প্রবাসী সমস্যা সমাধান: ধারাবাহিক প্রতিবেদন (প্রথম পর্ব)
দ্রুত ও ভোগান্তিমুক্ত উপায়ে রেমিট্যান্স আনতে চালু করতে হবে সরকারি অ্যাপ
জনশক্তি রপ্তানিতে আরেকটি রেকর্ড বছরের হিসাবের খাতায় পৌঁছাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। চলতি ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ ৯৯ হাজার বাংলাদেশি কর্মী প্রবাসে চাকরি নিয়ে গেছেন। গত বছরের রেকর্ডসংখ্যক ১১ লাখ ৩৫ হাজার কর্মী রপ্তানির ধারাবাহিকতা এ বছরেও দেখা যাচ্ছে।
শ্রম অভিবাসনে বড় এক মাইলফলক অর্জন করেছে বাংলাদেশ, এ নিয়ে টানা দুই বছর ১০ লাখের ঘর ছাড়িয়েছে জনশক্তি রপ্তানি। রিক্রুটিং এজন্সিগুলো বলছে, মহামারির কারণে দুই বছর বিদেশে যেতে না পারা অনেক শ্রমিকই ২০২২ ও ২০২৩ সালে গেছেন। এ সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলতে থাকায় তাদের চাকরির বাজারও উন্মুক্ত হয়। পাশাপাশি সব ধরনের সৌদি প্রতিষ্ঠানে অভিবাসী বাংলাদেশিদের জন্য নির্ধারিত কোটা ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ করার ঘটনাও অবদান রেখেছে রেকর্ড এই প্রবৃদ্ধিতে।
বাংলাদেশি শ্রমিকদের শীর্ষ গন্তব্য সৌদি আরব। এ বছরের অক্টোবর পর্যন্ত মোট বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ৩৭ শতাংশই হয়েছে উপসাগরীয় এ দেশটিতে। কিন্তু জনশক্তি রপ্তানি খাত চমৎকার প্রবৃদ্ধির মুখ দেখলেও তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাড়েনি দেশে আসা প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বা রেমিট্যান্স। গত দুই অর্থবছর ধরেই রেমিট্যান্সে স্থিতাবস্থা বিরাজ করছে। দুই অর্থবছরেই এটি রয়েছে ২২ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পর্যায়ে। অথচ মহামারির আগের সময়ে অর্থাৎ, ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৪.৭৭ বিলিয়ন ডলার। গত দুই অর্থবছরে এর চেয়ে উল্লেখযোগ্য পতনই দেখেছে প্রবাসী আয়।

তবে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স সংশ্লিষ্ট অন্যতম সরকারি প্রতিষ্ঠান সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান বলেন, সমস্ত পরিস্থিতি কাটিয়ে ইতিবাচক ধারায় ফিরছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। হয়ত জনশক্তি রপ্তানির সঙ্গে এর সামঞ্জস্য নেই, এর পেছনেও রয়েছে বেশ কিছু ঘটনা।
জনশক্তি রপ্তানি বাড়ার সাথে রেমিট্যান্সের এই অসামঞ্জ্যপূর্ণ অবস্থার জন্য অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা প্রধানটি তিনটি বিষয়কে দায়ী করছেন। এগুলো হলো: অভিবাসনকারী বেশিরভাগ শ্রমিকের স্বল্প-দক্ষতার কাজে যোগদান, হুন্ডির দৌরাত্ম্য এবং বিদেশি বিভিন্ন নিয়োগদাতার ভুয়া চাকরির প্রস্তাব এনে এদেশের কিছু রিক্রুটারের অদক্ষ শ্রমিকদের থেকে টাকা-পয়সা নেওয়ার ঘটনা।

এ প্রসঙ্গে অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ও আইওএম-এর সাবেক কর্মকর্তা আসিফ মুনীর বলেন, জনশক্তি রপ্তানির প্রকৃত প্রক্রিয়ার বাইরে ভিজিট ভিসায় গিয়ে কর্মী রপ্তানির সংখ্যা বাড়লেও অনেকেই কাজ পাচ্ছেন না। ভোগান্তিতে আছেন তারা। এর বাইরে আন ডকুমেন্টেড প্রবাসীরা দেশে অর্থ পাঠাতে বিকল্প পদ্ধতিকেই ব্যবহার করছেন। পাশাপাশি কর্মস্থল থেকে দূরে ব্যাংকিং অফিস থাকায় সবাই সেখানে গিয়ে টাকা পাঠাতে পারেন না। ফলে অবৈধ চ্যানেলে আসা অর্থ রেমিট্যান্স আয়ের ঘরে যোগ না হওয়ায় মনে হতে পারে প্রবাসী আয় কম হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা)'র মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হায়দার চৌধুরী বলেছেন, প্রযুক্তি সুবিধা ব্যবহার করে নতুন কোন পদ্ধতি সরকারিভাবে উদ্ভাবনের সময় এসেছে। অর্থাৎ সরকারি ব্যবস্থাপনায় কোনো অ্যাপ চালু করা এখন খুবই জরুরি। তাহলে সকল প্রবাসীর অর্থ দ্রুত সময়ে ভোগান্তি মুক্তভাবে দেশে আনা সম্ভব। এরফলে সরকারিভাবেই রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে, আরো শক্তিশালী হবে দেশের অর্থনীতি। তাই, সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেছেন, প্রণোদনা বৃদ্ধি রেমিট্যান্স প্রবাহকে কেবল সাময়িকভাবে বাড়াতে পারে। টেকসই রেমিট্যান্স বৃদ্ধি অর্জনের জন্য হুন্ডির পেছনে মূল কারণগুলো মোকাবিলা করতে হবে।#
পার্সটুডে/বাদশাহ রহমান/আশরাফুর রহমান/২৯