্যোগ এখন নতুন টার্ম আকারে সামনে এসেছে। মানুষ প্রকৃতিকে হেলা করেছে বলেই প্রকৃতি তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

এদিকে, নিয়মিত প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার প্লাস্টিক-দূষণের মাত্রাকে ভয়াবহ করে তুলছে। পলিথিন ব্যাগ, কসমেটিক প্লাস্টিক, গৃহস্থালি প্লাস্টিক ও বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত প্লাস্টিক পণ্যের বেশিরভাগই পুনঃচক্রায়ন হয় না। পরিবেশবাদীরা বলছেন, সাবান, মুখের ক্রিম, টুথপেস্ট, ডিটারজেন্ট এবং অন্যান্য প্রসাধন সামগ্রীর মাধ্যমে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্লাস্টিক পরিবেশের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছে। প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করে।

এই দায়িত্ব অবহেলার কারণেই ঢাকার বাতাস পৃথিবীর অন্যতম দূষিত, ঢাকা ও আশপাশে যতগুলো জলাভূমি আছে তার প্রায় সবগুলোই চূড়ান্ত মাত্রায় দূষিত, খাল ও নদী যেন ময়লার ভাগাড়, নর্দমা ও শিল্প বর্জ্যরে নিরাপদ ‘ডাম্পিং গ্রাউন্ড’। পাহাড় কাটা, নদী, খাল ও জলাভূমি ভরাট, বনভূমি ধ্বংস ইত্যাদি তো আমাদের প্রেক্ষাপটে প্রায় স্বাভাবিক ঘটনা। পাশাপাশি ইটভাটা, যানবাহনের কালো ধোঁয়া, শহুরে জীবনে যথেচ্ছাচার শব্দযন্ত্রের ব্যবহার, অপরিকল্পিত দালানকোঠা ও অবকাঠামো পরিবেশের বিপর্যয় ডেকে আনছে।

যদিও পরিবেশ সংরক্ষণে আমাদের আইন ও বিধিবিধানের বহরটা একেবারে কম না, রয়েছে একগুচ্ছ বিধিবিধান যেমন জাতীয় পরিবেশ নীতি (২০১৮), পরিবেশ আদালত আইন (২০১০), বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য আইন (২০১৭), পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা ব্যবস্থাপনা বিধিমালা (২০১৬), কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা (২০২১), শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা (২০০৬) ইত্যাদিসহ আরও অনেক। এত এত আইন ও বিধিবিধান থাকা সত্ত্বেও আমাদের পরিবেশ কীভাবে দূষণের শিকার হচ্ছে তা সহজে বোধগম্য নয়!

এমন বাস্তবতায় আজ (সোমবার) পালিত হচ্ছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস। 'প্লাস্টিক দূষণ সমাধানে সামিল হই সকলে’ এই প্রতিপাদ্যে বাংলাদেশে দিবসটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  প্রতিটি মানুষকে অন্তত একটি করে গাছ লাগানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে ব্যাপক ভূমিকা রাখার আহ্বানও জানান তিনি।

পবা চেয়ারম্যান আবু নাসের

পরিবেশ বিপর্যয়ের ক্ষতি থেকে দেশকে রক্ষা করতে সরকার কাজ করছে এমন আলোচনার প্রেক্ষিতে 'পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনে (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের বলেন, পরিবেশ বিষয়ক আন্দোলন শুরুর দিকে অনেকে বিষয়টিকে খুব ভালো চোখে না দেখলেও মানুষ এখন পরিবেশ বিষয়ে সচেতন হয়েছে। সরকারও নিয়েছে নানা উদ্যোগ। করা হয়েছে অনেক আইন। তবে, সরকারি বিভিন্ন উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও বিভিন্ন স্থানের অব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির কারণে সমস্যার সমাধান হচ্ছে না বলেই মন্তব্য করেছেন ফ্রেন্ডশিপ এর কনসালটেন্ট ও পরিবেশ গবেষক জোনায়েদ আলী সাকি।#   

পার্সটুডে/বাদশাহ রহমান/আশরাফুর রহমান/৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ